দুঃসাহসী জিম করবেট ।। Brave Jim Corbett


আপনারা তো জানেন, আগে আমাদের দেশসহ পুরো ভারতেই অনেক অনেক বন-জঙ্গল ছিলো। আর এসব বনে বনে ঘুরে বেড়াতো ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব বাঘ, নেকড়ে আর হায়েনার দল। এসব প্রাণী হিংশ্র হলেও আঘাত না পেলে শুধু শুধু মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে হ্যাঁ, কিছু দুষ্টু প্রাণী তো থাকেই। তারা ছিলো যেমন হিংশ্র তেমনি ভয়ংকর। এসব প্রাণীদের শিকার করাটাও ছিলো অনেক কঠিন। আর এ কাজটিতেই প্রচণ্ড সাহস ও সাফল্য অর্জন করেছিলেন একজন; ২৫ জুলাই তার জন্মদিন, আর তার নাম, জিম করবেট।

ভারতের উত্তরাখণ্ড অঙ্গরাজ্যের একটি শহরের নাম নৈনিতাল। 'তাল' মানে হ্রদ বা সরোবর। হ্রদের ধারে অধিষ্ঠাত্রী দেবী নয়না বা নৈনি থেকে নৈনিতালের নামকরণ। নৈনিতালের আকাশ সবসময়ে মেঘে ঢাকা আর অরণ্যে পাখিদের কিচিরমিচির। নৈনিতালের দক্ষিণে রয়েছে বিস্তীর্ণ সবুজ সমভূমি আর উত্তরে তাকালে দেখা যায় বরফাবৃত হিমালয়ের চূড়া। এখানেই জিম করবেটের জন্ম।

জিম করবেটের পুরো নাম এডওয়ার্ড জেমস করবেট। তবে, তাকে জিম করবেট নামেই সবাই চেনে। করবেট ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই ভারতের নৈনিতালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন আইরিশ, নৈনিতালে পোস্টমাস্টারের চাকরি করতেন। করবেট ছিলেন বাবা-মার চতুর্থ সন্তান। জিম করবেটের বাবার নাম ক্রিস্টোফার গার্নি; মায়ের নাম মেরী জেন। তার বড় ভাইয়ের নাম টমাস বা টম। করবেট চার বছর বয়সেই বাবাকে হারান। বড়ো ভাই টম পোস্টমাস্টারের চাকরি পান। তিনিই পরিবারের অভিভাবক হন। করবেটের পিতা নৈনিতালের আয়ারপাটায় ‘গার্নি হাউস’ নামে যে বাড়ি তৈরি করেন সেখানেই জন্ম হয় করবেটের।


করবেট ছোটবেলা থেকেই শিকার করতেন। বড়ো হয়ে নামকরা শিকারি হয়ে উঠলেন। তবে, তিনি এসব কাহিনী মোটেও লিখতে চাননি। কিন্তু বন্ধুরা আর চারপাশের লোকজন তাকে অনুরোধ করলেন, লিখে ফেলুন না আপনার শিকারের কাহিনী। আর তিনি লিখতে বসেই আগে ভাবলেন রোমাঞ্চ প্রিয় শিশুদের কথা। তারপরই তিনি সহজ করেই লিখে বসলেন ভয়ঙ্কর সব মানুষখেকোদের কথা, যাদের তিনি শিকার করেছেন। তার ‘ম্যান ইটার্স অব কুমায়ূন’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে। বইটি দ্রুত সারাবিশ্বে শিকারকাহিনী হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর প্রকাশক তাকে পেয়ে বসেন। আবারও লিখে দিতে হবে। কি আর করা। আবারও বসে গেলেন লিখতে। লিখে ফেললেন ‘ম্যান ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্রয়াগ’ (১৯৪৮), ‘মাই ইন্ডিয়া’ (১৯৫২), ‘জাঙ্গল লোর’ (১৯৫৩), ‘দ্য টেম্পল টাইগার অ্যান্ড মোর ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ন’ (১৯৫৪) এর মতো অসাধারণ সব শিকার কাহিনীগুলো।

করবেট তার লেখায় নিজের জীবনের সব কথাই লিখে গেছেন। তার লেখা থেকে জানা যায়, বড় ভাই টমের উৎসাহে তিনি শিকার করতে শুরু করেন। ছোটো জিমকে শিকারে নিয়ে যেতেন টম। বন্দুক কাঁধে করে দুভাই বেরিয়ে পড়তেন শিকারে। একবার এক বুনো ভল্লুক শিকারে গিয়ে ছোটো জিম করবেটকে এক জায়গায় একটি বন্দুকসহ অপেক্ষা করতে বলে টম শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন। ঘন অন্ধকারে ছোটো জিম দেখতে পেলেন কিছু প্রাণী নড়াচড়া করতে করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয় পেলেন জিম। দৌড়ে পালাবার পথও নেই। প্রাণীগুলো কাছে চলে আসলে জিম টের পেলেন সেগুলো আর কিছু নয়, ভয়ংকর মানুষখেকো নেকড়ে। ছোট্টো জিম তো ভয়েই আড়ষ্ট হয়ে গেলো! কি করে কি করে! দূর থেকে তার অবস্থা দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন বড়ো ভাই টমও। শেষতক জিম মোটেই নড়াচড়া করলেন না। বরং বন্দুক উঁচিয়ে ধরলেন। কিন্তু নেকড়েগুলো তাকে আক্রমণই করলো না। সাহস ফিরে পেলেন জিম। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন গুলি চালাবেন। সাহসী জিম সাহস দিয়েই জয় করলেন জংগলের ভয়। টম ফিরে এসে জিমকে শুধালেন, সে ভয় পেয়েছে কিনা। জিম উত্তর দেবে কি! এত্তোক্ষণে তার হুঁশ হলো যে, সে শিকারে এসেছে!

নৈনিতালের স্কুলে পড়ার সময়ই বন্দুক চালানোয় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন জিম। সে সময় নৈনিতালে প্রচণ্ড শীত পড়তো। আর বণ্যপ্রাণীর আক্রমণের ভয়ে বন্দুক চালনা শিখে নিতে হতো অভিজাত পরিবারের সব সন্তানকেই। কারণ তখন শিকারটাই ছিলো অবসর কাটানোর সময়।


জিম নৈনিতালের স্কুলে লেখাপড়া শেষ করে ১৮৯৫ সালে বেঙ্গল অ্যান্ড নর্থ ওয়েস্টার্ন রেলওয়েতে চাকরি নিলেন। রেলওয়ের ইঞ্জিনে তখন খনিজ কয়লার বদলে কাঠও ব্যবহার করা হতো। সেই কাঠ সরবারহের ভার পড়ে তার ওপর। তিনি কাঠ কাটতে চলে যেতেন ভাবরের জঙ্গলে। এ কাজ শেষে তিনি ফুয়েল ইন্সপেক্টর, মালগাড়ির গার্ড, গুদামরক্ষক, সহকারী স্টেশনমাস্টারের চাকরিও করেন। এসব কাজ করতে করতেই তিনি বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধে ট্রেনিং দেন।

তার কর্মজীবনেই তিনি প্রথমে মানুষখেকো চম্পাবতের বাঘিনী শিকার করেন। সেটা ১৯০৭ সালের ঘটনা। নিছক শিকারের রোমাঞ্চ আর আনন্দ পাবার জন্য যারা যারা শিকার করেন তেমন শিকারি ছিলেন না জিম করবেট। তিনি অপ্রোয়জনে কোনো প্রাণীই শিকার করতেন না। তিনি কেবল সেসব প্রাণীই শিকার করতেন যে প্রাণীগুলোর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তো, মানুষের জন্য মূর্তিমান ত্রাস হয়ে পড়তো যেগুলো। এসব প্রাণীর নাম মুখে আনতেও মানুষ ভয় পেতো সেসময়। তারা ভাবতো এগুলো এমনই ভয়ঙ্কর, যে এদের নাম মুখে আনলেও সর্বনাশ হবে। আর এ প্রাণীগুলোও সত্যি সত্যিই ছিলো ভয়ঙ্কর। যাকে সামনে পেতো তাকেই খেয়ে ফেলতো। যেমন তাদের চেহারা তেমনি তাদের আচরণ। জিম এদের আচরণ প্রত্যক্ষ করতেন, তারপর এদের মতো করেই চিন্তা করতেন। যেনো একদম ওদের মনের কথাই পড়ে ফেলতেন তিনি। এরপর প্রয়োজন হলে সরাসরি সামনে গিয়ে শিকার করতেন। তার শিকারে যেমন চাতুর্য ছিলো তেমনিই ছিলো দূরন্ত সাহস।

বছরের পর বছর ধরে বিশাল এলাকা জুড়ে ত্রাস হয়ে উঠতো এসব প্রাণীগুলো। এই মানুষখেকো বাঘ আর চিতাগুলো শত শত মানুষ ও গবাদি পশু হত্যা করে মানুষদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেই অচল করে দিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, এদের যারা শিকার করতে ফাঁদ পাততো বা শিকারের চেষ্টা করতো, সেসব ফাঁদও কি কৌশলে যেন এড়িয়ে যেতো এ প্রাণীগুলো। এগুলো ছিলো ধূর্ত আর ভয়ঙ্কর। সবাই যখন ব্যর্থ হতো তখনই ডাক পড়তো জিম করবেটের। যেমন করেই হোক এটাকে শেষ করতে হবে। জিমও ছিলেন শিকারী হিসেবে তেমনই সাহসী। তিনিও চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসতেন। তিনি শুধু এলাকাবাসীর বা সরকারের অনুরোধেই শিকারে বেরোতেন। আর তিনি যখনই শিকারে নেমেছেন তখনই তাতে সফল হয়েছেন। তার শেষ মানুষখেকো শিকারের ঘটনা ছিলো থাক এর বাঘিনী শিকার; ১৯৩৮ সালে। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণেও তার বিরাট ভূমিকা ছিলো। ভারতের সব বন, এমনকি সরকারি সংরক্ষিত বন, যেখানে ঢোকার আগে অনুমতি নিতে হয় সেখানেও তার ছিলো অবাধ প্রবেশাধিকার। কেননা, তার মতো শিকারি কোনো বনে ঢুকলে বনের তো আর কোনো ক্ষতি হবে না বরং বন এবং বনের আশ পাশের মানুষগুলোর উপকারই হবে।

১৯৪৭ সালে জিম করবেট আফ্রিকার কেনিয়ার অন্তর্গত নিয়েরিতে চলে যান। সেখানে বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল কেনিয়াতে থাকার সময় তিনি লিখে শেষ করেন ‘ট্রি টপস’ নামের বইটি। এর ১৩ দিন পরই তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান। তাকে সমাহিত করা হয় সেন্ট পিটার্স অ্যাংকলিন চার্চ সিমেট্রিতে। এপ্রিল ১৯, ১৯৫৫ তার মৃত্যুর তারিখ।

তার জীবনকাহিনী তো জানলেন, এবার চলো আপনাদের তার কিছু শিকারের গল্প বলি।


চম্বাবতের বাঘিনী শিকারঃ
এ বাঘিনীটা প্রথমে বাস করতো নেপালের হিমালয় এলাকায়। সেখানে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে এ মানুষখেকো বাঘিনী, সে এতোই চাতুর্যের সঙ্গে একের পর এক মানুষ মারতে লাগলো যে, স্থানীয় লোকেরা ভাবতে শুরু করলো, এটা নিশ্চয়ই কোন প্রাণী নয়, নির্ঘাত যমদূত। যেই এর চেহারা দেখতো ভয়ে আঁতকে উঠতো। এমনকি এর নামও মুখে আনতে চাইতো না কেউ। তবে, এ বাঘিনীটা এমন ভয়ংকর হয়ে উঠলো কেন? বাঘ তো সহজে এতো ভয়ংকর হয়ে ওঠে না। আসলে দোষটা হলো মানুষের। এক আনাড়ী শিকারি এ বাঘটিকে গুলি করেছিলো। তাতেই আহত হয় বাঘটি। এরপর মানুষ দেখলেই তার রাগ বেড়ে যেতো। বাঘটি ভাবতো আবারও বুঝি তাকে মারতে আসছে। তাই কাউকে দেখামাত্রই সে আক্রমণ করে বসতো। বাঘিনীটি গুলি খেয়ে অচল হয়ে পড়েছিলো। ফলে তার পক্ষে আর স্বাভাবিক শিকার ধরা সম্ভব ছিল না। একসময় সে হয়ে যায় এক মানুষখেকো। মানুষ তো আর অন্য প্রাণীদের মতো অতো দ্রুত চলাফেরা করতে পারে না, তাই মানুষ শিকার করা তুলনামূলকভাবে সহজ। আর সেই মানুষখেকো বাঘিনীরও কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো। খবরের কাগজে তার নামে প্রচুর লেখালেখি হলো। শোনা গিয়েছিলো, এ বাঘটির হাতে নাকি মোটমাট ২০০ মানুষ মারা গেছে। অনেক শিকারি এ বাঘটিকে শিকারে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ফাঁদ পাতা হলো। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হলো। প্রাণীটি এতোই ধূর্ত যে, হত্যা করা তো দূরের কথা, বেশির ভাগ শিকারি ওর টিকিটিরও দেখা পেলো না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকলো যে, নেপালের রাজা পর্যন্ত একে মারতে সেনাবাহিনী পাঠাতে বাধ্য হলেন! হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সবাই। যতোই চালাক হোক, পুরো সেনাবাহিনীর সঙ্গে তো আর পেরে উঠবে না নিশ্চয়। পালিয়েও বাঁচতে পারবে না বাঘিনীটা। কিন্তু কোথায় কী! মানুষখেকোটাকে পাকড়াও করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো সেনারা। তবে লাভ অবশ্য একটা হলো। মানুষের এহেন অত্যাচারে বাঘিনীটা নেপাল পার হয়ে ভারতের বনে চলে এলো আর আস্তানা গেড়ে বসলো। এখানে এসে সে আরো চতুর আর সাহসী হয়ে গেলো। তা কেন হবে না বলেন, পুরো একটা সেনাবাহিনীকে সে নাকানিচুবানি খাইয়েছে যে! এবার সে করলো কি, কেবল রাতের বেলা নয়, দিনের বেলাতেও সামনে যাকে পেতো তাকেই তুলে নিয়ে যেতে শুরু করলো। মানুষ তো বাড়ির বাইরে যাওয়ার সাহসও হারিয়ে ফেললো। এই বুঝি বাঘ এলো। আজ এর গরু, কাল ওর মহিষ ধরে ধরে নিয়ে যেতে লাগলো বাঘিনীটা। তবে শেষতক হার তাকে মানতেই হলো। কারণ, ততোদিনে যে এর পিছু নিয়েছেন বিখ্যাত সেই শিকারি, আমাদের জিম করবেট। একদিন একটি ছোট্টো মেয়েকে আক্রমণ করলো বাঘিনীটা। জিম করবেটও পিছু নিলেন তার। বাঘিনীটা যে পথে গেছে তিনি রক্তের দাগ দেখে সে পথেই গেলেন। এবার মুখোমুখি হলেন। কুখ্যাত সে চম্পাবতের বাঘিনীটার। জিমের সাহস দেখে বাঘিনীটা তো ঘাবড়ে গেলো। জিম বুঝলেন কি করতে হবে। বাঘিনীটা তাকে আক্রমণের কোনো সুযোগই পেলো না। জিম শিকার করলেন তাকে। কিন্তু তার আগেই বাঘিনীটার থাবায় প্রাণ গেছে ৪৩৬ জন মানুষের। এরপর থেকে সে এলাকায় শান্তি ফিরলো। পুরো সেনাবাহিনী যা পারেনি সাহসী জিম একাই সেটা করে ফেললেন।


