পেশাজীবিদের পরিচিতি ।। Professionals Introduction


কুনজিয়া (Kunjiya):
আপনার বাড়ির আশেপাশেই এই ব্যক্তিকে দেখা যায়। যদি বলা হয় এই ব্যক্তির পেশার নাম কি? তখন সবাই বলবেন "তরকারিওয়ালা"। কিন্তু ওনার পেশার সুন্দর নাম থাকতে কেন আমরা "ওয়ালা" যোগ করে ওনাকে পরিচিত করবো। এই পেশার এত সুন্দর নাম আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

যারা সবজি তরকারি বিক্রয় করে তাদের 'কুনজিয়া' বলে। গ্রাম শহরের হাট-বাজারে এরা নির্দিষ্ট স্থানে বসে , কখনোবা ফেরি করে সবজি বিক্রয় করে।

আসুন না, যার যে নাম আমরা সেই নামে ডাকি!


আচার্যঃ
পুজা পার্বণে যাঁরা দেব দেবীর প্রতিমা নির্মান করতো, চিত্রাংকন ও সজ্জিতকরণের কাজ করতো তাদেঁরকে 'আচার্য' বলা হয়। বাংলায় বার মাসে তের পার্বণ। বিভিন্ন পুজা পার্বণ হিন্দুসম্প্রদায় বেশ ধুমধামের সাথে পালন করে থাকে। এই সমস্ত পুজা পার্বণে আচার্যরা মূর্তি গড়ার কাজ করে থাকে।

প্রস্তর যুগে মানুষেরা শক্তির উপসনা করত। প্রাচীন মানুষেরা হিংস্র জানোয়ারকে শক্তি মনে করতো। কালক্রমে হিংস্র জীবজন্তুর মূর্তি বানিয়ে পুজা আর্চনা শুরু করে। সম্ভবত এই উপমহাদেশে দ্রাবিড় আমলে মূর্তি তৈরি শুরু হতে থাকে। সেই হিসেবে আচার্যরা এই দেশে আসে দ্রাবিড় আমলে। বাংলার বিভিন্ন মঠ- মন্দিরে স্থাপিত দেব-দেবীর মূর্তি আচার্যদের দক্ষ হাতের নিপুণ স্বাক্ষর বহন করে।

আচার্যরা মূর্তি তৈরির পাশাপাশি হাত গনণার কাজটি করত। তারা দিনপঞ্জিকাও নকল করত। বর্তমানে আচার্যদের স্থানটি দক্ষ মৃৎ শিল্পীরা দখল করে নিয়েছে। তাই আচার্যরা শুধু হাত গনণার কাজ করতে বেশি দেখা যাচ্ছে।


ভাড়ঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে 'ভাড়' শব্দটি বিশেষভাবে পরিচিত। সম্ভবত মোগল শাসন আমল থেকে ভাড়দের উৎপত্তি। মোগল শাসকগণ রাজকার্য পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে ভাড়দের সহযোগিতা নিতেন। রাজার পরামর্শ সভায় বা বিচারকার্যে ভাড়রা অনেকসময় পরোক্ষ ইঙ্গিত দিতেন।

গোপাল ভাড় এর নাম আমরা সবাই জানি। তিনি ১৭০০ সালের দিকে কৃষ্ণনগরে (বর্তমানে পশ্চিম বাংলার নদীয়া অঞ্চল) জন্মগ্রহন করেন। হাস্য-রস ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরনের জন্য কৃঞ্চনগরের রাজা কৃঞ্চচন্দ্র তাকে রাজ্যসভায় স্থান দিয়েছিলেন। তিনি হাস্য-রস দিয়ে রাজাকে আমেদিত করতেন এবং অনেক সমস্যা সুরাহায় সাহায্য করতেন।

একইভাবে বীরবল এর নাম প্রসিদ্ধ। তিনি মোগল সম্রাট আকবর এর রাজসভায় উপদেষ্টা ছিলেন। বীরবল ১৫২৮ সালে যমুনার তীর সংলগ্ন টিকাভানপুরে এক দরিদ্র ব্রাম্মন পরিবারে জন্ম নেন। তার প্রকৃত নাম ছিলো মহেশ দাস।

আমরা দেখি, ভাড়রা হাস্য-পরিহাস-ব্যাঙ্গাত্বক উক্তির মাধ্যমে রাজা বা সভাসদকে আনন্দ দিতেন। ভাড় সাধারণত নিম্ন সম্রদায়ভুক্ত। এরা অল্প শিক্ষিত হয়ে থাকে। ভাড়দের প্রত্যুৎপন্নমতি এবং বাকচাতুর্য সর্বজন বিদিত। এদের পোশাক পরিচ্ছদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

