আজ আপনাদের একটি কুকুরের গল্প শুনাব, যে আসলেই প্রমান করেছে " কুকুর মানুষের সর্বাধিক বিশ্বস্ত বন্ধু"। ঘটনাটি ঘটে আর্জেন্টিনায়। "মিগুয়েল গুজমান" যিনি একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি বসবাস করতেন "ভিলা কারলোজ প্যাজ" নামে এক শহরে। অনেকটা শখ করে একটি কুকুর পোষেন। যার নাম রাখেন "ক্যাপ্টেন"। মিগুয়েল গুজমান বার্ধক্যজনিত কারনে তিনি মারা যান ২০০৬ সালের মার্চ মাসে। মিগুয়েল গুজমানের মৃত্যুর পর তার কুকুরটিকে কেউ খুঁজে পায় না। পরিবারের সদস্য হারাবার কারনে কেউ কুকুরটির দিকে তেমন ভাবে নজর রাখেনি।
গুজম্যানের পরিবারের সদস্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পুনঃরায় ফিরে আসেন মিগুয়েল গুজমানের গোরস্থানে তখন তারা দেখতে পার ক্যাপ্টেইন নামে তাদের পোষা জার্মান সেফার্ড কুকুরটি বসে আছে গুজম্যানের কবরের ঠিক পাশে। গুজম্যানের বিধবা স্ত্রী ভিরনিকা ক্যাপ্টেইনকে কবরের পাশে দেখে ডাক দেন এবং ক্যাপ্টেইন দৌড়ে চলে আসে। মিগুয়েল গুজমানের স্ত্রী সহ সকলের অনেকটা অবাক হন যে ক্যাপ্টেইন এই ক'দিন বাড়িতে না ফিরে কবরের পাশে অবস্থান করছে।
ভিরানিকা মিগুয়েল গুজমানের স্ত্রী দৈনিক নিউয়র্কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন যে, ক্যাপ্টেন যখন ছোট ছিল অর্থাৎ তার স্বামী যখন তাকে প্রথম ঘরে নিয়ে আসেন তখন তিনি ক্যাপ্টেইন কে খুব একটা পছন্দ করেন নি, এমন কি তিনি সব সময় ক্যাপ্টেইন কে এড়িয়ে চলতেন। ক্যাপ্টেইনের সকল দেখা শোনা গুজম্যান নিজে করতেন এবং তাতে তিনি বিন্দু মাত্র সহায়ত করতেন না। কিন্তু বর্তমানে তার স্বামীর প্রতি ক্যাপ্টেইনের বিশ্বস্ততা দেখে তিনি হতবাক এবং শত ব্যাস্ততার মাঝে তিনি প্রতি সপ্তাহে ক্যাপ্টেন কে দেখতে গোরস্থানে যান। কেননা ক্যাপ্টেনকে কোন ভাবেই বাড়িতে রাখা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে।
মিগুয়েল গুজম্যান এর মৃত্যু হয় স্বাভাবিক ভাবে হাসপাতালে এবং এর পরে তাকে আর বাড়িতে আনা হয় নি। সেখান থেকে চার্চে এবং সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গোরস্থানে। সব থেকে আশ্চর্যকর বিষয় হচ্ছে গোরস্থান্টি বাড়ি থেকে অনেক দূরে প্রায় ৩০ কিঃমিঃ এর মত। কিন্তু এই গোরস্থান ক্যাপ্টেইন কিভাবে বের করল তা সকলের কাছে এখনও একটি প্রশ্ন। কেননা গুজম্যানের মৃত্যুর পরে তাকে আর বাড়ি আনা হয় নি যে, ক্যাপ্টেইন তার পিছু পিছু গোরস্থানে যাবে। আর কবর দেওয়ার সময় কেউ ক্যাপ্টেইন কে দেখেইনি আসে পাশে। এটা হয়ত কুকুরের কোন ইন্দ্রিয় যার সাহায্যে পৌছাতে পেরেছিল ক্যাপ্টেন তা না হলে অন্য কিছু!
ভিরনিকা যখন প্রথম আবিস্কার করেন ক্যাপ্টেন গোরস্থানে তার স্বামীর কবরের পাশে আছেন, তারপরে তিনি কয়েকবার ক্যাপ্টেইনকে বাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এমন না যে ক্যাপ্টেইন আসতে চায় না। আসে তাদের পিছু পিছু কিন্তু কয়েক ঘন্টা বাড়িতে থেকে আবার সে বেরিয়ে যায় তার মালিকের কবরের উদ্দেশ্যে। তাকে কোন ভাবেই রাখা যায় না। আর ভিরানিকা এখন আর চেষ্টাও করেন না। কেননা ক্যাপ্টেন তার মালিকের কাছে যাচ্ছে যে তাকে ছোট থেকে বড় করেছে। আর তাই এখন সে আর কোন বাঁধা দেয় না আর।
গুজম্যানকে কবর দেওয়া হয় সরকারি গোরস্থানে। সেখানে সর্বক্ষনিক সুরক্ষয়া বাহিনী থাকে। তারা আরো কিছু মজার তথ্য জানায়। প্রতিদিন সকাল ৬টায় সে তার মালিকের কবরের উপর শুয়ে পরে এবং ঘন্টা খানিক ঘুমিয়ে নেয়। এর পর উঠে মালিকের কবরের চারিদিকে কয়েক বার ঘুরে এবং খাবার সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পরে। গোরস্থানের পাহারাদারাও তাকে এখন কিছু বলে না। কেননা সে তার মালিকের কবর বাদের অন্য কোন কবরে কাছে যায় না। এমন কি অন্য কুকুরের মত মাটি খোড়াখুড়ি পর্যন্ত করে না। প্রথমে ক্যাপ্টেন তাদের দেখে লুকিয়ে থাকলেও এখন আর থাকে না। বরং লোক দেখলে এগিয়ে তাকে হাত উচু করে স্বাগত জানায়।
সত্যিকার অর্থে ক্যাপ্টেইন প্রমান করেছে, "কুকুর মানুষের সব থেকে বিশ্বস্ত বন্ধু", যে তাকে ছোট বেলা থেকে বড় করেছে, তাকে পরিচর্যা করেছে, তাকে দেখে শুনে রেখেছে, তার মৃত্যুর পরেও তাকে সে ভোলে নাই। এমন কি তার মালিকের বাড়িতে থাকার সুখ বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছে গোরস্থান তার বাসস্থান হিসেবে। হয়ত গুজম্যান আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন অথবা ওপারের দুনিয়া থেকে দেখছেন (!!!) তার স্ত্রী, সন্তান সবাই যখন তাকে কবরে একলা রেখে চলে গেছেন নিজ নিজ ঠিকানায় তখন তার পোষা কুকুরটি রয়েছে তার পাশে।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
সত্যিকার অর্থে ক্যাপ্টেইন প্রমান করেছে, "কুকুর মানুষের সব থেকে বিশ্বস্ত বন্ধু", যে তাকে ছোট বেলা থেকে বড় করেছে, তাকে পরিচর্যা করেছে, তাকে দেখে শুনে রেখেছে, তার মৃত্যুর পরেও তাকে সে ভোলে নাই। এমন কি তার মালিকের বাড়িতে থাকার সুখ বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছে গোরস্থান তার বাসস্থান হিসেবে। হয়ত গুজম্যান আজ বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন অথবা ওপারের দুনিয়া থেকে দেখছেন (!!!) তার স্ত্রী, সন্তান সবাই যখন তাকে কবরে একলা রেখে চলে গেছেন নিজ নিজ ঠিকানায় তখন তার পোষা কুকুরটি রয়েছে তার পাশে।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন