প্রথম বাংলাদেশি লিঙ্গ পরিবর্তনকারি ।। First Bangladeshi Transgender


লিঙ্গ পরিবর্তনক (Transgender) বর্তমান সময়ে অনেকেরই আগ্রহের বিষয়। এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন হল কি এই Transgender? আসলে এটা এক ধরনের মানষিক রোগ, যখন কোন নারী বা পুরুষ নিজের জন্মগত প্রাপ্ত যৌনাঙ্গর সাথে নিজের ব্যাক্তিত্বের মিল করাতে পারে না তখন যে এক ধরনের মানষিক অশান্তিতে ভোগে। তার অঙ্গভঙ্গি বা আচার আচারনে নিজের কাছেই মনে হতে থাকে যে ভুল শরীর বা লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগের নাম GID (Gender Identity Disorder) বা Gender Dysphoria

এর আগে "সুন্দরী মডেল যারা জন্মে ছিল পুরুষ হিসেবে (১ম পর্ব)" এবং "২য় পর্বে" লেখায় আপনাদের সামনে তুলে ধরে ছিলাম এমন সব সুন্দরী মডেলদের কথা যারা জন্মেছিল পুরুষ হিসেবে কিন্তু পরবর্তিতে তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় তারা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হয়েই ক্ষ্যান্ত দেন নাই বরং মডেল দুনিয়াও কাপাচ্ছেন।

তবে আজ মডেল দুনিয়ার কাপাকাপি না বরং আপনাকেই কাপিয়ে দিবে একজন বাংলাদেশি হিসেবে। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব বাংলাদেশের প্রথম Transgender এর সাথে। তার বর্তমান নাম "এম্যেলিয়া" (Amelia), আর জন্ম নাম "আদেশ" (Adesh)।

"আদেশ" এর পূর্বের ছবি
ঢাকার মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা আদেশ ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চলে যান কানাডায়। আর ২০০৪ সালে ২৩ বছরে পরিনত হন একজন Transgender নারী মডেলে।

"আদেশ" তথা "এম্যেলিয়া"
ঢাকায় পরিবারের সাথে থাকা নিয়ে এম্যেলিয়ার বলেন, "ছোট বেলা থেকেই তিনি তার মার কাপড় এবং প্রসাধনি ব্যাবহার করতেন যখন তার মা বাড়ির বাইরে থাকত। সে তার মার পোষাক পরতে খুবই ভালবাসত, যদিও সে জানত যে এগুলি কখনই তার পরিবার মেনে নিবে না কেননা তার পরিবার ধার্মিক মুসলিম পরিবার। এছাড়াও স্কুলে তিনি অনেক বন্ধুর কাছে তিরস্কারের স্বীকার হতেন তার এই মেয়েলি চেহারার জন্য।"

আদেশ যখন প্রথমবার লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অপারেশন করানোর খবর তার পরিবারকে জানান তার পরিবার সাথে সাথেই তার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধো করে দেন। যদিও পরবর্তিতে তার পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়।

এ নিয়ে এম্যেলিয়া বলেন, "তার প্রথমবার স্তন্য প্রতিস্থাপনের অপারেশনের পরে তার পরিবার যখন তাকে দেখলেন তখন তাদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া ছিল অত্যান্ত কঠিক একটা বিষয়। কিন্তু তার পরিবার ধীরে ধীরে মেনে নেয়, কেননা তার পরিবার তাকে অনেক ভালবাসে।"

আরো বলেন, "আসলে এটা বাংলাদেশের কেউ কোন দিন মেনে নিবে না, আর এ নিয়ে ওখানে কথা বলাটাও অনেকটা নিষিদ্ধ জিনিষের পর্যায়ে পরে।"

