“প্রেমের ফাঁদপাতা ভুবনে” উপ্স! ভুল হইয়া গিয়াছে, ইহা হইবে “মাছির ফাঁদপাতা বাগানে”। বুঝিতে পারেন নাই! আজ আমরা এমন একখানি উদ্ভিদের সম্পর্কে আলোচনা করিবো যাহারা, আমাদের চারিপাশে ছড়াইয়া ছিটাইয়া স্থির পড়িয়া থাকা উদ্ভিদদিগের চাইতে সামান্য ভিন্ন। আমাদের চারিপাশের উদ্ভিদগুলি তাহাদের নিজের পত্রে, মূল বা শিকড় দ্বারা জল আর খনিজলবন টানিয়া আনিয়া, সেইগুলিকে সূর্যের তাপে কার্বনডাইঅক্সাইডের সহিত ভাজিয়া, নিজেদের খাদ্য তৈয়ার করিয়া থাকে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন উদ্ভিদদিগের এই রন্ধন প্রক্রিয়াকে “স্যালকসংশ্লষণ” (বানান ঠিক আছে কিনা বলিতে পারিলাম না। ইহা কিন্তু গীন্নির ভ্রাতা “শেলক” নয়ে।) বলিয়া থাকেন। কিন্ত আজ আমরা যেই উদ্ভিদ লইয়া আলোচনা করিতে চাহিতেছে, তাহারা এই রকম আলো-বাতাস খাইয়া তৃপ্ত হইতে পারে না। উহাদের মাংসের প্রতি বিশেষ আশক্তি রহিয়াছে বলিয়া মালুম হয়। কিন্তু তাহারা আমাদিগের মত বাজার হইতে মাংস কিনিয়া আনিতে পারেনা। তাহারা মাংস কিনিবার অর্থ কোথায় পাইবে? তাহা ছাড়া অর্থ পাইলেও তাহা অনর্থকই হইবে। কারণ অন্য গাছেদের ন্যায় ইহাদেরও হাঁটিবার জন্য পা নাই। বিশেষ এই উদ্ভিদখানির নাম “মাছি ফাঁদ” উদ্ভিদ।
ভাবিতেছেন ইহা আবার কেমন নাম হইলো? তবে ইংরেজী “Flytrap” “ফ্রাইট্র্যাপ” বলিলে অনেকোই চিনিতে পারিবেন! যাহারা এখনো চিনিতে পারিতেছেন না তাহরা নিচের উদ্ভিদটির দিকে দৃষ্টিপাত করিতে পারেন।
|
ফুলসহ হাতে আকা একখানি ফ্লাইট্র্যাপ বা মাছি ফাঁদ উদ্ভিদ |
“মাছি ফাঁদ” গাছের বিশেষ এই প্রজাতিটিকে উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন “ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ” (venus flytrap) নামে আলাদা করিয়া রাখিয়াছেন। “মাছি ফাঁদ” বা “ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ” একধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ তাহা আগেই বয়ান করিয়াছি। আমাদের বাংলাদেশে ইহাদের পাওয়া যায় না। মূলত ইহারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার জলাভূমিতে বেশি হইয়া থাকে।
পূর্ণবয়স্ক একখানি “মাছি ফাঁদ” গাছের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট মত হইতে পারে। বসন্তকালে ইহাদের মাঝেও বসন্তের আগমণ ঘটে। সেই সময় উদ্ভিদগুলির মাঝ বরাবর লম্বা দন্ডাকৃতির কান্ডে দৃষ্টিনন্দন ধবল সাদা ফুল ফুটিয়া থাকে।
|
'ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ' এর ফুল |
ইহার পরে “মাছি ফাঁদ” গাছে চকচকে কৃষ্ণকালো অনেকগুলি ফল থোকায় থোকায় ধরিয়া থাকে।
|
'ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ' এর ফল |
সাধারণত বিজ হইতেই ইহাদের চারা গজায়, কিন্তু এই চারা গুলি বড় হইতে কয়েক বৎসর সময় লেগিয়া যায়। বিজ হইতে জন্ম লওয়া চারা গাছটির প্রথম ৪/৫ বৎসর উহার শৈশব কাল বলা চলে। উহারা কমবেশি ৫ বৎসর পরে স্বাবালকত্ত পায়, আর বাঁচিয়া থাকে মোটামুটি ২০ হইতে ৩০ বৎসর পর্যন্ত।
|
এক গোছা 'ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ' |
আগেই বলিয়াছি ইহারা মাংস খাইতে বিশেষ পছন্দ করে। তাই বলিয়া ভাবিবেন না ইহাদের দাঁত-মুখ রহিয়াছে। ইহাদের আদোও কোনো মুখ বা দাঁত নাই।
প্রশ্ন উঠিতে পারে, 'তাহা হলেই ইহারা মাংস খায় কেমন করিয়া?'
উত্তর হইতেছে, 'পাতা দিয়া খায়'। একটু অসম্ভব মনে হইলেও আসল ঘটনা এইটাই। বিশ্বাস না হইলেও করিবার কিছুই নই। মূলত 'মাছি ফাঁদ' গাছ গুলির গোড়ার দিক হইতে তার সবুজ পাতা গুলি জন্মায়। এই পাতা গুলি দেখিতে অনেকটাই ঝিনুকের মত হইয়া থাকে, ঝিনুকের মতই পাতা গুলিও দুই খন্ডে বিভক্ত। পাতা গুলি ঝিনুকের মতই নিজেদের মেলিয়া ধরিতে পারে আবার গুটাইয়া ফেলিতে পারে। এই পাতা গুলি ১ ইঞ্চির সমান লম্বা হইতে পারে। দুই খন্ডের এই পাতা গুলির ভিতরের দিক লাল রং এর হইয়া থাকে, অবশ্য লাল রং হওয়ার বিশেষ কারণও রহিয়াছে।
|
ফেঁদের ভিতরের লাল রং পতঙ্গদিগকে আকৃষ্ট করিবার জন্য |
পাতা গুলির বাহিরের প্রান্তে সিলিয়া নামের কিছু সূচালো শক্ত শুরের ন্যায় অংশ রহিয়াছে। আর পাতার প্রতিটি খন্ডের মধ্যিখানে তিনখানি করিয়া ট্রিগার রহিয়াছে। পাতার প্রান্ত বরাবর মিষ্টি জাতীয় একপ্রকার তরলের হালকা প্রলেপ রহিয়াছে। এই মিষ্টির লোভে পড়িয়া কিটপতঙ্গ গুলি উড়িয়া আসিয়া বসে, তাহা ছাড়া পাতার মাঝের লাল রংও উহাদের আকৃষ্ট করে। আগেই বলিয়াছি পাতার মধ্যে রহিয়াছে তিনখানি করিয়া ট্রিগার।
|
ফঁদের ভিতরের লাল রং, একটু লক্ষ্য করিলে প্রতিখন্ডের ট্রিগার গুলি দেখিতে পাইবেন |
মিষ্টি রসের সন্ধানে পোকা গুলি পাতার মধ্যে বিচরন করিবার কালে সেই ট্রিগারে নাড়া দেয়। একবার ট্রিগারে নাড়া লাগিলেও পাতা গুলি শিকারের উপরে ঝাপাইয়া পরে না, কারণ বাসাত বা অন্যকোনো কিছুর দরুনও ট্রিগার নাড়া খাইতে পারে। কিন্তু যেই মাত্র দ্বিতীয়বার ট্রিগার নাড়া খায় সাথে সাথে প্রচন্ড দ্রুততায় চোখের নিমিশে পাতার দুইখানি খন্ড নিজেদের গুটাইয়া লয়। আর বেচারা বোকা নিরিহ পতঙ্গ ফাঁদে ধরা পড়িয়া যায়।
|
ধরা পরা মাছি |
|
মাকড়সা ধরা পরিয়াছে |
nice
উত্তরমুছুন