পদ্মফুল হোটেল (Lotus Hotel) অবস্থিত চায়নার জায়েনসাওয়ান (Xiangshawan) মরুভূমিতে। এটি বেইজিং শহর থেকে পশ্চিমে ৮০০ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। এই হোটেলকে বলা হয় মরুভূমির পদ্ম ফুল। বলতে পারেন এই নাম করনের পিছনে কি কারন থাকতে পারে? খুব সোজা, বাংলায় যেমন প্রচলিত আছে "গোবরে পদ্ম ফুল" যার আর্থিক মানে এই দাঁড়ায় যেখানে যা হবার কথা না সেখানে এমন কিছু হওয়া যা সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে। এই হোটেলও সেরকম। এই মরুভূমির ধারে কাছে কোন স্থাপনা নেই, কিন্তু মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে বিলাশ বহুল এই হোটেল। এই কারনেই এর নাম দেওয়া হয়েছে পদ্মফুল হোটেল। আচ্ছা তাহলে কি বাংলা ভাষার সাথে চাইনিজদের কোন যোগাযোগ আছে নাকি? তা তো আছেই, তবে এ নিয়ে আগে আলোচনা করা হয়ছিল, "ভাষার খোঁজে নেপালে" লেখাটি পড়লে বুঝে যাবেন এখানে আর বিস্তর আলোচনা করলাম না।
প্রথমে এই মরুভূমির সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দেই, অন্যান্য মরুভূমির মতই এই মরুভুমি বিশাল বালুর রাজ্যে ঢাকা, ধারে কাছে কোথাও নেই পানির কোন অস্তিত্য, সূর্য্য যেন তার সব টুকু তেজ ঢেলে দিয়েছে এই মরুভূমির মাঝে। এখানে কোন স্থাপনা তৈরি করার সব থেকে বড় বাঁধা এই বালু। খুব হালকা এবং বালুর স্তর অনেক গভির হওয়ার এখানে কোন প্রকার স্থাপনা তৈরির কথা কেউ চিন্তাও করেনি পূর্বে। ঢালাই দিতে যে পরিমান গভিরে যেতে হবে, আর যে পরিমান পানি লাগবে তার কোন যোগান নেই এই মরুভুমিতে আর দূর থেকে পানি বয়ে এনে কোন কিছু তৈরি করতে খরচের পাল্লা যে পরিমান ভারী হবে যে ভার বহন করতে কেউ রাজি নয়।
কিন্তু চায়না বলে কথা, তারা যে ঠিক করেছে এই মরুভূমিতে গড়ে তুলবে বিলাশ বহুল এক হোটেল। এসময় PLaT Architects নামে একটি নাম করা আর্কিটেকচার ফার্ম নতুন এক ধারনা নিয়ে আসে। তারা ষ্টীলের তৈরি ফাঁপা বারের মধ্যে লিকুইড কিছু দিয়ে এগুলোকে মরুভূমিতে তৈরি হতে যাওয়া এই হোটেলের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যাবহার করবে। ফলে এই ষ্টীলের বার গুলি বালির মধ্যে অনেকটাই ভেসে থাকবে আর এই হোটেলের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কাজ, শুধু এই ষ্টীলের বার আর বিশেষ ভাবে তৈরি করা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হল এই হোটেল।
যে কাপড় গুলি কথা বললাম এগুলা আবার তৈরি করা হয়েছে এই মরুভুমির বালি দিয়ে। কি ভাবে তৈরি করেছে তা জানি না, আগেই স্বিকার করে নেই, এটা এখন পর্যন্ত রহস্যে ঘেড়া। PLaT Architects ভাষ্য মতে, তারা এখানে এমন কিছু ব্যাবহার করতে চেয়েছে যা এই মরুভুমিতে থাকার আসল মজাটাই উপভোগ করাবে, শহরের মধ্যে গড়ে ওঠা অন্নান্য হোটেলের মত নয়।
এই পদ্ম হোটেলকে এমন ভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি মরুভুমির সাথে সম্পূর্ন মিলে গেছে। আপনার কাছে যদি এই হোটেলের কোন ম্যাপ না থাকে তাহলে দূর থেকে একে দেখলে আপনার মনে হবে এ যেন নিছক মরুভুমির একটি অংশ। অর্থাৎ ম্যাপ বাদে বা সঠিক গাইড বাদে মরুভুমির মাঝে এই হোটেলকে খুঁজে বেড় করা বেশ কঠিন কাজ।
আসলে এই হোটেল জায়েনসাওয়ান মরুভুমির ভবিষ্যতের একটি অংশ মাত্র। PLaT Architects এর মতে ভবিষ্যতে এই মরুভুমিতে এরকম অনেক হোটেল গোড়ে তোলা হবে। এমন কি তারা বর্তমানে এমন কিছু বানাবার চিন্তায় আছে যা এই মরুভুমিতে বিদ্যুৎ এবং পানির চাহিদা সম্পূর্ন ভাবে মিটাতে সক্ষম হবে। আর এটা হয়ে গেলেই তারা জায়েনসাওয়ান মরুভুমির মাঝে গড়ে তুলবে এক স্বপ্ন রাজ্য।
যা হোক, ভবিষ্যতে কি হবে আর না হবে তা ভবিষ্যত আসলেই দেখে নেওয়া যাবে, আপাতত চলুন এই পদ্মফুল হোটেল (Lotus Hotel) এর মনোমুগ্ধকর কিছু ছবি দেখে নেই,
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।