একাত্তরে ভিনদেশি বন্ধু

আপনারা তো মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক বীরত্বের গল্পই শুনেছেন। শুনেছেন এমন অনেকের কথা, যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিংবা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে সহায়তা করেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। আজকে আমরা তেমন কয়েকজন বন্ধুর কথাই শুনবো; যারা এদেশীয় নন, তাঁরা আমাদের ভিনদেশি বন্ধু। তারা বাংলাদেশি না হয়েও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। তাদের অনেকেই অনেক বিখ্যাত, আবার অনেকে বিখ্যাত নন মোটেও। অনেকে আবার তোমাদের মতোই একেবারেই ছোট। কিন্তু তারা সবাই আমাদের বন্ধু, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভিনদেশিবন্ধু।


ভারতের বুট পালিশ করা বালকেরাঃ
এখনকার ভারতের মুম্বাইয়ের নাম ছিলো তখন বোম্বে। আর মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি রেলস্টেশনের নাম ছিলো ভিক্টোরিয়া টার্মিনাল। অনেকে আবার এই ষ্টেশনটাকে বলতো ভিটি রেলস্টেশন। তাতে আর সব স্টেশনের মতোই ছিলো একদল বুট-পালিশ করা ছেলের দল। ওরা স্টেশনের যাত্রীদের জুতো পালিশ করে দিত। কিশোর বয়সের ছেলেগুলো জুতো পালিশের জিনিসপত্রের বাক্স একহাতে নিয়ে ঘুরতো আর চিৎকার করে ডাকতো- ‘বুট-পালিশ... চাই, বুট পালিশ’। ওরা যখন আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলো, ওদেরও ইচ্ছে হলো আমাদের পাশে দাঁড়ানোর। কিভাবে করা যায়? ছোট বলে কি ওদের সাহায্য করার উপায় নেই? নিশ্চয়ই আছে। ওরা তখন করলো কি, সবাই মিলে ওদের একদিনের সমস্ত উপার্জন আমাদের জন্য, মানে বাংলাদেশের জন্য দিয়ে দিলো। তখন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতি গড়ে উঠেছে। ওরা ঠিক করলো, ওদের একদিনের উপার্জন তুলে দেবে মহারাষ্ট্রের বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির হাতে। আর তাই শুনে ভারতের বিখ্যাত কোম্পানি মাহিন্দ্র অ্যান্ড মাহিন্দ্রের সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা নিজে এসে সেদিন প্রথম ওদের কাছে জুতো পালিশ করিয়ে নিলেন। উদ্বোধন করলেন ওদের এই অসাধারণ উদ্যোগের। পরে তখনকার মহারাষ্ট্রের গভর্নর আলী ইয়ার জং তার নিজের বাসায় এই ছেলেগুলোকে ডেকে খাইয়েছিলেন। তখন কিন্তু তিনি যে সে বাসায় থাকতেন না, থাকতেন ভারতের বিখ্যাত মালাবার হিলের সরকারি বাসায়। যে বাসার নাম ছিল শ্বেতপ্রাসাদ।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

লিভারপুলের লি ব্রেনানঃ
লি ব্রেনান তখন তরুণ, থাকেন নিউইয়র্কে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে তিনিও আপ্লুত হলেন। তাঁর মনে হলো, বাংলাদেশের পক্ষে তারও কিছু করা উচিত। কিন্তু তিনি একা আর কী-ই বা করতে পারেন? না, মোটেই দমে যাননি তিনি। বুকের সব ভালোবাসা দিয়ে বাংলাদেশের জন্য লিখলেন দুটি গান। একটি গানের দুটো লাইন শোনেন,

‘ইন দ্য নেম অফ হিউম্যানিটি,
ডোন্ট অ্যালাউ বাংলাদেশ টু ফাইট অ্যালোন।’

তারপর বন্ধুদের নিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গান দুটোর ৪৮টি রেকর্ডও তৈরি করলেন। রেকর্ডগুলো তেমন ভালো হয়নি, ভালো স্টুডিওতে রেকর্ড করার সামর্থ্য তার ছিলো না। এমনকি রেকর্ডের মোড়কটাও ছিলো একরঙা। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর একটা বাণী দিয়ে কোনোরকমে একটা মোড়ক বানানো হলো। তারপর শুরু হলো বাংলাদেশের জন্য তার সংগ্রাম। লিভারপুলের এক পানশালা থেকে আরেক পানশালা তিনি ঘুরতে থাকলেন গলায় একটা গিটার নিয়ে। আর সবাইকে গেয়ে শোনাতে থাকলেন গান দুটো। বিক্রি করতে লাগলেন রেকর্ডগুলো। আর তা থেকে যা আয় হতো, তাই তিনি দিয়ে দিতেন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের জন্য। তারপর একসময় দেশ স্বাধীন হলো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া হাজারো নাম-না-জানা মুক্তিযোদ্ধার মতো হারিয়ে গেলেন তিনিও। কেবল তার গানের রেকর্ডগুলো রয়ে গেছে আজো। একটি রেকর্ড আমাদের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও আছে। পারলে একবার দেখে আসবেন একবার।

ফরাসি জঁ পলঃ
জঁ পল একজন ফরাসি সাহিত্যিক। তাঁর পুরো নাম জঁ ইউজিন পল কে। তিনি কেবল লেখক ছিলেন না, তাঁর জীবনের কাহিনী পড়লে আপনাদের হয়তো হিংসে হবে। তাঁর সারা জীবনটাই কেটেছে অ্যাডভেঞ্চারে অ্যাডভেঞ্চারে। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীতে। পরে যোগ দিলেন ওএএস নামের এক বাহিনীতে। ওএএস মনে করতো আলজেরিয়াও ফ্রান্সের একটা অংশ, আলজেরিয়ার স্বাধীনতার কোনো ভিত্তি নেই। আলজেরিয়ার ফ্রান্সের সঙ্গেই থাকা উচিত। পরে ফ্রান্সেরই বিখ্যাত সাহিত্যিক আঁদ্রে মারলোর লেখা পড়ে তিনি বুঝতে পারেন কী বড়ো ভুলই না তিনি করছিলেন। ওএএস ছেড়ে তিনি এবার বিশ্বভ্রমণে বের হন। তবে তার রক্তে থাকা বিপ্লবের ভূত প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো। স্পেন, লিবিয়া আর বায়াফ্রায় কয়েকবার বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তার গুরু আঁদ্রে মারলো বাংলাদেশের হয়ে লড়বার ঘোষণা দিলেন। জঁ পলও ঠিক করলেন, লড়তে হবে তাঁকেও। ঠিক করলেন প্যারিসের অরলিন্স বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করবেন। আর তা দিয়ে মুক্তিবাহিনীর জন্য নিয়ে যাবেন ওষুধ। পরিকল্পনামতো ব্যাগে করে বোমা নিয়ে উঠলেন পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭১১ নামের প্লেনে। আর তারপর ব্যাগে বোমার কথা বলে প্লেন হাইজ্যাক করলেন। বললেন, প্লেনে ওষুধ দিতে হবে, তিনি তা নিয়ে যাবেন বাংলাদেশে। তাই বলে ফ্রান্স সরকার তো আর এভাবে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে পারে না। তখনো তো আর বাংলাদেশ স্বাধীন কোনো রাষ্ট্র নয়। আবার তাদের মাটিতে পাকিস্তানের কোনো প্লেন লুট হয়ে গেলে সেটা তো তাদের জন্যও একটা লজ্জার বিষয়। তাই ফ্রান্সের পুলিশ প্লেন উদ্ধার করার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিলো। ওষুধের কার্টন দেয়ার কথা বলে প্লেনে উঠে গেলো পুলিশ। আর ধরে ফেললো জঁ পলকে। তারপর তার ব্যাগ খুলে কি পাওয়া গেলো জানেন? কয়েকটা বই, একটা বাইবেল আর একটা ইলেক্ট্রিক রেজার! কোথায় বোমা কোথায় কি! এই ঘটনার পরেই উপমহাদেশে একেবারে ধুন্ধুমার যুদ্ধ লেগে গেলো। ওদিকে জঁ পলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হলো। আর তাতে তার পক্ষে সাক্ষী দিতে আসলেন তার গুরু স্বয়ং, আঁদ্রে মারলো! আর অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে না পেতেই জঁ পল আবারো বের হয়ে গেলেন বিশ্ব ভ্রমণে। একবার তাকে দেখা গেলো হিমালয়ের নিচে তপস্যা করছেন। আরেকবার তাকে দেখা গেলো অস্ট্রেলিয়ায়। এরপর আবার তাকে দেখা গেলো ভারত মহাসাগরের ঐপারে, কলকাতায়। তারপর ১৯৮৫ সালে তিনি চলে যান একেবারেই প্রশান্ত মহাসাগরের পারে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তারপর আর তাঁর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ওখানেই কোথাও হয়তো বিশ্বভ্রমণ শেষে সাগরের তীরে বসে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছেন আমাদের মুক্তিসংগ্রামের এই অকৃত্রিম বন্ধু।


লেয়ার লেভিনের রূপালি ফিতাঃ
লেয়ার লেভিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানে আমেরিকার একজন চিত্র পরিচালক। এমনিতে ডকুমেন্টারিই তৈরি করেন। একাত্তরে তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশে, চেয়েছিলেন পাকবাহিনীর বর্বরতার কাহিনী সবাইকে জানিয়ে দেবেন। আর তাই তাঁর ক্যামেরা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পীসংস্থা’র সঙ্গে। মুক্তি সংগ্রামী শিল্পীসংস্থা ছিলো কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ সাংস্কৃতিক কর্মীর একটি সংগঠন। তারা একটি ট্রাকে করে ঘুরে বেড়াতেন ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে। সুযোগ পেলে দেশের ভিতরের মুক্তাঞ্চলেও চলে আসতেন। আর সেখানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদেরকে দেশাত্মবোধক গান শুনিয়ে, পুতুলনাচ দেখিয়ে উজ্জীবিত করতেন। আর সবসময় গান গাওয়া শেষ করে সবার শেষে কোন গানটা গাইতো জানো? আমাদের জাতীয় সঙ্গীত- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। আর লেয়ার লেভিন ঘুরে ঘুরে তাদের সব কাজ বন্দী করলেন তাঁর ক্যামেরার সেলুলয়েডের রূপালী ফিতায়। মোটমাট প্রায় ২০ ঘণ্টার ক্যামেরা ফুটেজ তৈরি করলেন তিনি। তারপর ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। শুরু করলেন ডকুমেন্টারিটি তৈরির কাজ। কিন্তু টাকার অভাবে শেষ করতে পারলেন না ডকুমেন্টারিটি। পরে অবশ্য আমাদের দেশের আরেকজন বিখ্যাত পরিচালক তারেক মাসুদ আর তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ লেভিনের কাছ থেকে ফুটেজগুলো নিয়ে তৈরি করেন ‘মুক্তির গান’। ফুটেজগুলো অবশ্য তারা কিনে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিক্রি করেননি লেয়ার লেভিন। তিনি কি বলেছেন জানো? ‘আমি টাকার জন্য বানাতে পারিনি। তুমি যদি বানাতে পারো তো বানাও, আমার কোনো টাকা লাগবে না।’ বুঝলেন তো, এখনো আমাদের জন্য তাঁর মনে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই।


সাংবাদিক সাইমন ড্রিংঃ
একাত্তর সালে সাইমন ড্রিংয়ের বয়স ছিলো ২৭ বছর। তিনি তখন নামকরা পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফের একজন সাংবাদিক। অন্যদিকে তখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ২৫ মার্চ বিশ্বের বড়ো বড়ো সংবাদমাধ্যমগুলোর ৪০জন সাংবাদিককে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। সেই সুযোগে টেলিগ্রাফের সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশে আসলেন সাইমন ড্রিং। কিন্তু আসলে কি হবে, পাকবাহিনী তো আর তাদেরকে বাঙালীর উপরে চালানো বর্বরতা দেখার সুযোগ করে দেবে না। যদি সাংবাদিকদের যেখানে সেখানে যেতে দেয় তাহলে তো যুদ্ধে পাকবাহিনীর পৈশাচিকতা দেখে সাংবাদিকরা সারা পৃথিবীর মানুষকে জানিয়ে দেবে। সে কারণে পাকবাহিনী তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় নিয়ে গেলো। আর বাকি সময়টা তাদেরকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (এখনকার হোটেল শেরাটনে) নজরবন্দী করে রাখলো। পুরো ব্যাপারটা তারা গোপন করে সাংবাদিকদের দেখালো শহরের অবস্থা খুবই ভালো। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু সাইমন ড্রিং তো আর বসে থাকলেন না। তিনি ঠিকই ২৭ তারিখে পাকবাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন শহরে। আর শহরে হত্যা, ধ্বংস আর লুটপাট দেখে তিনি শিউরে উঠলেন। পাকবাহিনীর চোখে আবারও ধুলো দিয়ে পালিয়ে চলে গেলেন ব্যাংকক। আর সেখান থেকে প্রকাশ করলেন ‘ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। বিশ্ববাসীকে শোনালেন একটি শহর জ্বালিয়ে দেয়ার খবর, শহর জুড়ে লাশের স্তুপের কথা আর হাজার হাজার মানুষের জীবনের তাগিদে পালিয়ে যাওয়ার করুণ কাহিনী।


অ্যালেন গিন্সবার্গের একটি কবিতাঃ
অ্যালেন গিন্সবার্গ একজন মার্কিন কবি। কবিরা তো এমনিতেই মানুষের দুঃখের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। অ্যালেন গিন্সবার্গও বাংলাদেশের মানুষের দুঃখের কথা শুনে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি। হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। লিখেছিলেন একটি দীর্ঘ কবিতা। কবিতাটির নাম হয়তো আপনারা অনেকেই শুনেছেন- ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। আর কবিতাটি ছুঁয়ে গেলো হাজারো মানুষের হৃদয়। হাজারো লোক কবিতাটি শুনে কিংবা পড়ে কাঁদলো। তারাও একাট্টা হলো বাংলাদেশের পক্ষে। কবিতাটির কয়েকটি লাইন শুনবেন?

‘মিলিয়নস অফ সোলস নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান
হোমলেস অন যশোর রোড আন্ডার গ্রে সান
আ মিলিয়ন আর ডেড, দ্য মিলিয়নস হু ক্যান
ওয়াক টুওয়ার্ড ক্যালকাটা ফ্রম ইস্ট পাকিস্তান’।

তখন অবশ্য বাংলাদেশেরই নাম ছিলো ইস্ট পাকিস্তান বা পূর্ব পাকিস্তান। পরে বিখ্যাত বাঙালি গায়িকা মৌসুমী ভৌমিক কবিতাটির কিছু অংশ বাংলায় অনুবাদ করে তৈরি করেছেন তার ‘যশোর রোড’ গানটি। আপনারা কিন্তু অবশ্যই কবিতাটি জোগাড় করে পড়ে দেখবেন। আর গানটি তো আপনাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই শুনে ফেলেছেন।


রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনঃ
অন্যসব বন্ধুদের কথা বলতে গিয়ে আমাদের এক বড়ো বন্ধুর কথাই তো বলা হয়নি। একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পৈশাচিকতা দেখে ভারতের বিখ্যাত শিল্পী রবিশংকর ঠিক করলেন, কিছু করতে হবে তাকে। রবিশংকর কিন্তু যে সে শিল্পী নন, তাকে বলা হয় সেতারসম্রাট। তার বন্ধু বিখ্যাত বিটলস ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য জর্জ হ্যারিসন। তাকে তিনি বাংলাদেশের কথা জানালেন। জর্জ হ্যারিসন চটজলদি কম্পোজ করে ফেললেন ‘বাংলাদেশ’ নামের এক আবেগদীপ্ত গান। ঠিক করলেন, রবিশংকরের সঙ্গে একটা অ্যালবাম বের করবেন।

কিন্তু রবিশংকর বললেন, একটা ছোটখাটো কনসার্ট করলে কেমন হয়? কিন্তু হ্যারিসন সবসময় স্বপ্ন দেখতেন বড়ো বড়ো। তাই তিনি এক বিশাল কনসার্টেরই আয়োজন করে ফেললেন। ১ আগস্ট ১৯৭১ নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে বসলো পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় এক ঐতিহাসিক কনসার্ট।

আর তাতে বাংলাদেশের জন্য বাজালেন সেতার সম্রাট রবিশংকর, সরোদসম্রাট ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, তবলার কিংবদন্তী শিল্পী আল্লারাখা খাঁ। তারপর একে একে গান গাইলেন বিটলসের জর্জ হ্যারিসন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, বিলি প্রিস্টন আর কিংবদন্তী গায়ক বব ডিলান। কিংবদন্তী গিটারিস্ট এরিক ক্ল্যাপ্টনও গিটার বাজিয়েছিলেন কনসার্টটিতে। সবার শেষে জর্জ হ্যারিসন গাইলেন তার সেই বিখ্যাত গান ‘বাংলাদেশ’। আর সেখানে তিনি উপস্থিত ৪০ হাজার লোককে বললেন, ‘উই নিড টু এইড দ্য পিপল অফ বাংলাদেশ’।

এবার তাহলে জর্জ হ্যারিসন এর গাওয়া গানটি শুনে নেওয়া যাক,


আরো কতোশত ভিনদেশি বন্ধু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিলো! সবার কথা কি আর এতোটুকু জায়গার ভেতর বলা সম্ভব? আর তাছাড়া সবার কথা তো জানাও যায়নি। নাম-না-জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধার মতো নাম-না-জানা কতো ভিনদেশি বন্ধুই যে রয়েগেছে। তাদের কয়েকজনের গল্প আপনাদের বললামই। তাদের অনেককেই কিন্তু আমরা বন্ধুত্বের কোনো প্রতিদান দিতে পারিনি। কিন্তু তাদেরকে আমরা মনে রাখবো চিরকাল। তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

লেখকঃ নাবীল।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।