আমাদের দেশের রাজধানীর নাম কি? প্রশ্নটা খুব সহজ হয়ে গেল, না? হ্যাঁ, আপনারা সবাই এটা জানেন, ঢাকা। ঢাকা শহরের যে সব অঞ্চল খুব বিখ্যাত, অনেক মানুষ স্রেফ ঘুরতে কিংবা আড্ডা দিতেই যেসব অঞ্চলে যায়, সেগুলোরই একটা হল, শাহবাগ। হ্যাঁ, আমাদের রাজধানী শহর ঢাকার যে অঞ্চলটি শাহবাগ নামে পরিচিত, আজকে আমরা সেই অঞ্চলটির গল্পই শুনব।
শাহবাগ অঞ্চলটির অবস্থান কিন্তু খুব মজার; একদম পুরনো ঢাকা ও নতুন ঢাকার মাঝে। এই শাহবাগের পত্তন হয়, মানে এখানে মানুষ বসবাস করতে শুরু করে ১৭ শতকের দিকে। তখন মোগল শাসনামল চলছে। পুরনো ঢাকা ছিলো সুবা বাংলার রাজধানী এবং মসলিন বাণিজ্যের কেন্দ্র। তখন অবশ্য শাহবাগের নাম ছিলো অন্য; বাগ-ই-বাদশাহী। শুনেই তো বুঝতে পারছেন, এটা ছিল ফার্সি নাম, মানে রাজার বাগান বা বাদশাহর বাগান। মোগলদের শাসনামলে ভারতের রাজভাষা ছিল ফার্সি। শুধু মোগলই না, পুরো মুসলিম শাসনামলেই ছিল তাই। সেজন্যেই তখনকার বেশিরভাগ নামও ছিল ফার্সি ভাষায়। পরে এই নামটি ছোট হয়ে যায়, হয়, শাহবাগ। শাহবাগ নামটির দুটো অংশ ফার্সি; ‘শাহ’ অর্থ রাজা, ‘বাগ’ অর্থ বাগান। এই দু’টি ফার্সি শব্দ মিলে হয়েছে, ‘শাহবাগ’। মানে, নাম শুনেই তো বুঝতে পারছেন, শাহবাগে মোগল বাদশাহদের বিশাল এক বাগান ছিল।
সেই সময়েই শাহবাগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করা হয়। তারমধ্যে কিছু কিছু টিকে আছে এখনো। যেমন ধরেন, আপনি যদি বাংলা একাডেমী পার হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে এগিয়ে যান, তিন নেতার মাজার পার হলেই দেখবে, রাস্তার মাঝে আর দু’পাশে বিশাল গেটের ধ্বংসাবশেষের মতো তিনটি স্থাপনা। এই স্থাপনাটির নাম ঢাকা গেট। এটি তৈরি করিয়েছিলেন মোগল আমলের বাংলার সুবেদার "মীর জুমলা"। সে সময় এমনি আরো অনেক স্থাপনা গড়ে ওঠে শাহবাগে মরিয়ম সালেহা মসজিদ (নির্মাণ, ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দ, অবস্থান নীলক্ষেত বাবুপুরা), মুসা খানের মসজিদ (নির্মাণ, ১৭ শতক, অবস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে), খাজা শাহবাজের মসজিদ ও মাজার (নির্মাণ, ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দ, অবস্থান, হাই কোর্টের পিছনে) ইত্যাদি।
সেই সময়েই শাহবাগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি করা হয়। তারমধ্যে কিছু কিছু টিকে আছে এখনো। যেমন ধরেন, আপনি যদি বাংলা একাডেমী পার হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে এগিয়ে যান, তিন নেতার মাজার পার হলেই দেখবে, রাস্তার মাঝে আর দু’পাশে বিশাল গেটের ধ্বংসাবশেষের মতো তিনটি স্থাপনা। এই স্থাপনাটির নাম ঢাকা গেট। এটি তৈরি করিয়েছিলেন মোগল আমলের বাংলার সুবেদার "মীর জুমলা"। সে সময় এমনি আরো অনেক স্থাপনা গড়ে ওঠে শাহবাগে মরিয়ম সালেহা মসজিদ (নির্মাণ, ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দ, অবস্থান নীলক্ষেত বাবুপুরা), মুসা খানের মসজিদ (নির্মাণ, ১৭ শতক, অবস্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে), খাজা শাহবাজের মসজিদ ও মাজার (নির্মাণ, ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দ, অবস্থান, হাই কোর্টের পিছনে) ইত্যাদি।
