চির অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর কিছু জায়গা

০১) বিয়ার লেক আরোরা (Bear Lake Aurora):


বিয়ার লেক আলাস্কায় অবস্থিত। আর আরোরা বলতে বুঝায় বিয়ার লেক-এর আকাশের মনরোম রঙ্গিন আলোর খেলা। এটাকে উত্তরের আলো বা (Northan Light)ও বলা হয়। বিয়ার লেক আরোরা প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি। আকাশের এই রঙ্গিন খেলাকে নিয়ে রয়েছে অনেক লোককথা। এর ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীণ লোককথা থেকে জানা যায়, এই আনিন্দ্য সুন্দর আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করেছিলো সুর্যদয়ের দেবতা আরোরা (Aurora)। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেযে সুর্যবায়ু সাথে যখন পৃথিবীর চোম্বকক্ষেত্রের সংঘর্ষ ঘটে তখনি এই রহস্যময় আলোর উৎপত্তি হয়। শুধু আলাস্কার বিয়ার লেকই নয়, কানাডা্, অস্ট্রেলিয়া সহ মেরু অঞ্ছলের অনেক দেশেই আরোরা দেখা যায়।

০২) ঈগলহক নেক (Eaglehawk nack, Tasmania):


প্রকৃতির আরেকটি বিশ্বয় হল তাসমানিয়ার ঈগলহক নেক। এটা অস্ত্রেলীয়ার তাসমানিয়ায় অবস্থিত। ঈগলহক নেক প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট খুব সঙ্কির্ন ভুমি বা রাস্তা (Isthmus) যা দুটী আলাদা ভুখন্ডকে এক করেছে। এই ভুখন্ড গুলি হল তাসমানিয়া উপদ্বীপ ও তাসমানিয়া।এই isthmus টি ৪০০ মিটার লম্বা এবং প্রস্থে এর সবচেয়ে সংকির্ন স্থানটি হল ৩০মিটার। স্থানীয় ভাবে এটা “নেক” নামে পরিচিত। ভু-তাত্বীক ও ঐতীহাসীক দুই দিক থেকেই ঈগলহক নেক তাৎপর্যপুর্ন। ব্রিটিস নির্বাসিত বন্দিরা পোর্ট আর্থার কারাগার থেকে পালানোর জন্য ঈগলহক নেক ব্যাবহার করত। তাই এই পালিয়ে যাওয়া রুখতে ১৮৩০ সালেব্রিটিশরা সেখানে ভয়ঙ্কর কিছু কুকুর সেখানে পাহাড়া বসিয়েছিল। আর সেটাই ইতিহাসে বিখ্যাত Dog line নামে পরিচিত। অনেক বন্দিই এই নেক দিয়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল।

ঈগলহক নেক আরো বিখ্যাত ও জনপ্রিয় এর ভৌগলিক পরিবেশের জন্য। ছবিতে আপনারা শষ্যক্ষেত্রের মত যা দেখতে পাচ্ছেন তা হল প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট Tessellated Pavement (ক্ষয়ের কারনে সৃষ্ট দূর্লভ ভুমিরুপ)।

০৩) শেম্পেন লেক (Champagne lake):


না বন্ধুরা, এটা শেম্পেন দিয়ে ভরপুর কোনো লেক না। এটা কে বলা যায় প্রকৃতির এক বিশ্বয়কর সৃষ্টি। এই লেকটি নিউজিল্যান্ড এর Wai-O-Tapu তে অবস্থিত। Wai-O-Tapu জায়গাটি আবার রুটুরুয়া (Roturua) তে অবস্থিত। মাউরি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে জানা যায় Wai-O-Tapu এর অর্থ হল পবিত্র বা রঙ্গিন পানি আর রুতুরুয়া এর অর্থ হল কাহুমাতামোমিও (Kahomatamomoe) এর মহান লেক, যে ছিল লর্ড মরিওর চাচা যিনি এই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেছিলেন। শুধু শেম্পেন লেকই নয় তার আসপাশ পুরো এলাকাটিই আরো অনেক প্রাকৃতিক বৈশিষ্টে পরিপূর্ণ। পুরো রুটুরুরা অঞ্চলটিই তিব্র ভাবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি,পানি, বাষ্প ও আরো বহু অদ্ভুত প্রাকৃতিক বৈশিষ্টে গঠিত ও পরিপুর্ণ। ছবিতে কমলা রঙের তাকের মত যেই অংশ টি দেখা যাচ্ছে এটা হল গ্রাফাইটের ভান্ডার এবং শেম্পেন এর মত বুদবুদ আকারে যেই গ্যাস উঠছে তা হল কার্বনডাই অক্সাইড।

