একচোখা হাঙ্গর


সমুদ্রে যে বিশাল প্রানী জগত লুকিয়ে আছে, তার সম্পূর্ন আবিস্কার এখনো সম্ভব হয়েছে বলে কেউ দাবি করেছে এমনটি শোনা না গেলেও যা আবিস্কার হয়েছে তা কিন্তু আমাদের হতবাক করতে বিন্দু মাত্র কার্পন্ন করে নাই। এই বিশাল প্রানী জগতে সব থেকে বৈচিত্রময় জগত হচ্ছে সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা জগতটি।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

গত লেখা "ভয়ংকর যত মাছ" এ উল্লেখ করেছিলাম সব থেকে ভয়ংকর ১০টি মাছের কথা। আজ ঐ সকল মাছের কথা উল্লেখ না করলেও যে মাছের কথা বলব তা হল হাঙ্গর। আর এই হাঙ্গরের প্রজাতির অভাব নাই। "ভয়ংকর যত হাঙ্গর" লেখাটিতে মোট ৩৭০ প্রজাতির হাঙ্গরের মধ্যে সব থেকে ভয়ংকর প্রজাতির হাঙ্গর মাছের কথা বলা হয়েছে। আর এখানে উঠে এসেছে "বুল সার্ক" এর কথা। লেখাটি পড়লে সহজেই বুঝতে পারবেন আমি কোন প্রজাতির কথা বলছি। আর তাদের আকার আকৃতি বা আচার আচরন কেমন।


উপরে ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে এক চোখা কোন দৈত্য যেন আপনাকে দেখে হাসছে। না এটা কোন দৈত্য নয়। এটি একটি বুল সার্ক। কি অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা কেননা এর আকার আকৃতি কোন কিছুর সাথেই মিল নেই বুল সার্কের। তাহলে কিভাবে এই আমূল পরিবর্তন এই বুল সার্কের?


কিভাবে এই আমূল পরিবর্তন হল বুল সার্কের সেই কথায় যাবার আগে কোথায় পাওয়া গেল এই মাছ সেটা বলে নিলে হয়ত আপনাদের কাছে কারন আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

এই মাছটির সন্ধান পাওয়া যায় মেক্সিকোর সমুদ্র অঞ্চলে। কি ভাবছেন, এই সমুদ্রে পাওয়া গেছে তাতে কি? আচ্ছা তাহলে আপনাদের মেক্সিকো দেশটা সম্পর্কে একটু ধারনা দেই। আমাদের এই ধরণিতে যত গুলি দুষিত শহর আছে তার মধ্যে অন্যতম শহর হল এই মেক্সিকো। এখানে প্রতি বছর ১০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে পরিবেশ দুষন জনিত কারনে আর ৩৫০০০ এর উপরে লোক চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন শুধু মাত্র এই দুষনজনিত রোগের কারনে। এমন কি বাইরে থেকে যে সকল লোক এখানে ঘুরতে আসেন, তাদের কে আগের থেকেই বলে দেওয়া হয়, যেন তারা পানি কিনে অর্থাৎ শুধু মাত্র বোতলজাত পানি পান করেন। কেননা এখানকার পানি প্রায় খাবার অযোগ্য।


এবার তাহলে একবার চিন্তা করে দেখেন কেমন দুষিত এই অঞ্চলের সমুদ্র। এবার তাহলে মূল কথায় ফেরা যাক। এক চোখা এই হাঙ্গর মাছটি ধরা পরে এক জেলের জালে। যে আবার নিয়মিত হাঙ্গর মাছ শিকার করেন। যেটা আইন বিরোধী কাজ হলেও এই মেক্সিকো শহর কিনা আবার বেআইনি কাজের জন্য জগত জোড়া বিখ্যাত। যা হোক লুকিয়ে লুকিয়ে এই শিকার কাজ চালালেও তিনি যখন তার জালে এই এক চোখের অদ্ভুত প্রকৃতির মাছটি ধরেন তখন মনে হয় নিজেকে আর সামলাতে পারেন নাই। তাই তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেন দেশটির মৎস গবেষনা কেন্দ্রের সাথে। আর ধরেই নেন যে তিনি কোন নতুন প্রজাতির মাছ আবিস্কার করেছেন। ইতিহাসের পাতায় বুঝি তার নাম উঠতে চলেছে!!


অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বিশেষজ্ঞ্ররা যখন জানালের এটি একটি বুল সার্ক তখন মনে হয় সেই জেলের মাথায় হাত পরেছিল। সাথে বিশেষজ্ঞরা আরো জানালে যে এই বুল সার্কটি একটা বাচ্চা সার্ক যে কিনা "শ্বেত" রোগে আক্রান্ত। আমরা বাইরে চলাফেরার সময় অনেক সময় অনেক মানুষকে দেখতে পাই যারা অনেক সাদা। এমন কি তাদের চুল, চোখের পাপড়ি, ভ্রু সব কিছুই সাদা। এরকম চর্ম রোগে আক্রান্ত এই বুল সার্ক আর এই কারনেই এটির রঙ সাদা।


আর এই অদ্ভুদ আকৃতির ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, "যে হারে সমুদ্র দুষিত হচ্ছে তাতে যদি অদূর ভবিষ্যতে যদি আরো কিছু প্রানীর অদ্ভুদ আকৃতিতে পাওয়া যায় তাতেও অবাক হবার কিছু নেই।"

মানে, আমরা প্রতিদিন যে হারে পরিবেশ দূষন করে চলেছি তার বিরূপ প্রভাবের ফল স্বরূপ এই আকৃতির বিকৃতি ঘটেছে। অর্থাৎ দিন দিন যতই এই দুষনের মাত্রা বাড়বে আমাদের চারিপাশের পরিবেশও পরিবর্তন হতে থাকবে আর সাথে সাথে আমাদের চির চেনা এই প্রানী জগত। কোন দিন হয়ত দেখব আমরা মানুষেরাই পরিবর্তন হয়ে অন্যরকম কোন কিছুতে পরিবর্তিত হয়েছি। তাই আমাদের নিজেদের সার্থে উচিৎ যতটুকু সম্ভব আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে পরিবেশ দুষনের হার কমিয়ে আনা। তা না হলে আমাদের জন্য কি ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন।

সব শেষে এই একচোখা হাঙ্গরের মুখের কিছু ছবি দেখে নেওয়া যাক,


লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।