মরুভুমির মুক্তা "গ্যাদাম" শহর

মরুভুমির পুরাতন একটি শহর "গ্যাদাম" (Ghadames) যা কিনা মরুভুমির মুক্তা হিসেবেও পরিচিত। এটি মরুভুমির মধ্যে গড়ে ওঠা একটি শহর যা লিবিয়ার দক্ষিন পশ্চিমে ট্রাইপলেটেনিয়া (Tripolitania) অঞ্চলের "নাহুত" (Nalut) জেলার মধ্যে অবস্থিত। এটি সাহারা মরুভুমিতে অবস্থিত সব থেকে পূরাতন শহর এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকেও বেশ গুরুত্বপূর্ন। এই শহরের জনসংখ্যা খুব বেশি না, তা মাত্র ১০,০০০ জন লোকের এর কোঠায় আর এই শহরে বেশির ভাগ লোক নাপিতের কাজ করে। এই শহরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই শহরের বাড়ি গুলি। এই বাড়ি গুলি তৈরি করা হয়েছে মাটি আর ইট দিয়ে আর বেশির ভাগ বাড়িতে ছাদ তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়েছে গাছের পাতা বা সুরকি আর মাটির ঢালাই। আর বাড়ি গুলি এর বেশি কাছাকাছি বানানো যে তা উপর থেকে দেখলে ঠিক মৌমাছির চাকের মত দেখায়।


সব গুলি বাড়ি মোটামটি একই রকম ভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির রয়েছে মাটি আর ইট দিয়ে তৈরি খাড়া দেওয়াল। বাড়ি গুলি বেশির ভাগ ২ তলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। নিচ তলা ব্যাবহৃত হয় খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনিয় জিনিষ পত্র সংগ্রহ করার কাজে। আর ২য় তলা ব্যাবহার করা হয় বসবাস করার জন্য আর ছাদ গুলি একটু ভিন্ন ভাবে তৈরি। প্রতিটি ছাদ তার পার্শবর্তি বাড়ির সাথে এমন ভাবে সংযুক্ত যেন সেখান দিয়ে যে কেউ সহজেই চলাচল করতে পারে। আর এই ছাদ গুলি ব্যাবহৃত হয় মহিলাদের জাতায়ত করার জন্য। এখানে আবার পুরুষদের ওঠা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এর ফলে চলাচলের ক্ষেত্রে নারি-পুরুষ আলাদা আলাদা পথ ব্যাবহার করে। আর পুরুষেরা নিচের পথ ধরে চলাচল করে, তাদের জন্য আবার উপর দিকে তাকানো নিষেধ।


গ্যাদাম শহর খুবই পুরাতন একটি শহর। ইতিহাস ঘাটলে অস্তিত্ব্য রোমান সম্রাজ্যের সময় কালেও পাওয়া যায়, সে সময় এই শহরের নাম "ছিডামাছ" (Cydamus)। ততকালিন সময়ে অর্থাৎ ১ম খ্রীষ্টশতাব্দির পূর্ব শতকের দিকে এই শহর একটি সুরক্ষিত শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমান সময়ে এই শহর শুধু মাত্র একটি মরুউদ্যানের শহর যা প্লাম গাছের উদ্যানের পাশে অবস্থিত। বর্তমান সময়ের যত গুলি বাড়ি আছে তার কোনটিই সেই রোমান সম্রাজ্যের আমলের না হলেও আশ্চর্যজনক ভাবে বাড়ি গুলির নকশা সেই আমলের সাথে অনেকটাই মিলে যায়। এই কারনেই এই গ্যাদামস শহরের বাড়ির নকশা মরুভুমি অঞ্চলের অন্যান্ন সকল শহরের বাড়ির নকশার থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন রকমের।



অনেকটাই বৃত্তাকার আকৃতির এই শহরটাকে দেখলে মনে হবে যেন তা বাড়ির অনেক গুলি খন্ড এক করে তৈরি করা হয়েছে। আর শহরটির সীমানা উচু সুরক্ষিত দেওয়াল দিয়ে ঘেরা যাতে সহজে কেউ শহরের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। আর এ সব কিছুই শুধু ইট আর মাটি দিয়ে তৈরি করে। আর যদি কেউ শহরের মধ্যে ঢুকতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে শহরে ঢোকার প্রবেশ দ্বার ব্যাবহার করতে হবে।


অনেক তো শহর নিয়ে জানা হল আসুন এবার জেনে নেই এই শহর যে বাড়ি গুলির জন্য বিখ্যাত সেই বাড়ি গুলির বিশদ বিবরন। বাড়ি গুলি সাধারনত দো'তলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। নিচের তলায় একটি মাত্র প্রবেশ দরজা থাকে। এই প্রবেশ দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমে একটি সরু হল পেরিয়ে একটি আয়তক্ষেত্র আকৃতির রুমে আসতে হয়। অনেক সময় এই রুম ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। বাড়ি গুলির পিছন দিকে সিড়ি থাকে সেখান থেকে আরো প্রসস্ত উপরের তলায় যাওয়া যায়। ২য় তলা সাধারনত চিলেকোঠা এবং ঘুমাবার রুম থাকে, তবে মাঝে মাঝে বসার রুমও থাকে। আবার অনেক গুলি বাড়ির নিচের তলা এবং ২য় তলা একই রকম ভাবে বানানো থাকে। আর ছাদ গুলি বানানো হয় একটু ভিন্ন ভাবে। প্রতিটি ছাদ একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত থাকে। কেননা ছাদ দিয়ে মহিলারা যাতায়ত করে। এখানে আবার পুরষদের যাওয়া নিষেধ। আর এই ছাদ গুলির ছাদের দেওয়াল গুলি বেশ নিচু থাকে। আর মরুউদ্যানের এই শহরের মোটামটি সব বাড়ির বাইরের রঙ সাদা হয়। এর ফলে বাড়ি গুলি কম গরম হয়। আর ভিতরে নানা রঙ দিয়ে হরেক রকমের ডিজাইন করা থাকে।


প্রাচীন এই শহরকে UNESCO পুরাতন ঐতিহ্যকর স্থান হিসেবে ঘোষন দেয় ১৯৮৬ সালে। আসুন এবার তাহলে এই প্রাচীন শহরের কিছু ছবি দেখে নেই,


লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info