ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহর

আচ্ছা, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন, আপনি ৫০০-৬০০ বছরের পুরোনো কোনো প্রাচীন সভ্যতার একটি শহরে পৌঁছে গেছেন তাহলে কেমন লাগবে বলেন তো? নিশ্চয়ই খুব অবাক হবেন। সেই সাথে ব্যাপারটা হবে খুবই বিস্ময়কর আর উত্তেজনার। আসলে প্রাচীন যে কোনো নিদর্শন নিয়েই আমাদের বিস্ময় আর কৌতূহল থাকে খুবই বেশি। এই যেমন পিরামিডের কথাই ধরেন না। কয়েক হাজার বছরের পুরোনো এই প্রাচীন স্থাপত্য নিয়ে আজও মানুষের মনে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আমাদের দেশেও পাহাড়পুর, সোমপুর বিহার, তারপর উয়ারী-বটেশ্বরের মত এরকম অনেক নিদর্শন আছে, যেগুলো খুবই পুরোনো। আসলে সারা পৃথিবীজুড়ে এখনও পর্যন্ত এরকম হাজার হাজার প্রাচীন নিদর্শন টিকে আছে। এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো হয়তো আপনাদের খুবই চেনা, আবার অনেকগুলোর নামই হয়তো আপনারা শোনেননি। আজকে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এমনই একটি প্রাচীন শহরের সাথে। ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া এই শহরটির নাম মাচু পিচু।


মাচু পিচু মানে পুরোনো চূড়োঃ
মাচু পিচু! নামটাই কেমন অদ্ভুত, তাইনা? আসলে আজকে আমরা যে সব জিনিসের নাম জানবো তাদের সবগুলোর নামই বেশ অদ্ভুত। এমনকি ইনকাদের প্রাচীন এই ভাষাটিরও নাম বেশ অদ্ভুত- ‘কুয়েচুয়া’ ভাষা। কুয়েচুয়া ভাষায় মাচু পিচু শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘পুরোনো চূড়ো’। পাহাড়ের চূড়ায় তৈরি করা হয়েছিলো বলেই হয়তো তারা শহরটির এমন নাম দিয়েছিলো। শুনলে অবাক হতে হয়, মাচু পিচু শহরটি নাকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২,৪০০ মিটার (৭,৮৭৫ ফিট) উঁচুতে অবস্থিত। অর্থাৎ কিনা, আমাদের দেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিনডং-এরও (১২৩১ মিটার) প্রায় দ্বিগুণ উচ্চতায়! এতো উঁচুতে কিভাবে তারা একটা আস্ত শহর তৈরি করে ফেললো সেটাই কিন্তু একটা বিরাট ভাবনার বিষয়। তাও আবার সেই কত্তো বছর আগে। মাচু পিচু নির্মিত হয় প্রায় ৫৫০ বছর আগে, ১৪৫০ সালের দিকে। এর একশো বছর পরেই স্প্যানিশরা ইনকা সভ্যতা আক্রমণ করে। ধ্বংস করে ফেলে তাদের বেশীরভাগ শহরই। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, ওরা নাকি মাচু পিচু শহরটি খুঁজেই পায়নি! ওরা হয়তো ভাবতেই পারেনি যে পাহাড়ের এতো উঁচুতে কোনো শহর থাকতে পারে। এদিকে মানুষজন না থাকার কারণে শহরটিও ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কয়েকশ বছর ধরে তো মানুষ এই ঐতিহাসিক শহরটিকে খুঁজেই পায়নি। এরপর ১৯১১ সালে হাইরাম বিংহাম নামের এক মার্কিন ঐতিহাসিক মাচু পিচু শহরটি আবিষ্কার করেন। সেও এক মজার গল্প। আরেকদিন সুযোগ পেলে সেই আবিস্কারের গল্পও আপনাদের বলা যাবে। আজকে শুধু মাচু পিচুর গল্পই শোনেন।