মোগল আমলের পতন ঘটতে থাকলে, সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকাও পরিত্যক্ত হয়, শাহবাগের গুরুত্বও কমতে থাকে। সেসঙ্গে অযত্নও অবহেলার শিকার হতে থাকে মোগলদের বাদশাহী বাগানও। ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে, বাগানের মালিক হন নায়েব আযিম। এই নায়েব আযিম ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাবের প্রতিনিধি ও পূর্ব বাংলার প্রদেশিক ডেপুটি গভর্নর। পরে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়ে গেল। তখন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জেলা প্রশাসক গ্রিফিথ কুকের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের বাগানগুলো আরো কিছুদিন টিকে ছিল। আরো সাহায্য করেছিলেন, ঢাকার আর্মেনিয় সম্প্রদায়ের নেতা পি আরাতুন।
পরে, ১৮৩০ সালে, জেলা কালেক্টর হেনরি ওয়াল্টার ঢাকা শহর উন্নয়নের লক্ষে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি শাহবাগসহ পুরো রমনা এলাকাকেই ঢাকা শহরের অন্তর্ভুক্ত করে। এরও প্রায় এক যুগ পরে, ঢাকার নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা নবাব আলিমুল্লাহ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে শাহবাগের জমিদারী কিনে নেন। ১৮৬৮ সালে তিনি মারা গেলে, এ সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় তার নাতি স্যার নবাব খাজা আহসানউল্লাহর কাছে। ২০ শতকের শুরুর দিকে, আহসানউল্লাহর ছেলে স্যার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ, শাহবাগের বাগানকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর ফলে, শাহবাগের শাহী বাগানের হারানো সৌন্দর্য্যের কিছুটা অন্তত ফিরে আসে। এই যে বাগানকে দুই ভাগ করলেন, একটার নাম শাহবাগ থেকে গেল, আরেকটার নাম রাখা হলো পরিবাগ। আহসানউল্লাহর এক মেয়ের নাম ছিল পরিবানু; তারই নামে পরিবাগের নামকরণ করা হয়।
পরে, ১৮৩০ সালে, জেলা কালেক্টর হেনরি ওয়াল্টার ঢাকা শহর উন্নয়নের লক্ষে একটি কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি শাহবাগসহ পুরো রমনা এলাকাকেই ঢাকা শহরের অন্তর্ভুক্ত করে। এরও প্রায় এক যুগ পরে, ঢাকার নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা নবাব আলিমুল্লাহ, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে শাহবাগের জমিদারী কিনে নেন। ১৮৬৮ সালে তিনি মারা গেলে, এ সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় তার নাতি স্যার নবাব খাজা আহসানউল্লাহর কাছে। ২০ শতকের শুরুর দিকে, আহসানউল্লাহর ছেলে স্যার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ, শাহবাগের বাগানকে দুই ভাগে ভাগ করেন। এর ফলে, শাহবাগের শাহী বাগানের হারানো সৌন্দর্য্যের কিছুটা অন্তত ফিরে আসে। এই যে বাগানকে দুই ভাগ করলেন, একটার নাম শাহবাগ থেকে গেল, আরেকটার নাম রাখা হলো পরিবাগ। আহসানউল্লাহর এক মেয়ের নাম ছিল পরিবানু; তারই নামে পরিবাগের নামকরণ করা হয়।
বাগানের এইসব ঘটনার মধ্যেই, ১৯ শতকের মধ্যভাগে, মানে ১৮৫০ সালের দিকে, এই এলাকাকে ঘিরে নির্মিত হতে শুরু করে অট্টালিকা আর বিভিন্ন স্থাপনা। পরে, ব্রিটিশ শাসনের স্থানীয় কেন্দ্র হিসেবে নতুন ঢাকা প্রতিষ্ঠিত হলে, ঢাকা শহরের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। একই সঙ্গে শাহবাগও তার হারানো গুরুত্ব ফিরে পেতে শুরু করে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা পূর্ব বাংলার নতুন প্রাদেশিক রাজধানী হয়। রাজধানী হওয়ায়, ঢাকা শহর এবার দ্রুত বেড়ে উঠতে শুরু করে। পুরো ঢাকায়, বিশেষ করে সেসময় নির্মিত ফুলার রোড অঞ্চলে, তৈরি হতে থাকে ইউরোপীয় ধাঁচের দালান কোঠা। একটা মজার বিষয় কি জানেন? আগে শাহবাগে একটা চিড়িয়াখানাও ছিল; সেই চিড়িয়াখানাটা এ সময়েই চালু হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যায়। তার আগে তাদের এই উপনিবেশটিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান এই দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে দিয়ে যায়। তার মধ্যে, পাকিস্তান নামের দ্বিধাবিভক্ত, মানে দুই ভাগে বিভক্ত অদ্ভূত গড়নের রাষ্ট্রটিতে পড়লাম আমরা। আমাদের বাংলাদেশের নাম ছিল তখন পূর্ব পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের এই অঞ্চলের প্রাদেশিক রাজধানী হয় ঢাকা। যদিও পাকিস্তানিরা বেশিরভাগ অবকাঠামো বানাচ্ছিলো পূর্ব পাকিস্তানেই, তবু প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরেরও বিস্তার ঘটাতে হচ্ছিল। অনেক নতুন নতুন অবকাঠামো ইমারত তৈরি হচ্ছিল। ঢাকার মতো বিস্তার ঘটছিল শাহবাগেরও। পাকিস্তান আমলেই এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে ওঠে; যেমনঃ বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র, ঢাকা রেসকোর্স (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রভৃতি। এভাবেই আস্তে আস্তে গড়ে উঠল আমাদের আজকের শাহবাগ।
শাহবাগের গল্প তো এক রকম শোনা হলো, এখন চলেন শাহবাগে যে সব বিখ্যাত পুরনো স্থাপনা আছে, সেগুলোর গল্প শুনে আসি।
শাহবাগের পুরনো স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই বানিয়েছিল ঢাকার নবাব পরিবার। বললাম না, ব্রিটিশ আমলে এই শাহবাগের জমিদারী কিনে নিয়েছিল ওরা। ওখানকার যেসব পুরনো স্থাপনাগুলো এখনো আছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই নবাব পরিবারেরই বানানো।
ওদের জনপ্রিয় স্থাপনাগুলোর একটি ছিল ইসরাত মঞ্জিল। এটি মূলত ব্যবহৃত হতো নাচ ঘর হিসেবে। পরে, ইসরাত মঞ্জিল পূণঃর্নির্মাণ করে একে হোটেল "শাহবাগ" এ রূপান্তরিত করা হয়। রূপান্তরে নকশা করেন দুই ব্রিটিশ স্থপতি এডওয়ার্ড হাইঞ্জ এবং রোনাল্ড ম্যাককোনেল। পরে এই ভবনটিতেই ১৯৬৫ সালে ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেটির নাম সংক্ষেপে দাঁড়ায় পিজি হসপিটাল। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। হ্যাঁ, এটিই এখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা পূর্ব বাংলার নতুন প্রাদেশিক রাজধানী হয়। রাজধানী হওয়ায়, ঢাকা শহর এবার দ্রুত বেড়ে উঠতে শুরু করে। পুরো ঢাকায়, বিশেষ করে সেসময় নির্মিত ফুলার রোড অঞ্চলে, তৈরি হতে থাকে ইউরোপীয় ধাঁচের দালান কোঠা। একটা মজার বিষয় কি জানেন? আগে শাহবাগে একটা চিড়িয়াখানাও ছিল; সেই চিড়িয়াখানাটা এ সময়েই চালু হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যায়। তার আগে তাদের এই উপনিবেশটিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান এই দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে দিয়ে যায়। তার মধ্যে, পাকিস্তান নামের দ্বিধাবিভক্ত, মানে দুই ভাগে বিভক্ত অদ্ভূত গড়নের রাষ্ট্রটিতে পড়লাম আমরা। আমাদের বাংলাদেশের নাম ছিল তখন পূর্ব পাকিস্তান। আর পাকিস্তানের এই অঞ্চলের প্রাদেশিক রাজধানী হয় ঢাকা। যদিও পাকিস্তানিরা বেশিরভাগ অবকাঠামো বানাচ্ছিলো পূর্ব পাকিস্তানেই, তবু প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরেরও বিস্তার ঘটাতে হচ্ছিল। অনেক নতুন নতুন অবকাঠামো ইমারত তৈরি হচ্ছিল। ঢাকার মতো বিস্তার ঘটছিল শাহবাগেরও। পাকিস্তান আমলেই এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে ওঠে; যেমনঃ বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র, ঢাকা রেসকোর্স (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রভৃতি। এভাবেই আস্তে আস্তে গড়ে উঠল আমাদের আজকের শাহবাগ।
শাহবাগের গল্প তো এক রকম শোনা হলো, এখন চলেন শাহবাগে যে সব বিখ্যাত পুরনো স্থাপনা আছে, সেগুলোর গল্প শুনে আসি।
শাহবাগের পুরনো স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই বানিয়েছিল ঢাকার নবাব পরিবার। বললাম না, ব্রিটিশ আমলে এই শাহবাগের জমিদারী কিনে নিয়েছিল ওরা। ওখানকার যেসব পুরনো স্থাপনাগুলো এখনো আছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই নবাব পরিবারেরই বানানো।
ওদের জনপ্রিয় স্থাপনাগুলোর একটি ছিল ইসরাত মঞ্জিল। এটি মূলত ব্যবহৃত হতো নাচ ঘর হিসেবে। পরে, ইসরাত মঞ্জিল পূণঃর্নির্মাণ করে একে হোটেল "শাহবাগ" এ রূপান্তরিত করা হয়। রূপান্তরে নকশা করেন দুই ব্রিটিশ স্থপতি এডওয়ার্ড হাইঞ্জ এবং রোনাল্ড ম্যাককোনেল। পরে এই ভবনটিতেই ১৯৬৫ সালে ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেটির নাম সংক্ষেপে দাঁড়ায় পিজি হসপিটাল। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। হ্যাঁ, এটিই এখনকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
নবাবদের আরেকটি বিখ্যাত স্থাপনা হলো জলসাঘর। এটি ছিল মূলত নবাবদের স্কেটিং ও বল নাচের জায়গা। এই জলসাঘরটিকে চিনেছেন? কেন, আপনারা বুঝি মধুর ক্যান্টিনের নাম শোনেননি? বিখ্যাত এই মধুর ক্যান্টিন আগে ছিল নবাবদের জলসাঘর।
কার্জন হল তো আপনারা সবাই চেনেন? এই কার্জন হল বানানো হয়েছিল ১৯০৪ সালে; বঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে। কেউ কেউ বলেন, এটা প্রথমে বানানো হয়েছিল টাউন হল হিসেবে; পরে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে, মানে দুই বাংলা আবার মিলে গেলে, এখানে ঢাকা কলেজের ক্লাস নেয়া শুরু হয়। আবার অনেকে বলেন, টাউন হল হিসেবে নয়, একে বানানোই হয়েছিল ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি হিসেবে। তখন পরিকল্পনা ছিল, ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত করা হবে। পরে সেটা আর হয়নি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে, কার্জন হলকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজ্ঞান অনুষদ করা হয়; এখনো তাই আছে। এই কার্জন হল বানানো হয়েছিল কাদের টাকায় জানো? ভাওয়ালের রাজকুমারদের অর্থায়নে।
নবাব পরিবারের আরেকটি স্থাপনাও বেশ বিখ্যাত "নিশাত মঞ্জিল"। এর এক অংশে ছিল নবাবদের ক্লাব হাউস; তখন কোনো কূটনীতিক আসলে, তাকে এখানে আপ্যায়ন করা হতো। অন্য অংশে ছিল নবাবদের আস্তাবল।
আগে একবার পরিবানুর কথা বলেছি না, যার নামে পরিবাগের নামকরণ করা হয়েছিল? তার নামে, পরিবানুর ভাই খাজা সলিমুল্লাহ একটি স্থাপনা বানিয়েছিলেন, পরিবাগ হাউস। পরে, নবাব পরিবারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেলে, সলিমুল্লাহর ছেলে খাজা হাবিবুল্লাহ অনেকদিন এখানে বসবাসও করেছিলেন। এখানকার হাম্মাম (গোসলখানা) ও হাওয়াখানা গঠনশৈলীর দিক দিয়েও বেশ বিখ্যাত।
কার্জন হল তো আপনারা সবাই চেনেন? এই কার্জন হল বানানো হয়েছিল ১৯০৪ সালে; বঙ্গভঙ্গের প্রাক্কালে। কেউ কেউ বলেন, এটা প্রথমে বানানো হয়েছিল টাউন হল হিসেবে; পরে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে, মানে দুই বাংলা আবার মিলে গেলে, এখানে ঢাকা কলেজের ক্লাস নেয়া শুরু হয়। আবার অনেকে বলেন, টাউন হল হিসেবে নয়, একে বানানোই হয়েছিল ঢাকা কলেজের লাইব্রেরি হিসেবে। তখন পরিকল্পনা ছিল, ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত করা হবে। পরে সেটা আর হয়নি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে, কার্জন হলকে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিজ্ঞান অনুষদ করা হয়; এখনো তাই আছে। এই কার্জন হল বানানো হয়েছিল কাদের টাকায় জানো? ভাওয়ালের রাজকুমারদের অর্থায়নে।
নবাব পরিবারের আরেকটি স্থাপনাও বেশ বিখ্যাত "নিশাত মঞ্জিল"। এর এক অংশে ছিল নবাবদের ক্লাব হাউস; তখন কোনো কূটনীতিক আসলে, তাকে এখানে আপ্যায়ন করা হতো। অন্য অংশে ছিল নবাবদের আস্তাবল।
আগে একবার পরিবানুর কথা বলেছি না, যার নামে পরিবাগের নামকরণ করা হয়েছিল? তার নামে, পরিবানুর ভাই খাজা সলিমুল্লাহ একটি স্থাপনা বানিয়েছিলেন, পরিবাগ হাউস। পরে, নবাব পরিবারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেলে, সলিমুল্লাহর ছেলে খাজা হাবিবুল্লাহ অনেকদিন এখানে বসবাসও করেছিলেন। এখানকার হাম্মাম (গোসলখানা) ও হাওয়াখানা গঠনশৈলীর দিক দিয়েও বেশ বিখ্যাত।
শাহবাগে নবাবদের সবচেয়ে পুরনো স্থাপনাগুলোর একটি হলো সুজাতপুর প্যালেস। চিনতে পারছেন না? আচ্ছা, ভবনটির গল্প বলে নেই, তারপর ঠিক চিনতে পারবেন। পাকিস্তান আমলে ভবনটি পূর্ব বাংলার গভর্নরের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে, ভাষা আন্দোলনের পরে, ১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হলে, সুজাতপুর প্যালেস হয়ে যায় বর্ধমান হাউজ; বাংলা একাডেমীর অফিস। কী, এবার চিনেছেন তো? এই সুজাতপুর প্যালেসের একটি অংশ আবার টিএসসি এর ভেতরেও পড়েছে। টিএসসির ভেতরে একটা গ্রিক স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আছে; ক্যাফেটেরিয়ারও পেছনে, অতিথি কক্ষের পাশে। ওটাও ছিল সুজাতপুর প্যালেসে। পরে ’৬১ সালে টিএসসি নির্মাণের সময় সুজাতপুর প্যালেসের ওইদিকের একটা অংশ অধিগ্রহণ করা হয়।
শাহবাগকে অনেকেই ঢাকা শহরের প্রাণ বলে থাকেন। একটু বোধহয় বাড়িয়ে বলেন; তবে শাহবাগ কিন্তু ঢাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। বিশেষ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগের পাশেই অবস্থিত হওয়ায় তা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ তো একদম শাহবাগেই অবস্থিত। দেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ও শাহবাগের খুবই কাছে। বিএসএমএমইউ এর কথা তো বললামই, ঢাকা মেডিকেল কলেজও অবস্থিত এই অঞ্চলেই। ঐতিহ্যবাহী দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ এবং ইডেন কলেজও অবস্থিত কাছেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় জাদুঘর তো বটেই, সম্প্রতি আজিজ মার্কেট ও কাঁটাবনে গড়ে ওঠা বইয়ের বাজারও শাহবাগকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সব মিলিয়ে, ঢাকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটা বড় অংশেরই কেন্দ্র হয়ে উঠেছে শাহবাগ।
শুধু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরই প্রাণকেন্দ্র নয়, আমাদের দেশের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই ঘটেছে শাহবাগকে কেন্দ্র করে। ইসরাত মঞ্জিলের গল্প বললাম না? ১৯০৫ সালে এই ইসরাত মঞ্জিলে নিখিল ভারতীয় মুসলমান শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের ধারাতেই পরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও শাহবাগ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার দাবিতে মিছিলরত ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো হয়েছিল মেডিকেল কলেজের সামনে। এমনিভাবে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, শাহবাগ প্রায় সব আন্দোলনেরই পীঠস্থান ছিল।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও কিন্তু শাহবাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কীভাবে? বলেন তো, শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণ কোথায় দিয়েছিলেন? শাহবাগের রেসকোর্স ময়দানে (আগেই বলেছি, ওটাই এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। তারপর এখন যে হোটেলটির নাম রূপসী বাংলা, কিছুদিন আগেও নাম ছিল শেরাটন, তখন সেই হোটেলটির নাম ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সংক্ষেপে ইন্টারকন। এই হোটেলটিও নানা কারণে তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা তখন নানা সময়ে এই হোটেলে এসে উঠেছিলেন। আর, যুদ্ধ শেষে, পাকিস্তানিরা কোথায় আত্মসমর্পণ করেছিল, মনে আছে? সেই রেসকোর্স ময়দানে, মানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে এখন ‘শিখা চিরন্তন’ বানানো হয়েছে; আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে এই শিখা জ্বলছে সবসময়।
লেখকঃ নাবীল অনুসূর্য।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও কিন্তু শাহবাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কীভাবে? বলেন তো, শেখ মুজিবুর রহমান তার ৭ মার্চের ভাষণ কোথায় দিয়েছিলেন? শাহবাগের রেসকোর্স ময়দানে (আগেই বলেছি, ওটাই এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। তারপর এখন যে হোটেলটির নাম রূপসী বাংলা, কিছুদিন আগেও নাম ছিল শেরাটন, তখন সেই হোটেলটির নাম ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সংক্ষেপে ইন্টারকন। এই হোটেলটিও নানা কারণে তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা তখন নানা সময়ে এই হোটেলে এসে উঠেছিলেন। আর, যুদ্ধ শেষে, পাকিস্তানিরা কোথায় আত্মসমর্পণ করেছিল, মনে আছে? সেই রেসকোর্স ময়দানে, মানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে এখন ‘শিখা চিরন্তন’ বানানো হয়েছে; আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে এই শিখা জ্বলছে সবসময়।
লেখকঃ নাবীল অনুসূর্য।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন