ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতি (প্রথম পর্ব) ।। History's Most Feared Race (1st Part)

এই পৃথিবীতে স্তন্যপায়ি প্রানিদের মধ্যে মানুষ তার প্রভাব বিস্তার করেছে সব থেকে বেশি। পৃথিবীর এই বুকে মানুষের পদচারনার এই দীর্ঘ পথ চলায় মানুষ তৈরি করেছে সমাজ আর এই সমাজ থেকে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন জাতি। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতির সাথে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক "ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতি" এর প্রথম পর্ব,


১০) স্পার্টান্সঃ
গ্রীক সময়কার জাতি এই স্পার্টান্স (The Spartans)। যদিও গ্রীক সময়কার এই জাতি কিন্তু এরা ছিল গ্রীক প্রভাব থেকে ছিল সম্পূর্ন মুক্ত এবং ভিন্ন। এই জাতির প্রতিটি পুরুষ ছিল একজন যোদ্ধা। বাদবাকি কাজ করানো হতো দাষদের দিয়ে। ছোট বেলা থেকেই ছেলে বাচ্চাদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষন দেওয়া হত। আর প্রশিক্ষক হিসেবে মূল ভূমিকা পালন করত তার জন্মদাতা পিতা। এই জাতিতে একজন পুরুষ একজন মাত্র নারী গ্রহন করতে পারত স্ত্রী হিসেবে, তবে যুদ্ধে অর্জিত নারীদের ভোগ করার এবং তাদের দাষি হিসেবে রাখার পূর্ন স্বাধীনতা ভোগ করত। এই প্রজাতির মানুষদের বলা হত "স্পার্টান" (Spartan)। এই স্পার্টান মানে হচ্ছে "আত্মবিসর্জন" এবং "সোজা জীবন যাপন"। এরা আসলেই সোজা জীবন যাপন করত কেননা এরা যুদ্ধ বাদে আর কিছুই বুঝত না আর যুদ্ধে আত্মবিসর্জন ছিল এদের জন্য খুবই গর্বের বিষয়। যদি যুদ্ধে এরা বেঁচে যেত তাহলে যত না সন্মান পেত নিজেদের মধ্যে তার থেকে বেশি সন্মান পেত যুদ্ধে মারা গেলে। যুদ্ধে মারা গেলে এদের কবর দেওয়া হত আর কবরে পাথর বসিয়ে দেওয়া হত তার বিরত্বের কথা স্বরণ করে। এই জাতির পুরুষেরা কৈশর থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকত। সাধারনত ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এরা যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করত। এদের মধ্যে এক অদ্ভুত আইন প্রচলিত ছিল। যুদ্ধে যদি কেউ তার ঢাল হারিয়ে ফেলত তাহলে যুদ্ধের পরে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত। যারা বীর হিসেবে নিজেকে পরিচিত দিতে চাইত, তারা হয় তাদের হাড়িয়ে যাওয়া ঢাল খুঁজে বের করবে অথবা খুঁজতে যেয়ে মারা যাবেন। আর যদি খুঁজে না পায় তাহলে নিজেই এসে মৃত্যুদন্ড কামনা করবে। যদি সে এই কাজ না করে তাহলে তার পরিবার সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবে।


০৯) মাওরিসঃ
মাওরিস (The Maoris) নিউজিল্যান্ডের পলিনেশিয়ান আদিবাসী। নিউজিল্যান্ডের প্রথম আদিবাসি বা বাসিন্দা হিসেবে এরা বেশ আক্রমনাত্মক ছিল। অনুপ্রবেশকারিদের এরা হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করত না, এই হত্যাযজ্ঞ তারা চালু রেখেছিল ১৮শ শতক পর্যন্ত। এই হত্যা কিন্তু শুধু হত্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এরা অনুপ্রবেশকারিদের হত্যা করে তাদের মাংস দিয়ে বলতে পারেন উতসবে মেতে উঠত। তাদের বিশ্বাস ছিল শত্রুদের মাংস খেলে তারা আরো বেশি শক্তিশালী আর যুদ্ধের কৌশল বৃদ্ধি পাবে। ১৮০৯ সালে আসা প্রথম ইউরোপের জাহাজে মাওরিসরা আক্রমন করে বসে। কারন ছিল সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ানরা মাওরিস জাতির প্রধানের বড় ছেলেকে অপমান করে বসে। আর এই অপমানের বদলা নিতে মাওরিস জাতির যোদ্ধারা জাহাজের প্রায় ৬৬ জন নাবিকের উপর হামলা করে। হামলা করে তারা মৃত এবং অর্ধমৃত নাবিকদের ধরে নিয়ে যায়। এসময় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন নাবিক যারা জাহাজের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ছিল তারা দেখতে পায় যে তাদের সঙ্গীদের সমুদ্র পাড়ে পুরিয়ে তাদের মাংস দিয়ে উৎসব করা হচ্ছে। পরবর্তিতে তারা কোন এক উপায়ে নিজ দেশে ফিরে এই কথা জানান।


০৮) ভাইকিং:
ভাইকিং (The Viking) সম্পর্কে আপনাদের সবার কম বেশি ধারনা আছে। এরা মূলত সমুদ্র ভ্রমন প্রিয় উত্তর জার্মানির আদিবাসি। এরা মূলত ভংকর যোদ্ধা হিসেবে বেশি পরিচিত, তারপরেও এদের মধ্যে অনেকেই ব্যাবসায়ি, অনুসন্ধানের কাজে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াত। এরা ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আটলান্টিক দ্বীপের দিকে আসা শুরু করে ৮ম থেকে ১১তম শতকের দিকে। এরা খুবই যুদ্ধ প্রিয় এবং নিজের সীমানা নিয়ে সদা জাগ্রত এক জাতি। যুদ্ধের প্রতি এদের কোন অনিহা ছিল না বরং যুদ্ধ করতে না পারলে এদের মন খারাপ হত। তাই এরা কারন বা অকারনেই প্রতিবেশিদের সাথে যুদ্ধ বাধিয়ে বসত। যুদ্ধক্ষেত্রে এদের শারীরিক শক্তি ছিল অপ্রতিদন্ধি আর এদের মূল অস্ত্র কুড়াল। কুড়াল ছাড়াও তলোয়ার আর বল্লম ছিল এদের প্রিয় অস্ত্র। ইতিহাসের এরা একমাত্র জাতী যাদের ধর্ম ছিল যুদ্ধ করা। এরা মনে করত যুদ্ধ করা মানেই সৃষ্টিকর্তার আরাধোনা করা। যুদ্ধের সময় সামনে যা পরবে তা ধ্বংস করাই ছিল এদের পরম দ্বায়িত্য।


০৭) এ্যাপাচি উপজাতিঃ
এ্যাপাচি উপজাতি (Apache Tribes) উপজাতির লোকেরা ভয়ংকর যোদ্ধা। এদের বলা হয় আমেরিকার নিনজা (Ninjas Of America)। রেড ইন্ডিয়ানদের মত এরাও আমেরিকার আদিবাসি। কিন্তু এরা অন্যান্য আমেরিকার আদিবাসিদের মত এত সহজে নিজেদের ভূমি বা দলের মেয়েদের অন্যদের হাতে তুলে দিত না। এরা মূলত অস্ত্র বানাতো প্রানিদের হাড় দিয়ে। যোদ্ধা হিসেবে এরা ছিল অনেক ধূর্ত এবং চালাক। প্রতিপক্ষকে এরা কখনই সামনা সামনি হামলা করত না। লুকিয়ে হঠাত করে প্রতিপক্ষের পিছনে যেয়ে এরা এক টানে ছুড়ি দিয়ে গলা কেটে ফেলত, প্রতিপক্ষ ব্যাক্তি কিছু টের পাবার আগে। এরা যদিও ছুড়ি চালনায় সব থেকে বেশি পারদর্শি তারপরেও সামনা সামনি যুদ্ধে এদের প্রিয় অস্ত্র ছিল যুদ্ধকুঠার (Tomahawk) এবং কুড়াল। এদের আদিবাস্থান আমেরিকার উত্তর দক্ষিন অঞ্চল গুলিতে ছিল। তৎকালীন আমলে আমেরিকার আর্মিরাও এদের সাথে পেরে উঠত না। এরা খুবই পারদর্শি ছিল হামলা করে পালানোতে। বলতে পারেন অনেকটা গেরিলা যোদ্ধাদের মত। বর্তমানে এদের জনগোষ্টির সংখ্যা অনেক কম হলেও আমেরিকার আর্মিতে যুদ্ধের মাঠে সব থেকে বেশি সফল এই জতি গোষ্টির লোকেরা। তাই আমেরিকার বিশেষ আর্মি ফোর্সে এদের অবস্থান বেশি।


০৮) রোমান সাম্রাজ্যঃ
রোমান সাম্রাজ্য (Roman Empire) ইতিহাসের সব থেকে বড় জাতি। বলা যায় এক সময়ে পৃথিবীর ৩ ভাগের ২ ভাগ শাষন করত এরা। এমন কি ঈসা (আঃ) জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলির মধ্যে অতোপ্রত ভাবে জড়িত এই রোমান সম্রাজ্য। এদের সম্রাজ্যের মধ্যে ছিল বর্তমানের ইংল্যান্ড (রোমান নাম Britannia), স্পেইন (রোমান নাম Hispania), ফ্রান্স (রোমান নাম Gaul or Gallia), গ্রীস (রোমান নাম Achaea), মদ্যপ্রাচ্য (রোমান নাম Judea) এবং উত্তর আফ্রিকা। যদিও বর্তমানে এই রোমান সম্রাজ্যের অস্তিত্ব নেই, তবে পশ্চিম ইউরোপে এই রোমানরা এখনও টিকে আছে। "গ্লাডিয়েটর" (Gladiatorial) এর উতপত্তি এই রোমান সম্রাজ্যে। ঐ যে যেখানে দাষ বা অপরাধিদের পরস্পরের সাথে আমৃত্যু যুদ্ধ করানো হত। ইতিহাস ঘাটলে এই রোমান সম্রাজ্য যে কত নিষ্ঠুর ছিল তা বেরিয়ে আসে। তা নিয়ে লেখতে বসলে দিন পার হয়ে যাবে। তবে সব থেকে মজার বিষয় "গনতন্ত্র" বা "সংসদ" ব্যাবস্থার উতপত্তি হয়েছিল এই রোমান সম্রাজ্যে। এছাড়াও কল্প কথায় কত দেবদেবি, এমন কি আমাদের ইংরেজি ক্যালেন্ডার সহ আরো অনেক কিছু আবিস্কার হয়েছিল এই রোমান আমলে। গণিতের অবাবনিয় উন্নতি এই রোমান সম্রাজ্যের সময় হয়। তারপরেও এই রোমান সম্রাজ্য কুলশিত হয়েছে বর্বর আচারনের জন্য। বিশেষ করে শাষক কালিয়গুলা (Caligula) এবং নেরো (Nero) এর আমলে। খ্রিষ্ট ধর্মালম্বিদের নিধন করার জন্য এরা আপনার কল্পনার সব থেকে নিষ্টুর ব্যাবস্থা গ্রহন করেছিল।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info