নিরীহ প্রাণীটি ।। Innocent Animal


ভোঁদড়! নামটা শুনলেই কেমন একটু বোকাবোকা চেহারা ভেসে আসছে চোখের সামনে। তাই তো? সত্যিই ভোঁদড়দের চেহারা দেখতে খানিকটা বোকাবোকাই। একদম সহজ সরল এই ছোট্ট প্রাণী গুলোকে আপনি খুঁজে পাবেন গ্রামের নদীর ধারে। এত জায়গা থাকতে নদীর ধারে কেন? আরে, ওখানেই তো রয়েছে ওদের প্রিয় খাবার মাছ। তবে এমনিতে দেখতে বেশ ভালোমানুষটি মনে হলেও ওদেরকে একদমই বিশ্বাস করে না জাপানের মানুষেরা। ওরা বলে ভোঁদড়েরা একদম শেয়ালের মতো চালাক। কী করে মানুষের মতো সেজে ভোঁদড়েরা মানুষকে বোকা বানায় আর খেয়ে ফেলে সেটা নিয়ে অনেক গল্পও রয়েছে জাপানে।

কিন্তু সে তো গেল জাপানিদের কথা। সাধারণত ভোঁদড় নামের এই মিষ্টি প্রাণীটাকে সবাই কিন্তু খুব ভালোইবাসে। আপনারা অনেকেই ভোঁদড়দের চেনেন। কিন্তু এটা কি জানেন যে ওরা মাত্র ১৬ বছর বাঁচে? জানেন, ওদের নিয়ে পুরো পৃথিবীতে এত্ত এত্ত কুসংস্কার রয়েছে? জানেন না তো? তাইতো আজকে সেই ছোট্ট আর দুষ্টু-মিষ্টি ভোঁদড়গুলো সম্পর্কে আপনার না জানা মজার কিছু কথা জানাবো বলেই আজকে লিখছি। নিচে দেওয়া হল ভোঁদড়কে নিয়ে কিছু মজার তথ্য।


০১) সাঁতার কাটাঃ ভোঁদড়দের প্রিয় কাজ হচ্ছে একসঙ্গে  সাঁতার কাটা। মানুষেরা যেমন সময় পেলেই সাঁতার কাটতে সমুদ্রে চলে যায়, ভোঁদড়েরাও ঠিক তেমনি সুযোগ পেলেই নেমে পড়ে পানিতে। তবে খালি আনন্দের জন্যেই নয়। ওরা এটা করে একসঙ্গে থাকার জন্যে। এক একটা দল বানায় ওরা সাঁতার কাটার সময়। প্রত্যেকটা দলে থাকে কমসে কম ১০টি ভোঁদড়। মাঝে মাঝে সাঁতার কাটতে কাটতেই সমুদ্রে ঘুমিয়ে পড়ে ওরা। আর সেসময় অন্য ভোঁদড়েরা ঘুমিয়ে পড়া ভোঁদড়ের হাত ধরে রাখে। যাতে সে দল থেকে হারিয়ে না যায়!

০২) ভোঁদড় মায়ের কষ্টঃ ভোঁদড়ের জন্ম পানিতে হলেও দুই মাস বয়সের আগে বাচ্চা ভোঁদড়েরা সাঁতার কাটতে পারে না। আর তাই এই দুই মাস মা ভোঁদড় বাচ্চাকে নিজের পেটে করে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাকে নিয়েই সাঁতার কাটে মা। দুইমাস পরে যদিও বাচ্চা ভোঁদড় সাঁতার কাটতে পারে, সেসময় নিজের শরীরকে গরম রাখতে পারে না সে। তাই সাঁতার শেখার পরেও আরও চারমাস বাচ্চাকে গরম রাখার জন্যে তার পাশে সবসময়ই থাকতে হয় মাকে।


০৩) খাবার খোঁজাঃ ভোঁদড়েরা কেবল দেখতেই মিষ্টি নয়, অনেক চালাকও। শিকার করার সময় নানারকম অস্ত্রপাতি ব্যবহার করে ওরা। এই যেমনঃ খোলসসহ মাছেরা সবসময় একটা খোলসের ভেতরে থাকে বলে ভোঁদড়েরা নিজেদের পেটের সঙ্গে একটা ধারালো পাথর আটকে নেয় আর খোলসসহ মাছের পাশ দিয়ে যাবার সময় বারবার তাতে ঠোকর মেরে খোলস ফাটিয়ে দেয়। এরপর খোলস থেকে মাছ বের করে নিয়ে খেয়ে ফেলে। মজার ব্যাপার হল, এসব পাথর গুলোকে লুকিয়ে রাখার জন্যে ওদের নির্দিষ্ট কিছু গোপন জায়গাও রয়েছে।


০৪) সমুদ্রের নায়কঃ সত্যিকার অর্থেই ভোঁদড়েরা সমুদ্রের পরিবেশকে সুন্দর রাখতে অনেক কাজ করে। ওরা সেই মাছ গুলোকে খেয়ে ফেলে যারা কেলপ বনকে ধ্বংস করে। কেলপ বন সমুদ্রের পরিবেশকে ঠিক রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। এই বন থেকেই অনেক মাছ নিজেদের খাবার পায়। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ গুলোকে নিজের ভেতরে নিয়ে নেয় কেলপ বন। বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে বনকে বাঁচায়। আর ওদেরকে বাঁচায় ভোঁদড়েরা। সেদিক থেকে তাই ভোঁদড়দের সমুদ্রের নায়ক বলাই যায়।

০৫) বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীঃ কষ্টকর হলেও কথাটা সত্যি! দিনকে দিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভোঁদড়েরা। আগে পশমের নানারকম পোশাক বানাতে মেরে ফেলা হত ওদের। আর এখন মানুষের নানারকম কাজের ফলে পরিবেশ, পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ওরা মারা যাচ্ছে। আগে আমাদের দেশেও নদী বা খালে ভোঁদড় দেখা যেত। এখন খাল ভরাট করা আর নদী শুকিয়ে যাবার ফলে ভোঁদড় দেখা খুবই বিরল ঘটনা। ঠিকঠাক সংরক্ষণ না করলে একটা সময় হয়তো হারিয়েই যাবে এই মিষ্টি প্রাণী গুলো আমাদের মাঝ থেকে।

লেখকঃ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info