কোথায় এই হারানো শহর?
মাচু পিচু যেতে হলে আপনাকে সবার প্রথমে যেতে হবে পেরুতে। শহরটা সে দেশেই অবস্থিত! আন্দিজ পর্বতমালার যে অংশটুকু পেরুতে পড়েছে সেখানকারই এক পর্বতের চূড়ায় এর অবস্থান। সেই পাহাড়টির নাম হয়ে গেছে মাচু পিচু। আর শহরটির অবস্থানও ছিলো খুব সুরক্ষিত। অন্যরা তো এই শহর সহজে খুঁজে পাবেই না, আর যদি পায়ও, আক্রমণ করে তেমন সুবিধা করতে পারবে না। পাহাড়ের এক পাশ চূড়া থেকে একেবারে খাড়া ভাবে ৬০০ মিটার নিচে উরুবাম্বা নদীর পাদদেশে গিয়ে মিশেছে। অন্যদিকে হুয়ানা পিচু নামের আরেকটি পর্বত খাড়া উঠে গেছে আরও কয়েক হাজার ফিট উঁচুতে। সুতরাং দুই দিক দিয়েই শহরটি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ নিরাপদ ছিলো।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছে, কি এমন কারণ ছিলো যে, ইনকারা পাহাড়ের ঐ উঁচু চূড়ায় এমন ভয়ংকর একটা জায়গায় এত্তো সুন্দর একটা শহর তৈরি করতে গেলো? কি, মাথা চুলকাচ্ছেন? আসলে আপনার মতো অনেক বিশেষজ্ঞরও বহু বছর ধরেই এভাবে মাথা চুলকাচ্ছেন। কিন্তু কেউই একমত হতে পারেনি। হাইরাম বিংহাম এবং আরও অনেকের মতে এই সুরক্ষিত শহরটি ইনকাদের ঐতিহ্যগত জন্মস্থান, নয়তো সূর্য কুমারীদের পবিত্র কেন্দ্র ছিলো। আবার অনেকের ধারণা, এটি ব্যবহৃত হতো ভয়ংকর অপরাধীদের জেলখানা হিসেবে! অনেকে আবার এও মনে করেন, এটি আসলে ছিলো ইনকা সম্রাটদের একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র। বেশিরভাগ মানুষেরও এটাই ধারণা। তবে জ্যোতির্মণ্ডলীয় নানা ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য এই শহরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আর সামরিক দিয়ে যে শহরটি বেশ সুরক্ষিত ছিলো সে তো আগেই বলেছি। ঐ যে, শহরটি যে প্রাকৃতিকভাবেই খুব নিরাপদ ছিলো।


মাচু পিচুর তিনটি ভাগঃ
এবার চলেন, চোখ বন্ধ করে একবার ঘুরে আসি মাচু পিচু শহর থেকে। দেখে আসি কতোটা সুন্দর ছিলো ইনকাদের এই শহর। প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, পুরো মাচু পিচু শহরটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত ছিলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটির নাম তারা দিয়েছেন ‘পবিত্র এলাকা’। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই জায়গাটি ইনকাদের কাছে ছিলো খুবই পবিত্র। পবিত্র হওয়ার কারণও আছে। ইনকাদের ধর্মীয় যতো পবিত্র স্থাপনাগুলো, সব যে এই জায়গাতেই ছিলো। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইন্তিওয়াতানা পাথর, সূর্য মন্দির এবং তিন জানালা বিশিষ্ট ঘর। ইনকাদের সূর্যদেবতা, আর যতো মহান দেবতা ছিলো তাদের প্রতি এই পবিত্র স্থাপনাগুলো উৎসর্গ করেছিলো ওরা। আর ওদের পূজা-অর্চনাও ওরা এখানেই সম্পন্ন করতো। নিশ্চয়ই কৌতূহল হচ্ছে যে, ইনকারা কোন কোন দেবতার পূজা করতো? বলছি শোনেন। ইনকাদের প্রধান দেবতা ছিলো সূর্যদেবতা। অর্থাৎ, তারা সবচেয়ে বেশি পূজা করতো সূর্যের। আসলে প্রাচীনকালে প্রায় সব অঞ্চলের মানুষেরই প্রধান দেবতা ছিলো সূর্যদেবতা, সে মিশরের কথাই বলো, রোমের কথাই বলো, গ্রিসের কথাই বলো, আর আমাদের উপমহাদেশের কথাই বলেন। আমাদের উপমহাদেশে হিন্দুধর্ম উদ্ভব হওয়ার আগে যে লোকজ বা আঞ্চলিক ধর্ম ছিলো, সেখানেও সবচেয়ে বড়ো দেবতা ছিলো সূর্যদেবতা।


