১৫৮৪, আজ হতে প্রায় ৪৫০ বছর পূর্বে জাপানের রাজধানী টোকিও মোটেই এতো বড় কোন শহর ছিলনা, তখন এটি ছিল "ইডো" নামের ছোট্ট একটি জেলেপাড়া। আর চীন, জাপানের জোডাইক বর্ষসূচি অনুযায়ী ১৫৮৪ ছিল "বানর বর্ষ", এই বছরের কোন একদিনে সেই ইডো গ্রাম হতে ৪০০ মাইল দূরের "মিয়ামোতো" গ্রামে জন্ম নিল "মুসাশি" নামের এক শিশু।
মুসাশির বাবা "মুনিসাই" ছিল এক বিখ্যাত সামুরাই যোদ্ধা, সমাজের চোখে বীর যোদ্ধা সামুরাইদের কদরই ছিল অন্যরকম। তাই ছেলেকেও সামুরাই বানাতে ছোট বেলা থেকেই কঠোর হাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন মুনসাই। সামুরাই হবার এই প্রশিক্ষণের সময় প্রায়ই নির্দয় ভাবে পিতার হাতে মার খেতে হত মুসাশি’কে। আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আর রক্তাক্ত হতো মুসাশির শিশুদেহ। অবশেষে আর সহ্য করতে না পেরে ৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালায় মুসাশি।
মুসাশির বাবা "মুনিসাই" ছিল এক বিখ্যাত সামুরাই যোদ্ধা, সমাজের চোখে বীর যোদ্ধা সামুরাইদের কদরই ছিল অন্যরকম। তাই ছেলেকেও সামুরাই বানাতে ছোট বেলা থেকেই কঠোর হাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন মুনসাই। সামুরাই হবার এই প্রশিক্ষণের সময় প্রায়ই নির্দয় ভাবে পিতার হাতে মার খেতে হত মুসাশি’কে। আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আর রক্তাক্ত হতো মুসাশির শিশুদেহ। অবশেষে আর সহ্য করতে না পেরে ৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালায় মুসাশি।


বাবাকে ছেড়ে গেলেও বাবার দেখানো পথ ছাড়ল না মুসাশি, নিজের ভিতরের লড়াকু অস্তিত্বের অনুভূতি ছোট থাকতেই টের পেয়েছিল সে। পরবর্তী পাঁচ বছর জঙ্গলে, গ্রামে নানা জায়গায় থেকে নিজে নিজেই সামুরাই লড়াইয়ের প্রশিক্ষণ নিতে থাকল। ঘটনাক্রমে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই জীবনের প্রথম দ্বন্দ্ব যুদ্ধের মুখোমুখি হোল মুসাশি। "আরিমা কিহাই" নামে এক যোদ্ধা লড়াইয়ের চ্যালাঞ্জ জানিয়ে শহরের মাঝে পোস্টার ঝুলিয়ে দেয়, আর কি মনে করে ক্ষুদে মুসাশি তাতে নাম লিখে দেয়।
লড়াইয়ের নির্ধারিত দিনে মুসাশিকে দেখে তো সবাই অবাক; সবাই আরিমা’কে অনুরোধ করতে লাগল ছেলেমানুষ মুসাশির সাথে যেন যুদ্ধে না জড়ায়। আরিমা বলল, "মুসাশিকে বাঁচতে হলে ক্ষমা চাইতে হবে আমার কাছে।" কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার বদলে ছয় ফুট লম্বা লাঠি নিয়ে তেড়ে গেল মুসাশি। আরামিও তার "ওয়াকিজাশি" তলোয়ার নিয়ে আগে বাড়ল। একটি দুঃখজনক মৃত্যু দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করতে লাগল, কিন্তু পরমুহূর্তে যা দেখল তা যেন দুঃস্বপ্নেও দেখার চিন্তা করতে পারেনি কেউ।
লড়াইয়ের নির্ধারিত দিনে মুসাশিকে দেখে তো সবাই অবাক; সবাই আরিমা’কে অনুরোধ করতে লাগল ছেলেমানুষ মুসাশির সাথে যেন যুদ্ধে না জড়ায়। আরিমা বলল, "মুসাশিকে বাঁচতে হলে ক্ষমা চাইতে হবে আমার কাছে।" কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার বদলে ছয় ফুট লম্বা লাঠি নিয়ে তেড়ে গেল মুসাশি। আরামিও তার "ওয়াকিজাশি" তলোয়ার নিয়ে আগে বাড়ল। একটি দুঃখজনক মৃত্যু দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করতে লাগল, কিন্তু পরমুহূর্তে যা দেখল তা যেন দুঃস্বপ্নেও দেখার চিন্তা করতে পারেনি কেউ।
![]() |
ছোট আকৃতির "ওয়াকিজাশি" তলোয়ার |
না, মুসাশি অসাধারণ কোন যুদ্ধনৈপুণ্য দেখায়নি; বরং সবাই দেখতে পেল একটি ক্ষুদে বালকের অসম্ভব শারীরিক শক্তি আর কল্পনাতীত নৃশংসতার দৃষ্টান্ত।
আরামিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভয়ঙ্কর আঘাত করল তার মাথায়, যতক্ষণ মাথা সম্পূর্ণ থেঁতলে না গেল আঘাত করতেই থাকল মুসাশি।
আরামিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভয়ঙ্কর আঘাত করল তার মাথায়, যতক্ষণ মাথা সম্পূর্ণ থেঁতলে না গেল আঘাত করতেই থাকল মুসাশি।
সবাইকে এক ভয়াবহ স্মৃতি উপহার দিয়ে শহর ছেড়ে গেল মুসাশি, কিন্তু সেই সাথে উপলব্ধি করতে পারল নিজের কৌশলের উন্নতি না করতে পারলে এই ধরনের ডুয়েল সামুরাই যুদ্ধে বেশীদিন টিকে থাকতে পারবেনা; চলতে থাকল তার আত্মসাধনা।
১৭ বছর বয়সে মুসাশি অংশ নেয় জাপানের ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা "সেকিগাহারার যুদ্ধে"। জাপানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সোগান প্রদেশ দখলের জন্য লড়াই করছিল তোয়োতোমি আর তোকুগাওয়া গোত্র। মুসাশি নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য গিয়ে যোগ দিল তোয়োতোমি শিবিরে। নিজ পক্ষের আরও দেড় লক্ষ সৈন্যের সাথে মুখোমুখি হোল শত্রু পক্ষের। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মুসাশি পরাজিত পক্ষে নাম লিখিয়েছিল, তোয়াতোমি পক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরন করল সেকিগাহারায়। আর যুদ্ধে পরাজিত কাউকেই বন্দী করা হলনা, সামুরাই রীতি অনুযায়ী এক কোপে মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলা হোল। শত্রু পক্ষের তাড়া খেয়ে কোনোক্রমে জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাল মুসাশি।
১৭ বছর বয়সে মুসাশি অংশ নেয় জাপানের ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা "সেকিগাহারার যুদ্ধে"। জাপানের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সোগান প্রদেশ দখলের জন্য লড়াই করছিল তোয়োতোমি আর তোকুগাওয়া গোত্র। মুসাশি নিজেকে যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য গিয়ে যোগ দিল তোয়োতোমি শিবিরে। নিজ পক্ষের আরও দেড় লক্ষ সৈন্যের সাথে মুখোমুখি হোল শত্রু পক্ষের। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে মুসাশি পরাজিত পক্ষে নাম লিখিয়েছিল, তোয়াতোমি পক্ষ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরন করল সেকিগাহারায়। আর যুদ্ধে পরাজিত কাউকেই বন্দী করা হলনা, সামুরাই রীতি অনুযায়ী এক কোপে মাথা ধর থেকে আলাদা করে ফেলা হোল। শত্রু পক্ষের তাড়া খেয়ে কোনোক্রমে জঙ্গলে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাল মুসাশি।
![]() |
ব্যাটেল অব সেকিগাহারা |
