পৃথিবীর গর্ভে যেন আরেক পৃথিবী ।। Another Earth In The Womb Of The Earth

এর ওয়াং ডং এর প্রবেশ মুখ
আচ্ছা আপনাদের ভিয়েতনামের "সান ডং" গুহার কথা মনে আছে? ঐ যে বিশ্বের সব থেকে বড় গুহা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এই সান ডং গুহার এই বিশ্ব রেকর্ডে এবার কেড়ে নিল সদ্য আবিষ্কৃত চায়নার "এর ওয়াং ডং" (Er Wang Dong)। এই গুহা এতটাই বড় যে এর আছে নিজেস্ব আলাদা আবহাওয়া ব্যাবস্থা রয়েছে খাল, বিল, পাহাড়, আকাশ যাতে রয়েছে মেঘ এবং কুয়াশাও। যেন পৃথিবীর গর্ভে লুকিয়ে থাকা আরেক পৃথিবী।

গুহার মধ্যে ভাসমান মেঘ
চীনের "ওয়াওলং কাউন্টি" (Wulong) এর "ওয়ালং কাষ্ট" (Wulong Karst) প্রদেশে অবস্থিত এই গুহা। বাহির বিশ্বে এই গুহা সাম্প্রতিক সময়ে আবিস্কৃত হলেও স্থানিয়দের কাছে অনেক আগেই এই গুহা বেশ পরিচিত। কিন্তু আশা যাওয়া বেশ দূর্গম আর বিপদজনক হওয়ায় আজ পর্যন্ত কেউ গুহায় প্রবেশ করে নাই। বলতে পারেন পৃথিবীর বুকে এমন এক স্থান যা এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি।


গুহা অভিযাত্রী এবং ফটোগ্রাফার রব্বি শন এই গুহা বিষয়ে বলেন, "এর আগে এত বিস্তৃত কোন গুহা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, সেখানে রয়েছে অসাধারণ কিছু বিষয় যা দেখে সত্যি আমরা অবাক হয়েছি।"

পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে গুহার ভিতরকার মেঘ ছুয়েছেন অভিযাত্রীর দল
তিনি আরও বলেন, এ গুহা এত বিশাল যে এর উপরের অর্ধেক অংশ পুরোটাই কুয়াশা এবং মেঘে ঢাকা। এর আকাশের অংশ প্রায় আনুমানিক ৮২০ ফুট উঁচু হবে, আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত দৈর্ঘ্য ১৩৮২৫ ফুট। সম্পুর্ন দৈর্ঘ এখন পর্যন্ত পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। সেখানে উঠা এবং ছবি ধারণ করা অসাধারণ অ্যাডভেঞ্চার ছিল ক্লাইম্বারদের জন্য। এর ভেতরে থাকা পরিতেক্ত পানি পান যোগ্য নয় এটা পুরোটাই নোনতা স্বাদযুক্ত।

গুহার ভেতরের গভীরতা এতটাই বিশাল যে সেখানে শীতল আবহাওয়ার পাশাপাশি আর্দ্রতা ও অনেক শীতল ফলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক নেওয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য।

গুহার ভিতরে শীতের হাত থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযাত্রী
গুহার ভেতরে অনেক যায়গায় জলের পরিমাণ এতটাই বেশি যে সেখানে বিশাল বিশাল স্রোত বয়ে যাচ্ছে যা আপনাকে সহজেই ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অভিযাত্রীরা তাদের মতামতে জানিয়েছেন এই গুহার ভেতরের পানি প্রবাহ ব্যবস্থা খুবি ভয়ংকর এবং বিধ্বংসী।

প্রবল স্রোত ভেংগে পার হচ্ছেন অভিযাত্রীর দল
স্রোত যেমন আছে তেমনি আছে শান্ত পানি
এই গুহা নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন বেশি কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি বা আবিস্কার হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। সবে মাত্র এই গুহার অভিযাত্রী দল এই গুহার কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন সংবাদ মাধ্যমে। অনেক বেশি কিছু আবিস্কারের আশা করছেন বিশেষজ্ঞ দল।

অভিযাত্রী দলের ক্যাম্প
যেহেতু এত দিনেও এই গুহায় মানুষের পদার্পন ঘটে নাই, আর এর ভিতরের আবহাওয়া বহির বিশ্বের আবহাওয়া থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন এবং মুক্ত, তাই হয়ত এখানে খোঁজ মিলে যেতে পারে হাড়িয়ে যাওয়া কোন উদ্ভিদের অথবা কোন প্রানীর। আবার হয়ত হলিউডের কোন সিনেমার মত এখানে খোঁজ মিলতে পারে কোন জীবন্ত ডাইনোসরের বা নতুন কোন প্রজাতির জীবের। তবে সবই এখন শুধু জল্পনা আর কল্পনার মধ্যেই সীমা বদ্ধো। এখন শুধু সেই সময়ের অপেক্ষা কবে বিশেষজ্ঞরা বিস্তারিত জানাবেন এই এর ওয়াং ডং গুহা সম্পর্কে।


গুহায় প্রবেশের সময় অভিযাত্রী দলের ভিডিও করা একটা ভিডিও এবার দেখে নেই,



লেখকঃ জানা অজানার পথিক।

"বিশেষ ধন্যবাদ আলিফ কে যিনি এই গুহার বিষয়টি আমার নজরে এনেছেন"
hybridknowledge.info

1 টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info