ক্রিকেট বলের কথা ।। Cricket Ball Story

বেসবল খেলা নিশ্চয়ই আপনারা দেখেছেন। অনেকটা ক্রিকেটের মতোই। দুই দলে ভাগ হয়েই ওরা খেলে। একদল ব্যাটিং করে, আরেকদল করে বোলিং। ক্রিকেটের মতোই আম্পায়ারও থাকে। আর থাকে মাঠভর্তি দর্শক! কারণ খেলাটাও যে বড়ো সড়ো কোনো মাঠেই হয়। এতো মিলের মাঝেও কিন্তু বিশাল একটা অমিল আছে। আর অমিলটা হলো, বল নিয়ে। ক্রিকেট খেলায় বহুবার ব্যাটসমানরা ছক্কা পিটিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠায়। যতোবারই পাঠাক না কেন, প্রতিবারই সেই বল মাঠে ফেরত পাঠাতে হয়। কিন্তু বেসবল খেলায় বল যদি গ্যালারিতে চলেই যায়; আর আপনি যদি সেটা পেয়ে যান, তাহলে নিশ্চিন্ত মনে ওটা সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। ফেরত দিতে হবে না! দারুণ না ব্যাপারটা?


আবার ভয় পেয়েন না, বেসবল আর ক্রিকেট বল নিয়ে একগাদা পার্থক্য শোনাবো না আজ আপনাদের। বরং ক্রিকেট বল নিয়ে মজার মজার কিছু কথা জানাবো। ক্রিকেট বলকে পিটাতে দেখলে আমরা সবাই খুশি হই। বিশেষ করে যখন দেখি বড়ো কোনো দলের বিপক্ষে সাকিব, তামিম, মুশফিকরা বেধড়ক পেটাচ্ছে। আবার সেই বলই যখন মাশরাফির দারুণ এক সুইংয়ে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প উড়িয়ে নেয়, তখনও আনন্দিত হই। শুধু পেস বোলিং কেন, রাজ্জাক কিংবা সাকিবের ঘূর্ণি বলেও যখন ব্যাটসমান বোকা বনে যায়, তখনও তো মজাই লাগে আমাদের, তাই না? কাণ্ডটা দেখেন একবার, এতো মজা করে আমরা ক্রিকেট ম্যাচগুলো দেখি বটে, অথচ ক্রিকেট বলের অনেক কথাই জানিনা। ব্যাপারটা কি ভালো দেখায়? আজ তাহলে ক্রিকেট বল নিয়ে কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক।


ক্রিকেট বলের ওজন কতো?
এই প্রশ্নটা আপনাদের মনে কতোবার এসেছে বলেন দেখি? যদি সঠিক জবাব জানা না থাকে, তাহলে জেনে নেন, ১৫৫.৯ গ্রাম থেকে ১৬৩ গ্রামের মধ্যে থাকে বলের ওজন। আর অনেকেই বলে, ক্রিকেট নাকি কাঠের বল। আসলে কাঠ না, কর্কের বল বলতে পারেন। কর্ক চিনলেন না? ঐ যে, ব্যাডমিন্টন খেলায় সাটল কর্ক বলি যে আমরা, ওটার পালকের একদম নিচে যে অংশটা থাকে, যেখানে র‌্যাকেট দিয়ে বাড়ি মারা হয়, ওটাই হলো কর্ক। এই কর্ক অনেকগুলো ছোট ছোট টুকরা করা। যেগুলো একসঙ্গে জোরে চাপ দিয়ে আটকে রাখা হয়। সেই সঙ্গে সুতা দিয়ে সেলাইও করা হয়। তারপর মুড়িয়ে দেওয়া হয় চামড়া দিয়ে। আর চামড়ার সেলাইটাও করা হয় মজবুতভাবে। তবে এবার কিনা, সেলাইয়ের সঙ্গে সঙ্গে আঠাও লাগানো হয়। যা কিনা শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট বলকে একটা ধারালো আবহ এনে দেয়। সেজন্যই বলি, যদি না জানেন কিভাবে বল ধরতে হবে, তাহলে কখনোই ক্রিকেট বল ধরার চেষ্টা করবেন না। বেকায়দায় পড়লে, শরীরের যেখানে লাগবে, সেখানে কেটে যাবে!

বলের ওপরের চামড়ার রঙটা বহুদিন ধরে শুধুই লাল রঙের ছিল। এরপর যখন দিবা রাত্রি ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হলো, তখন থেকেই সাদা রঙের বল ব্যবহারের শুরু। রাতের বেলা ফ্লাড লাইটের আলোয় লাল রঙের বল সহজে দেখা যায়না। আর সেজন্যই লালের বদলে অন্য কোনো রঙ খোঁজা হচ্ছিল। এজন্য হলুদ আর কমলা রঙের বল দিয়ে খেলা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সাদাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। হুম, এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেম, প্রথম কবে তাহলে দিবা রাত্রির ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল? ১৯৭৯ সলের ২৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিপনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম দিবা রাত্রি ম্যাচ।


আম্পায়াররা অনেক সময়ই খেলা চলতে চলতে বল পরিবর্তন করেন, দেখেছেন নিশ্চয়ই? আসলে আগে নিয়ম ছিল, ওয়ানডেতে ইনিংসে ৩৫ ওভারের পরে, আর টেস্টে ৮০ ওভারের পরে বল পরিবর্তন করা যেতো। টেস্ট ক্রিকেটে এখনো পুরোনো নিয়ম বহাল আছে। তবে পাল্টে গেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে বল পরিবর্তনের নিয়ম। এখন বল পরিবর্তন না করে একইসাথে দু'টো বল দিয়েই খেলা শুরু হয়। প্রতি ওভার শেষে উইকেটের প্রান্ত যেমন বদল করা হয়, একইসাথে বদল করা হয় বলও। এখন, এই বল পরিবর্তনের ব্যাপারটা কেন করা হয়, জানেন? বলের সাইজ নষ্ট হয়ে যায় বলে। ভালো কথা, ক্রিকেটের বল কিন্তু পুরোপুরি গোল নয়! এর একদিকের পরিধি ২২৪ মিমি আর আরেকদিকের ২২৯ মিমি! আশ্চর্যজনক না ব্যাপারটা? বলের সাইজের পাশাপাশি আরেকটা ব্যাপারও জেনে নেন। সবদেশে কিন্তু একই ধরনের বল দিয়ে খেলা হয়না। হ্যাঁ, সব একদিনের ম্যাচ হয় অবশ্য কুকাবুরা বল দিয়েই। কিন্তু এই উপমহাদেশে যখন টেস্ট ম্যাচ হয়, তখন খেলা হয় এসজি ক্রিকেট বল দিয়ে। ইংল্যান্ডে টেস্ট ম্যাচ হয় ডিউক ক্রিকেট বল দিয়ে। আবার অস্ট্রেলিয়া, দ.আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ম্যাচ হলে তখন আবার চলে আসে কুকাবুরা বল।


এসজি কিংবা ডিউক বল পেস বোলারদের বেশ সাহায্য করে। কারণ কুকাবুরা বলের তুলনায় এই বলের সিম (বলের উপরের সুতা) বেশ ভালো হয়। যা কিনা বাতাসে সুইং কিংবা পিচে পড়ে আরে ভালো সুইং করতে পারে। আর বল যতো পুরনো হতে থাকে, দেখবে যে, ফিল্ডাররা খুব ভালো করে শুধু একদিকেই ঘষতে থাকে। এতে করে বলের একদিক পুরনো হয়, অন্যদিক চকচক করতে থাকে। আর তাতেই ফাস্ট বোলাররা রিভার্স সুইং করতে পারে। কেন এই রিভার্স সুইং হয়? যে দিক চকচক করে, সে পাশে বাতাস খুব বেশি ঘষা খায় না। কিন্তু অন্যদিকে বাতাস অনেক বেশি ঘষা হয়। আর তাই, বল বাতাসেই ঘুরে যায়, মানে সুইং খায়। এটাই তো রিভার্স সুইং, তাই না?

যাক বল নিয়ে অনেক কথাই হলো। এবার আপনাদের আরেকটা অবাক করা গল্প বলে আজ শেষ করি। বিশ্বের সবচেয়ে দামি বলটির দাম কতো হতে পারে, ভাবেন তো? বলটি তৈরি করা হয়েছিল ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে, শ্রীলঙ্কায়। বলটা ছিল পুরোটাই হীরার তৈরি! ওজন ৫৩.৮৩। আর বলটির সিম কী দিয়ে বানানো হয়েছিল, জানেন? একদম খাঁটি সোনা দিয়ে! পুরো ১২৫ গ্রাম স্বর্ণ দিয়ে বানানো হয়েছিল বলটির সিম!

লেখকঃ সাগর আশরাফ।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info