দুর্ঘটনায় আবিস্কৃত পৃথিবী বদলে দেওয়া আবিস্কার

কোন কিছু আবিস্কার করার পেছনের গল্প আমরা খুব কমই জানি, আজ সে রকম কিছু বিস্ময়কর আবিষ্কারের গল্প আপনাদের শুনাবো। এমনও কিছু আবিষ্কার আছে, যা আবিষ্কারকের কয়েক বছর কেড়ে নিয়েছে, কোন টা আবার হয় তো কয়েক দশকও, পরিবর্ধন ও উন্নতি সাধনে। আবার কারো গোটা জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে শ্বাসরুদ্ধকর কিছু আবিষ্কারের পেছনে, তবুও উৎসুক মন পিছু হটে নি। তো চলুন দেখে নেয়া যাক এক নজরে সেই সব আবিষ্কারের কিছু কাহিনী।


The Psychedelic Nature of LSD:
"Lysergic acid diethylamide" এর সংক্ষিপ্ত নাম "LSD"। যখন সুইডিশ রসায়নবিদ "Albert Hofmann" ১৯২৯ সালে "স্যান্ডজ" গবেষনগারে কাজ করছিলেন, তিনি "ergot" নাকম ছত্রাক থেকে আসা কিছু অজানা যৌগিক পদার্থের আচরন নিয়ে একটি মিশনে কাজ করছিলেন। Hofmann চেয়েছিলেন এই যৌগিক পদার্থের যথাযথ গবেষনার মধ্য দিয়ে কি এমন কোন ওষুধ তৈরি করা যায় কি না।

তিনি এই পদার্থকে একটি জারে রেখে দিলেন, আর একটি অনুসিদ্ধান্ত তৈরি করলে LSD-25 নামে, কিন্তু তখনকার সময়ে গবেষনার জন্যে গবেষক ও চিকিৎসকদের কাছে এই জাতিও ছত্রাকের তেমন কোন আকর্ষনীও দিক ছিল না। ৫ বছর পরে, Hofmann তার রেখে দেওয়া ওই LSD-25 কে আরও একবার দেখতে চাইলেন, ১৯৪৩ সালে যখন যৌগিক পদার্থের প্রসার ব্যাপক আকার ধারন করছে, Hofmann দাবি করলেন যে, "তিনি কিছু অস্বাভাবিক রকম উত্তেজনা অনুভূতি" দ্বারা বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। এর কিছু নির্যাস যে কোন ভাবে ভুলবশত তার ভিতরে চলে যায়, তাকে একটি নির্মল কক্ষে নেয়ার পূর্বেই। এর পর আর কাজ না করে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, হোফম্যান তখন বলেন "আমি কিছু অস্বাভাবিক রকম প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি, কিছু বিচিত্র রকম রঙের কারসাজীও"।

হোফম্যান কিন্তু ভুলক্রমেই আধনিক কালের শক্তিশালী ড্রাগ আবিষ্কার করে ফেলেন। এর পরেও Hofmann কিন্তু এই ড্রাগ নিয়ে আরও অনেক গবেষনা করেন একে চিকিৎসা ও মনোরোগ এর জন্যে একে ব্যবহার করতে পদক্ষেপ নেন, তিনি কিন্তু এই কথা চিন্তা করতে পারেন নি যে, তার এই আবিস্ক্রত ড্রাগ আজ মানুষের জীবন রক্ষা করা অপেক্ষা জীবন কেড়ে নিচ্ছে অধিক হারে ১৯৬০ সাল থেকেই।


কর্নফ্লেক্সঃ
কে জানত যে আমেরিকার প্রথম প্রিয় খাবার আবিষ্কৃত হবে দুর্ঘটনায়? এই কাহিনীর শুরু "Will Keith Kellogg" এর সাথে, চিকিৎসা শাস্ত্রে তার আকর্ষন, আর সাথে ভুলে যাওয়ার বদ অভ্যাস ও এই আবিষ্কারের পেছনে আছে। Kellogg তার ভাইকে সহায়তা করতেন, যিনি "Battle Creek Sanitarium" এ একজন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন, মিশিগানে, রোগী ও তাদের খাদ্য নিয়েও গবেষনা করতেন। ভাইয়ের সাথে যখন গবেষনায় সাহায্য করছিলেন এবং সাথে রোগীদের খাবার রান্না করতেন Kellogg একটি আবিষ্কারে হোঁচট খান, যা তার তার জীবন বদলে দিয়েছিলো।

