ম্যারাথনের যুদ্ধের আংশিক ঘটনা


ম্যারাথনের যুদ্ধ হল ৪৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্র অ্যাথেন্সের মূল শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে ম্যারাথন নামের এক ময়দানে গ্রিক এবং পারসিকদের মধ্যে সংঘটিত একটি যুদ্ধ। অ্যাথেনীয় এবং তাদের মিত্র প্লাতায়ীয়রা এবং পারস্যের রাজা ১ম দরিয়ুশের সৈন্যদের মধ্যে এই যুদ্ধ ঘটে এবং যুদ্ধে গ্রিকদের জয় লাভ হয়। এবং এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধেই গ্রিসের উপর পারস্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়েছিল।


পারসিকেরা কেন গ্রীসে অভিযান চালিয়েছিল এবং কোন পরিস্থিতিতে ম্যারাথনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে সম্পর্কিত আধুনিক জ্ঞান পুরোপুরি গ্রিক জনশ্রুতির উপর নির্ভরশীল। যেগুলি যুদ্ধের ৫০ থেকে ৬০ বছর পরে গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোদোতুস লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। হেরোদোতুসের ভাষ্য মতে এশিয়া মাইনর অঞ্চলে ৪৯৯ বা ৪৮৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীন আয়োনীয় গ্রিক শহর গুলি বিদ্রোহ করেছিল। এবং সেই বিদ্রোহের সহায়তা করার প্রতিশোধ হিসেবে পারস্যের সম্রাট 'দরিয়ুশ' গ্রিক শহর অ্যাথেন্স এবং 'এরেত্রিয়ার' বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন । হেরোদোতুসের মতে পারস্যের লক্ষ্য ছিল সমগ্র গ্রিস দখল করা। আক্রমণের আগে দরিয়ুশ সমস্ত গ্রিক শহরগুলিকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। অ্যাথেন্সের নির্বাসিত স্বৈরশাসক হিপ্পিয়াস এ সময় দরিয়ুশের অভিযান বাহিনীতে ছিলেন এবং তিনি হয়ত দরিয়ুশকে প্রভাবিত করে থাকবেন। ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দরিয়ুশের ভাতিজা এবং জামাই মার্দোনিউসের অধীনে একটি নৌবাহিনী উত্তর গ্রিসের থ্রাকে ও ম্যাসেডোনিয়া অঞ্চলে ঘুরে আসেন। তারা ম্যাসেডোনিয়াকে পারস্যের পদানত করতে সক্ষম হন। কিন্তু আথোস পর্বতের কাছে ঝড়ে পড়ে মার্দোনিউসের নৌবহর ধ্বংস হয়ে যায়।


৪৯০ খ্রিস্টাব্দেরপূর্বে পারসিক সমরনেতা দাতিস এবং আর্তাফের্নেস এজীয় সাগর পাড়ি দেন এবং যাবার পথে সাইক্লাডিক দ্বীপপুঞ্জ দখল করেন। তারা এউবোইয়া দ্বীপে অবতরণ করেন এবং শক্তি দিয়ে ও বিশ্বাসঘাতকদের সহায়তায় সেখানকার কারিস্তুস ও এরেত্রিয়া শহরগুলিকে পদানত করেন। এ সময় আথেনীয়রা সাহায্য প্রার্থনা দিয়ে দৌড়বিদ ফেইদিপ্পিদেসকে স্পার্তা শহরে পাঠায়। এউবোইয়া থেকে পারসিকরা সহজেই অপ্রশস্ত সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ম্যারাথনের সমভূমিতে পৌঁছে। ম্যারাথনে যাবার অনেকগুলি কারণ ছিল। ম্যারাথন ছিল এউবোইয়া থেকে সমুদ্র পাড়ি দেবার সবচেয়ে সহজ গন্তব্যস্থল। এছাড়া হিপ্পিয়াস হয়ত আত্তিকার পূর্ব প্রান্তের অঞ্চলগুলির কাছ থেকে রাজনৈতিক সহায়তার আশা করেছিলেন। পারসিকেরা ম্যারাথনের সমভূমিগুলিকে তাদের ঘোড়সওয়ার সৈন্যদের জন্য আদর্শ বলে মনে করেছিলেন। পারসিকেরা ম্যারাথনে পৌঁছবার পরে কিছুদিন বিরতি দিয়ে ম্যারাথনের যুদ্ধ শুরু করেন। এর আগে অ্যাথেন্সের দশ সমরনেতার মধ্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা নিয়ে এক বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত মিলিতিয়াদেসের যুক্তি যুদ্ধে যাবার পক্ষে তাদেরকে মত পরিবর্তন করে। মিলিতিয়াদেসের যুক্তি ছিল যুদ্ধ না করলে আথেন্সের ভেতরে বিভাজন এবং বিশ্বাসঘাতকতা বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে যুদ্ধে জয়ী হলে গ্রিসের উপর আথেন্সের আধিপত্য নিশ্চিত হবে।


প্রকৃত যুদ্ধের ঘটনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত জানা যায়নি। পারসিকদের ছিল অশ্বারোহী সেনাদল এবং গ্রিকদের এরকম কোন সেনাদল দেখতে না পেয়ে তারা বিস্মিত হয়েছিলেন। যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার গ্রিক অংশ নিয়েছিল। পারসিক সৈন্যের সংখ্যার ব্যাপারে কিছু দ্বিমত আছে। সমসাময়িক কবি সিমোনিদেসের দেয়া সংখ্যা ৯০ হাজার বিশ্বাসযোগ্য না। একটি আধুনিক হিসাব মতে ২৫ হাজার পারসিক সৈন্য যুদ্ধ করেছিলেন। যা ই হোক পারসিকেরা ছিল গ্রিকদের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু তীব্র এই যুদ্ধশেষে পারসিকেরা বড় পরাজয় লাভ করে। ম্যারাথনের যুদ্ধের পর পারসিকেরা জাহাজে করে সৌনিওন অন্তরীপ ঘুরে আথেন্স শহর সরাসরি আক্রমণ করতে যায়। কিন্তু আথেনীয় সেনাবাহিনী সময়মত শহরে ফিরে আসে এবং পারসিকদের এই দ্বিতীয় আক্রমণও প্রতিহত করে। পারস্যের জাহাজ গুলি শেষ পর্যন্ত অভিযানে ব্যর্থ হয়ে ফেরত চলে যান। পারসিকেরা আবার ৪৮০ ও ৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল। সেই অভিযানে থের্মোপিলাইয়ের যুদ্ধ সালামিস এবং প্লাতাইয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

লেখকঃ ব্লগ সার্চম্যান।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info