স্তন্যপায়ী মাছ ।। Mammal Fish


বলেনতো মাছ ডিম পাড়ে, নাকি বাচ্চা দেয়? কিছু মাছ ডিম পাড়ে আবার কিছু মাছ বাচ্চা দেয়। আর বাচ্চাদের জন্মের পরে মা মাছ বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, খেতে শেখায়, যাতে অন্য কোনো প্রাণী বাচ্চাদেরকে খেয়ে না ফেলে সে দিকেও যে খেয়াল রাখে মা মাছ। কিন্তু যদি বলি মাছেরাও তাদের বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ায়!

শুনতে খুবই আশ্চর্য লাগছে? যতই আশ্চর্য লাগুক, সত্যি কোনো কোনো মাছ তাদের বাচ্চাদের দুধ খাওয়ায়। তাদের এই দুধ খাওয়ানোর বিষয়টি অবশ্য একটু আলাদা। স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের বাচ্চাদেরকে জন্মের পরে দুধ খাওয়ায়। কিন্তু এই মাছেরা তাদের বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ায় জন্মানোর আগেই। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ই এই মাছের ছানারা দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। এরপর যখন উপযুক্ত হয়ে যায় ছানারা তখনই তারা জন্ম নেয়। এক কথায় বলা যায় এই মাছের বাচ্চারা শক্তপোক্ত হয়েই জন্ম নেয়।


নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে এই মাছের নাম! এদের নাম "এলপাউট"। মাছগুলো ইউরোপের বিভিন্ন সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকায় দেখা যায়। বিশেষ করে ইংলিশ চ্যানেলের কাছে তো অনেক বেশি দেখা যায়। এদের চেহারা দেখতে অনেকটাই ঈল মাছের মতো। এই মাছেরই ছানাগুলো মায়ের পেটের মধ্যেই বড় হয়ে তারপর জন্ম নেয়।

এলপাউট মাছের মায়েরা একবারে ৩০ থেকে ৪০০ টি পর্যন্ত পোনা ছাড়ে। আর জন্মের সময় একেকটি ছানা ৩ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়। মায়ের পেটেই ডিম বড় হয়। তারপর পেটের মধ্যেই জন্ম নেয় খুদে খুদে ছানারা। কিন্তু মায়ের পেট থেকে বের হয়না। পেটের ভিতরে থেকেই দুধ খায় আর বড় হয়। যখন ছানা গুলোর মনে হয় তারা যথেষ্টই বড়ো হয়ে গেছে তখন তারা বেরিয়ে আসে। এভাবে মায়ের পেটে ছয়মাস পর্যন্ত কাটিয়ে দেয় এলপাউটের পোনা গুলো।


বড় হলে ছানারা পেট থেকে বের হয়ে আসে ঠিকই তবে সবসময় আবার তারা বের হয় না। তারা মায়ের পেট থেকে বের হবার জন্য শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। পানি যখন অনেক শীতল হয়ে বরফের কাছাকাছি আসে তখনই কেবল পোনা গুলো বের হয়ে আসে।

বড় এলপাউট মাছ সর্বোচ্চ ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। আর ওজন হয় ৫ কেজিরও বেশি। এই মাছ বাস করে সমুদ্রের কিনারায় পাথরের তলায়। পাথরের গায়ে লেগে থাকা বিভিন্ন শৈবাল এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এই মাছগুলোর প্রধান খাবার।


এলপাউট মাছেরা কিন্তু পানি ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে। পাথরের নীচে কোনো স্যাঁতসেঁতে স্থান বা সমুদ্রের কোনো আগাছার নীচেও বসে থাকতে পারে। মাঝে মাঝে পানিতে থাকতে ভালো না লাগলেই হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা বের হয়ে আসে পানি ছেড়ে। তাই বলে কি তাদের কোনো সমস্যা হয়? হয় না, কারণ তারাও তো স্থলচর প্রাণীদের মতোই মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয়।

দেখতে ইচ্ছে করছে এই মাছ গুলোকে? তাহলে আপনাকে যেতে হবে সেই ইউরোপে। আজকে শুধু এর গল্প শুনে আর ছবি দেখেই স্বাধ মেটান। পরে কখনো সময় সুযোগ হলে সামনাসামনি দেখে আসবেন এলপাউট মাছের ছানাদের।

লেখকঃ মোঃ মিন্টু হোসেন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info