একদিন যখন তিনি রুটি বানাতে লাগলেন, মনে পড়ল, আরে আমার প্রধান জিনিষ ই তো নাই, সিদ্ধ গম, রুটি কি করে হবে? গম সিদ্ধ হতে চুলোয় চড়িয়ে বাইরে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে যখন ফিরে আসলেন তা দিয়ে আটা বানাতে, দেখেন সব গম ফ্ল্যাকি বা ভাঁজ ভাঁজ হয়ে গেছে, তিনি উৎসুক হয়ে দেখতে লাগলেন কি ঘটে টা দেখতে, হাল ছাড়লেন না, এই গম সেঁকে, শুখনো করে তৈরি করলেন এক রকম নাস্তা, যা সব রোগীরাই পছন্ধ করলো। এর পর Kellogg ওই চাকরি ছেড়ে দিলেন, নিজের ব্যবসা ধরবেন বলে।

১৯০৬ সালে, "The Battle Creek Toasted Corn Flakes Company," নামে তার নিজের বিশাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেন। এই হল কর্নফ্লেক্স আবিষ্কারের কাহিনী।


ডিনামাইটঃ
বিস্ফোরক দ্রব্যাদির গবেষনা খুব সহজ নয়, নয় হাসি তামাশার ব্যপারও। "আলফ্রেড নোবেল" একজন সুইডিশ রসায়নবিদ ও প্রযুক্তিবিদ, তা অর্জন করেছিলেন অনেক কঠিন ভাবে। নাইট্রগ্লিসারিন কে সুস্থির রাখতে, এমন একটি বিস্ফোরক তরল নিয়ে গবেষনা কতে গিয়ে নোবেল ও অন্যান্য কর্মীরা সম্মুখীন হয়েছেন অনেক দুর্ঘটনার যার, একটি চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছিলো। ১৮৬৪ সালে, Stockholm, Sweden এ একটি বিস্ফোরনে নোবেল তাঁর ভাই ছোট ভাই সহ হারান কিছু সহকর্মীকেও।

কেউ জানতো না আসলে কি করে এই বিস্ফোরন ঘটেছিল আর নোবেল কে প্রভাবিত করেছিলো, কিন্তু অনেক সন্দেহের ভিড়ে তাঁকেই ঠেলে দেয়া হল এই কারন অনুসন্ধানে এবং এই রকম বিস্ফোরক দ্রব্য কে নিরাপদ ভাবে রাখার উপায় বের করার জন্যে। নাইট্রোগ্লিসারিন এর অস্থিতিশীলতার এই নতুন ধর্মের সাথে, নোবেল লাগাতার অনেক গুলো পরীক্ষা করলেন এই বিস্ফোরনের কারন বের করতে এবং এই সব পদার্থকে নিরাপদ রাখতে।

কেউ এমনও বলে থাকেন যে, পরবর্তীতে নোবেল আরও একটি দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এই পদার্থকে স্থিতিশীল করার উপায় বের করে ফেলেন। নোবেল যখন নাইট্রোগ্লিসারিন পরিবহন করছিলেন, তিনি লক্ষ্য করেন যে একটি ক্যান বা বোতল ভুলক্রমে ভেঙ্গে ফুটো হয়ে যায়। তিনি আবিষ্কার করেন যে, যে ক্যান টিতে দ্রব্য ছিলো "kieselguhr" নামক একটি পাললিক শিলা ঐ তরল কে পরিপূর্ন ভাবে শোষন করে নিচ্ছে। নাইট্রোগ্লিসারিন অনেক ভয়ানক একটি বিস্ফোরক এবং এর নাড়াচাড়া ও অনেক সাবধানে করতে হয়, কিন্তু এই ঘটনা নোবেল কে এই সিদ্দান্তে উপনীত করে যে "kieselguhr" আসলেই বিস্ফোরক দ্রব্যের একটি স্থিতিকারক।

স্বজ্ঞানেই, নোবেল পরবর্তীতে একটি ফর্মুলা গঠন করেন যা বিস্ফোরক দ্রব্য কে "kieselguhr" এর সাথে মিস্ত্রিত হতে ন্যস্ত করে কোন প্রকার বাধা প্রধান করা ছাড়াই। ১৮৬৭ সালে তিনি এই পন্যের পেটেন্ট নিজের নামে করেন, যাকে ডিনামাইট নাম দিলেন, যা কন্সট্রাকশন এর অনুশীলন ও বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


স্যাকারিনঃ
কৃত্রিম মিষ্টি নিঃসন্দেহে আবিষ্কার তালিকার প্রথমে আছে, কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই আসল উদ্ভাবন গল্প, প্রথম কৃত্রিম সুইটেনারস। "Fahlberg" ১৮৭৯ সালে আকমস্মিক ভাবে স্যাকারিন আবিস্কার করেন যখন একটি ল্যাবে কাজ করছিলেন কিছু কেমিক্যাল নিয়ে। ভুল ক্রমে Fahlberg অসাবধানতা বশত কিছু কেমিক্যাল তার হাতে নিয়ে কাজ করছিলেন।

বাড়ি ফিরে যখন খাবার খাচ্ছিলেন, তিনি লক্ষ্য করলেন যে তার ব্রেড বা রুটি কিছু অস্বাভাবিক রকমই মিষ্টি, যদিও তিনি এতে কোন চিনি পর্যন্ত মেশাননি। তিনি ভাবনায় পরে গেলেন, তিনি অনুধাবন করতে পারেল যে এই মিষ্টির রহস্য তার ল্যাবের সাথে জড়িত, যে পদার্থ তিনি হাতে নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি বুঝে গেলেন ঘটনা কি, তিনি এতে কিছু গবেষনা করে চিনির অস্তিত্ব পেলেন। কিছু দিন পর Fahlberg স্যাকারিন কে নিজের নামে পেটেন্ট করে নিলেন।

কিন্তু এতে তার বস কিছুটা ক্ষেপে গেলেন, কেননা তাকে এই ল্যাবে কিছু যৌগিক পদার্থের গবেষনায় সাহায্য করতে রাখা হয়ে ছিলো। যাই হোক, Fahlberg এর এই আবিষ্কার আজ প্রতি গবেষনাগারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, ফুড ইন্ড্রাস্টিতে এর ব্যব্যহার ব্যাপক হারে বেড়ে গেলো।

এক বছর পরের কথা, কৃত্রিম মিষ্টিকারক হিসেবে স্যাকারিনের ব্যবহার বেড়ে গেলো প্রায় অস্বাভাবিক ভাবে, কারন এতে ক্যালরির পরিমান কম ছিলো, যা সবার জন্যেই স্বাস্থ্যসম্মত। চিনি ছাড়া খাদ্য দ্রব্য মিষ্টি করতে স্যাকারিন ব্যবহৃত হতে লাগলো, বিশেস করে তাদের জন্য অনেক সুখবর নিয়ে আসলো জাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা।


মাইক্রোওভ ওভেনঃ
মাইক্রোওয়েভ আবিষ্কারের জন্যে আমরা "Percy Spencer" কে ধন্যবাদ দিতে পারি যখন তিনি "Magnetron" পর্যবেক্ষন করছিলেন, Magnetron এমন একটি টিউব যা রাডারের যন্ত্রপাতি তে শক্তি যোগান দিতে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী হিসেবে স্পেনসার যখন Raytheon কোম্পানি'র একটি গবেষনাগার পরিদর্শন করছিলেন, তখন তিনি অনুধাবন করলেন যে, বিস্ময়কর কিছু ঘটছে যখন তিনি এই যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, স্পেনসার এর পকেট তার দৃষ্টি আকর্ষন করলো, যেখানে তিনি একটি চকোলেট রেখেছিলেন কিন্তু এখন সেটি গলে গেছে, কিন্তু স্পেনসার এর কিছুই হয়নি, অর্থাৎ গলে যান নি! আজ আমরা জানি যে এই মাইক্রোওয়েব এর সম্প্রসারিত তরঙ্গ কিন্তু মানব দেহের জন্যে ক্ষতিকরও হতে পারে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে।

এই আইটেম কে আরও নিপুন ভাবে পরীক্ষা করে দেখলেন কিছু খাদ্য দ্রব্য দিয়ে, কিছু কর্নফ্লেক্স। তিনি সাফল্য পেলেন, পরবর্তীতে এই তিনি একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটি যন্ত্র তৈরি করলেন, যা আজকের মাইক্রোওভেন ওভেন নামে আমরা ব্যবহার করছি আমাদের একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভাবে যা ১৯৪৫ সালে আবিষ্কৃত হয়।