চার্লস এবং এম্যেলিয়া
শুধু যে লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন আর বেশ নাম করা মডেল হয়েছেন তাই না, টরেন্ট শহরে খুঁজে পেয়েছেন জীবন সঙ্গীকেও। তার প্রেমিকের নাম "চার্লস" (Charles)। চার্লস এম্যেলিয়ার ব্যাক্তিগত প্রশিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তখন তার বিন্দু মাত্র ধারনা ছিল না যে এম্যেলিয়া পূর্বে একজন ছেলে ছিল।

চার্লস বলেন, "এম্যেলিয়াকে প্রথম যখন দেখি তখন আমি কল্পনাও করি নাই যে সে আসলে একজন লিঙ্গ পরিবর্তনকারি। আমাদের সম্পর্কের প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা ছিল, বিশেষ করে এম্যেলিয়া যখন তার এই লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রাক কালে ছিল আর নকল চুল ব্যাবহার করত। যদিও এটা এখন আর তেমন কোন বিষয় না আমাদের মাঝে। আমি এম্যেলিয়াকে অনেক ভালবাসি। আর আমি আমার বন্ধুদের বিশেষ করে জুটিদের এটা বলতে খুবই পছন্দ করি যে আমার প্রেমিকা আগে একজন ছেলে ছিল।"

আরো বলেন, "আমি এম্যেলিয়াকে আমার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি আর আমার পরিবারও আমাদের জন্য খুবই আনন্দিত যে আমরা সত্যিকারের ভালবাসা খুঁজে পেয়েছি।"


২০০৯ সালে আদেশ যখন ক্যানাডায় চলে যান পড়ালেখার জন্য তখন সে বুঝতে পারে যে এখানে সে মনকামনা পূরন করতে পারবে। এম্যেলিয়া বলেন, "আসলে এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের সময় ছিল যখন আমি উপলব্ধি করতে পারি যে এখানে আমি সেই মানুষইটি হতে পারব যে মানুষটি আমি সব সময় হতে চেয়েছিলাম।"

লিঙ্গ পরিবর্তনের কার্যক্রম শুরু করার প্রথম দিকে তিনি হরমোন নিতে শুরু করেন আর তার এই চিকিৎসা শুরু হবার দু'মাসের মাথায় সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি স্তন্য স্থাপন করবেন। এই সিদ্ধান্ত নেবার পর তিনি ৬,০০০ ইউরো ব্যায়ে স্থাপন করেন স্তন্য আর ২,০০০ ইউরো ব্যয় করে লেজার চিকিৎসা করান যা তার শরীর থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত লোম গুলিকে দূর করে দেয়।


এরপর থেকেই তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন মডেলিং দুনিয়ায় ধাতু হবার জন্য। ক্যানাডার লিঙ্গ পরিবর্তনকারি মডেল "জেনা ট্যালাকোভা" (Jenna Talackova) যখন অনেক আইনি লড়াই লড়ে প্রথম বারের মত অংশ গ্রহন করেন "Miss Universe Canada" প্রতিযোগিতায় তখন থেকেই এম্যেলিয়া তার অনুসারি হয়ে যান, আর এরপর থেকে এম্যেলিয়াও ঠিক করেন যে সে Miss Universe Canada প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করবেন এবং বিজয়ী হবেন। আর এই উদ্দেশ্যে তিনি কাজ করে চলেছেন।

তিনি বলেন, "আমার মনে হয় আমি যদি ঈশ্বরের উপর এবং আমার উপর বিশ্বাস রাখি আর একাগ্র চিত্তে কাজ করে যাই তাহলে অবশ্যই আমি আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারব।"

এবার চলুন দেখে নেই "আদেশ" তথা "এম্যেলিয়ার" কিছু ছবি,

আদেশ তার বান্ধবীর সাথে
১১ বছর বয়সে আদেশ
পরিবারের সাথে আদেশের ছবি

এবার চলুন দেখে নেই এম্যেলিয়াকে নিয়ে বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন,


http://vimeo.com/96981966/download?t=1401877670&v=258601121&s=7cbe85341db6685de280be950a5a3dba

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info