হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকার খোঁজে ।। In Search Of Hazrat Nooh (AS) Ark

মহাপ্লাবনের কথা জানেন না এমন কোন ব্যাক্তি নাই এই পৃথিবীর বুকে। আজ আপনাদের সেই মহাপ্লাবনের কথাই বলব তবে সে সময়ের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে নয় বরং হযরত নূহ (আঃ) যে নৌকা বানিয়েছিলেন আল্লাহর নির্দেশে, সেই নৌকা খুঁজে পাবার ঘটনা বলব আজ আপনাদের। তাহলে চলুন শুরু করা যাক হযরত নূহ (আঃ) এর বানানো নৌকা খুঁজে পাবার গল্প, তবে এটি আদৌ নূহ (আঃ) নৌকা কিনা তার সিদ্ধান্ত আপনি-ই নিবেন আমি শুধু মাত্র তথ্য-উপাথ্য উপস্থাপন করব।

১৯৫৯ সালে তোলা ছবি
ঘটনার শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, সে সময় তুর্কির সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন 'Llhan Durupinar' যখন বিমান যোগে তোলা তার এলাকার ছবি গুলি পর্যবেক্ষন করছিলেন তখন তিনি আবিস্কার করলেন একটা অস্বাভাবিক স্থান। যেটির পৃষ্ট ছিল আশেপাশের স্থান গুলির থেকে অনেকটা মসৃণ আর এর আকৃতি ছিল ফুটবল মাঠের থেকেও বড়। আর এটির অবস্থান ছিল ইরানের সাথে তুর্কির সিমান্ত অঞ্চলে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৩০০ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায়।

'আরারাত' পাহাড়ের উপর যে নূহ (আঃ) এর তৈরি নৌকা মহাপ্লাবনের পরে ঠেকেছিল তা কম বেশি সকলেরই জানা। আর ক্যাপ্টেন Durupinar তা জানতেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে তার এই খোঁজকে তিনি নূহ (আঃ) এর নৌকা বলে দাবি করেন নাই। আরারাত পাহাড়ের এই এলাকা খুব একটা জনবহুল এলাকা নয়, এখানে কিছু ছোট ছোট গ্রাম আছে। আসলে এর পূর্বে এত বড় কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনের অবস্থানের কোন ধারনা কারো আগে ছিল না। তাই ক্যাপ্টেইন আরো নিশ্চিত হবার জন্য ছবি গুলি পাঠিয়ে দেন আকাশ থেকে তোলা ছবি বিশেষজ্ঞ 'Dr. Brandenburger' এর কাছে।

Brandenburger হলেন সেই ব্যাক্তি যে প্রেসিডেন্ট কেনেডির আমলে কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটি খুঁজে বের করেন; পর্ববেক্ষনের জন্য বিমান হতে তোলা ছবি দেখে। যা হোক, তিনি ক্যাপ্টেন Durupinar এর পাঠানো ছবি পর্যবেক্ষন করে বলেন, 'I have no doubt at all, that this object is a ship. In my entire career, I have never seen an object like this on a stereo photo'।


১৯৬০ সালে 'LIFE' ম্যাগাজিনে 'Noahs Ark?' শিরনামে উপরের ছবিটি প্রকাশ করা হয়। একই বছর একদল আমেরিকান বিশেষজ্ঞ দল ক্যাপ্টেন Durupinar এর নেতৃত্বে নৌকা খুঁজে পাবার জায়গায় যান এবং সেখানে তারা দেড় দিন অবস্থান করে। তারা ভেবেছিল এখানে তারা এমন কোন কিছুর খোঁজ পাবে যা সরাসরি নূহ (আঃ) এর নৌকার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে। আর তার জন্য তারা কিছুটা খোঁড়াখুঁড়িও করে ছিল বটে, কিন্তু তারা অবশেষে কিছুই খুঁজে পান নাই। আর সেখান থেকে এসে তারা ঘোষনা দেন যে এটি একটি প্রাকৃতিক সৃষ্টি মাত্র।

বেশির ভাগ প্রচারনা সংস্থা তাদের কথা (আমেরিকান বিশেষজ্ঞ) বিশ্বাস করে এর প্রচারনা থেকে সরে দাঁড়ায়, ফলে অনেকটা আড়ালে চলে যায় এই খোঁজ।

কিন্তু ১৯৭৭ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকবীদ 'Ron Wyatt' এর নেতৃত্বে সেখানে ফিরে যান বিশেষজ্ঞ দলের একটি টিম। এবার তারা আইনগত ভাবে অনুমতি নিয়ে এখানে বেশ কয়েক বছর খোঁজ চালান। আর তার এই খোঁজ চালানোর কাজে ব্যাবহার করেছিল ধাতু সনাক্তকরণ মেশিন, ভূগর্ভস্থ রাডার স্ক্যান মেশিন এবং ভূমির রাসায়নিক বিশ্লেষণ। বুঝতেই পারছেন একদম সত্যিকার অর্থেই বিজ্ঞানকে ব্যাবহার করেছিলেন তার এই খোঁজে। তাদের খোঁজে যা বেড় হয়ে এসেছিল তা ছিল সত্যিকার অর্থেই চমকপ্রদ, আর তারা যে প্রমান পেয়েছিলেন তা ছিল অনস্বীকার্য। অবশেষে তারা ঘোষনা দেন এটিই হল নূহ (আঃ) এর তৈরি করা নৌকা।


চাক্ষুষ প্রমাণঃ
প্রথম দিকের পর্যবেক্ষনের উদ্দেশ্য ছিল এই নৌকার আঁকার আকৃতি নির্ধারন করে। এর আঁকার দেখতে একদম বিশাল আকৃতির এক জাহাজের বা নৌকার মত। এর সম্মুখ ভাব অনেকটা ধনুক আকৃতির (Point: D) এবং এর পিছন দিকটা অনেকটা চওড়া (Point: A & B), যা দেখতে একদম নৌযানের মতই। এর সম্মুখ হতে (Point: D) পিছন বরাবর আয়তন ৫১৫ ফুট বা ৩০০ মিশরীয় হাত। আর এটি চওড়ায় গড় ৫০ মিশরীয় হাত। এখন আপনার মিলিয়ে দেখুন উল্লেক্ষিত মাপের সাথে মিলে যায় কিনা?

খুঁজে পাওয়া নৌকাটির ডান দিকে (Point: B) লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে সেখানে খাড়া ভাবে তক্তার মত উঁচু হয়ে আছে, যা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর অবস্থিত, এটি নৌকাটির দেহ কাঠামোর মূল অংশ ছিল (নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন)। এবার বাম দিকে (Point: A) লক্ষ্য করলে স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হবে যে একটি তক্তার মত সদৃশ্য মাটির সাথে গেথে রয়েছে। আরেকটু খেয়াল করলে আরো কয়েকটি তক্তার অবয় দেখতে পাবেন (নিচের ছবিটি লক্ষ্য করুন)।

একটা কথা খেয়াল রাখবেন যদি এটি সত্যিকার অর্থেই নূহ (আঃ) এর নৌকা হয়ে থাকে তাহলে এটি কয়েক শত বছরের পুরাতন হবে। আর কয়েক শত বছর যদি কাঠ মাটির স্পর্শে থাকে তাহলে কাঠের মধ্যে অবস্থিত জৈব পদার্থ গুলি মাটির মধ্যেকার মিনারেল দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যার ফলে এগুলোকে আর কাঠ মনে হয় না, বরং মনে হয় তা কোন পাথর বা মাটির খন্ড। হয়ত এই কারনেই ১৯৬০ সালে যে বিশেষজ্ঞ দল এসেছিল তারা ঠিক ভাল মত বুঝতে পারেন নাই এটি আসলে কি। তারা খুঁজে পেয়েছিল মাটি কিন্তু জৌব কোন পদার্থ খুঁজে না পেয়ে এটাকে ভ্রান্ত খোঁজ আক্ষা দিয়ে বসেন। মানে এক কথায় তারা এই জাহাজ পরীক্ষা করে কোন কাঠ-ই খুঁজে পান নাই।


এছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় এই খোঁজে বেড়িয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের ধারনা এই নৌকাটি যেখানে রয়েছে এটি মূলত আরো ১০০০ ফুট উপরে একদম পাহাড়ের চূড়ায় ছিল। কিন্তু ভূমি সরনের কারনে তা ধীরে ধীরে মাটির মধ্যে গেথে যায়, আর একারনেই এটি সংক্ষির হয় শুষ্ক মাটি দিয়ে। মানে এটি যে পাহাড়ের চূড়ায় আটকে ছিল সেখান থেকে ভূমি সরনের ফলে তার স্থান চ্যুত হয় প্রায় ১০০০ ফুটের মত আর এরই মধ্যে কোন ভাবে তা একদম মাটির মধ্যে গেতে যায় যার ফলে এটি আর দৃশ্যমান ছিল না। তাহলে এটি আবার দেখা দিল কিভাবে? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের ধারনা ১৯৪৮ সালে বেশ বড় আকারে ভূমিকম্পন হয় এখানে যার ফলে এটি আবার বেড়িয়ে আসে। অন্তত্য সেখানকার এলাকা বাসিদের মতে এটি হঠাৎ করেই উদয় হয় ভূমি কম্পনের পরেই।


ধর্মীয় গ্রন্থ অনুস্বারে নূহ (আঃ) তৈরি করা নৌকায় ছিল ছয়টি প্রকোষ্ঠ। খুঁজে পাওয়া এই নৌযানের মধ্য বরাবর যে উঁচু জায়গা রয়েছে (Point: C) সেখানে ভূগর্ভস্থ রাডার স্ক্যান করে দেখা যায় যে এটি ছিল এই জাহাজ বা নৌ যানের মূল প্রকোষ্ঠ যা ধ্বসে যাওয়া ধ্বংসাবশেষে পরিনত হয়েছে।

Noah (2014) সিনেমায় দেখানো নৌকা
অনেকের ধারনা এই জাহাজের আকৃতি ছিল আয়তক্ষেত্রকার, যদিও সম্পূর্ন জাহাজটির আকৃতি এমন ছিল না কিন্তু এর উপরের স্তরের আকৃত এরকম ছিল এবং তার উপরিভাগ ছিল মসৃন। কেননা এত বড় নৌ যান যদি বিশাল বড় বড় ঢেউ কে মোকাবেলা করতে যায় তাহলে তা টিকিয়ে রাখতে গেলে নৌ যানের উপরিভাগ মসৃহ হওয়াটা অনেকটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়ায়।

ভূগর্ভস্থ রাডার স্ক্যানঃ
মানুষের চোখ তখনই কোন কিছু দেখতে পারে যখন আলো কোন বস্তুর উপর প্রতিফলিত হয়ে তা চোখের ভিতর প্রবেশ করে। ঠিক তেমনি ভাবে মাটির নিচে কি আছে তা দেখার জন্য ব্যাবহার করা হয় রাডার। রাডারের প্রেরিত তরঙ্গ যখন কোন কঠিন বস্তুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে তখন আমরা তা রাডারের স্ক্রিনে দেখতে পারি। অবশ্য এই পদ্ধতি বর্তমানেও বেশ ব্যাবহৃত হচ্ছে মাটির নিচে তেল অনুসন্ধানের কাজে। এই রাডার গুলির নাম 'Ground Penetrating Radar (GPR)'। এবার তাহলে এই রাডার ব্যাবহার করার পালা। এটা দেখার জন্য আসলে এর নিচে কি আছে। কেননা যদি এটা সত্যিকার অর্থেই নূহ (আঃ) এর নৌকা হয়ে থাকে তাহলে এখানে মাটির নিচে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে।