০৪) শ্বেত মরুভুমি (The white desert), মিশরঃ


সম্ভবত হিন্দি ছবি “কাভি খুশি কাভি গাম” এর একটা গানে আমি সর্বপ্রথম শ্বেত মরুভুমি বা The white desert দেখি। যখন দেখি তখন মনে হয়েছিল এটা অবাস্তব। কারন মরুভুমি আবার সাদা কিভাবে হয়! কিন্তু যখন The white desert সম্পর্কে জানতে পারি তখন আর বিস্বয়ের সীমা থাকলনা।

চোখ ধাধানো সাদা এই মরুভুমির এতিহাস থেকে জানা যায় যে ঐতিহাসিক যুগের পুর্বে সাহারা মরুভুমি যখন পানির নিছে ডুবে ছিল তখন তার একটি অংশে খরিমাটি জমতে থাকে। আস্তে আস্তে যখন এই জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্টের উপরে চলে আসে তখন জমেথাকা খরিমাটির ভান্ডার সাহারা মরুভুমির মাঝে অপুর্ব সুন্দর এই শ্বেত মরুভুমির সৃষ্টি করে। মিসরের ফারাফ্রা মরুদ্যানের এই অঞ্চলটি তাই প্রকৃতির এক অপুর্ব সৃষ্টি। এটি ফারাফ্রা অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। তার পাশে রয়েছে ব্লাক ডেসার্ট ও ক্রিস্টাল মাউন্টেইন।

০৫) পামুক্কালা (Pamukkala), তুরস্কঃ


বন্ধুরা আশাকরছি ছবি দেখে আপ্নারাও আমার মত একে বরফের পাহাড় বলে ভুল করেছেন। আসলে বরফ নয় এই পাহার বা ঝর্না সৃষ্টি হয়েছে স্ফটিকের মত ক্যালসিয়াম থেকে। তুর্কি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে পামুক্কালা (Pamukkala) অর্থ দাঁড়ায় তুলো। হাজার বছর আগে থেকে এখন পর্যন্ত এর সৌন্দর্য্য মানুষকে পুলকিত করে আসছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পামুক্কালা সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ১০০০ বছর আগে। ১০০০ বছর আগে তুরুস্কের দিঞ্জিল অঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভুমিকম্প সংঠিত হয়। এর ফলে মাটিতে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে ঝর্নার মাধ্যমে বেড়িয়ে আসে ক্যলসিয়াম সমৃদ্ধ পানি। তারপর যুগে যুগে এই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পানি প্রবাহের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সৃষ্টি হয় অনিন্দ সুন্দর শ্বেত ঝর্নার পাহাড়। অনেকে এই ঝর্ণায় গোসল করে নিজেদের ধন্য মনে করে। পরবর্তিতে রোমানরা এই পাহাড়ের উপরে শহর নির্মান করে যার নাম ছিল হাইরাপলিস (Heirapolis)। এর অর্থ হল পবিত্র শহর।

০৬) নরকের দরজা (Door to Hell), তুর্কমেনিস্তানঃ


নরকের দরজা বা জাহান্নামের দরজা যাই বলি না কেন, নামটা কিন্তু আসলেই ভয়ঙ্কর। আর এই ভয়ঙ্কর জায়গাটি দেখতে হলে যেতে হবে তুর্কমেনিস্থানে। তুর্কমেনিস্থানের কারা-কুম মরুভুমির দারভাযা গ্রামের পাশে অবস্থিত এই ভয়ঙ্কর স্থানটির ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় যে, ১৯৭১ সালের দিকে তৎকালীন সভিয়েত ইউনিনের টি কম্পানি এখানে গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য খনন কার্য চালায়। তা যেই ঘটনাটা আমাদের মাগুরছরা বা টেংরাটিলায় ঘটেছিল সেই একই ঘটনাটা এখানে ঘটল। বিশাল বিষ্ফোরন। গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। আর রেখে যায় বিশাল আগুনে ভরা গর্ত। এই গর্ত থেকে ক্রমাগতভাবে বের হচ্ছে মিথেন গ্যাস আর তার থেকে আগুন। এই আগুনের তাপ এতই যে তার পাশে ২ মিনিটের বেশি দাড়ানো যায় না। সেই থেকে এর নাম নরকের দরজা।