ভায়াগ্রাঃ
যখন সাইড এফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভাবি, স্বভাবতই এর খারাপ দিকের কথাই আমাদের মাথায় আসে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, আসলে এই সাইড এফেক্ট অনেক ভালো কিছুরও জন্ম দিতে পারে।

যখন "Simon Campbell" ও "David Roberts" নামে দু'জন গবেষক "ফিযার" (Pfizer) নামে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তে কাজ করছিলেন, তখন কিছু নতুন ঔষধের কার্যকারিতা নিয়ে, তারা ভাবতেই পারেননি যে তাদের নতুন এই পন্যটি কি মোড় নিতে যাচ্ছে। তারা দুজন একটি ওষুধ তৈরি করেন যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে। ১৯৮০ সালের শেষ দিকে, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্যে এটা মনুষ্য দেহে পুষ করার জন্য প্রস্তুত।

চিকিৎসক দল দ্বারা তা পরীক্ষিত হলে এর নাম দেয়া হলো, UK-92480 কিছু রোগীদের দেহে তা ইঞ্জেক্ট করে ফলাফল দেখা গেলো, গবেষকরা যেমনটি প্রত্যাশা করেছিলেন, তেমনটি নয় এর কার্যক্ষমতা। ইতোমধ্যে, গবেষকরা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করতে লাগলেন যে রোগীরা উদ্দীপনা অনুভব করছে, তাও সেই রকম।

Pfizer এর গবেষকরা অবাক হয়ে এই অনভিপ্রেত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে একে নিয়ে গবেষনা শুরু করলেন। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের চিকিৎসার পরিবর্তে, কোম্পানি নতুন একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করলো এই ঔষধের ব্যবহারের জন্য। ট্রায়াল সফল ভাবে শেষ হলো, ঔষধের নতুন নাম দেয়া হলো "ভায়াগ্রা" (Viagra) যা "sildenafil citrate" নামেও পরিচিত। যা U.S. Food and Drug Administration দ্বারা ১৯৯৮ সালে অনুমোদন করা হয়।


পেসমেকারঃ
"Wilson Greatbatch" অনেক দিন থেকে এমন একটি সমাধান এর খুঁজে ছিলেন যা "ব্লক হার্ট" কে কার্যক্ষম করতে পারে, এমন এক অবস্থায় যখন রক্তকে সঠিক ভাবে সঞ্চালন করতে হার্ট তার পরিপার্শ্বিক নার্ভ থেকে কোন বার্তা বা নির্দেশ গ্রহন করতে অক্ষম। অন্যান্য বিজ্ঞানিরা যখন অনেক ভারি ও কষ্টকর কোন কল বা উপকরন ব্যবহার করে ছিলেন এই চিকিৎসায়, Greatbatch চেয়ে ছিলেন সহজে ব্যবহার যোগ্য এমন কোন যন্ত্র যা কাজটি করতে পারবে।

Greatbatch যখন মনস্থির করলেন যে এই রকম একটি যন্ত্র তাকে তৈরি করতেই হবে যা ভাঙ্গা হৃদয়কে সচল করতে সক্ষম, তার আবিষ্কারের সে মুহূর্ত আপনাকে চমকে দিতে পারে। তিনি পশু দের "হার্ট বিট" এর শব্দ রেকর্ড করার জন্য যখন একটি "oscillator" তৈরি করছিলেন Cornell University তে, ১৯৫৮ সালে, তিনি অসাবধানতায় ভুল ট্রানজিস্টর ওই যন্ত্রে ইন্সটল করে ফেলেন। একটু পরে যখন তা বুঝতে পারলেন, তিনি তখনও উৎসুক ছিলেন যে এর ফলে কি ঘটে তা দেখতে। কিন্তু কোন ভাবেই প্রত্যাশা করছিলেন না যে অস্কিলেটর কাজ করবে, তিনি এর সুইচ অন করলেন এবং কিছু চেনা রিদমিক শব্দ শুনতে পেলেন, এমন একটি প্যাটার্ন যা হ্রিদকম্প এর সাথে মিলে যায়।

পরবর্তীতে এর নাম নেয়া হলো "পেসমেকার" (Pacemaker) যা হার্ট কে সচল বা স্পন্দিত করতে বহুল প্রচলিত, তিনি তার নতুন এই যন্ত্র আরও নিবির ভাবে পরীক্ষা করলেন পশুদের উপরে এবং সর্বশেষ মানুষ দেহে ১৯৬০ সালে।


পেনিসিলিনঃ
হ্যাঁ "পেনিসিলিন" দুর্ঘটনায় আবিষ্কৃত। আর দুর্ঘটনায় আবিষ্কৃত আবিস্কার গুলোর কথা একে ছাড়া হতেই পারে না। "আলেকজান্ডার ফ্লেমিং" (Alexander Fleming) একজন স্কটিশ জীবানুবিদ, তাঁর ল্যাবের একটি দুর্ঘটনার পরে পেনিসিলিন কে তালিকাভুক্ত করেন। ১৯২৮ সালের ২ সপ্তাহের একটি ছুটি কাটিয়ে তিনি যখন বাড়ি ফিরলেন, ফ্লেমিং লক্ষ্য করলেন যে তাঁর একটি পেট্ট্রি ডিশে বাসা বেঁধেছে কিছু নতুন ছাঁচ বা আবরন, বিস্ময়কর ভাবে তিনি লক্ষ্য করলেন যে ডিশে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া কিন্তু ওই জায়গায় জন্মাতে পারেনি যেখানে ওই আবরন জন্মেছে, শুধু তাই নয়, তা অন্য যেকোনো ধরনের জীবানুকেও ওই অঞ্চলে জন্মাতে দেয়নি। ফ্লেমিং একে বিচ্ছিন্ন করলেন, শ্রেনীবদ্ধ করলেন ও বর্ননা করলেন এই আবরন কে। তৈরি করলেন আরও বেশি পরিমান আবরন, কিছু কঠিন গবেষনাও করলেন।

এরপর কিন্তু ফ্লেমিং এর এই আবিষ্কার তাৎক্ষনিক ভাবে চিকিৎসার জন্যে ব্যবহৃত হয়নি। ফ্লেমিং এর পেনিসিলিন আবিস্কারের প্রায় ১৩ বছর পরে, Howard Florey, Norman Heatley ও Andrew Moyer আবার পেনিসিলিনকে স্পটলাইটে আনেন, যখন তারা এই জাতীয় ছাঁচ অধিক পরিমানে তৈরি করছিলেন চিকিৎসা বিদ্যায় গবেষনার জন্যে। তখন থেকে সারা বিশ্বে পেনিসিলিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে অসংখ্য জীবন রক্ষার্থে।


এনেস্থেশিয়াঃ
সর্বশেষ এই এক্সিডেন্টাল আবিষ্কার ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠত। "Crawford Long", "William Morton", "Charles Jackson" এবং "Horace Wells" তিন গবেষক একত্রে কথা বলছিলেন এনেস্থেশিয়া নিয়ে। তারা অনুধাবন করলেন যে, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইথার এবং নাইট্রাস অক্সাইড (লাফিং গ্যাস) মানুষের ব্যাথা উপশম করতে পারে।

১৮৮০ সালে, এই দ্রব্যের ব্যবহার অনেকটা জনপ্রিয় হয়ে উঠে, তখন এটা বিনোদনের জন্যে ব্যবহৃত হতে লাগলো। এই ধরনের কিছু অনুষ্ঠান কে বলা হতো "লাফিং পার্টি" অথবা "ইথার ফ্রলিক্স"।

১৮৪৪ সালে, গবেষক "Horace Wells" একটি লাফিং পার্টিতে অতিথি ছিলেন, যখন তিনি এই লাফিং গ্যাস দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন, তিনি অসচেতনতায় পায়ে আঘাত পান ও রক্তপাত হতে থাকে। কিন্তু তিনি শুধুই দেখে যাচ্ছিলেন যে রক্তপাত হচ্ছে তাঁর পায়ে, কিন্তু তিনি কোন ব্যাথা অনুভব করেননি।

এরপর Wells এই পদার্থকে এনেস্থেশিয়া রূপে পুরোপুরি ভাবে ব্যবহার শুরু করেন যখন তিনি নিজের একটি দাঁত অপসারন করার পর তাতে প্রয়োগ করেন ও উপশম লাভ করেন। তখন থেকে এনেস্থেশিয়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যাথানাশক বা চেতনানাশক হিসেবে।

এরপর তিন গবেষক Crawford Long, William Morton, Charles Jackson এবং Horace Wells একে আরও পরিবর্ধন করে দন্ত্য চিকিৎসা সহ সব ধরনের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেন।

লেখকঃ এম হুসাইন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info