পানারের মানুষ খেকোঃ
আগেই বলে রাখি চিতারা কিন্তু গাছে উঠতে পারে, দ্রুত দৌড়াতে পারে আর দারুণ দক্ষ শিকারি এরা। অবশ্য গায়ে গতরে এরা বাঘের চেয়ে ছোটোই হয়। কিন্তু ধূর্ততা আর হিংস্রতায় এরা বাঘের চেয়েও এক কাঠি বেশি সরেস। কুমায়ূন এলাকায় পানার নামক এক স্থানে বসতি গেড়েছিলো হিংশ্র এক চিতা। এটির শিকার হতে হতো অনেককেই। আর তাই চিতাটির কুখ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েলো দ্রুতই। আর এই চিতাটি ছিলো চরম ধূর্ত। চোখের নিমিষে যেন বাতাসে মিলিয়ে যেতো। কাউকে দ্রুত আক্রমণ করে তারপর সটান পালিয়ে যেতো। তবে, তার হিংশ্র হয়ে ওঠার কারণটিও ছিলো মানুষ। এক শিকারির গুলিতে আহত হয়ে স্বাভাবিক শিকার ধরতে অক্ষম হয়ে পড়ে পানারের চিতাটি। এরপরই সে চম্বাবতের বাঘিনীর মতোই হিংশ্র হয়ে যায়। ওর হাতে মারা যায় প্রায় ৪০০ মানুষ। ১৯১০ সালে ওটাকে হত্যা করেন বিখ্যাত শিকারি জিম করবেট। জিম এটাকে চিতার মতোই অনুসরণ করে শিকার করেন।

নেকড়ের পিছু নেয়াঃ
জিম করবেট কোনো প্রাণীর আচরণ জানতে তার পিছু নিতেন। ঠিক যেভাবে কোনো প্রাণী শিকারের আগে তার পিছু নেয় তেমনি করেই। জিম আশ্চর্য হয়ে দেখলেন প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত আচরণ করে নেকড়েরা। এরা কোনো শিকার ধরার আগে সে প্রাণীটিকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। তারপর সবাই মিলে আক্রমণ করে বসে। জিম একদিন এক নেকড়ের পিছু নিলেন। দেখলেন একটা ছোটো নেকড়ে ইয়া বড় একটা মহিষকে অনুসরণ করছে। কিন্তু এটি কিছুতেই আক্রমণ করছে না। মহিষটি ঘাষ খাচ্ছিল। একসময় সুযোগ বুঝে নেকড়েটি মহিষটির পিঠে উঠে পড়লো। কিন্তু কামড় দিলো না। পিঠে বসেই থাকলো। মহিষটি প্রাণপণে নেকড়েকে পিঠ থেকে ফেলে দেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। শেষতক মহিষটি একটি ভুল করে একটু আড়ালে চলে গিয়ে একটা গাছের সঙ্গে নেকড়েকে আছাড় দেবার চেষ্টা করলো, কিন্তু ততোক্ষণে বড়ো মহিষটিকে নেকড়ে সবার আড়াল করে বাগে পেয়ে গেছে। জিম দেখলেন কিভাবে একটা বড়ো মহিষকে একটা নেকড়ে শিকার করে ফেললো! এভাবে নেকড়ের পিছু নিয়ে নিয়ে নেকড়েদের জীবন যাপন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। তিনি সবকিছুই তার বইতে লিখে গেছেন। তিনি প্রাণীর আচরণ হিসেব করে তাদের আয়ত্বে আনার চেষ্টা করতেন।

জিম করবেট যে সময় জন্মগ্রহণ করেন সে সময় পুরো ভারতবর্ষ ছিলো কুসংস্কারে ভরা। মানুষ বাঘ, ভালুক, চিতাকে যমের মতো ভয় পেতো। অকারণে শিকার করতো। এগুলোকে পূজাও করতো। ভয়ে নামটি মুখে আনতে চাইতো না। কিন্তু জিম এসব কুসংস্কার মোটেও বিশ্বাস করতেন না। যার বিরুদ্ধে বেশি কুখ্যাতি তাকেই যে শিকারে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। আর এই বিখ্যাত শিকারিকে কিন্তু ভোলেনি ভারতীয় উপমহাদেশের লোকজনও। ভারত সরকার তো তাঁর বাড়িটাতে একটা জাদুঘরই বানিয়ে দিয়েছে।

লেখকঃ মোঃ মিন্টু হোসেন।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info