০৭) সুকাত্রা দ্বীপ (Suqatra Island), ইয়েমেনঃ


প্রকৃতির আরেকটি আজব সৃস্টি হল সুকাত্রা দ্বীপ। এটিকে দেখতে হলে যেতে হবে ইয়েমেনে। বর্তমান পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি মানুষের কাছে এখনো অজানা। যা হোক দ্বীপ হিসেবে সুকাত্রা যতটুকু আকর্ষনীয় তার চেয়ে আকর্ষনীয় এই দ্বীপের গাছপালা। ১২০ কিলোমিটার লম্বা এবং ৪০ কিলোমিটার প্রস্থের এই দ্বীপটির গাছ গুলোই এই দ্বীপকে পৃথিবীর অন্য অংশ থেকে পৃথক করেছে। এখানে রয়েছে এমন সব আকৃতির গাছপালা যে গুলো দেখতে আসলেই অদ্ভুত। এই অদ্ভুত গাছ গুলোর মদ্ধে অন্যতম হল 'ড্রাগন ব্লাড ট্রি'। ঠিক ছাতার মত দেখতে এই গাছের রস দিয়ে রাবার বানানো হয়। আরেকটি গাছের নাম হল 'Desert Rose' বা 'মরুভুমির গোলাপ'। তবে এর আরেকটি জনপ্রিয় নাম রয়েছে, এটাকে স্থানীয় ভাবে হাতির পা গাছ বলা হয়। এর কারন তার আকৃতি। এছাড়াও এই দ্বীপে প্রায় ৭০০ রকমের গাছপালা রয়েছে যেগুলো খুবই দুর্লভ। এই দ্বীপের আবহাওয়া প্রচন্ড গরম এবং শুস্ক। এই দ্বীপটিকে ২০০৮ সালে বিশ্বঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

০৮) রেসট্রাক প্লায়া (Racetrack playa):


যারা আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া আঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন তাদের কাছে এই জায়গাটি পরিচিত হতে পারে। রেসট্রাক প্লায়া নামক রহস্যময় জায়গাটি ক্যালিফোর্নিয়ার মৃত্যু উপত্যকায় অবস্থিত। এটিকে আমি সবচেয়ে আশ্চর্য বলব কারন সয়ং আমেরিকা্নরাই এই স্থানের রহস্য বের করতে পারেনি। এই জায়গাটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সমতল ভুমি বলা হয়। তার সবচেয়ে অদ্ভুত ও রহস্যজনক ব্যাপারটি হল এর ভাসমান পাথর। ছবিতে নিশ্চয় আপ্নারা ভাসমান পাথর গুলাকে দেখতে পারছেন। মজার ব্যাপার হল যে কিভাবে এই পাথর গুলো এইভাবে ভেসে ভেসে এসেছে তার কোনো ডকুমেন্ট বা ভিডিও কারো কাছে নেই। নেই বলতে নেটে কোথাও পাইনি। এই ভেসে বেড়ানোর কারন হিসাবে বলা হচ্ছে বায়ু প্রবাহ। শীতকালে যখন এই মরুভুমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তখন Racetrack Playa প্রচুর পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন প্রবল বায়ু প্রবাহের ফলে পাথর গুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করে।

০৯)ডনজুয়ান হ্রদ (Don Juan pond), এন্টার্কটিকাঃ


বলুনত পৃথিবীর সবচেয়ে লবনাক্ত হ্রদ কোনটি? নিশ্চয় বলবেন Dead Sea। কিন্তু না!! পৃথিবীর সবচেয়ে লবনাক্ত হ্রদ টির নাম ডন জুয়ান হ্রদ। এটি এন্টার্কটিকায় অবস্থিত। এই হ্রদের লবনাক্ততার ঘনত্ব এত যে, এন্টার্কটিকায় যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির নিচে থাকে তখন এর পানি বরফ হয়না। এই হ্রদের পানির লবনাক্ততার পরিমামান ৪০%। যা সমুদ্রের সমুদ্রের পানির চেয়ে ১৮ গুন বেশি।যেখানে Dead Sea হ্রদের পানি সমুদ্রের পানির চেয়ে ৮ গুন বেশি লবনাক্ত। এই হ্রদের নামকরন করা হয়েছে দুই জন পাইলটের নামানুসারে যারা ১৯৮১সালে এটিকে আবিষ্কার করেছে। তারা হলেন 'Don Roy' আর 'John Hickey'। কিন্তু Don john না হয়ে Don Juan কেন হল কোনো সাইটেই এর উত্তর খুজে পেলাম না।

এই রকম হাজার হাজার অদ্ভুত, সুন্দর ও ভয়ঙ্কর জায়গা দিয়ে খোদা আমাদের এই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন।

লেখকঃ বঙ্গবাসী হাসান।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info