বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল ।। Bennington Triangle


১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া 'এদুয়ার্দো স্যানচেজ' ও 'ড্যানিয়েল মিরিক' পরিচালিত আমেরিকান ভৌতিক মুভি 'The Blair Witch Project' এর মূল কাহিনী একটি ভয়াবহ স্থান ও সেটাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া কিছু রহস্যময় ঘটনা নিয়ে। কাহিনীটি একটি বনকে ঘিরে, যেখানে কেউ প্রবেশ করলেই রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেকে আবার উন্মাদে পরিণত হয়, অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে বা শব্দ শুনতে শুরু করে। ভারমন্টের গ্রিন মাউন্টেনে টানা ৫ বছর যাবত ঘটে চলা এই রহস্যময় ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি রহস্যময় ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছেন। তাদের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নাই, যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন তারা। আর এগুলোর জন্য কখনো রহস্যময় কোন প্রাণী, কখনো আলোর ঝলকানি ও কখনো আবার ভূতুড়ে ঘটনাকে দায়ী করা হয়।

ভারমন্টে বহু বছর ধরে অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে এসেছে, কিন্তু এই ১০ ব্যক্তির রহস্যময় ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে হতভম্ব করে দেয়। আর এসব নিয়ে প্রথম বই লিখেন 'জো সিত্রো', নাম 'Green Mountain Ghosts', 'Ghouls' and 'Unsolved Mysteries'।


এতে তিনি এই জায়গাটির নাম দেন 'Bennington Triangle’। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা আমরা শুনে আসলেও এই বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলের ঘটনা আরো বেশি ভয়াবহ যেখানে ভিন্ন গ্রহের যান, অদ্ভুত আলো, শব্দ, গন্ধ ও অদ্ভুত প্রাণী দেখা যাওয়ার ঘটনা তো আছেই। সেই সাথে আছে মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনাও।

ইউরোপীয়দের আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগে থেকে এই জায়গাটি আদিবাসী আমেরিকানরা সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের ধারণা ছিল এ জায়গাটি অভিশপ্ত হওয়ার কারণে এখানে খারাপ বাতাস প্রবাহিত হয়। এছাড়া এও বলা হতো যে এই জায়গাতে খুব অদ্ভুত একটি পাথর আছে। সেই পাথরের উপর যার পা পড়তো, সেটা তাকেই খেয়ে ফেলতো। প্রাচীন কাল থেকেই থেকে অসংখ্য মানুষ হয় পাগল হয়ে গিয়েছে নয়তো মারা গিয়েছে কিংবা চরম দুর্ভোগে পতিত হয়েছে এই স্থানে প্রবেশ করে।

১৯৪৫ সালের ১২ নভেম্বর। ৭৫ বছর বয়সী মিডি রিভার্স ৪ জন শিকারিকে নিয়ে পর্বতে গেলেন শিকারের জন্য। দলটি যখন ফিরে আসছিল তখন লঙ ট্রেইল রোড ও ৯ নম্বর রুটের কাছাকাছি এসে রিভার্স তার দলের সাথীদের চেয়ে কিছুদূর সামনে এগিয়ে যান। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা তন্ন তন্ন করে এই মানুষটিকে খুঁজলেন কিন্তু কিছুই পেলেন না। তার সহযাত্রীদের কাছে একটাই নিদর্শন ছিল, একটি বুলেট যেটা রিভার্সের কোমর থেকে পড়ে গিয়েছিল যখন তিনি পানি খাচ্ছিলেন।


এক বছর পর, ১৯৪৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ১৮ বছরের উচ্ছল মেয়ে 'পলা ওয়েল্ডেন' ঘুরতে ঘুরতে বনের ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং বলাই বাহুল্য যে আর ফিরে আসে নাই। অনেকেই তাকে বনের কাছে ঘুরতে দেখেছিল। যখন সে আর ফিরে এলো না তখন তদন্ত শুরু হলো। ৫০০০ ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা ও এফবিআই এর তদন্ত সত্ত্বেও পলাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই। ধারণা করা হয়, পলা তার প্রেমিকের সাথে কানাডা পালিয়ে গিয়েছে কিংবা বনের ভেতরের পর্বতের কোথাও ধ্যানমগ্ন আছে। কিন্তু কোন প্রমাণ নেই।

তিন বছর পর, 'জেমস ই টেটফোর্ড' সেইন্ট এলবান থেকে বাসে করে বেনিংটনের দিকে আসছিলেন। বাস বেনিংটনের আসা মাত্র দেখা গেল তিনি বাসে নেই। পথে বাসটি কোথাও থামে নাই। বাসের চালক ও অন্য যাত্রীরা কেউই বলতে পারলেন না জেমস কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন। ১৯৫০ সালের অক্টোবরের ১২ তারিখ। ৮ বছর বয়সের পল জেপসন বেনিংটন ব্ল্যাকহোলের শিকারে পরিণত হয়। ছেলেটি প্রায়ই পর্বতের কাছে ঘুরতে যেত। সে হারিয়ে যাবার পর পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর তার গন্ধ শুঁকে শুঁকে কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পায় না। কিছুদূর যেয়ে যেন পল অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।

দুই সপ্তাহ পরে অক্টোবরের ২৮ তারিখ।, 'ফ্রিডা ল্যাঙ্গার' তার চাচাত ভাই 'হার্বার্ট এলসন' এর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল। পথে একটি ছোট নদীতে পড়ে গেলে ফ্রিডা হাবার্টকে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে বলে পোশাক পরিবর্তনের জন্য ক্যাম্পে ফিরে যায়। অনেকক্ষণ হয়ে যাবার পরও ফ্রিডা ফিরে না এলে হাবার্ট তাকে খুঁজতে ক্যম্পে ফিরে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখলো ফ্রিডা সেখানে আসেই নাই।


কেউ ফ্রিডাকে বন থেকে বের হতে দেখে নাই। আর ফ্রিডা পুরো জায়গাটি খুব ভালভাবে চিনতো। দিনের আলোতে সে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল? অনুসন্ধানী দল প্লেন ও হেলিকপ্টারে করে তন্ন তন্ন তরে খুঁজেও কিছু পায় না। নভেম্বরের ৫-১২ তারিখ পর্যন্ত ৩০০ সেনা, পুলিশ, শিক্ষার্থী মিলে ফ্রিডাকে খুঁজতে চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হন সবাই।

কি আছে এই বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে? অনেকের মতে এই জায়গাটিতে আমাদের চেনা জানা ত্রিমাত্রিক জগতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। ফলে যে এই পরিবর্তিত ত্রিমাত্রিক জগতে পা রাখে, সে হারিয়ে যায়। কেউ বলেন, ভিন্ন গ্রহের প্রাণীরা তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। আরেকটি মত হচ্ছে, বনের ভেতর হয়তো কোন সিরিয়াল খুনী আছে। কিন্তু তাই যদি হয় তবে লাশ গুলো কোথায়? উত্তর এখনো অজানা।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info