রোয়াল্ড ডালের গল্প ।। Story Of Roald Dahl

মজার মজার সুস্বাদু চকোলেট খেতে কে না ভালোবাসে। আমাদের গল্পের ছেলেটিও চকোলেট খুব ভালোবাসত। এই ছেলে স্কুলে পড়ার সময় স্কুলে উপহার হিসেবে পেতো চকোলেট। সেই চকোলেট খেয়ে তার মনে হতো সেও একদিন এ রকম চকোলেট বানিয়ে সবার মন জিতে নেবে। সেই ছেলেটা অবশ্য বড় হয়ে আর চকোলেট বানায়নি। কিন্তু সে অনেকগুলো বই লিখেছিলো, যেগুলো পড়তে বসে ছেলেমেয়েরা চকোলেট খাওয়ার কথা ভুলে যেতো বেমালুম। কিন্তু কেন? কারণ তার লেখা এই সব বইয়ের স্বাদ ছিল চকোলেটের মতো বা তারও চেয়ে বেশি কিছু। বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না! সেই ছেলেটিই বৃটেনের এ শতকের সেরা তিনজন ছোটদের লেখকের মধ্যে একজন। সাম্প্রতিক এক জরিপে এরকমটাই জানা গেছে। ভালো কথা, আপনাদের তো ছেলেটির নামই বলা হয়নি। ছেলেটির নাম রোয়াল্ড ডাল।


সুমদ্র আর জাহাজ এই নিয়ে চলে নরওয়ের লোকজন। অভিযান তাদের রক্তে মিশে আছে। তাদেরই উত্তরসুরী ছিলেন ডালের পরিবার। রোয়াল্ড ডালের বাবা হেরাল্ড ডাল। রোয়াল্ড ডালের জন্মের আগেই তাদের আদি নিবাস নরওয়ে ছেড়ে তারা ঘাঁটি গাড়েন ইংল্যান্ডের ওয়েলস-এ। হেরাল্ড ডাল প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ইংল্যান্ডে চলে আসেন। সময়টা ছিল ১৯০০ সাল। হেরাল্ড ডাল আবার বিয়ে করেন ১৯১১ সালে। কনের নাম সোফি ম্যাগডেলানে হেসেলবার্গ।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

ডাল সপরিবারে ইংল্যান্ডের ওয়েলসের লিয়ান্ডফ নামের একটা জায়গায় এসে ঘাঁটি গাড়েন। হেরাল্ড আর সোফির মোট ছয়টি ছেলেমেয়ে হয়। এদের মধ্যে রোয়াল্ড ডাল ছিলেন তৃতীয়। ডালের জন্ম ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ সালে কার্ডিফ নামের একটি জায়গায়। ইংল্যান্ডে চলে এলোও ডালদের হৃদয়ে নরওয়ের ছবি আঁকা ছিল আজীবন। ডাল পরিবার বাড়ির বাইরে ইংরেজিতে কথা বললেও বাসায় তারা নরওয়েজিয়ান ভাষায় কথা বলতো। আর ডাল এবং তার বোনের নামকরণ করা হয়েছিল নরওয়েজিয়ান চার্চে। শুধু কী তাই, পুত্রের নাম রোয়াল্ড রাখা হয় নরওয়ের এক বিখ্যাত ব্যাক্তির নামে। তার নাম রোয়াল্ড এমুন্ডসন। রোয়াল্ড ডালের জন্মের কিছু আগে রোয়াল্ড এমুন্ডসন দক্ষিন মেরু জয় করেন। এই সাফল্যের মধ্যে দিয়ে এমুন্ডসন নরওয়ের জাতীয় বীরে পরিণত হন। সেই বীরের নামে হেরাল্ড তার ছেলের নাম রাখেন রোয়াল্ড। কে জানতো, একদিন এই ছেলেই সারা পৃথিবীর শিশুদের মন জয় করবে, উঠে যাবে বীর রোয়াল্ড এমুন্ডসনের কাতারে।

জন্মের পরই ডালের পরিবারে কতগুলো ঘটনা ঘটে। ডালের বয়স যখন চার সে সময় তার বড় বোন অস্ট্রি মারা যায় অ্যাপেনডিক্সে, সেটি ছিল ১৯২০ সাল। মেয়ের মৃত্যুর পর বাবা হেরাল্ড ডাল মুষড়ে পড়েন। তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। মেয়ের মৃত্যুর কয়েক মাস পরে হেরাল্ড ডাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এরপর তিনি আর স্বাস্থ্য ফিরে পাননি । নিউমেনিয়াতে মারা যান ডালের বাবা।

অন্য কোন মহিলা এই অবস্থায় হয়তো ফিরে যেত দেশের আত্মীয়-স্বজনের কাছে। ডালের যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন নরওয়েতে ছিল তারাও সোফিকে নরওয়ে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু ডালের মা সোফি ঠিক করেন তিনি তার স্বামীর ইচ্ছাপূরণ করবেন। ডালের বাবার ইচ্ছে ছিল তার ছেলেমেয়েরা ব্রিটিশ স্কুলে পড়বে। এ কারণে তিনি কম ভাড়ায় একটি বাসা নেন। সেই ইচ্ছেপূরণের জন্য ডালের মা কষ্ট করে হলেও থেকে যান ব্রিটেনে।

ছোটবেলায় ডালের বেশ ভালোই মজা হতো। স্কুল ছুটিতে নরওয়েতে বেড়াতে যেতেন ডাল। সেখানে স্বাধীনতা থাকতো অনেক বেশি। এই অবাধ স্বাধীনতার কারণে তার কাছে ইংল্যান্ডের চেয়ে নরওয়ে বেশি ভালো লাগতো। ডালের বাবা-মাও নিজের দেশ নরওয়ে ভালোবাসতেন। কিন্তু তারা চাইতেন তার ছেলেমেয়েরা মানুষ হবে ইংল্যান্ডে। তাই ডালকে থেকে যেতে হয় ইংল্যান্ডে। ডালের নিজের চার ভাইবোন এর সাথে তার সৎ মার দুই ছেলেমেয়ে তার সোফির কাছেই থাকতো। তাদের সাথেও ডালের ভালো সর্ম্পক ছিল।

অন্য আর দশটা বাচ্চাদের মতোই ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলেন ডাল। প্রথম যে স্কুলে ডাল ভর্তি হন সেটি ছিল ল্যানডাফ ক্যাথিড্রাল স্কুল। এই স্কুলে যখন তিনি ভর্তি হন তখন তার বয়স আট বছর। স্কুলে যাবার পথে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। সেই দোকান চালাতো এক খিটখিটে বুড়ি। তার নাম ছিল মিসেস প্যাটচেট। একদিন ডাল আর তার বন্ধু মিলে সেই দোকানের এক মিষ্টির বোয়ামে একটা মরা ইঁদুর ঢুকিয়ে রাখে। মিষ্টির বোতলে মরা ইঁদুর দেখে সেই দোকানের মালিক বুড়ি তো ভিমড়ি খেয়ে অজ্ঞান। এই কারণেই তাদের শাস্তি হয়। মিষ্টির বোয়ামে ইঁদুর ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনাটা ছিল রোয়াল্ড ডালের। এছাড়া স্কুলে ডাল তার চেয়ে উপরের ক্লাশের ছাত্রের সাথে সাইকেলে পাল্লা দিতেন।

এরপর তাকে বেশ কয়েকটি বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল সেন্ট পিটার ওয়ের্ষ্টান সুপার মেয়ার স্কুল। এই স্কুলে পড়ার কারণ এই স্কুলটি তার বাড়ি থেকে কাছে ছিল। কিন' স্কুলের কঠিন নিয়মের কারণে ডাল বাড়ি যেতে পারতো না। সে স্কুলে গিয়ে প্রায় প্রতিদিন তার মায়ের কাছে চিঠি লিখতো। তবে সে চিঠিতে কখনোই জানায়নি, স্কুলের নিয়ম তার ভালো লাগতো না। স্কুলে যন্ত্রণার কথা সে মাকে কখনো বলেনি। মায়ের মৃত্যুর পর ডাল অবাক হয়ে আবিস্কার করে, তার লেখা প্রতিটি চিঠি মা যত্ন করে রেখে দিয়েছিল।

ডাল ছিল বেশ লম্বা। লেখক ডাল হবার আগেই সে খেলোয়াড় ডালে পরিণত হয়। স্কুলের প্রায় সব খেলাতেই ডাল থাকতো। কিন' তার প্রিয় খেলা ছিল, স্কোয়াশ, ফুটবল। সবসময় স্কুলের খেলায় দলের ক্যাপ্টেন হতো সে। খেলাধুলা আর দুষ্টুমিতে সেরা বলে ডাল স্কুলে খুবই জনপ্রিয় ছিল। তাই বলে সে পড়ালেখায় মোটেও খারাপ ছিল না।

স্কুলে পড়ার সময় ক্যাডবেরি নামের একটি কোম্পানি চকলেট বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা শুরু করে। সে সময় ক্যাডবেরি কোম্পানীর মালিক স্কুলের ছেলেদের কাছে নতুন ধরনের চকোলেট পাঠাতো বিভিন্ন সময় উপহার হিসেবে। এই উপহার পাঠিয়ে তারা ছেলেদের কাছে জানতে চাইতো এর স্বাদ কেমন। ডাল নিজেও এই বাক্স ভর্তি চকোলেটের জন্য অপেক্ষা করতো। সেই চকোলেটের বাক্সে থাকতো বারোটা নতুন চকোলেট। এই চকোলেটের স্বাদে মন ভরে থাকতো তার। সে সময় ডাল মনে মনে একটা স্বপ্ন দেখতো বড় হয়ে চকোলেট বানানোর। শুধু তাই নয়, তার স্বপ্ন ছিলো তার বানানো এই চকোলেট মি: ক্যাডবেরির কাছেও পুরস্কার পাবে। অভিযান ছিল ডালের রক্তের মধ্যে। এ কারণে লেখাপড়া শেষ করে ডাল শেল নামে একটা তেল কোম্পানিতে যোগ দেন। অভিযান ভালোবাসতেন বলেই ডাল চেয়েছিলেন তার চাকুরি এশিয়া বা অফ্রিকায় যেন হয়। তার ইচ্ছে মতোই পরে তাকে আফ্রিকায় পাঠানো হয়। চাকুরীর জন্য তাকে যেতে হয় আফ্রিকার ট্যাঙ্গানিকা নামক এলাকার দার এস-সালামে।

এই ট্যাঙ্গনিকাই পরে তানজানিয়া নামে স্বাধীন হয়। যদিও শেল কোম্পানি তাকে আরমাদায়ক পরিবেশে রেখেছিল কিন্তু তারপরেও ডাল চলে যেতেন আফ্রিকার জঙ্গলে। তার কাজ ছিল তেল বিক্রি করা। তবে তিনি অবসরে বেড়িয়ে পড়তেন। সেখানে তিনি খুঁজে বেড়াতেন আফ্রিকার বিষাক্ত সাপ ব্লাক মাম্বা। কখনও সিংহের সাথে অথবা অন্য কোন প্রাণীর সাথে তার লড়াই হত।

অভিযান করার নেশা ডালের সব সময় ছিল। একবার ডালের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে মাম্বা সাপ দেখা যায়। সেই সাপ মারার জন্য ডাল ছুটে আসেন। পরে অবশ্য ওঝা ওসে বিপদ থেকে সবাইকে রক্ষা করে। আরেকবার আফ্রিকান এক রমনীকে তিনি সিংহের হাত থেকে বাঁচান। সেই কাহিনী স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছিলো। অভিযান প্রিয় ডাল স্কুলের ছুটিতেও বেড়িয়ে পড়তেন অজানার উদ্দেশ্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দার এস-সালামে একদল জার্মান থাকতো। সে সময় তাদের আটকে রাখার জন্য একটা পরিকল্পনা করা হয়। সেই পরিকল্পনার কারণে ডালকে সামরিক বাহিনীতে ঢুকতে হয়। সেখানে তিনি একজন অফিসার হন। সে সময় তাকে কিংস আফ্রিকান রাইফেলের একজন অফিসার বানানো হয়। তিনি অফিসার হিসেবে পান আসকারীদের। আসকারীরা ছিল স্থানীয় লোকদের নিয়ে তৈরি করা সৈন্যদল। এরপর ডাল আকাশ উড়াল দিলেন। যোগ দিলেন রয়াল এয়ার ফোর্সে। তবে এর জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয় ৬০০ মাইল। যেতে হয় দার এস সালাম থেকে নাইরোবি। তিনি সেখানে ২০ জন সঙ্গীর সাথে বিমান প্রশিক্ষণে যোগ দেন। এই ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই পরে বিমান যুদ্ধে মারা যায়।

ডালের সাথে দুর্ঘটনার একটা যোগ আছে। যখন তার বয়স ৯ সে সময় তার বড় বোন গাড়ী চালানোর লাইসেন্স পায়। প্রথমবারই তার বোন গাড়ী নিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। সে সময় গাড়ী থেকে ডাল ছিটকে পড়ে আঘাত পান। সেই আঘাতে তার নাকটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডাল একবার বিমান চালাতে গিয়েও বিপদে পড়েন। সেসময় ডাল একটি গ্লাইডার বিমান নিয়ে সাহারা মরুভুমি পাড়ি দিচ্ছিলেন। তাকে যতটা দুরত্ব পাড়ি দিতে বলা হয়েছিল দুরত্বের পরিমাণ ছিল তারচেয়ে বেশি। যার ফলে একসময় তার বিমানের জ্বালানী তেল ফুরিয়ে যায়। ফলে তিনি মরুভূমিতে বিমান অবতরণ করতে বাধ্য হন। একে বলে ক্রাশ ল্যান্ডিং। এই ল্যান্ডিং-এর সময় তিনি মাথায় প্রচণ্ড চোট পান। তিনজন সৈনিকের সাহসিকতায় তিনি সেবার বেঁচে যান। কিন্তু সাময়িকভাবে অন্ধ হয়ে যান তিনি। চোট পাওয়ার কারনে ডাল সারাসরি যুদ্ধ থেকে অবসর নেন। ডাল এক পর্যায়ে আমেরিকায় চলে যান। কিন্তু পুরো যুদ্ধে তিনি পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার ফিরে আসেন ব্রিটেনে।


লেখক হওয়ার গল্পঃ
ডাল তার প্রথম লেখাটি প্রকাশ করেছিলেন আরেকজন লেখকের সাথে দেখা করার অনুপ্রেরণায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডালের কাজ ছিল নানা লেখকদের সাথে দেখা করা, তাদের সঙ্গে মত বিনিময় করা যাতে তারা বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়। সে সময় তিনি এক লেখক ই এম ফরেষ্টারের সাথে দেখা করেন। ফরেষ্টার তাকে তার অভিজ্ঞতা লিখতে বলেন। এর ফলে ডাল একটা লেখা লেখেন। যার নাম ছিল ‘শট ডাউন ওভার লিবিয়া’। এই লেখাটিকে এখন ‘পিস অফ কেক’ বলেই জানে সবাই। এটি ছাপা হয়েছিল ‘স্যাটারডে ইভিনিং’- নামক পত্রিকায়। এই লেখার জন্য তিনি ৯০০ পাউন্ড পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। স্যাটারডে ইভিনিং জানতো না তাদের এই ৯০০ পাউন্ডের মূল্য আসলে কত বড় হতে পারে। আসলে এটাই ডালকে লেখক হবার জন্য অনুপ্রাণিত করে। সেই সাথে ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের গতিপথ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ডাল পুরোদস্তুর লেখক বনে যান।

ডাল ছোট-বড় সবার জন্যই লিখেছেন। ছোটদের জন্য তার প্রথম লেখাটির নাম ‘দি গ্রিমলিনস’। এই বইটি ছাপা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর পরই। তবে তিনি গল্পটি লিখেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। গল্পটিতে গ্রিমলিনস নামের একটা চরিত্র আছে, যে কিনা বিমানের পাইলটদের সাথে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে। আসলে এই গল্পে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার লড়াইয়ের দৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। গল্পটি লেখা হয়েছিল ওয়াল্ট ডিজনির জন্য। তারা এই গল্পটিকে এনিমেশন বা কার্টুন ছবি বানাতে চেয়েছিল। ডালের সৃষ্ট এই চরিত্রটি ওয়ার্নাস ব্রাদার্স কাজে লাগায়। এই চরিত্রটির জনপ্রিয়তার কারণে এখন বাজারে গ্রিমলিনসের মতো দেখতে খেলনাও পাওয়া যেতো একসময়। ডাল শুধু একটি গল্প থেমে থাকলেন না। এরপর লিখলেন ‘চার্লি অ্যান্ড দি চকলেট ফ্যাক্টারি’।

এই গল্পের নায়ক চার্লি বাকেট। তার পরিবার খুব গরিব। গল্পের চার্লির জীবন ঘুরে যায় যখন সে সে বিশ্বের বিখ্যাত চকোলেট ফ্যাক্টরি দেখার সুযোগ পায়। তার দাদা তাকে গল্প বলে, কীভাবে তার পরিচিত এক ফ্যাক্টরিতে চকোলেট তৈরি হত। মালিক উইলি ওঙ্কা বিশ্বাস করে তার চকোলেট ফ্যাক্টরিতে প্রতিদ্বন্ধী ফ্যাক্টরির মালিক গোয়েন্দাগিরি করছে। ফলে তার চকোলেট কম্পানি বন্ধ করে দেয় সে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ফ্যাক্টরি চালু হয় কিন্তু কেউ জানে না কীভাবে ফ্যাক্টরি চলছে। কেউ সেখানে কাউকে ঢুকতে দেখে না আবার বেরও হতে দেখে না। কয়েক বছর পর উইলি ওঙ্কা পাঁচটি টিকেট তার ফ্যাক্টরির চকোলেটের মধ্যে ভরে দেয়। এবং ঘোষণা দেয় যারা এই টিকেট পাবে তারা তার চকোলেট ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখতে পাবে। এই চারজনের মধ্যে একজন চার্লি হলেও বাকী পাঁচজন কিন্তু মোটেও চার্লির মতো সাদাসিধে নয়। গল্পের শেষে উইলি ওঙ্কা পুরস্কার হিসেবে চকোলেট ফ্যক্টারিটাই উপহার দেয় চার্লিকে।

‘চার্লি এন্ড চাকোলেট ফ্যাক্টরি’ নিয়ে দুটি ছবি হয়েছে। একটি হয়েছে ব্রিটেনে এবং আরেকটি হয়েছে আমেরিকাতে। শেষেরটি নির্মিত হয়েছে ২০০৫ সালে। এই বইয়ের ধারাবাহিকতায় তিনি আরো একটি বই লেখেন, নাম ‘চার্লি এন্ড দি গ্রেট গ্লাস এলিভেটর’। এছাড়াও ছোটদের জন্য তার লেখার মধ্যে রয়েছে ‘মাটিল্ডা’, ‘জেমস অ্যান্ড জায়েন্ট পিচ’, ‘ফ্যান্টাস্টিক মিস্টার ফক্স’, ‘দি এনরমাস ক্রোকোডাইল’, ‘দি টুইটস’, ‘জর্জেস মার্ভেলাস মেডিসিন’, ‘দি বিএফজি’, ‘দি উ ইচেস’, ‘দি জিরাফ অ্যান্ড পেলি অ্যান্ড মি’ ইত্যাদি।

শুধু গল্পই নয়, ছোটদের জন্য তিনি মজার কিছু ছড়াও লিখেছেন। ডাল যে শুধু ছোটদের জন্য লিখেছেন তা নয় তিনি বড়দের জন্য লিখেছেন। মজার কথা কী জানো, ডাল রান্নার রেসিপি নিয়েও বই লিখেছেন। তার খেলা একটি নাটকও রয়েছে।


রোয়াল্ড ডাল মারা যান ১৯৯০ সালে। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার নাতনি জানান, তাকে ভাইকিং বা নরওয়ের রীতিতে কবর দেওয়া হয়েছে। তার কবরে রাখা হয় স্নুকার কিউ বা বিলিয়ার্ড খেলার বল, কয়েক প্যাকেট চকোলেট, কিছু এইচবি পেন্সিল ইত্যাদি।

বার্কিংহামে তার কর্মস'লে রোয়াল্ড ডাল মিউজিয়াম রয়েছে। এখানে রোয়াল্ড ডাল চিল্ড্রেন গ্যালারি নামের একটি ছোটদের বিভাগ খোলা হয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে রোয়াল্ড ডালের জন্মদিন বা রোয়াল্ড ডাল ডে হিসেবে পালন করা হয় ১৩ সেপ্টেম্বর। এটি তার জন্মদিন। তার মৃত্যুদিন পালন করা হয় না। কারণ ডালের দৈহিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার লেখা বেঁচে থাকবে যতদিন ছোট ছোট শিশুরা বেঁচে থাকবে এই সুন্দর পৃথিবীতে।

লেখকঃ সালেহা চৌধুরী।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।