এখানেই প্রাথমিক সৈনিক জীবনের ইতি ঘটল মুসাশি’র এবং শুধুই একজন ডুয়েল লড়ুয়ে হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করায় মন দিল। পরবর্তী চার বছর মুসাশি তার কৌশলের উন্নতির লক্ষে অকাতর সাধনা করে গেল, যা শুরু হত ভোরের সূর্য উঠার সাথে সাথে আর চলত সন্ধ্যা অবধি। জঙ্গলের এক নির্জন জায়গায় চলতে থাকল তার নিবিড় তপস্যা। এই সময়েই মুসাশি উদ্ভাবন করে তার বিখ্যাত "ডাবল সোর্ড" কৌশল, একহাতে "কাতানা" আর এক হাতে "ওয়াকিজাশি" নিয়ে দুই হাতেই সমান দক্ষতায় সামনে পিছনে শত্রুর মোকাবেলা করা। আর তলোয়ারবাজি ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করল মুসাশি , আর সেটি হচ্ছে মুখোমুখি লড়াইয়ে একাগ্রতা ধরে রেখে শত্রুর উপর মনস্তাত্ত্বিক বিজয় লাভের কৌশল।
![]() |
কাতানা |
অবশেষে ২১ বছর বয়সে আত্মগোপন হতে বেরিয়ে এল মুসাশি। সমাজের চোখে সম্পূর্ণ অপরিচিত সে, কিন্তু তার হাতের তলোয়ার ততদিনে তার পক্ষে হয়ে কথা বলতে শিখে গেছে। মুসাশি বুঝতে পারল নিজেকে চেনাতে হলে অবশ্যই বড়সড় কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে, এ উদ্দেশ্যে উপস্থিত হোল কিয়োটো শহরে। সেখানে এক বিখ্যাত সামুরাই প্রশিক্ষণ স্কুলের শিক্ষাগুরু ছিল "ইয়োশিকা সেইজুরো" আর "ইয়োশিকা দেন শিকিরো" নামের দুইভাই। সাধারণত অপরিচিত কারও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনা গুরুরা কিন্তু মুসাশি যখন তার বাবা মুনিসাই এর নাম বলল, তখন আর এড়িয়ে যাবার উপায় ছিলনা তাদের। "একসময় মুনিসাই এর হাতে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষাগুরু পরাজিত হয়েছিল, তাই এখনই সুযোগ মুনিসাই এর ছেলেকে পরাজিত করে প্রতিশোধ নেবার"। বড়ভাই সেইজুরোই সেই চ্যালেঞ্জে সারা দিল।
নির্ধারিত দিনে যথারীতি ধ্যান শেষ করে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হোল সেইজুরো, কিন্তু মুসাশি’র কোন দেখা নেই। সময় গড়িয়ে চলল, সেইজিরো অস্থির হয়ে উঠল; তার মনঃসংযোগে চিড় ধরল। আর এই মনস্তাত্ত্বিক খেলাই খেলছিল মুসাশি। কয়েক ঘণ্টা পরে মুসাশি যখন বনের ভিতর হতে বের হয়ে এল, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না সেইজিরো। রাগে ছুটে গিয়ে আক্রমণ চালাল, আর এইটাই হোল সামুরাই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ভুল। আর এই মনোযোগ হারানোর মাশুল তাকে দিতে হোল মুসাশির তলোয়ারের আঘাতে প্রাণ হারিয়ে।
নির্ধারিত দিনে যথারীতি ধ্যান শেষ করে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হোল সেইজুরো, কিন্তু মুসাশি’র কোন দেখা নেই। সময় গড়িয়ে চলল, সেইজিরো অস্থির হয়ে উঠল; তার মনঃসংযোগে চিড় ধরল। আর এই মনস্তাত্ত্বিক খেলাই খেলছিল মুসাশি। কয়েক ঘণ্টা পরে মুসাশি যখন বনের ভিতর হতে বের হয়ে এল, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না সেইজিরো। রাগে ছুটে গিয়ে আক্রমণ চালাল, আর এইটাই হোল সামুরাই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় ভুল। আর এই মনোযোগ হারানোর মাশুল তাকে দিতে হোল মুসাশির তলোয়ারের আঘাতে প্রাণ হারিয়ে।
![]() |
মুসাশি বনাম সেইজুরো |
ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শিকিরো এবার চ্যালেঞ্জ জানালো মুসাশিকে, সেইযুদ্ধেও একইভাবে প্রতিপক্ষের সাথে মনস্তাত্ত্বিক খেলা করল মুসাশি এবং আরেক "ইয়োশিকা" ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হোল মাটি।
দুই ইয়োশিকা ভাইকে হত্যার পর, মুসাশি’র নাম ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। অনেকেই আহ্বান জানাল তাকে আবার অনেকে চাইল এই নতুন বিপদকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। এমনই এক লড়াইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ল মুসাশি। তাকে হত্যার জন্যই কৌশলে এই ফাঁদ পাতা হয়েছিল। নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়ে চারপাশ দেখেই পরিস্থিতি বুঝে গেল মুসাশি, কিন্তু নিজের পিঠ দেখালনা। একাই কয়েক ডজন শত্রুযোদ্ধার মুখোমুখি হল, দুই হাতেই তুলে নিল তলোয়ার আর একাই লড়তে লাগল সবার সাথে। এই প্রথম কোন সামুরাই যোদ্ধা দুইহাতে তলোয়ার নিয়ে লড়াই করল। অসাধারণ নৈপুণ্যে একে একে সব শত্রুকে ভয়ঙ্কর আঘাতে হত্যা করল মুসাশি। পরে যখন আরও সৈন্য ধেয়ে এল; তখন পালাতে বাধ্য হোল সে। কিন্তু এতে তার গৌরব একটুও ক্ষুণ্ণ হয়নি বরং তার ভয়ঙ্কর "নিনতসু" বা "ডাবল সোর্ড" কৌশলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল সব জায়গায়।
দুই ইয়োশিকা ভাইকে হত্যার পর, মুসাশি’র নাম ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। অনেকেই আহ্বান জানাল তাকে আবার অনেকে চাইল এই নতুন বিপদকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। এমনই এক লড়াইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ল মুসাশি। তাকে হত্যার জন্যই কৌশলে এই ফাঁদ পাতা হয়েছিল। নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হয়ে চারপাশ দেখেই পরিস্থিতি বুঝে গেল মুসাশি, কিন্তু নিজের পিঠ দেখালনা। একাই কয়েক ডজন শত্রুযোদ্ধার মুখোমুখি হল, দুই হাতেই তুলে নিল তলোয়ার আর একাই লড়তে লাগল সবার সাথে। এই প্রথম কোন সামুরাই যোদ্ধা দুইহাতে তলোয়ার নিয়ে লড়াই করল। অসাধারণ নৈপুণ্যে একে একে সব শত্রুকে ভয়ঙ্কর আঘাতে হত্যা করল মুসাশি। পরে যখন আরও সৈন্য ধেয়ে এল; তখন পালাতে বাধ্য হোল সে। কিন্তু এতে তার গৌরব একটুও ক্ষুণ্ণ হয়নি বরং তার ভয়ঙ্কর "নিনতসু" বা "ডাবল সোর্ড" কৌশলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল সব জায়গায়।
![]() |
ডাবল সোর্ড হাতে মুসাশির লড়াই |
এরপর নানা জায়গায় ঘুরে কখনো বিভিন্ন গুরুর তত্ত্বাবধানে থেকে নতুন নতুন কৌশল শিখতে লাগল, আবার কখনো ডুয়েল লড়াইয়ে অংশ নিয়ে প্রতিপক্ষকে মৃত্যু উপহার দিতে থাকল। ১৬০৭ সালে ২৪ বছর বয়সে মুখোমুখি হোল "শাশিরো" নামক এক সামুরাই এর। শাশিরোর বৈশিষ্ট্য ছিল শিকলের মাথায় কাঁটা ওয়ালা বল যুক্ত অস্ত্রে পারদর্শিতা। তার ভয়ঙ্কর গতির শিকল ঘুরানোর জন্য কাছে যাওয়ার কোন উপায় ছিলনা মুসাশির। হঠাৎ একসময় মুসাশির তলোয়ারেটি শিকলে জড়িয়ে হ্যাঁচকা টান দিয়ে হাত থেকে ফেলে দিল শিশিরো। যখনই তার মৃত্যু মনে হচ্ছিল আসন্ন, ঘাড়ের পিছন হতে লুকানো ছোট ছুরি বের করে ছুঁড়ে দিল শিশিরোর গলা বরাবর। প্রাণহীন দেহটা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে।
![]() |
শিশিরোর শিকল অস্ত্রের মুখোমুখি মুসাশি |
২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যবর্তী ১০ বছর সময়ে প্রায় ৬০টি সামুরাই ডুয়েলে মুখোমুখি হোল মুসাশি এবং এর প্রতিটিতেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করল। অবশেষে ১৬১২ সালের ১৩ই এপ্রিল জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত লড়াইয়ে মুসাশি মুখোমুখি হোল "Demon of Western Province" খ্যাত "সাসাকি কোজিরো"র। লড়াইয়ের স্থান নির্ধারিত হোল "ফুনাজিমা" দ্বীপে। আবারো বড় লড়াইয়ের আগে মুসাশি তার মনস্তাত্ত্বিক খেলা শুরু করল, কোজিরোকে তো অপেক্ষায় রাখলই আর এমন সময় বেছে নিল যখন সূর্য থাকবে তার মাথার পিছনে। কিন্তু কোজিরোকে সবচেয়ে বড় অপমান করল, সাথে কোন তলোয়ার না এনে কাঠের একটি মজবুত লাঠি নিয়ে এল মুসাশি।
এই অপমানে ভীষণ রেগে গেল কোজিরো, তলোয়ার বের করে খাপটি ছুঁড়ে সাগরের পানিতে ফেলে দিল। মুসাশি তখন বলল, "কোজিরো, খাপ ফেলে দিয়ে তুমি তোমার মৃত্যুকেই নিশ্চিত করলে" (সামুরাই প্রথা অনুযায়ী, শুধু মৃত্যুর চূড়ান্ত মুখোমুখি হলেই খাপ ত্যাগ কর)।
জবাবে কোজিরো বলল, "মুসাশি এই তলোয়ার শুধু তোমাকেই হত্যার জন্য এনেছি, এরপরে এই তলোয়ার আর আমার কাজে দিবেনা"। দুই ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী সাগর পাড়ে মুখোমুখি হোল। এটা শুধু দুজন সেরা যোদ্ধার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ছিলনা, বরং দুটি ভিন্ন ধারার সামুরাই কৌশলের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের লড়াইও ছিল; যা পৃথকভাবে উদ্ভাবন হয়েছিল কোজিরোর গুরু এবং মুসাশির পিতা মুনিসাই এর হাতে।
এই অপমানে ভীষণ রেগে গেল কোজিরো, তলোয়ার বের করে খাপটি ছুঁড়ে সাগরের পানিতে ফেলে দিল। মুসাশি তখন বলল, "কোজিরো, খাপ ফেলে দিয়ে তুমি তোমার মৃত্যুকেই নিশ্চিত করলে" (সামুরাই প্রথা অনুযায়ী, শুধু মৃত্যুর চূড়ান্ত মুখোমুখি হলেই খাপ ত্যাগ কর)।
জবাবে কোজিরো বলল, "মুসাশি এই তলোয়ার শুধু তোমাকেই হত্যার জন্য এনেছি, এরপরে এই তলোয়ার আর আমার কাজে দিবেনা"। দুই ভয়ঙ্কর প্রতিদ্বন্দ্বী সাগর পাড়ে মুখোমুখি হোল। এটা শুধু দুজন সেরা যোদ্ধার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ছিলনা, বরং দুটি ভিন্ন ধারার সামুরাই কৌশলের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের লড়াইও ছিল; যা পৃথকভাবে উদ্ভাবন হয়েছিল কোজিরোর গুরু এবং মুসাশির পিতা মুনিসাই এর হাতে।
![]() |
সূর্যকে পিছনে রেখে কোজিরো'র মুখোমুখি মুসাশি |
কোজিরো তার লম্বা তলোয়ারের জন্য বিখ্যাত ছিল এবং মুসাশি তা ভালোভাবেই জানত। তাই সে তার লাঠিটা কোজিরোর তলোয়ারের চেয়ে একটু বড় করে নিয়ে এল। কিন্তু মুখোমুখি মুসাশির মাথার পিছনে বিশেষ সামুরাই পদ্ধতিতে ধরা অবস্থায় এবং সূর্যের আলো চোখে পড়ায় মুসাশির লাঠির দৈর্ঘ্য সম্পর্কে ধারণা পেলনা কোজিরো। দুইজনই লাফিয়ে উঠে ভয়ঙ্কর আঘাত করল পরস্পরের দিকে। কোজিরোর তলোয়ার মুসাশির কপাল বন্ধনী কেটে হালকা রক্তের দাগ কেটে নেমে গেল। তাই দেখে হাসি ফুটে উঠল কোজিরোর মুখে, কিন্তু পরক্ষনেই তা যন্ত্রণার চিহ্নতে পরিণত হোল। মুসাশির লম্বা লাঠির বিদ্যুৎ গতির আঘাত তার মাথা দু ফাঁক করে দিয়ে গিয়েছে। পড়ে গিয়েও আবার আঘাত করার দুর্বল চেষ্টা চালাল কোজিরো কিন্তু তার আগেই মুসাশি ভয়ঙ্কর কয়েকটি হেনে মৃত্যুর কোলে শুইয়ে দিল "পশ্চিম প্রদেশের শয়তান" খ্যাত কোজিরোকে।
কোজিরোর সাথে লড়াই ছিল তার শ্রেষ্ঠতম সামুরাই ডুয়েল, এই বিজয় তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সামুরাই এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। এরপর সে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল হিসেবে বিভিন্ন যুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু ১৬১৫ সালে ওসাকা দুর্গের লড়াইয়ে বিজয়ের অর্জনের পরও লক্ষ লক্ষ সৈনিকের করুণ মৃত্যু তার মনকে বিশাল নাড়া দেয়। রক্তাক্ত এই পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। জীবনের পরবর্তী সময়ে মুসাশি নিজেই একটি সামুরাই প্রশিক্ষণের স্কুল প্রতিষ্ঠিত করে এবং তার পাশাপাশি রচনা করে "বুক অব ফাইভ রিংস" নামে তার বিখ্যাত রণকৌশল সম্পর্কিত গ্রন্থ। এখনও প্রতিবছর হাজার হাজার কপি বিক্রি হয় এই বইয়ের। যুদ্ধ কৌশলকে মাটি, পানি, আগুন, বাতাস এবং নীতি এই পাঁচটি ভাগে বর্ণনা করেছে মুসাশি তার গ্রন্থে।
কোজিরোর সাথে লড়াই ছিল তার শ্রেষ্ঠতম সামুরাই ডুয়েল, এই বিজয় তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সামুরাই এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। এরপর সে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল হিসেবে বিভিন্ন যুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু ১৬১৫ সালে ওসাকা দুর্গের লড়াইয়ে বিজয়ের অর্জনের পরও লক্ষ লক্ষ সৈনিকের করুণ মৃত্যু তার মনকে বিশাল নাড়া দেয়। রক্তাক্ত এই পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। জীবনের পরবর্তী সময়ে মুসাশি নিজেই একটি সামুরাই প্রশিক্ষণের স্কুল প্রতিষ্ঠিত করে এবং তার পাশাপাশি রচনা করে "বুক অব ফাইভ রিংস" নামে তার বিখ্যাত রণকৌশল সম্পর্কিত গ্রন্থ। এখনও প্রতিবছর হাজার হাজার কপি বিক্রি হয় এই বইয়ের। যুদ্ধ কৌশলকে মাটি, পানি, আগুন, বাতাস এবং নীতি এই পাঁচটি ভাগে বর্ণনা করেছে মুসাশি তার গ্রন্থে।
![]() |
মুসাশি এবং কোজিরোর লড়াইস্থানে নির্মিত মূর্তি |
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সামুরাই হিসেবে বেঁচে থেকে ১৬৪৫ সালের ১৩ই জুন মৃত্যু বরণ করে সর্বকালের অন্যতম সেরা সোর্ডসম্যান "মিয়ামোতো মুসাশি"। আজও জাপানীরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাকে; তার নামে কার্টুন বানায়, মুভি হয়। রাস্তা জুড়ে টাঙ্গানো থাকে মুসাশির পোষ্টার। যেসব স্থানে তার বিখ্যাত লড়াই গুলো হয়েছিল, সে স্থানগুলোতে যুদ্ধরত মূর্তি আর স্তম্ভ বানিয়ে অমর করে রেখেছে তাকে।
লেখকঃ চাঁপাডাঙার চান্দু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
লেখকঃ চাঁপাডাঙার চান্দু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন