প্রাণীদের কিছু অজানা ক্ষমতা

প্রাণীজগত আমাদের কাছে বরাবরই বিস্ময়কর। প্রায় প্রতিদিনই আমরা নতুন কিছু জানছি এ জগত সম্পর্কে। রহস্যময় এ জগত সম্পর্কে যেন জানার কোনো শেষ নেই। যদিও সৃষ্টির সবচেয়ে উঁচু স্থানে রয়েছে মানুষ। এটা মূলত তাদের জ্ঞান বুদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের কারণে। তবে শারীরিক ক্ষমতার দিক দিয়ে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণীদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রাণীর কিছু বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে এবং এর মধ্যে কিছু কিছু খুবই বিস্ময়কর। এ রকম কিছু প্রাণী আর তাদের অসাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আজকের লেখাটি।


ডলফিনঃ
ডলফিন তিমির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত এক ধরনের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। পৃথিবীতে ১৭টি গ্রুপে প্রায় ৪০টি প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। ১.২ মিটার (৪ ফুট) দৈর্ঘ্য এবং ৪০ কেজি (৯০ পাউন্ড) ওজন থেকে শুরু করে ৯.৫ মিটার (৩০ ফুট) দৈর্ঘ্য এবং ১০ টন (৯.৮ লিট; ১১ স্টোন) ওজন পর্যন্ত বিভিন্ন আকারের ডলফিন দেখা যায়। পৃথিবী জুড়েই ডলফিন দেখা যায়, বিশেষ করে মহীসোপানের কাছের অগভীর সমুদ্রে। ডলফিন মাংসাশী প্রাণী, মাছ এবং স্কুইড এদের প্রধান খাদ্য। ধারণা করা হয়, দশ মিলিয়ন বছর আগে মায়োসিন যুগে ডলফিনের উদ্ভব। ডলফিনকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাতারে ধরা হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ এবং খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা মানব সমাজের কাছে ডলফিনকে খুবই জনপ্রিয় করে তুলেছে।


হাঙ্গরঃ
প্রাকৃতিক ভাবেই এক দক্ষ শিকারি এই হাঙ্গর। এর মস্তিষ্কে বিশেষ কিছু কোষ রয়েছে, যা অন্য প্রাণীদের শরীর থেকে তৈরি হওয়া ইলেকট্রিক ফিল্ড শনাক্ত করতে পারে। তাই সমুদ্রের তলদেশে বালির নিচে লুকিয়ে থাকা ছোট একটি মাছও হাঙ্গরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না। তাই পানির নিচে কখনো হাঙ্গর দেখলে পাথর বা লতাপাতার আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করাটা সম্পূর্ণ বৃথা প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণত এদের এড়িয়ে চলাই উত্তম।


অক্টোপাসঃ
অক্টোপাস বরাবরই মানুষের কাছে একটি রহস্যময় প্রাণী। আমরা যদিও জানি, এদের ৮টি পা রয়েছে, তবে এগুলো আসলে বাহু। আত্মরক্ষার খাতিরে এরা শরীরের রং বদল করে ফেলতে পারে। পালিয়ে যাওয়ার সময় দেহ থেকে এক ধরনের কালি ছুঁড়ে মারে, যা পানিকে অন্ধকার করে দেয়। এক কথায় বলতে গেলে, শক্রকে লক্ষ্যচ্যুত করে দেওয়ার এক ক্ষমতা। মজার তথ্য হলো, এদের দেহে রয়েছে ৩টি হৃদপিণ্ড। অক্টোপাসের একটি প্রজাতি হলো, 'ব্লু রিংড'। এই অক্টোপাসের দেহে রয়েছে মারাত্মক বিষ যার সংস্পর্শে খুবই দ্রুত মানুষের মৃত্যু ঘটা সম্ভব।


বাদুড়ঃ
প্রাণী জগতের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি বাদুড়। এরা কিন্তু পাখির প্রজাতিতে পরে না। কারণ, এদের দেহ লোম দিয়ে দিয়ে ঢাকা, পালকে নয়। তা ছাড়া এরা নিশাচর প্রাণী। বাদুড়ের চোখ থাকলেও দেখার ক্ষমতা খুবই সীমিত। রাতের বেলা চলাচলের সময় এরা শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে। উড়ার সময় এরা আল্ট্রাসনিক শব্দ তৈরি করে। এরপর এই শব্দের প্রতিধ্বনি শুনে সামনে থাকা বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এবং পথের নির্দেশনা পায়। তবে অনেক সময় বাদুড় বিদ্যুতের তারে ধাক্কা খায়। কারণ সূক্ষ্ম তারে শব্দ ঠিক মতো প্রতিধ্বনিত হয় না। আর বলাই বাহুল্য, আল্ট্রাসনিক শব্দ শোনার ক্ষমতা মানুষের নেই।


বোয়াঃ
সাপ নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীগুলোর মধ্যে একটি। আবার সাপ পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর প্রাণীগুলোর মধ্যেও একটি, এদের খোলসের রঙের কারণে এমনটা মনে করা হয়। তবে এদের বিষ, নিঃশব্দ ও সূক্ষ্ম চলাফেরার কারণে এদের ভয়ংকর বলা হয়। বোয়া নামের সাপের অন্যান্য সাপ থেকে ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো, একদম অন্ধকারে না দেখেও এর শিকার করার ক্ষমতার কারণে। এদের চোখের কাছাকাছি রয়েছে এক ধরনের অর্গান, যেটি অন্য কোনো প্রাণীর দেহের তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে তাদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে পারে। আর তাই পুরোপুরি অন্ধকারেও এরা শিকারকে খুঁজে বের করতে পারে সহজেই।


বিড়ালঃ
বিড়াল একটি ঘরোয়া প্রাণী বলে এর সম্পর্কে সবারই কম বেশি জানা আছে। অসাধারণ চোখের ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল একটি। পুরোপুরি অন্ধকারেও এরা একদম পরিষ্কার দেখতে পায়। আর তাই ঘরের ভিতর ছুটে বেড়ানো ছোট ছোট ইঁদুরগুলো রাতের বেলা ধরতে এদের কোনো সমস্যা হয় না। তাদের আদুরে স্বভাবের কারণে আরও বেশি পরিচিত আমাদের কাছে।


কুমিরঃ
কুমির তাদের চোয়ালের শক্তির কারণে বিখ্যাত। এদের দুই চোয়ালের মাঝের চাপ ক্ষেত্রবিশেষে এক টন পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া এরা ইচ্ছা করে কিছু পাথর গিলে থাকে, যেগুলো এদের পেটে সবসময় অবস্থান করে। এসব পাথর কুমিরদের শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা এবং খাবার হজমে সহায়তা করে। আর বলাই বাহুল্য, এদের খাদ্য তালিকা থেকে মাছ, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, বন্য গরু এমনকি ছোট কুমিরও বাদ যায় না!


হামিংবার্ডঃ
পাখিদের মধ্যে সব চেয়ে ছোট হলেও বিশেষ ক্ষমতার দিক দিয়ে কিন্তু হামিংবার্ড কোনো ক্রমেই পিছিয়ে নেই। বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে এরা প্রতি সেকেন্ডে ১৫ থেকে ৮০ বারের মতো পাখা নাড়তে পারে। আর এর ফলে এরা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে ঠিক হেলিকপ্টারের মতো করে। একটি ভিন্ন ও বিশেষ ক্ষমতা হলো এরা পিছন দিকে উড়তে পারে, যেটি আর কোনো পাখি পারে না।

লেখকঃ প্রাঞ্জল সেলিম। (দৈনিক ইত্তেফাক থেকে সংগ্রহিত)
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info