মঙ্গল গ্রহ তার বায়মন্ডল হারিয়ে যাবার পূর্বে, এই গ্রহের ভূপৃষ্টে ছিল তরল পানি। বর্তমানে এমন কিছু প্রমান মিলেছে যা বর্তমানেও এই তরল পানির উপস্থিতি প্রমানে করে। কিন্তু তরল এই পানির খোঁজ পাওয়া যায় বছরের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে মাত্র। এই তথ্য প্রকাশ করেছেন University of Arizona এর গবেষক Alfred McEwen আর তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন Nature Geosciences এ।
২০১১ সালে NASA এর স্যাটেলাইট Mars Reconnaissance Orbiter (MRO) সর্ব প্রথম পানির এই স্রোতধারা পর্যবেক্ষন করতে সক্ষম হয়। এ সময় এই স্যাটেলাইট কিছু কালো আকৃতির দাগের ছবি তুলে পাঠায় যা পরবর্তিতে অদৃশ্য হয়ে যায়। আর এই কালো দাগ গুলির দেখা মেলে মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখা বরাবর। পানির এই স্রোতধারা সারা বছর থাকে না বরং বছরের নির্দিষ্ট সময়েই শুধু মাত্র দেখা যায়। যে অঞ্চলে এই পানির স্রোতধারা দেখা যায় সেটি হল মঙ্গল গ্রহের সব থেকে উষ্ণতম স্থান। যেহেতু মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডল খুবই পাতলা পানিকে তরল অবস্থায় রাখার জন্য তাই এটিকে খুব বেশি সময় ধরে দেখা যায় না। অর্থাৎ এটি প্রবাহিত হবার সাথে সাথেই বাষ্পে রূপান্তরিত হতে থাকে।
মূল সমস্যা হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের ভূগর্বের গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে খুব বেশি তথ্য নেই। এই কারনে কেউ সুষ্পষ্ট ভাবে বলতে পারে না যে তরল এই পানির স্রোতধারা কোথা থেকে আর কিভাবে উতপন্ন হয় আর কেনই বা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়েই দেখা যায়। তবে অনেকেই মনে করে যে এই অঞ্চলে কিছু গভীর খাঁদ রয়েছে যেখানে জমা হয়ে আছে বিপুল পরিমান পানি। যা বছরের এই নির্দিষ্ট উষ্ণতম সময়ে বাস্প আকারে উপরে উঠে আসে আর তা তরল আকার ধারন করে সৃষ্টি করে এই পানি প্রবাহের। তবে কোন তথ্যই নির্দিষ্ট নয়, বরং তা শুধু মাত্র ধারনা।
সকলেই জানি যে সেখানে তরল পানি থাকে সেখানে জীবনের উদ্ভব হয়। আর অনেকের ধারনা এখানে মিলতে পারে নতুন কোন জীবের সন্ধান। কিন্তু এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহন করছে। যেহেতু এখানে এখন পর্যন্ত মানুষের যাওয়া সম্ভব না তাই এক মাত্র যান্ত্রিক রোবট ভরসা। কিন্তু কোন ভাবে যদি কোন জীবানু পৃথিবী থেকে এই যন্ত্র গুলির মাধ্যমে এই পানিকে দুষিত করে ফেলে তাহলে তা এই অর্জনকে অনেকটাই ফ্যাকাসে করে দিতে পারে বা সেখানকার জীবন চক্রকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আর এই কারনে Committee on Space Research (COSPAR), যারা এমন এক আন্তর্জাতিক সংগঠন, যাদের কাজ হচ্ছে এদিকেই লক্ষ রাখা, যেন ভুল করে ভিন্ন গ্রহের পরিবেশ পৃথিবীর কোন জীবানু দারা সংক্রামিত না হয়। তারা সহজে এখানে কোন রোবট পাঠাবার অনুমতি পত্র দিচ্ছে না।
যদিও এরকম জীবানু মুক্ত যান সেখানে পাঠানো অসম্ভব কিছু না কিন্তু প্রচুর ব্যয় সাপেক্ষ। কেননা মহাশূন্যে জীবানু মুক্ত করার জন্য যান্ত্রিক যানকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বাস্প দিয়ে ধুতে হয় অথবা আয়নাইজড রেডিয়েশন দিয়ে একে জীবানু মুক্ত করতে হয়। এই দুটি প্রক্রিয়ায় মঙ্গল গ্রহে পাঠানো যান ভয়েজার ০১ এবং ০২ এর ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। আর এর জন্য ব্যায় করতে হয়েছিল বিশাল অংকের টাকা। মঙ্গল অভিজানের ৩৫ বছরের বাজেটের ১০% ব্যায় করতে হয়েছিল এই জীবানু মুক্ত করার কাজে। যদি কোন এজেন্সি এই বিপুল পরিমান অর্থ ব্যায় করে কোন নতুন রোবটকে এই এলাকায় পাঠায় তাহলেই শুধু মাত্র আমাদের পক্ষে এই তরল পানির আসল রহস্য জানা সম্ভব। তবে ভবিষ্যতে যে তা করা হবে তা নিশ্চই আর বলে দেওয়া লাগবে না।
এবার চলুন দেখে নেই মঙ্গল গ্রহে মুক্ত ভাবে প্রবাহিত পানির ধারার ভিডিও চিত্র,
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।