ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতি (শেষ পর্ব) ।। History's Most Feared Race (Last Part)

পূর্বের পর্বঃ ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতি (প্রথম পর্ব)

এই পৃথিবীতে স্তন্যপায়ি প্রানিদের মধ্যে মানুষ তার প্রভাব বিস্তার করেছে সব থেকে বেশি। পৃথিবীর এই বুকে মানুষের পদচারনার এই দীর্ঘ পথ চলায় মানুষ তৈরি করেছে সমাজ আর এই সমাজ থেকে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন জাতি। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতির সাথে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক "ইতিহাসের ১০টি ভয়ংকর জাতি" এর শেষ পর্ব,


০৫) নাৎসিঃ
নাৎসি (Nazi) বাহিনীকে কেউ চিনে না, কিন্তু ২য় বিশ্ব যুদ্ধ সম্পর্কে জানে এমন কেউ আছে বলে মনে হয় না। এই নাৎসি বাহিনীকে তৎকালীন আমলে বলা হত "তৃতীয় সম্রাজ্য"। এই নাৎসি বাহিনী বা সম্রাজ্যের একছত্র নায়ক ছিলেন এডলফ হিটলার। তিনি এই নাৎসি বাহিনীর সহযোগিতায় জার্মানির গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ব্যাবস্থাকে ভেংগে গড়ে তোলেন এক সর্বোগ্রাসী রাষ্ট্রে। মজার বিষয় হচ্ছে এডলফ হিটলারের উতখান কিন্তু হয়ছিল গনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তিনি তৎকালীন নাৎসি সম্রাজ্যের পূর্বের জার্মানিতে "National Socialist German Workers Party" (NSDAP) এর রাজনীতিতে ছিলেন। এই নাৎসি সম্রাজ্য ছিল অনেক বিশাল আর অনেক বেশি ক্ষমতাশীল। এত বেশি ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন যে এক সময় তারা সারা বিশ্বকে শাষন করার স্বপ্ন দেখা শুরু করে। আর হিটলারের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলাফল স্বরূপ বিশ্বকে উপহার দেয় ইতিহাসের সব থেকে ভয়াবহ ২য় বিশ্ব যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হিটলার ১৯৪৫ সালের মে মাসে মিত্র বাহিনীর কাছে পরাজিত হন আর নিজের বাঙ্কারে আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরন করেন। হিটলারের জীবনের শেষ দিন গুলি মোটেও সুখের ছিল না। এ নিয়ে "হিটলারের শেষ দিন" লেখায় আলোচনা করা হয়েছিল। নাৎসি বাহিনীর গনহত্যায় প্রায় ৪ মিলিয়ন লোক প্রান হারায়। সম্ভবত নাৎসি বাহিনীর চিহ্ন (卐) বিশ্বের সব থেকে ঘৃণিত চিহ্ন। এই সম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল প্রায় ২৬৮,৮২৯ স্কয়ার মাইল জুড়ে। যদিও হিটলার ২য় বিশ্ব যুদ্ধ এবং ইতিহাসের সব থেকে বড় গন হত্যার জন্য দায়ি, তারপরেও হিটলারের একটি গুনের কথা কেউ অস্বীকার করে না। আর তা হল, তার বক্তব্য দেবার ক্ষমতা। তার বক্তব্যের মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের মন ছুয়ে যেতেন আর তাদের অনেকটাই রাজি করিয়ে ফেলতেন তার নিজের কথা মত চলতে।


০৪) মঙ্গোলঃ
মঙ্গোল (The Mongols) সম্রাজ্য টিকে ছিলে ১৩শ এবং ১৪শ শতক জুড়ে। মানুষের ইতিহাসে এদের সম্রাজ্য ছিল সব ২য় বৃহত্তম সম্রাজ্য। এই মঙ্গোল সম্রাজ্য গড়ে ওঠে মঙ্গোল এবং তুর্কিদের এক করে। যদিও এই মিত্র বাহিনী পরিচালিত হত মঙ্গোলদের দ্বারাই। আর এই মঙ্গোল সম্রাজের সম্রাট ছিলেন চেঙ্গিস খান।

তৎকালীন সময়ে এই মঙ্গোল বাহিনী ছিল সব থেকে ভয়ংকর। এদের ভয় পেত না এমন কোন জাতী গোষ্টি ছিল না তৎকালীন আমলে। এদের বলা হত অসভ্য এবং বর্বর জাতী। এরা এক কালে গোটা ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে রাজত্য কায়েম করেছিল। এদের সৈন্য সংখ্যা সারা বিশ্বের সর্বাধিক ছিল আর এদের সেনাপতি ছিল বিশ্বের সব থেকে নামকরা এবং ভয়ংকর যোদ্ধা চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মঙ্গোল সেনাবাহিনী ছিল সর্বাধিক নিয়মানুবর্তি সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনী বিখ্যাত ছিল ঘোড়ায় বসে তীর চালানোর জন্য। মঙ্গোলরা ঘোড়ার পিঠে বসে তীর চালানোর জন্য আবিস্কার করেছিল এক নতুন ধরনের তীর যা ছিল আঁকারে ছোট কিন্তু অন্যান্ন তীরের থেকে বেশি কার্যকর, আর তা প্রতিপক্ষের বর্ম ভেদ করতে সক্ষম ছিল। এছাড়াও তলোয়ারি দিয়ে যিদ্ধেও এরা ছিল অপ্রতিদন্ধি আর হস্ত যুদ্ধে অতুলনীয়।

ভারত বর্ষে আক্রমন করার পরে চেঙ্গিস খানের নেত্রিত্ত্বে দিল্লির দেওয়ালের (The Walls of Delhi) সামনে মানুষের কাঁটা মাথা দিয়ে একটা পিরামিড বানানো হয়। যেখানে স্থান পায় তৎকালীন আমলের সকল ভারতীয় যোদ্ধায়। নিজের প্রতিপত্তি দেখাতেই তৈরি করা হয় এই পিরামিড। আর যে সকল সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের স্ত্রীদের সাথে কি করা হয়ছিল তা আর উল্লেখ করতে ইচ্ছা করছে না।


০৩) সোভিয়েত ইউনিয়নঃ
সোভিয়েত ইউনিয়ন নামটার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও পরোক্ষ ভাবে কিন্তু জড়িত। এ নিয়ে "আমাদের পরম মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন" লেখায় বিস্তর আলোচনা করেছিলাম। আজ এক অন্য ভয়ংকর সোভিয়েতের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

কোটি কোটি মানুষ মারার দায় আছে সোভিয়ের ইউনিয়নের কমিউনিষ্টদের উপর। সারা বিশ্বে কমিউনিষ্টদের মধ্যে এরকম নিষ্টুর আচারন দেখা গেলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিষ্টরা একাই মেরে ছিল নাৎসি বাহিনীর থেকে বেশি বেসামরিক মানুষ। কমিউনিষ্ট নেতাদের মধ্যে নাম করা গনহত্যা কারি নেতাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য নাম হলঃ Josef Stalin, Mao Zedong, Pol Pot, Nicolae Ceausescu সহ আরো অনেকে। যারা মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মেরেছে। তবে এ সকল কমিউনিষ্টদের মধ্যে গনহত্যার জন্য সব থেকে বেশি দ্বায়ি ব্যাক্তি হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিষ্ট নেতা ষ্টালিন (Stalin)। তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ থেকে ৬০ মিলিয়ন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়। আর এই ষ্টালিন ছিলের সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধিনায়ক। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক বড় রাষ্ট্র ছিল কিন্তু তৎকালীন আমলে সব থেকে বেশি ভয়ে থাকত বেসামরিক লোকজন। না জানি কখন তাদের কপালে দূর্ভোগ নেমে আসবে। নাৎসি বাহিনী থেকেও এরা ভয়ংকর ছিল, কেননা যারা নাৎসি বাহিনীর সমর্থন করত তাদের উপর নাৎসি বাহিনী কোন প্রকার অত্যাচার বা অবিচার করত না কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিষ্টরা যেমন বাইরের যে কোন রাষ্ট্রের জন্য ছিল ভয়ংকর তেমনি নিজের দেশের বেসামরিক লোকদের জন্য ছিল ভয়ংকর। আর একারনেই বলা হয় সোভিয়েত ইউনিয়ন নাৎসিদের থেকেও ছিল ভংকর।


ক্যাল্টঃ
ক্যাল্ট (The Celts) জাতি এক অদ্ভুদ জাতিগোষ্টি। এই জাতি তেমন কোন বড় জাতি গোষ্টি নয় আবার ইতিহাসে তেমন জোড়ালো কোন প্রমান পাওয়াও যায় না এই জাতিগোষ্টির অস্তিত্বের। এদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ থেকে "গালাসা" (Gallatia) এর মধ্যবর্তি অঞ্চল গুলিতে। এদের সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হল, এরা বিখ্যাত ছিল মাথা কাঁটার জন্য। শত্রুর মাথা কেটে এরা ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি এমন কি নিজেদের বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে রাখত। অনেক ক্যান্ট জাতি গোষ্টির লোকেরা উলঙ্গ হয়ে যুদ্ধ করত আর যুদ্ধে এদের ব্যাবহৃত লম্বা তলোয়ারের জন্য বেশ বিখ্যাত ছিল। যুদ্ধে শত্রুকে মেরে তার মাথা কেটে ঘোড়ার গলায় ঝুলিয়ে রাখা হত। এই কাঁটা মাথা ঝুলিয়ে বিজয়ের গান গেয়ে তারা বাড়িতে ফিরে যেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কাঁটা মাথা দিয়ে তার কি করত? তারা এই কাঁটা মাথা দারূবৃক্ষ এর তেলের মধ্যে চুবিয়ে তা সংরক্ষন করত। আর তা ঘড়ের মধ্যে সাজিয়ে রাখত আবার অনেক সময় ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখত। যে যত নাম করা শত্রুর মাথা সংরক্ষনে রাখতেন সামাজিক ভাবে তার মর্যাদা ততো বেশি বৃদ্ধি পেত। কয়েক পুরুষ এই মাথা গুলি সংরক্ষন করে রাখত যাতে নিজেদের বংশের উজ্জ্বল অতীতের কথা সবাইকে বলতে পারে।

এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে, যে বিষয় গুলি সম্পর্কে জানতে নিম্নের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন,




০১) আজটেকঃ
আজটেক (The Aztecs) জাতিগোষ্টি মূলত মধ্য মেক্সিকোর জাতিগোষ্টি, বিশেষ করে যারা "নাহুৎল" ভাষভাষি। এরা ১৪শ থেকে ১৬শ শতকের সময়কালে মেক্সিকো সহ আমেরিকার বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে শাষন করত। এই আজটেক জাতি তাদের দিব্যতন্ত্র চর্চা করা শুরু করে ১৩শ শতক থেকে। মানুষ বলি দেবার প্রথাকে তারা এক নতুন মাত্রা দান করে। তারা বিশ্বাস করত ৫২ বছর পর পর পৃথিবী ধ্বংস হবার দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়ায়, কেননা এই সময় পর পর দেবতারা দূর্বল হয়ে পরে। আর তাদের শক্তি প্রদান করার এক মাত্র হল মানুষ বলি দেওয়া। এ কারনে তারা প্রায় সাড়া বছর ধরেই মানুষ বলি দেবার প্রথা চালু করে। বছরে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে বলি দিত এই আজটেক জাতিগোষ্টিরা শুধু মাত্র সূর্য দেবতাকে শক্তি যোগাবার জন্য, যাতে প্রতিদিন সূর্য উঠাবার শক্তি পায় সূর্য দেবতা। আর বাদ বাকি দেবতাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। বলি দেওয়া লোকদের বুক কেটে হৃৎপিন্ড বের করে নেওয়া হত আর মৃত্যু দেহ গুলিকে হয় উপর থেকে ফেলে দেওয়া হত অথবা দেহকে রেধে বিশাল আয়োজন করে উৎসব করা হত অথবা দেহ পুরিয়ে ফেলা হত অথবা মাথা কেটে ফেলে রাখা হত বন্য পশুদের খাদ্য হিসেবে। ধারনা করা হয় এই বলি গুলি দেওয়া হত মেক্সিকোর "সূর্য পিরামিড" এ। শুধু সূর্য দেবতার জন্য বছরে ২০,০০০ মানুষ বলি দেওয়া হত আর বৃষ্টির দেবতার জন্য সম্রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মানুষ বলি দেওয়া হত। ধারনা করা হত যে বলি দেওয়া মানুষের চোখের পানি যত বেশি পরবে তত তাড়াতাড়ি বৃষ্টি পরা শুরু করবে। এবার বোঝেন ঠেলা। কি ভয়ংকর লাগছে? কিন্তু কাহিনী এখনো বাকি আছে। আগুনের দেবতাকে খুশি বা তার শক্তি জোগাবার জন্য নতুন বিবাহিত নারী পুরুষকে ফেলে দেওয়া হত আগুনে। আর আগুনে পুড়ে মারা যাবার ঠিক আগ মূহুর্তে তাদের বের করে এনে জীবন্ত অবস্থায় তাদের বুক চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে দেবতার উদ্দেশ্যে উতসর্গ করা হত। আর ভুট্টার দেবতা জন্য এক জন কুমারী নারীকে ২৪ ঘন্টা ধরে নাচাবার পরে তাকে মেরে তার চামড়া ছিলে নিয়ে পুজারিকে পরিয়ে দেওয়া হত যাতে উতসর্গের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আজটেক জাতিগোষ্টির নতুন রাজা Ahuitzotl এর অভিষেকের সময় ৮০,০০০ লোককে বলি দেওয়া হয় শুধু মাত্র দেবতাদের খুশি করার জন্য।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info