বিলুপ্ত ম্যামথের দাঁত

প্রায় ১০ হাজার বছর আগে উত্তর সাইবেরিয়ার অঞ্চলটিতে বসবাস করত বিলুপ্ত ম্যামথ। আর তাদের এই বিলুপ্ত হবার পিছে মূল কারন ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি। যার ফলে এলাকাটি ধীরে ধীরে ম্যামথের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। আর যেহেতু এটি একটা দ্বীপের মত, তাই সহজে স্থান পরিবর্তন করাও সম্ভব ছিল না। আর তাই এই স্থানটি হয়ে ওঠে ম্যামথদের জন্য নরকের সমান গরম। আর এই কারনেই প্রায় ৩,৭০০ বছর আগে এই দ্বীপ থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ম্যামথ।


ম্যামথ বিলুপ্ত হলেও তাদের দেহ অবশেষ বিশেষ করে তাদের দাঁত কিন্তু এখনও এই সাইবেরিয়ার বেশ বিপুল সংখ্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের ধারনা রাশিয়ার এই অঞ্চলে হাজার হাজার টন পরিমানে এই দাঁত রয়েছে। বর্তমানে বছরে ২০ থেকে ৬০ টন দাঁত উদ্ধার করা হয় মাটির নিচ থেকে। এই নম্বর থেকে নিশ্চই বুঝতে পারছেন এই অঞ্চলে কি বিপুল পরিমানে ম্যামথের বসবাস ছিল।

এখানে খুঁজে পাওয়া ম্যামথের এই দাঁত গুলি লম্বায় ৪ থেকে ৪.৫ মিটার হয়ে থাকে, আর এক একটি দাঁতের ওজন হয় ১০০ থেকে ১১০ কেজি।


আঞ্চলিক একটি লোককথা প্রচলিত আছে এই বিলুপ্ত ম্যামথ নিয়ে। ধারনা করা হয় সৃষ্টির একদম শুরুর দিকে আবির্ভাব হয়েছিল বিশাল দেহী ম্যামথ প্রজাতির। আর এতা এত বড় ছিল যে মাঝে মাঝে এরা নিজেরাই নিজেদের ওজন বহন করতে পারত না। আর এই কারনেই নূহ (আঃ) এর জীবনকালে যে বিধ্বংসী বন্যা হয়ে ছিল সে সময় তারা তাদের এই অতিকায় ওজনের কারনে নূহ (আঃ) এর তৈরি করা নৌকাতে চড়তে পারে নাই। আর এই কারনেই এদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জলাশয়ের ধারে মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া যায়।


ম্যামথের এই দাঁত গুলি খুঁজে বের করে আনা কিন্তু মোটেও সহজ ব্যপার না। এই দাঁত গুলি বেশির ভাগ খুঁজে পাওয়া যায় জলাশয়ের ধারে কাছে বিশেষ করে নদীর পানির নিচে এদের খোঁজ বেশি পাওয়া যায়। এক একটি দাঁত খুঁজে বের করে তা উত্তোলন করতে দরকার হয় কঠর পরিশ্রমের। আর এই পরিশ্রম কালের ব্যাপ্তি কয়েক ঘন্টা থেকে দিনের পর দিন লাগতে পারে। স্থানীয় রীতি মতে এই দাঁত গুলি মাটি খুড়ে বের করে তুলে নেবার আগে, গর্তের ভিতরে রূপার অলংকার অথবা বিভিন্ন রঙয়ের বল দেওয়া হয়, দেবীকে তুষ্ট করার জন্য।


বর্তমান সময়ে সাইবেরিয়া থেকে এই সকল দাঁত উত্তোলন করা সম্পূর্ন ভাবে নিষিদ্ধ। বর্তমানে কালো বাজারে যে দাঁত গুলি পাওয়া যায় তার ৯০% জোগান দাতা হল চীন। তাদের প্রাচীন সভ্যতার একটি অংশ হল বড় বড় দাঁতের উপর বিভিন্ন জিনিষের খোঁদাই করা শিল্প আর এই কারনেই তারা সরকারি বাধা উপেক্ষা করেও এখনও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের ভয় হল, এভাবে যদি দাঁত উত্তোলন চলতে থাকে তাহলে এই দাঁত গুলি থেকে তারা যে তথ্য সংগ্রহ করে তা আর সম্ভব হবে না। বিশেষ করে বিশ্বের তাপমাত্রা পরিবর্তন সহ তৎকালীন প্রাণীগুলির খাদ্য অভ্যাস সম্পর্কে তারা আর নতুন তথ্য আবিস্কার করতে পারবে না।


শুধু মাত্র যে ম্যামথের দাঁত আবিষ্কৃত হয়েছে তা নয়, খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়েছে সম্পূর্ন ম্যামথের দেহ। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে 'অক্ষত "ম্যামথ" দেহ' লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। শুধু তাই নয় হয়ত ভবিষ্যতে এই ম্যামথ আবার দাপিয়ে বেড়াবে এই ধরণী আর এ নিয়ে কাজও চলছে। বিস্তারিত জানতে পূর্বে লেখা 'ফিরে আয় ম্যামথ" আর 'কিভাবে ম্যামথ ক্লোন করবেন' লেখাগুলি পড়ে দেখতে পারেন।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info