"হাবল" সাফল্যের ২৩ বছর


২৪ শে এপ্রিল, জ্যোতি বিজ্ঞানের অধ্যায়ে সবচেয়ে ঐতিহাসিক দিন। এই দিনে "হাবল স্পেস টেলিস্কোপ" (Hubble Space Telescope) প্রেরণ করা হয় পৃথিবীর কক্ষপথে, অবারিত হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় এক বিশাল দ্বার।

জ্যোতি বিজ্ঞান চর্চার শুরু থেকে অর্থাৎ গালিলিওর সময় থেকেই জ্যোতির্বিদদের মনে একটাই আকাঙ্খা বেশি দেখা, কাছাকাছি দেখা ও সূক্ষ্ম ভাবে দেখা। যার জন্যে "হাবল স্পেস টেলিস্কোপ" এক বিস্ময়কর নাম। এক বিস্ময়কর মেশিন যা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে ১৯৯০ সালে ২৪শে এপ্রিল। মহাশূন্যের সব আচরন ও পরিবর্তনের উপর নজর রাখতে, কিছু রহস্যের দ্বার খুলতে।

যদিও এর ধুঁয়া প্রথম উঠেছিলো ১৯২৩ সালে একজন জার্মান জ্যোতি বিজ্ঞানী "Hermann Oberth" এর প্রস্তাবে। জ্যোতি বিজ্ঞানী "এডুইন হাবল" এর নামানুসারে এর নাম করন করা হয়। "এডুইন হাবল" মহাজাগতিক বস্তু সমূহের ব্লুশিফট আর রেডশিফট দেখিয়ে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল আর প্রতিটি বস্তু একটা আরেকটা থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে। আর এই প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তিতে মহাবিষ্ফোরণ বা বিগ ব্যাং তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

এক নজরে হাবল স্পেস টেলিস্কোপঃ
  • সংস্থাঃ NASA / ESA / STScI
  • উৎক্ষেপণ তারিখঃ April 24, 1990, 8:33:51 am EDT
  • উৎক্ষেপণ বাহন টেমপ্লেটঃ OV (STS-31)
  • মিশনের আয়ুষ্কালঃ ২৩ বছর।
  • ভরঃ ১১,১১০ কেজি।
  • দৈর্ঘ্যঃ ১৩.২ মিটার (৪৩ ফুট)।
  • কক্ষপথের ধরণঃ Near circular low Earth orbit
  • কক্ষপথের উচ্চতাঃ ৫৫৯ কিঃমিঃ (টেমপ্লেটঃ Convert/মাইল)।
  • কক্ষপথের পর্যায়কালঃ ৯৬ – ৯৭ মিনিট (১৪-১৫ বার প্রতিদিন)।
  • কক্ষপথের বেগঃ ৭,৫০০ m/s (২৫,০০০ ft/s)।
  • মাধ্যাকর্ষণগত বেগ টেমপ্লেটঃ Convert/m/s2
  • অবস্থানঃ Low Earth orbit
  • টেলিস্কোপের ধরণঃ Ritchey Chrétien Reflector
  • তরঙ্গদৈর্ঘ্যঃ visible light, ultraviolet, near infrared
  • ব্যাসঃ ২.৪ মিটার।
  • Collecting area: ৪.৫ বর্গ মিটার (৪৮ sq ft)।
  • অধিশ্রয়ণ দৈর্ঘ্যঃ ৫৭.৬ মিটার (১৮৯ ফুট)।
যন্ত্রসমূহঃ
  • NICMOS infrared camera/spectrometer
  • ACS optical survey camera (partially failed)
  • WFC3 wide field optical camera
  • COS ultraviolet spectrograph
  • STIS optical spectrometer/camera
  • FGS three fine guidance sensors
হাবল টেলিস্কোপ নাসা'র সব চেয়ে সফল ও লং লাস্টিং মিশন, আজ পর্যন্ত যা কয়েক হাজার ফটো পৃথিবীতে প্রেরণ করেছে।

কার্যপ্রণালীঃ
প্রতি ৯৭ মিনিটে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীকে একটি পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করে, সেকেন্ডে ৮ কিলোমিটার গতিতে। সে মুহূর্তে এর মিরর আলোক ধারন করে ও সরাসরি তা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে প্রেরণ করে।

আলো যখন এর প্রধান মিরর কিংবা প্রাইমারী মিররে আঘাত করে, প্রাইমারী মিররে তা প্রতিফলিত হয়ে একটি সেকেন্ডারি মিররে চলে যায়। সেকেন্ডারি মিরর এই আলোকে প্রাইমারী মিররের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ছিদ্রে ফোকাস করে, যেখান দিয়ে তা সরাসরি এর সাইন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্টে গিয়ে আপতিত হয়।

প্রায়ই কেউ কেউ টেলিস্কোপের ক্ষমতা সম্পর্কে ভুল ধারনা পোষণ করে যে একটি বস্তুকে ম্যাগ্নিফাই করতে বা বিস্তৃত করতে তা আসলে অক্ষম। কিন্তু তা নয়, মানুষের চোখ যে আলোকে ধরতে পারে না অর্থাৎ অদৃশ্যমান, সে আলোকেও টেলিস্কোপ সনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে পারে। একটি টেলিস্কোপের মিরর যত বড় হবে, তা তত বেশি আলোকে ধারন করতে পারে ও এর দৃষ্টিসীমাও তত বিশাল হয়। হাবলের প্রাইমারী মিররের আকার ৯৪.৫ ইঞ্ছি (২.৪ মিটার) ডায়ামিটারে। কিন্তু ভুমিতে স্তাপিত অনেক টেলিস্কোপ থেকেও এর আকার অনেক ছোট, যেখানে এদের আকার ৪০০ ইঞ্চি পর্যন্তও হয়, তবে হাবল এর অবস্থান একে অবিশ্বাস্য দর্শন ক্ষমতা দিয়ে থাকে।

যখনই মিরর কোন আলোকে ধারন করে, হাবল এর সব গুলো যন্ত্রপাতি একত্রে অথবা স্বতন্ত্র ভাবে এর গবেষণায় ব্যস্থ হয়ে পড়ে। এর প্রতিটি যন্ত্র মহাবিশ্বকে ভিন্ন ভাবে পর্যবেক্ষণের আদলেই ডিজাইন করা হয়েছে।

হাবলের প্রধান প্রধান কিছু অংশের কার্যপ্রণালীঃ

The Wide Field Camera 3 (WFC3): এটি একটি শক্তিশালী ক্যামেরা যা ভিন্ন ধরণের আলো দেখে। আল্ট্রাভায়োলেট, দৃশ্য ও ইনফ্রারেড এর কাছাকাছি। এর রেজুলেশন ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা টেলিস্কোপের অন্যান্য যন্ত্রপাতি থেকে অধিক প্রখর। (WFC3) হাবলের দুটি নতুন সরঞ্জামের একটি এবং তা "ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার" গবেষণায় কাজ করে, কাজ করে কিছু স্বতন্ত্র তারকা ও গ্যালাক্সির সন্ধানে।

The Cosmic Origins Spectrograph (COS): হাবলের আরেকটি নতুন সংযোজন, একটি স্পেক্ট্রোগ্রাফ যা বিশেষ আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দেখতে পারে। যা আসলে একটি প্রিজমের মতো কাজ করে, মহাকাশের অনেক ধরণের আলো থেকে স্বতন্ত্র ভাবে সনাক্ত করে। তাতে একটি বিশেষ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবস্থার মতো আছে যা আমাদের বলে সেখানের তাপমাত্রা, কেমিক্যাল অবস্থা, ঘনত্ব ও গতি সম্পর্কে। (COS) আরও হাবলের আলট্রাভায়োলেট ক্ষমতাকে ১০ মিনিটের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তা ধরে রাখতে পারে প্রায় ৭০ মিনিটের মতো যখন অবজেক্টকে পর্যবেক্ষণ করে।

The Advanced Camera for Surveys (ACS): সকল প্রকার দৃশ্যমান আলোকে দেখে, এবং তা পৃথিবীতে অবস্তানকালে একে দেয়া কিছু নির্দেশ অনুসারে কাজ করে। এই Advanced Camera for Surveys (ACS) ডার্ক ম্যাটার ও অনেক দুরের লক্ষ্যবস্তু'র ম্যাপ কষতে কাজ করে, বৃহৎ কোন প্ল্যানেটের খোঁজে ব্যস্থ থাকে, গ্যালাক্সির ক্লাস্টার এর বিবর্তন রহস্য নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই যন্ত্রটি হঠাৎ করে ২০০৭ সালে কাজ করা বন্ধ করে দেয় একটি বৈদ্যুতিক গোলমালের কারনে, কিন্তু ২০০৯ সালে তা একটি নভোচারী টিম মেরামত করে আসেন।

The Space Telescope Imaging Spectrograph (STIS): একটি স্পেক্ট্রোগ্রাফ যা অতিবেগুনী রশ্মি, কিছু দৃশ্য ও আলট্রাভায়োলেট এর কাচাকাছি রশ্মি কে সনাক্ত করে। ব্লাক হোলের অস্তিত্ব প্রমানে এর অবদান অনস্বীকার্য। এই যন্ত্রটিও ২০০৪ সালে বিকল হয়ে পড়ে, তবে ২০০৯ সালে স্পেস মিশন ৪ তা মেরামত করে দেন।

The Near Infrared Camera and Multi Object Spectrometer (NICMOS): হাবলের তাপমাত্রা পরিমাপক সেন্সর। ইহা ইনফ্রারেড আলোর প্রতি বিশেষ নজর রাখে, যেন তা মেশিনের ক্ষতি না করে। অত্যাধিক গরম হয়ে গেলে তা কুলার সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে অন করে মেশিনকে রক্ষা করে।

The Fine Guidance Sensors (FGS): একটি বিশেষ ধরণের সেন্সর যা "পর্যবেক্ষণাধিন তারকা" এর উপর নজর রাখে তার স্ক্রিনে বন্ধি (lock) করে, পৃথিবীতে থাকা গবেষকদের সহজ করে দেয় এর তথ্য ও উপাথ্য দিয়ে, যা থেকে তারা তারকার দূরত্ব ও তাদের গতি নিরোপনে ব্যবহার করেন।

হাবলের সবগুলো যন্ত্রপাতি সোলার বা সৌরচালিত ব্যাটারির সাহায্যে চলে। একটি বিশেষ ব্যবস্থায় এই শক্তি বা বিদ্যুতের কিছু অংশ বাঁচিয়ে রাখে টেলিস্কোপ যখন পৃথিবীর ছায়ায় অর্থাৎ আঁধারে চলে যায়, তখন একে জোগান দেয়ার জন্যে।

তথ্য ও উপাথ্য সংগ্রহঃ
এই বিস্ময়কর যন্ত্র কিন্তু সরাসরি পৃথিবীতে ডেটা প্রেরন করেনা। টেলিস্কোপের এন্টেনা পৃথিবীর নিকটতম একটি স্যাটেলাইটে সব ডেটা প্রেরণ ও গ্রহন করে "হাবল ফ্লাইট অপারেশন" টিমের কাছ থেকে। সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা যেমন ডেটা গ্রহন করে থাকেন, তেমনি এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিস্কোপকে প্রয়োজনীয় কম্যান্ড অর্থাৎ নির্দেশ দিয়ে থাকেন। টেলিস্কোপের আছে প্রধান দুটি কম্পিউটার, যার একটি এই সব কম্যান্ড গ্রহন করে ও অন্যটি এই কম্যান্ড বিশ্লেষণ করে অনান্য সব যন্ত্র কে কম্যান্ড প্রদান করে। দ্বিতীয় কম্পিউটারটি টেলিস্কোপের মেমরি থেকে ডেটা সংগ্রহও করে এবং তা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গ্রাউন্ড স্টেশন অর্থাৎ Goddard Space Flight Center এ প্রেরণ করে।

Goddard Space Flight Center এ কর্মরত গবেষকরা
Goddard Space Flight Center এ ডেটা সংগৃহীত হবার পর, তা Space Telescope Science Institute (STScI) এ প্রেরণ করে, যেখানে এই সব ডেটা ট্রান্সলেট করা হয় বৈজ্ঞানিক ভাবে। এর পর তা গবেষণার জন্যে নিরাপদে সংরক্ষিত হয়। হাবল প্রতি সপ্তাহে এই পরিমান ডেটা সেন্ড করে থাকে যে প্রায় ১৮ তা ডিভিডি ডিস্ক পূর্ণ করা যাবে। নভোচারী ও গবেষকরা পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে এইসব ডেটা ডাউনলোড করতে পারেন ইন্টারনেটের সাহায্যে।

সমস্যা ও প্রথম মেরামতঃ
হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীর কক্ষপথে যাবার পরেই একটি বিষয় ধরা পড়ে যে, কিছু একটা গোলমাল তো ঘটে গেছে। আর তা হলো এর পাঠানো ছবি গুলো একটু বেশই ব্লারি বা ঘোলা, যেমনটা পৃথিবীতে স্থাপিত টেলিস্কোপের বেলায় হয় না।

টেলিস্কোপের প্রাইমারী মিরর অতি যত্ন ও সতর্কতার সাতে, প্রায় পুরো একটি বছর সময় নিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো, তবে কেন এমন হলো? এর কারন ছিল এর আলো প্রতিফলন ক্ষমতা অর্থাৎ সূর্যের তীব্র আলো এর কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতিতে গিয়ে পড়ে আর ফল স্বরূপ ছবি এই রকম আসে।

এক বছর গবেষণার পর একটি সমাধান বের হয়ে গেলো, একটি ছোট মিরর ব্যবহার করা যেতে পারে এর আলোকে প্রতিফলিত করতে। ১১ মাস প্রশিক্ষণ শেষে Corrective Optics Space Telescope Axial Replacement সংক্ষেপে COSTAR নামে একটি বিশেষ দল গঠন করা হলো।

সাল ১৯৯৩, ২ ডিসেম্বর, স্পেস শাটল "Endeavor" ৭ জন ক্রু নিয়ে যাত্রা করে পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল টেলিস্কোপ মেরামতের উদ্যেশ্যে। ৫ দিনের পরিশ্রম শেষে তারা হাবলে একটি নতুন মিরর দিয়ে প্রতিস্তাপন করতে সক্ষম হন ও সাতে আরও কিছু ছোটখাটো মেরামত করে ৯ ডিসেম্বর ফিরে আসেন।


মেরামতে গঠিত নভোচারী টিমঃ
  • Andrew J. Feustel
  • Michael J. Massimino
  • John M. Grunsfeld
চলছে হাবলের মেরামত
শেষ দর্শনঃ
১৯৯৭ সালের পর, নাসা হাবল টেলিস্কোপের শেষ পর্যবেক্ষণ ও চেকআপের জন্যে সময় নির্ধারণ করে ২০০৬ সাল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি ১, ২০০৩ তারিখে, স্পেস শাটল "কলোম্বিয়া" যখন একটি মিশন শেষে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করে, দুর্ঘটনা বশত তা বিধ্বস্ত হয়ে যায় আকাশে। এর পর নাসা'র তৎকালীন মহাপরিচালক "Sean O'Keefe" হাবল মিশন বিরতি ঘোষণা করেন।

২০০৬ সালের ৩১ অক্টোবর, নাসার পরবর্তী মহাপরিচালক, " Mike Griffin" আগের ওই বাতিল করা মিশনের ফাইল খুলেন ও আরও একটি মিশন নির্ধারণ করেন, ২০০৯ এ।

নভোচারীরা সফল ভাবে হাবলের নিয়ন্ত্রিত মেরামত করতে সক্ষম হন। কিছু আধুনিকও বিশেষ যন্ত্রপাতিও সংযোজন করেন।

এরপর আজ পর্যন্ত হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে ৯৪০,০০০ মাইল (১.৫ মিলিয়ন কিঃমিঃ) উপরে অক্ষত অবস্তায় আছে।

চলুন এখন দেখে নেই হাবলের কিছু চমৎকার ছবিঃ

এর প্রতিটি প্যানেলে আছে ২,৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার সেল বা ব্যাটারি যা থেকে বৈজ্ঞানিক সব যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও রেডিও ট্রান্সমিটার চলে
স্পেস শাটল অতিক্রম করছে হাবল টেলিস্কোপ কে
এখানে দেখা যাচ্ছে কিভাবে টেলিস্কোপ মেরামত চলছে। শাটল নভোচারীরা তাদের যান হাবল এর সাতে ঠেকিয়ে রেখছেন, মেরামত করছেন টেলিস্কোপের অপটিক্স COSTAR (Corrective Optics Space Telescope Axial Replacement) ব্যবহার করে।
বলতে গেলে এই আয়না বা গ্লাস গুলো হাবলের প্রাণ, যা ফটো ধারন করতে লাগে। এটি প্রাইমারি মিররের ছবি, যা ২.৪ মিটার দীর্ঘ ও ১,৮২০ পাউন্ড (প্রায় ৮২৬কেজি) ওজন। সিলিকা বালি দিয়ে তৈরি এই গ্লাস এবং এর বহির্ভাগে পাতলা এলুমিনিয়ামের একটি আস্তরণ দেয়া আছে অত্যাধিক আলো প্রতিরোধ করতে। ধুলাবালি ও আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির আঘাত থেকে রক্ষা করতে তার উপরে আছে আরও একটি পাতলা ম্যাগনেসিয়াম ফ্লোরাইড এর আবরণ।
এখানে টেলিস্কোপের প্রধান প্রধান অংশের কার্যপ্রণালী দেখানো হয়েছে
এখানে একটি প্রাথমিক ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে কিভাবে হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীতে ডেটা প্রেরণ করে। টেলিস্কোপটি প্রথমে বাইরের সব কক্ষপথ থেকে ডেটা সংগ্রহ করে এবং তার কেন্দ্রিয় স্যাটেলাইটে প্রেরণ করে। কেন্দ্রীয় স্যাটেলাইট সে সব ডেটা বা তথ্য কে পৃথিবীতে প্রেরণ করে যা Goddard Space Flight Center এ প্রেরণ করা হয়
হাবলের পাঠানো কিছু ছবিঃ

এটা হাবলের ধারন করা অনেক গুলো গ্যালাক্সির ফটো
কয়েক হাজার বা লক্ষ আলোক বর্ষ দুরের কিছু তারকা ও গ্যালাক্সির ফটো
এই মোজাইক ফটো টি একটি Crab Nebula। যা ৬ আলোক বর্ষ দুরে, একটি সুপারনভার বিস্তৃতি
অনেক তিব্র আলো ও ধুলির মাঝে তুলা এই নেবুলা যা মেঘের মতো দেখতে
এগুলো হাবল টেলিস্কোপের ধারন করা কিছু নতুন জন্ম দেয়া তারকা। যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৭,০০০ আলোক বর্ষ দূরে
"নাসা" পুনঃপ্রক্রিয়া শুরু করে এই বিড়াল সদৃশ নেবুলা নিয়ে, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩,০০০ আলোকবর্ষ দূরে
মহাশূন্যের অসীমে গ্যাস ও ধুলি ধারা আবৃত তারকা ও গ্যালাক্সি। চন্দ্র এক্সরে অব্জারভেটরির সাহায্যে তুলা হাবল এর ছবি, যা থেকে ৩,০০০ বছর আগের একটি বিস্ফোরণের সন্ধান পাওয়া যায়
আরেকটি নেবুলা। তবে এটা এত বেশি গ্যাস আর ডাস্ট বা ধুলোবালি তে ঘেরা, যে এখনও এর পরিষ্কার কোন ফটো পাওয়া যায় নাই
এই হলো অতি আখাঙ্কিত মার্স বা মঙ্গলের একটি অসাধারণ ফটো। একটি ক্লোজআপ ফটো, যখন এটা প্রায় ৫৫ মিলিওন মাইল = ৮৮ মিলিওন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো। মঙ্গল পৃথিবী খুব কাছাকাছি আসে প্রতি ২৬ মাসে একবার
হাবলের ২১ তম বর্ষপূর্তিতে এই ফটো তুলে। এই দিনটিকে স্মৃতিময় করে রাখার জন্যে বালটিমোর স্পেস সেন্টারের গবেষকরা একে Arp 273 নামক গ্যালাক্সির দিকে তাক করিয়ে রাখতে সক্ষম হন, যখন এই ফটো টি ধারন করে হাবল
তারকা বিস্ফোরণের মুহূর্তের চারটি ফটো ও একটি সুপারনোভা SN Primo, উপরের ছবি তে নাসা'র বিজ্ঞানীরা এই সুপারনোভা টির বিস্ফোরণের অপেক্ষা করছেন। সাদা ঘর টি দেখায় যেখানে সুপারনোভাটি আগে ছিল। নিচের বায়ের ঘর টির ফটো সুপারনোভা ছাড়া। পরের দিনে একটি একটি উজ্জ্বল সুপারনোভা
Dwarf planet প্লুটো কে পরিভ্রমণকারি চতুর্থ (২০০৬ পর্যন্ত) চাঁদ, যা ২০০৬ সালে হাবল আমাদের দৃষ্টিগোচর করে। নাম "P4"
"Stingray" নামক নেবুলা এটি। একটি কেন্দ্রীয় উজ্জ্বল তারকা আছে এর। বলা হয় সব চেয়ে তরুন নেবুলা। লাল লাইন গুলো আসলে গ্যাস এর প্রভা, যা কেন্দ্রীয় তারকাটির অধিক ঔজ্জ্বল্যের কারনে জ্বলছে। আমাদের পৃথিবী থেকে ১৮,০০০ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। গ্যাসের মধ্যে আছে নাইট্রোজেন (লাল), অক্সিজেন (সবুজ) এবং হাইড্রোজেন (নীল)
বাক্সের ভেতর এটি ব্লাক হোল যার ভর ১০০ মিলিওন সৌর ভরের সমতুল্য। গ্যালাক্সি galaxy M31 এর প্রতিবেশি, নাম Andromeda
এটি Abell 2744 নামের গ্যালাক্সি ক্লাস্টার
Arp 147 নামের ইন্টারেক্টিং গ্যালাক্সি, এমন ভাবে দৃশ্যমান যেন সংখ্যা ইংলিশ সংখ্যা 10 নির্দেশ করছে
এই ছবিটি জুপিটার অ্যারোরার পরিবর্তন নির্দেশ করছে। হাবলের দ্বারা এটাই সব চেয়ে পরিষ্কার ফটো পাওয়া গেছে। নিচের দুটি আলট্রাভায়োলেট ফটো দেখাচ্ছে যে কিভাবে জুপিটারের ঘূর্ণন এর সাতে এর অ্যারোরাল ইমিশন ব্রাইটনেস পরিবর্তিত হয়
এই হলো নেপচুন, ১৬০ বছর আগে আবিষ্কৃত এই গ্রহ আজও একই জায়গায় দৃশ্যমান। আমাদের সৌর জগতের সব চেয়ে দুরতম গ্রহ, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৮৪৬ সালে জার্মান জ্যোতির্বিদ "জোহান গেলি" এটি আবিষ্কার করেন। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২,৮ বিলিয়ন (৪,৮ বিলিয়ন কিলোমিটার) মাইলস। ৩০ গুন বেশি উষ্ণ আমাদের পৃথিবী থেকে
হাবলে ধরা পড়া এটি জুপিটারের চাঁদ
প্রায় ২০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে ধুলি, গ্যাস আর অসংখ্য তারকা নিয়ে এই নেবুলার অবস্থান। যাদের একটি হচ্ছে এনজিসি ৩৬০৩ নামের অনেক উষ্ণ তারকা
রহাণুর একটি বেল্ট, প্রায় ১৭,৭০২ কিলোমিটার বেগে ধাবিত
এই ছবিটি একটি "UFO galaxy" এর গঠন ১৯৫০ সালে নির্মিত সায়েন্স ফিকশন মুভির স্পেসশিপ, প্রোটোটিপিকাল এর মতো
এই ছবি ১৯৯০ সালের ২৪ শে এপ্রিলের, যে দিন এসটিএস এ করে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ কে পাঠানো হয় পৃথিবীর কক্ষপথে
হাবল এর ২৩ তম বার্ষিকী উপলক্ষে পাঠানো এই চমৎকার নেবুলা কে বলা হয়, হর্সশেড নেবুলা, যা আসলেই দেখতে ঘোড়ার মস্তকের মত
এই টেলিস্কোপটি নাসা পাঠালেও পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো বিজ্ঞানী হাবলকে ব্যবহারের অনুমতি চাইতে পারেন। অভিজ্ঞদের একটা প্যানেল তখন সেখান থেকে যোগ্যতমটি বাছাই করে সেদিকে হাবলকে ঘুরিয়ে সেখানকার ছবি তুলে পাঠান সেই বিজ্ঞানীকে বা সেই বিজ্ঞান মহলকে। প্রতিবছর এরকম বহু আবেদন জমা পড়ে, তবে সেখান থেকে বছরে প্রায় ১,০০০ আবেদন যাচাই করে প্রায় ২০০ আবেদন মঞ্জুর করা হয়, আর সেই আবেদন অনুযায়ী কাজ করতে হাবলকে মোটামুটি ২০,০০০ একক পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

লেখকঃ এম হুসাইন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

৪টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info