'অ্যানাবেল' পৈশাচিক এক পুতুলের নাম ।। 'Anabela' Ghoulish Puppet Name


পরিচালক জেমস ওয়ানের মুক্তি পাওয়া আলোচিত ছবি ‘The Conjuring’। অতিপ্রাকৃত এই ছবিটি ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচিত। ছবির মূল কাহিনী একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আজ আমরা সেই ভয়াবহ ঘটনা নিয়েই জানবো।

সাল ১৯৭০, ডোনা নামের মেয়েটিকে তার মা একটি পুরনো কিন্তু খুব সুন্দর পুতুল এনে দিলেন। পুতুলটির নাম ছিল অ্যানাবেল। ডোনা তখন কলেজে পড়তো। তার রুমমেটের নাম ছিল এনজি। প্রথম দেখাতে পুতুলটিকে দেখে খুব অস্বাভাবিক কিছু মনে হয় নি। কিন্তু একদিন ডোনা খেয়াল করলো অ্যানাবেল নামের পুতুলটি নিজ থেকেই নড়াচড়া করছে। প্রথম দিকে এই নড়াচড়ার বিষয়টি খুব একটা চোখে পড়তো না। তবে বোঝা যেত পুতুলের অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ পরে দেখা গেলো পুতুলটি একবারে জীবন্ত মানুষের মতোই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাচ্ছে! ডোনার বন্ধু এনজি একবার বাড়িতে যাবার আগে অ্যানাবেল নামের পুতুলটিকে ডোনার বিছানায় রেখে যায়। ফিরে এসে দেখে সেটি সোফার উপর। অথচ ডোনাও সেসময় বাসায় ছিল না।

লো নামে ডোনা ও এনজি উভয়েরই এক বন্ধু ছিল। ছেলেটি কোন এক কারণে পুতুলটিকে দেখতে পারতো না। তার কেবলই মনে হতো পুতুলটির মাঝে অস্বাভাবিক কিছু আছে, অশুভ কিছু। তবে ডোনা ও এনজি দুজনেই এসব কিছু বিশ্বাস করতো না। তাদের একটাই কথা, পুরো বিষয়টির একটি ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু শীঘ্রই অ্যানাবেল মানে পুতুলের কার্যক্রম ভয়াবহ হয়ে গেলো। ডোনাদের ঘরে পার্চমেন্ট কাগজের চিরকুট পাওয়া যেতে লাগলো। যাতে লেখা থাকতো 'আমাদেরকে সাহায্য কর' কিংবা 'লো-কে সাহায্য কর'। অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে ডোনা বা এনজি-কেউই পার্চমেন্ট কাগজ ব্যবহার করতো না। তাহলে এগুলো কোথা থেকে ঘরে আসতো?

ঘটনা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। একদিন ডোনা বাড়িতে এসে পুতুলটিকে তার বিছানার উপর পায়। পুতুলের হাত থেকে রক্ত কিংবা লাল রঙের কোন তরল বের হয়ে আসছিল। এবার ডোনা ঘটনা উদঘাটনে নামে। এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, ডোনাদের এপার্টমেন্ট যখন তৈরি হচ্ছিল তখন সেখানে একটি মাঠ ছিল। সেসময় অ্যানাবেল হিগিনস নামে এক মেয়ের লাশ সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সবার ধারণা হলো, এনাবেলের আত্মা হয়তো পুতুলের সাথে আছে। যাই হোক, ডোনা ও এনজি পুতুলটিকে তাদের সাথেই রাখলো। আস্তে আস্তে সেই দুঃসহ আর ভয়াবহ সময় কিছুটা শান্ত হয়ে এলো।

এদিকে লো নামের ছেলেটি ভয়াবহ সব স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। সে দেখলো, সে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তার পা বেয়ে পুতুলটি শরীরের উপর উঠে আসছে। এরপর তাকে পুতুলটি গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে লাগলো। লো ভয়াবহ চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। তার মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো, যেন কেউ তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।

এর কিছুদিন পর লো ও এনজি বাইরে ঘুরতে বের হলো। ফিরে এসে তারা ডোনার ঘরে কোন একজনের শব্দ শুনতে পায়। আতঙ্কে তারা উভয়ে জমে গেল। লো দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ফেললো। শুধু পুতুলটি বিছানায় পড়ে ছিল। যখন লো পুতুলটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তার মনে হচ্ছিল তার ঘাড় যেন আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলো। সে ঝট করে পেছনে তাকায় কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না। হঠাৎ সে তার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। লো তার শার্ট খুলে বুকে বেশ কিছু নখের আঁচড়ের দাগ দেখতে পায়, সাথে বেশ কিছু ক্ষত। তার দৃঢ বিশ্বাস ছিল এনাবেল নামের পুতুলটিই এই কাজ করেছে।

লো এর বুকের বিশ্রি ক্ষতগুলো অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে দুই দিনের মাঝেই পুরোপুরি গায়েব হয়ে যায়। তারা সবাই মিলে এক পাদ্রীর শরণাপন্ন হল। পাদ্রী 'Ed' এবং 'Lorraine Warren' নামে দুইজনকে ডেকে আনলেন। সব শুনে তারা উভয়ে নিশ্চিত হলেন, পুতুলের সাথে ভূত নয়, কোন অশুভ আত্মা, তাদের ভাষায় ‘পিশাচ’ রয়েছে। আর এই পিশাচের উদ্দেশ্য পুতুল নয়, ডোনার আত্মার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ডোনার দেহে আশ্রয় নেয়া।

পাদ্রী ডোনাদের বাড়িতে একটি এক্সোরসিজম বা পিশাচ তাড়ানোর অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এড আর লরেন এনাবেল পুতুলটি একটি বাক্সে ভরে ফেলেন ও গাড়িতে করে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। এড হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি না চালিয়ে ছোট রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যান। কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন অভিশপ্ত এই পুতুল হাইওয়েতে ঘন্টায় ৬২ মাইল বেগে চালানো গাড়ির দফারফা করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ। ছোট রাস্তা ধরে যাবার সময় এড এর আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে একবার গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেল, আরেকবার ব্রেক উল্টোপাল্টা আচরণ শুরু করলো। পুতুলের উপর ‘পবিত্র পানি’ ছিটিয়ে দেয়ার পর বিড়ম্বনা কিছুটা কমলো।

বাড়িতে নিয়ে আসার পর অ্যানাবেল কিছুদিন শান্ত হয়ে ছিল। কিন্তু এরপর আবার শুরু হলো তার উৎপাত। তাকে এডের বাড়িতে কখনো এক রুমে, কখনো আরেক রুমে দেখা যেতে লাগলো। এবার একজন ক্যাথলিক পাদ্রীর ডাক পড়লো। তিনি বললেন, 'এটা একটা পুতুল, এটা আবার কি করবে?' বাড়ি ফেরার পথে ঐ পাদ্রীর গাড়ি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে। সেযাত্রায় তিনি বেঁচে যান। এড আর লরেন পুতুলটিকে একটি তালাবদ্ধ বাক্সে রেখে দিলেন। তখন থেকে এটি এখনো এই অবস্থাতেই আছে।

সে কি ফিরে আসার অপেক্ষা করছে? কেউ জানে না। কিন্তু বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত এই অদ্ভুত রহস্যের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info