যাই হোক, আমরা মাচু পিচু’র গল্পে ফিরে আসি। মাচু পিচু’র আরেকটি অংশ ব্যবহৃত হতো জনসাধারণের থাকার জন্য। এই অংশটি শহরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। সাধারণত নিম্নশ্রেণীর লোকজনই এখানে বসবাস করত। এখানকার স্থাপনাগুলোর মধ্যে বেশীরভাগই গুদামঘর আর সাধারণ বসতবাড়ি। মাচু পিচু শহরের অন্য অংশটুকু ছিলো অভিজাত এলাকা। অর্থাৎ এখানে সব অভিজাত শ্রেণীর লোকজন বাস করতো। এই অংশটুকু কিন্তু আপনি খুব সহজেই চিনতে পারবেন। একটা ঢালের উপর কয়েক সারিতে অবস্থিত এখানকার বাড়িগুলো। মজার ব্যাপার কি জানো, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের জন্য ইনকাদের তৈরি ঘরগুলোর চেহারাও ছিলো বিভিন্ন রকম। এই যেমন ধরেন, ‘হামাউতা’ বা জ্ঞানী লোকদের বাড়িগুলোর দেয়াল ছিলো লালচে রঙের। আবার ‘নিউস্তা’ বা রাজকুমারীদের ঘরগুলো ছিলো অসম আয়তাকার আকৃতির, মানে আয়তাকার ঘর, কিন্তু একেক দেয়ালের দৈর্ঘ্য একেক রকম। এছাড়াও এই এলাকায় খোদাই করা একটা স্মৃতিসৌধ ছিলো, যার ভেতরে একটা নকশা করা ঘরও আছে। সাধারণত যজ্ঞ আর উৎসর্গ করার কাজে এ ঘরটা ব্যবহার করা হত।


পাথরের তৈরি ঘরবাড়িঃ
ইনকাদের তৈরি ঘরবাড়িগুলোর সাথে কিন্তু আমাদের আজকালকার তৈরি ঘরবাড়িগুলোর একদমই মিল খুঁজে পাবেন না। যদি মনে করে থাকেন যে, ইনকারাও এখনকার মত ইট-কাঠ-সিমেন্ট-সুড়কি-কংক্রিট দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করতো তাহলে কিন্তু একদম ভুল করবেন। আসলে এতো আগে তো ইট-সুড়কি-সিমেন্ট-কংক্রিট আবিষ্কারই হয়নি। তাহলে ওরা কি দিয়ে ঘরবাড়ি বানাতো? আসলে ইনকারা তাদের বাড়িগুলো তৈরি করতো পাথর দিয়ে। পাথর দিয়ে বাড়ি নির্মাণে ওরা ছিলো খুবই দক্ষ। পাথর বাড়ি বানালো, তা না হয় মেনে নিলেন, কিন্তু পাথর তো জোড়া দিতে হবে, নাকি? ওরা পাথরগুলো জোড়া দিতো কি দিয়ে? আসলে পাথর দিয়ে বাড়ি তৈরির জন্য ওরা পাথরগুলো এতো নিখুঁতভাবে কাটতো যে কোনোরকম বালি, সিমেন্ট বা অন্য কোনো কিছু ছাড়াই ওগুলো একদম খাঁজে খাঁজে শক্তভাবে বসে যেতো। আর এই পাথরের দেয়ালগুলোর জোড় এতোটাই নিখুঁত যে একটা পাতলা ছুরির ফলাও জোড়গুলোর ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো যায় না! তাহলেই বোঝেন, কি পরিমাণ দক্ষ ছিলো তারা এই কাজে!


ভূমিকম্প সামলাতে যতো কৌশলঃ
ইনকাদের ঘরবাড়িগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন যে ওরা ছিলো এক একজন যাকে বলে পাকা ইঞ্জিনিয়ার। মাচু পিচু শহরের বাড়িগুলোই তার বড় প্রমাণ। এটা হয়তো জানেন, পেরু খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। এখানে প্রায়ই বড় বড় ভূমিকম্পে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখেই ইনকারা অনেক বুদ্ধি করে তবেই ওদের বাড়িগুলো তৈরি করেছিলো। সিমেন্ট জাতীয় মিশ্রণের গাঁথুনির চাইতে পাথরে পাথর বসিয়ে তৈরি গাঁথুনি অনেক বেশি ভূমিকম্প প্রতিরোধী। তাই ওরা ওদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এভাবেই তৈরি করতো। আরেকটা আশ্চর্য তথ্য দেই আপনাদের; ইনকাদের তৈরি বাড়ির দেয়ালগুলোতে আপনি প্রচুর সূক্ষ নকশা দেখতে পাবেন। এই নকশাগুলো কিন্তু শুধু সৌন্দর্যের জন্যই করা হয়নি, অন্য কারণও আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই সূক্ষ নকশাগুলিই ভূমিকম্পের সময় দেয়াল ধ্বসে পড়া অনেকাংশে রোধ করে। কি, অবাক হয়ে গেলেন নাকি? তাহলেই চিন্তা করেন, এই নকশাগুলো তৈরি করতে ইনকারা কতোখানি মাথা খাটিয়েছিলো! তার উপর দেখবেন যে, সবগুলো দেয়াল একদম সোজা নয়। দেয়ালগুলোর একটা সারি অন্য সারি থেকে একটু হেলানো। ভাববেন না যে, এগুলো বাতাসে হেলে পড়েছে। ওরা ইচ্ছে করেই দেয়ালগুলো এভাবে তৈরি করেছে। কেন? এর ফলে দেয়ালগুলোর ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে, ফলে ভূমিকম্পে এগুলো সহজে ধ্বসে পড়বে না।


ইন্তিওয়াতানা পাথর, পবিত্র পাথর নাকি সূর্যঘড়ি?
ইন্তিওয়াতানা পাথরের কথা মনে আছে? ঐ যে বললাম, মাচু পিচুর ‘পবিত্র এলাকা’র অন্যতম নিদর্শন। কিন্তু কি কারণে এই পাথর পবিত্র এলাকায় স্থান পেলো আর কী-ই বা এর বিশেষত্ব? বলছি শোনেন, যেহেতু পবিত্র এলাকায় অবস্থিত সেহেতু বুঝতে পারছেন, এই পাথরটি ইনকাদের কাছে ধর্মীয় কারণে খুবই পবিত্র ছিলো। ওদের বিশ্বাস অনুসারে, কোনও অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ যদি এই পাথরে তার কপাল ঘষে তাহলে সে আধ্যাত্মিক জগৎ দেখতে পাবে। অর্থাৎ, আপনি যদি এই পাথরে আপনার কপালটা একটু ঘষে দেন, তাহলে আপনি অন্য এক জগতে পৌঁছে যাবেন। হয়তো আপনি আপনার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎও দেখতে পাবেন। এমনটি হলে তো সত্যি খুব মজার বাপার, তাই না? দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ যে কয়েকটি পাথরের পূজা করতো বা এখনও করে সেগুলোর মধ্যে ইন্তিওয়াতানা পাথর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে ইনকা সভ্যতা আক্রমণের সময় স্প্যানিশরা বেশীরভাগ পবিত্র পাথরই ধ্বংস করে ফেলে। ওগুলো থাকলে কত্তো ভালো হতো।


তবে বেঁচে গেছে মাচু পিচুর ইন্তিওয়াতানা পাথর। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন? স্প্যানিশরা তো মাচু পিচু শহরটিই খুঁজে পায়নি। তাহলে আর ইন্তিওয়াতানা পাথর কিভাবে খুঁজে পাবে বলেন? পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হওয়ার কারণেই ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেছে এই পাথর। তবে ইন্তিওয়াতানা পাথরের কিন্তু আরেকটি বিশেষত্ব আছে। ইন্তিওয়াতানা পাথর আসলে একটি ‘মহাকাশ ঘড়ি’। মহাকাশ ঘড়ি কি বুঝতে পারছেন না? দাড়ান, এই ঘড়ির আরেকটা নাম আছে- সূর্যঘড়ি। আকাশে সূর্যের বিভিন্ন অবস্থানের কারণে এই পাথরের ছায়ার পরিবর্তন দেখে সময় নির্ণয় করা হতো। তখন তো আর ঘড়ি ছিলো না যে সময় দেখতে চাইলেই চট করে ঘড়ির ডায়ালে দেখে নেবে। তাই আগে এরকম সূর্যঘড়ি তৈরি কর হতো। আমাদের দেশেও এরকম অনেকগুলো সূর্যঘড়ি আছে। আর জাদুঘরগুলোতে তো আছেই। দেখতে চাইলে আগারগাঁয়ের বিজ্ঞান জাদুঘরেই যেতে পারেন। যাই হোক, মাচু পিচুর এই ইন্তিওয়াতানা পাথরের কিন্তু আরেকটা মজা আছে। ১১ নভেম্বর ও ৩০ জানুয়ারি বছরের এই দু’দিনের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে, মানে ঠিক দুপুর ১২টায়, সূর্য ইন্তিওয়াতানা পাথরের একেবারে ওপরে থাকে; ফলে এর কোনও ছায়াই তৈরি হয় না! একারণেই এটিকে বলা হয় ‘সূর্যের আঁকড়া বিন্দুও’। অর্থাৎ যেটি কিনা সূর্যকে আঁকড়ে ধরে রাখে। এই বিশেষত্বের কারণেই স্থানীয় উপকথায় বলা হয় যে, এই পাথর নির্মাণ করাই হয়েছিলো সূর্যকে আটকে রাখার জন্য। যদিও প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা একদমই সম্ভব নয়। কিন্তু আগে তো মানুষ কতো কিছুই বিশ্বাস করতো। তখন তো আর মানুষ এত্তো কিছু জানতো না! তখনকার সবচেয়ে জ্ঞানী লোকটিও হয়তো আপনার থেকেও কম জানতো। তাই বলে তাদের জ্ঞানকে আবার খাটো করে দেখবেন না, ওরা যদি এভাবে জানার চেষ্টা না করতো, তাহলে কি আর আজকে মানুষ এই অবস্থানে আসতে পারতো?


মাচু পিচুর যতো স্বীকৃতিঃ
মাচু পিচু শহরকে মানুষের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার জন্য পেরু সরকার ১৯৮১ সালে এটিকে ‘সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে। আর ১৯৮৩ সালে তো ইউনেস্কো মাচু পিচুকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবেই ঘোষণা করেছে। আর ২০০৭ সালে তো রীতিমতো পৃথিবীর মানুষের ভোট নিয়ে ঘোষণা করা বর্তমান পৃথিবীতে টিকে থাকা ৭ আশ্চর্যের তালিকাতেই নাম উঠে যায় মাচু পিচুর। এখন এতো সুন্দর একটা জায়গা যদি মানুষের অত্যাচারে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই খুব দুঃখের বিষয় হবে। আর অতিরিক্ত মানুষের আনাগোনার কারণে মাচু পিচু কিন্তু সত্যি এখন হুমকির মুখেই আছে। এজন্য ২০০৮ সালে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড মাচু পিচুকে ‘বিশ্বের সবচাইতে বিপন্ন ১০০টি স্থান’ এর তালিকাতেও রেখেছিলো। তবে, পেরুর সরকার কিন্তু মাচু পিচুর অনেক যত্ন-আত্তিও করছে।

লেখকঃ মেহেদী বাবু
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info