ভূমিকম্প পন্ডিত ।। Earthquake Scholars

শীতের সময় কি হয়, বলেন তো? সবাই আমরা ঠান্ডায় কাঁপতে থাকি, তাই না? তখন আবার আমাদের দাঁত গুলোও ঠাণ্ডায় ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। ঠিক তেমনই আমাদের পৃথিবীটাও মাঝেমধ্যেই একটু নড়েচড়ে উঠে। তখন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গাও ঠকঠক করে কেঁপে উঠে। আর পৃথিবী বিভিন্ন জায়গার এভাবে কেঁপে উঠাকেই বলা হয় ভূমিকম্প।


ভুমিকম্পে প্রায়ই আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়! এখন কি করা যায় বলেন তো? বুদ্ধি কিন্তু একটা ঠিকই আছে। আমাদের প্রকৃতিতেই এমন কিছু বন্ধু আছে, যারা আমাদের এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। তারা ভূমিকম্পের আগেই টের পেয়ে যায় যে ভূমিকম্প হবে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, তারা হলো আমাদের পশু পাখি, জীব জন্তু ও কীট পতঙ্গ বন্ধুরা। গবেষণা করে দেখা গেছে, যে অনেক প্রাণী ভূমিকম্প হওয়ার আগেই বুঝতে পারে, ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে।

অনেক অনেক দিন আগে, সেই সুপ্রাচীন ৩৭৩ সালে, গ্রীসে একবার ভূমিকম্প হওয়ার আগের দিন প্রায় সব ইঁদুর, সাপ, আর নেউলে (মানে বেজি) সবাই মিলে গ্রীস ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল জানেন? রাগ করে? না, না, ওরা আসলে আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে এখানে ভূমিকম্প হতে পারে। শত শত বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, কোনো জায়গায় ভুমিকম্প হওয়ার আগে, মাছেরা অনেক ছোটাছুটি করে, মুরগিরা ডিম পাড়ে না, মৌমাছিরা নিজের মৌচাক ছেড়ে ঝাঁক ধরে উড়ে চলে যায়, কুকুর আর বিড়াল ঘেউ ঘেউ আর ম্যাঁও ম্যাঁও করে একেবারে পাড়া মাথায় তোলে। তখন ওদেরও আমাদের মতো ভয়ে গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info


আপনারা কি ম্যাকগাইভার দেখেছেন? কিংবা গোয়েন্দা বই পড়েন? তাহলে তো অবশ্যই "ডগ স্কোয়াডের" নাম শুনেছেন। যে কুকুরগুলো, গন্ধ শুঁকেই পাজি লোকগুলোকে ধরে ফেলে। তবেই বোঝেন, কুকুরদের ঘ্রাণ শক্তি কত্তো বেশি! আর ওদের শুধু ঘ্রাণ শক্তিই বেশি না, এমন অনেক কিছুই ওরা বুঝতে পারে, যেগুলো মানুষ ধরতেই পারে না। এ কারণেই মানুষ বুঝতে না পারলেও কুকুররা এবং অন্য আরো আরো প্রাণী আগে থেকেই অনেক কিছু বুঝতে পারে। যে কম্পন মানুষ পরে বোঝে সেটা প্রাণীরা আগে থেকেই অনুভব করতে পারে।

ভালো কথা, আপনারা কি জানেন "ভূমিকম্প" কেন হয়? আসলে আমাদের পৃথিবীটা অনেক অনেক বছর আগে খুবই গরম ছিলো, একদম হাত দিলে পুড়ে যাওয়ার মতো গরম। তারপর পৃথিবী আস্তে আস্তে ঠান্ডা হতে লাগলো। আর এখন তো পৃথিবী এতোটাই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে যে আমরা মজা করেই তাতে বাস করছি। পৃথিবীর ভেতরটা কিন্তু এখনও পুরোপুরি ঠাণ্ডা হয়নি। আর সেজন্য ভেতরের গরম উপাদানগুলো মাঝেমধ্যেই ছোটাছুটি করে। আর তখনই পৃথিবী কেঁপে উঠে। অনুমান করা হয়, প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ বার ভূমিকম্প হয়। আর এগুলোর মাত্র ১ লাখ ভূমিকম্পই মানুষ বুঝতে পারে। আর বড়োজোর ১০০টা ভূমিকম্প মানুষের ক্ষতি করে। কিন্তু সেই ১০০টাই মানুষের যে কতো ক্ষতি করে! এই কয়েকদিন আগেই জাপানে কী হলো দেখেন। হাজার হাজার মানুষ মারা গেলো। ঘর বাড়ি ভেঙে গেল। বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল জাপানের।


তবে প্রাণীদের ভূমিকম্প বোঝার ক্ষমতাকে অনেকেই উড়িয়ে দেন। তারা বলেন, প্রাণীরা তো অনেক কারণেই ভিন্ন আচরণ করতে পারে। এই যেমন ধরেন, ক্ষুধা লাগলে বা মন খারাপ হলে। কিন্তু এমন ঘটনা তো আর একবার দু’বার হয়নি। আর বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে পশু পাখিদের এই ভিন্ন আচরণ কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর দিচ্ছে। একবার দেখা গেলো, হেইচেং শহরে হঠাৎ ইঁদুর আর খরগোশরা ওদের গর্ত ছেড়ে আর সাপেরা তাদের শীতনিদ্রা ছেড়ে বেরিয়ে আসলো। এই তো ১৯৭৫ সালের কথা। কি হলো জানেন? প্রাণীদের এই উদ্ভট আচরণ দেখে চীনের রাজা জারি করলেন এক উদ্ভট হুকুম। শহরের সব মানুষকে শহর খালি করে চলে যেতে হবে। আর সেই শহরে মানুষও কম ছিলো না, ১০লাখ! কিন্তু রাজার হুকুম, অমান্য করার সাধ্য কার। যেমন হুকুম সবাই তেমনি কাজ করলো। শহরের প্রায় সবাই চলে গেল। তখন কি হলো? আপনারা কতোটুকু বড় হয়েছেন সেটা মাপার যেমন একটা স্কেল আছে ঠিক তেমনি, ভূমিকম্প মাপারও একটা স্কেল আছে। নাম রিখটার স্কেল। আর সেই স্কেলে ৬ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প মানে খুবই খারাপ ধরনের ভূমিকম্প। আর হেইচেংয়ে হলো ৭.৩ মাত্রার একটা ভূমিকম্প! একবার চিন্তা করেন, ইঁদুর খরগোশ আর সাপেরা যদি ওই অদ্ভূত আচরণ না করতো, আর তা দেখে রাজা যদি সেই অদ্ভূত হুকুম না জারি করতেন, তবে কী যে হতো! তাহলেই দেখেন, ওই ইঁদুর খরগোশ সাপেদের জন্যই কিন্তু ঐদিন লাখ লাখ মানুষ বেঁচে গেলো।


পৃথিবী কিন্তু অনেকগুলো খণ্ডে বিভক্ত। আমরা তো উপরে থাকি, তাই এতো কিছু বুঝতে পারি না, খণ্ড গুলো আবার পৃথিবীর ভেতরে কিনা। এই খণ্ড গুলোই যখন নিজেদের মধ্যে মারামারি, মানে ধাক্কা ধাক্কি করে, তখন একধরনের বৈদ্যুতিক আয়নের সৃষ্টি হয়। প্রাণীদের ত্বক শুকনো তো, তাই ওরা এটা ভালো বুঝতে পারে। একবার হলো কি জানেন? কোনো এক মে মাসের ৫ তারিখে চীনের এক রাজ্যের সব ব্যাঙেরা রাস্তায় মিছিল বের করলো, আর চিড়িয়াখানায় জেব্রারা তাদের খাঁচার দরজা দিয়ে তাদের মাথা বের করে দিতে চাইলো, হাতিরা শুঁড় তুলে কান্নাকাটি শুরু করলো আর ময়ূররা তো একসাথে কর্কশ কণ্ঠে এমন ডাকাডাকি শুরু করে দিলো যে সবাই তাজ্জ্বব! আর সত্যি সত্যিই ঐ মাসেরই ১২ তারিখে ভূমিকম্প হলো। প্রাণীরা অমন অদ্ভূত কাণ্ড কোথায় করেছিলো জানেন, ভূমিকম্প যেখানে হলো, তার থেকে মাত্র ৬০০ মাইল পশ্চিমের একটা চিড়িয়াখানায়।


আচ্ছা, ইন্দোনেশিয়াতে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর যে সুনামিটা হলো তখন মানুষ বেশি মারা গিয়েছিল, নাকি পশু পাখি, বলেন তো? পশু পাখি? উঁহু, হয়নি, বেশি মারা গিয়েছিল মানুষ। প্রায় দেড় লাখ। কেন? কারণ ঐ যে, প্রাণীরা তো আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে ওখানে একটা মারাত্মক ভূমিকম্প হবে। আর তাইতো ওরা সাবধান হয়ে গিয়েছিল আর ৯ মাত্রার মারাত্মক ভূমিকম্প আর তার ফলে যে ভয়ঙ্কর সুনামি হলো তার হাত থেকে বেঁচে গেলো।


ইশ্শ! আমরাও যদি আগে থেকেই বুঝতে পারতাম! তবে আপনারা কিন্তু এখন থেকেই একটু সাবধান হবেন। আর আপনাদের আশেপাশের পশু পাখিদের আচরণ খুব ভালো করে খেয়াল করবেন। বলা তো যায় না, আমাদের দেশেও তো যে কোনো সময়েই বড়োসড়ো একটা ভূমিকম্প হতেই পারে। তখন ওদের সতর্কবার্তা যদি আমরা না খেয়াল করি, তবে কিন্তু সর্বোনাশ হয়ে যাবে।

যদি দূর্ভাগ্য ক্রমে ভূমিকম্পের দূর্ঘটনার মধ্যে পরেই যান তাহলে কি করবেন? তা জানতে 'ভূমিকম্পে আমাদের যা করনীয়' লেখাটি অবশ্যই পরে নিন।

লেখকঃ ঋতি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।