সম্পুর্ন জাহাজটাকে স্ক্যান করেন নাই বিশেষজ্ঞরা, বরং তারা হলুদ রঙের টেপ দিয়ে কিছু কিছু জায়গা নির্ধারন করে এবং তার উপর দিয়েই রাডারের স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেন। যার ফলাফল তাৎক্ষণিক ভাবে একটি কাগজে মুদ্রিত হচ্ছিল। যখনই তারা মাটির নিচের অদেখা কোন কাঠামোর উপর দিয়ে রাডারের স্ক্যানার নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তা দেখাচ্ছিল মুদ্রিত ফলাফলে (উপরের ছবি)। নির্ধারিত স্থান গুলি স্ক্যান করার পরে সকলেই একই মতে পৌছালেন যে এখানে রয়েছে বিশাল কোন স্থাপনা।

GPR যারা পরিচালনা করেছেন তাদের মতামত, 'This data does not represent natural geology. These are man made structures. These reflections are appearing too periodic... too periodic to be random in that type of natural pace.'।


রাডারের মাধ্যমে যে ছবিটি বিশেষজ্ঞ দল পান (উপরের ছবি) দেখে যে কেউ স্পষ্ট ভাবে ধারনা পাবে যে এটি প্রাকৃতিক ভাবে গঠিত কোন অবয়ব নয় বরং তা মানুষ নির্মিত কোন অবয়ব। এই মাটির নিচেই কি তাহলে লুকিয়ে আছে নূহ (আঃ) এর নৌকা?

উদ্ধারকৃত জিনিষঃ
GPR ব্যাবহার করে Ron Wyatt এই জাহাজের ডান দিকে একটি গর্ত আবিস্কার করেন। তিনি খুবই সাবধানতার সাথে এই গর্তকে আরো বেশি গভীর করে খনন করেন এবং খুঁজে পান কিছু বস্তু। নিচের ছবিতে দেখানো হচ্ছে তিনি কি কি খুঁজে পেয়েছিলেন। এগুলিকে পরবর্তীতে পাঠানো হয় গবেষণাগারে পরীক্ষা করার জন্য।


উপরের ছবিটির বাম পাশে রয়েছে সেই গর্তের ছবি, তার ডান পাশে রয়েছে এই গর্ত থেকে খুঁজে পাওয়া শুকিয়ে যাওয়া পশুর গোবর, তার পরে রয়েছে সংরক্ষিত হরিণের সশাখ শৃঙ্গ, আর সব শেষে রয়েছে বিড়ালের লোমের অংশ।

সম্ভবত তার এই খোঁজের সব থেকে বড় খোঁজ ছিল একটি সংরক্ষিত কাঠের টুকরা। প্রথমে এই কাঠের টুকরা আবিস্কারের পরে সকলে ভেবেছিল যে এটি জাহাজের বড় কোন স্তম্বের টুকরা। কিন্তু পর্যবেক্ষনের পরে দেখা গেল এটি তক্তার টুকরা বিশেষ। এই কাটের টুকরাটি মূলত কয়েকটি কাঠের তক্তাকে জৈব আঠা দারা এক করে লাগিয়ে বানানো হয়েছে। যে পদ্ধতিতে এটাকে তৈরি করা হয়েছিল বর্তমান সময়েও সেই একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় 'পলিউড'। এই পদ্ধতিতে কয়েকটি কাঠের তক্তাকে আঠা দিয়ে একসাথে লাগিয়ে দেওয়া হয় যার ফলে কাঠের যেমন স্তায়িত্ব বৃদ্ধি পায় একই ভাবে এর ধারন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় এবং তা ওজনেও হালকা থাকে আর শক্ত হয়। এই আবিস্কারের ফলে বিষেশজ্ঞদের ধারনা অনেকটাই পাল্টে যায় তৎকালীন কাঠশিল্প সম্পর্কে। কেননা এর আগে ধারনা করা হত এই পদ্ধতি শুধু মাত্র বর্তমান সময়ের আবিস্কার।


আরেকটু নীবির পর্যবেক্ষনে বিশেষজ্ঞরা দেখতে পান যে, দুটি তক্তার মাঝ থেকে এই আঠা কিছুটা বেরিয়ে এসেছে আর এই কাঠের স্থায়িত্বকে আরো শক্তো করতে এই বাইরে লেপে দেওয়া হয়েছে আলকাতরা।

বিশেষজ্ঞদের আরো অবাক করে দেয় যখন তারা এই কাঠের টুকরাকে আরো বেশি বিশ্লেষন করেন, তখন তারা এর মধ্যে যে শুধু কার্বন খুঁজে পেয়েছেন (অর্থাৎ এটি সত্যিকার অর্থেই কাঠ) তা নয় বরং খুঁজে পেয়েছেন লোহার টুকরা (পেরেক)।

মানব সভ্যতাকে আমরা ভাগ করি আমাদের পূর্বপুরুষদের কর্তৃক আবিস্কৃত ধাতু দ্বারা। যেমনঃ প্রস্তর যুগ যখন মানুষ আবিস্কার করেছিল পাথরের ব্যাবহার। এই পাথর দিয়ে ছোট খাট অস্ত্র বা গৃস্থলির কাজে ব্যাবহৃত যন্ত্র বানাতে শিখেছিল। এরপর ব্রোঞ্জ যুগ, যখন মানুষ বিভিন্ন ধাতুকে গলিয়ে ধাতব বিভিন্ন জিনিষ আবিস্কার করতে শিখেছিল এবং লৌহ যুগ, যখন লোহার ব্যাবহার মানুষ আবিস্কার করেছি। কিন্তু ১২০০-১০০০ খ্রীষ্টপূর্বে যে মানুষ লোহার ব্যাবহার জানত তা এর আগে কারো জানা ছিল না।


আরো অনেক কিছুঃ
আরো একটি চমকপ্রদ জিনিষের আবিস্কার হয় যখন বিশেষজ্ঞরা ধাতু আবিস্কারক যন্ত্র দিয়ে এখানে খোঁজ চালান। তারা আবিস্কার করেন একটি 'নাচি' যার উপর ধাতু গরম করে রেখে পিটিয়ে বিভিন্ন আকৃত দেওয়া হয়। এমন কি এই নাচির একই স্থানে যে বার বার হাতুরি বিশেষ কোন কিছু দিয়ে পিটানো হয়েছে তা এর মধ্য অংশের গোল আকৃতির খাঁজটি বলে দেয় (নিচের ছবি)।


উপরের আবিস্কৃত নাচি যদি আপনাকে চমকপ্রদ না করে তাহলে এবার যা বলব তা আপনাকে আরো বেশী চমকপ্রদ করবে।

আপনাদের যে নাচির কথা বললাম এটির গঠন উপাদান সম্পর্কে যখন পরীক্ষা করা হল তখন জানা গেল এটি তৈরি হয়েছে ৮.৩৮% লোহা, ৮.৩৫% এল্যুমিনিয়াম এবং ১.৫৯% টাইটেনিয়াম দিয়ে। একটু মনে করিয়ে দেই এই নাচি কিন্তু সহস্রধিক বছর মাটির নিচে ছিল আর তাই যে এতে কিছু উপাদানের হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটে নাই তা কিছু একদম নিশ্চিন্ত ভাবে বলা যাবে না। তারপরেও এল্যুমিনিয়াম আর টাইটেনিয়ামের উপস্থিতি কিন্তু অবাক করার মতই কেননা বর্তমান ধারনা মোতাবেক তৎকালীন সময়ে এই সকল ধাতুর ব্যাবহার কেউ জানতই না। এই ধাতুকে 'Galbraith Labs' পরীক্ষা করেছে তাদের রিপোর্টটি নিচে দেওয়া হল,


আরেকটু অবাক করে দেই এবার, এল্যুমিনিয়াম কিন্তু প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না, এটি তৈরি করা লাগে। আর এর জন্য প্রয়োজন এই ধাতু গুলি সম্পর্কে বেশ জ্ঞান আর উচ্চ তাপে কাজ করার মত যন্ত্র। তৎকালীন সময়ে এগুলি যে আদৌ আবিস্কার হয়েছিল তার কোন প্রমান এখন পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও এই নাচি কিন্তু প্রমান করে দেয় যে এই এল্যুমিনিয়ামের ব্যাবহার হয়েছিল সহস্র বছর আগেই। মূলত এল্যুমিনিয়ামের এই ব্যাবহার এবং বাইরের দিকে টাইটেনিয়ামের একটা আবরন থাকার কারনেই সহস্র বছর মাটির নিচে থাকার পরেও এই নাচিটি রয়েছে অক্ষত অবস্থায়। কিন্তু এটা বানালো কিভাবে?

আশেপাশের এলাকাঃ
আবিস্কৃত এই নৌযানের অবস্থান থেকে কয়েক মাইল দূরে খুঁজে পাওয়া গেছে বেশ বিশাল আকৃতিত কিছু পাথর যার কতক গুলি খাড়া অবস্থায় আর কতক গুলি মাটির উপর শোয়ানো অবস্থায়। এই পাথর গুলির ওজন কয়েক টন, আর এগুলির মধ্যে ছিল খোদাই করা ছিদ্র। বিশেষজ্ঞদের মতে এগুলি ছিল নৌযানটির নাঙ্গর।


খুঁজে পাওয়া এই পাথর গুলির গাঁয়ে অনেক সময় অনেক ধরনের খোদাই করে আঁকা ছবি দেখা যায়। এগুলি মূলত একেছে তীর্থযাত্রিরা যারা এই নৌযানটিকে দেখতে আসত। এটি কোন ধারনা নয়, মধ্য যুগের অনেক বইতেই এই অবস্থানের কথা উল্লেখ করা আছে।

এখানে আসা অনেক তীর্থযাত্রিরা এই নৌযানের কাঠের বিভিন্ন অংশ নিয়ে যেত, তারা এগুলি ব্যাবহার করত নিজেদের শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। তার যখন এই পাথর গুলির দেখা পেল তখন তারা বুঝতে পেরেছিল যে এটি নূহ (আঃ) এর নৌকার অংশ আর তাই এই পাথর গুলিতে বড় ক্রুশ দ্বারা নূহ (আঃ) এবং ছোট ক্রুশ দ্বারা তার পরিবারকে বুঝিয়ে অংকন করে রাখত।


এই পাথর গুলিকে জাহাজের তলায় ঝুলিয়ে রাখা হত। এটা খুবই পুরাতন পদ্ধতি। যখন বড় কোন জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা করত তখন এরকম ভাবে পাথর ঝুলিয়ে রাখা হত যা নিশ্চিত করত বড় ঢেউ এর সম্মুক্ষিন হলেও এটি উলটে যাবে না। আর নূহ (আঃ) যে বিশাল আকৃতির নৌকাটি বানিয়েছিলেন তাতে এরকম নঙ্গর ব্যাবহার করা হয়েছিল বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারনা।

এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন এটা কি নূহ (আঃ) এর বানানো নৌকা নাকি অন্য কিছু, এপর্যন্ত আবিষ্কৃত সব তথ্য আমি এখানে তুলে ধরেছি।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

১২টি মন্তব্য:

  1. খুবই ভাল লাগল

    উত্তরমুছুন
  2. টাইটেনিয়াম পাওয়াকে আমাদের প্রমান দেয় যে বিজ্ঞান এখনো অনেক কিছুই আবিষ্কার করতে পারে নি।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হুম তা ঠিক... কিন্তু তাই বলে কিন্তু আবিস্কার করা থেমে নাই...

      মুছুন
  3. বিষয়টি পড়ে অনেক ভাল লাগলো। সব কিছুই আল্লাহর ইচ্ছা। অবিশ্বাসিরা যেহেতু বিশ্বাস করে না, তাই আল্লার ইচ্ছাতেই এটা আবিস্কার হয়েছে। হয়তো আগামীতে আরও নিদর্শন পাওয়া যাবে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. হাজার হাজার নিদের্শন আছে... শুধু আমরা দেখেও না দেখার ভান করে থাকি...

      মুছুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info