রাজা বা জমিদারদের আনন্দ দেয়া তাদেরকে মুগ্ধ করাই ভাড়দের প্রধান কাজ। ভাড়রা রাজাদের আনন্দ বা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। ভারতচন্দ্রের অন্নদা মঙ্গল কাব্যে ভাড়দের উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা জমিদার বা রাজা দের কাছে মাসহারা বা জীবন নির্বাহের খরচ পেয়ে থাকে।

বৃটিশরা এই উপমহাদেশ দখল করার পর থেকে ভাড় প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০০ বছর পর আমরা আবার স্বাধীনতা পেলেও সেই ভাড় প্রথা আর ফিরে আসেনি। তবে ভাড়দের হাস্যরস কৌতুক আজো মানুষের মুখে মুখে ফিরে।

একটা প্রস্তাবঃ ভাড় প্রথা আবার চালু করলে কেমন হয়? প্রধানমন্ত্রী যখন তার মন্ত্রীবর্গ নিয়ে সভা করবেন তখন ভাঁড়রা তাদের বিনোদন দিবে।


রাখালঃ
যীশুর জন্মের ৬২০ খৃস্টপূর্বতে জন্ম নেয়া ঈশপের গল্পে আমরা রাখাল সম্পর্কে জানতে পারি। রাখাল পেশাটা কত প্রাচীন তা আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ থেকেও জানা যায়। ইসলাম ধর্মের অনেক নবী-রাসুল রাখাল পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। সেই রাখাল পেশা সম্পর্কে চলুন একটু জেনে নেই।

রাখাল (Cowboy): বাংলাদেশে রাখাল পেশা অনেক প্রাচীন। মধ্যযুগের শেষ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর এর অন্নদামঙ্গলের কাব্যের বিখ্যাত উক্তি ''আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে'' এই উক্তি থেকে বোঝা যায় দুধ এই দেশের মানুষের প্রিয় পানীয়। সে জন্য প্রত্যেক গৃহস্থ বাড়িতে গরুর পাল থাকত। তাছাড়া কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজন গরু। গবাদিপশু দেখা শোনা করার জন্য যাকে নিযুক্ত করা হয় তাকে রাখাল বলে।

রাখাল বালক সাধারণত কম বয়সী কিশোর হয়ে থাকে। তার কাজ সকালে গরুর পাল নিয়ে মাঠে চড়ানো, এদের গোসল করানো এবং বিকালবেলা গরুরপাল নিয়ে বাসায় ফেরা। রাখালরা সাধারণত মাস চুক্তি/ বছর চুক্তিতে মাহিনাতে কাজ করে থাকে। কাজের বিনিময়ে এরা থাকা-খাওয়া, কাপড়-চোপড় পেয়ে থাকে। গরু চরানো ছাড়াও তারা গৃহস্থের ছোটখাট কাজ করে দিয়ে থাকে।

একসময় গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাটলে মিষ্টি মধুর বাঁশির সুর শোনা যেত। কোন এক গাছের ছায়ায় রাখাল বালককে দেখা যেত বাঁশী হাতে বাঁশী বাজাতে। আমাদের চলচিত্রে রাখাল নিয়ে অনেক চলচিত্র আছে। রাখাল বালক নিয়ে আছে অনেক গল্প। রাখাল ও রাক্ষসের গল্প, রাখাল ও রাজকুমারীর গল্প আজো আমাদের মনে দোলা দেয়। বাংলা সাহিত্যে রাখাল নিয়ে আছে অনেক কবিতা। জসীম উদদীন এর রাখাল ছেলে নামে একটি কবিতা আছে...

“রাখাল ছেলে ! রাখাল ছেলে ! বারেক ফিরে চাও,
বাঁকা গাঁয়ের পথটি বেয়ে কোথায় চলে যাও?”

তবে এখন রাখাল পেশা বিলুপ্তপ্রায়। ভুমিহীন কৃষকের সন্তানেরা সাধারণত এই পেশায় নিযুক্ত হয়। অবৈতনিক শিক্ষা চালু হবার পর এই পেশা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। সেই সাথে আমাদের চলচিত্র বা নাটকে রাখাল চরিত্র আর দেখা যায় না। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম রাখাল বালক ছিলেন। তিনি গরু চড়াতেন আর গান করতেন।


হাজামঃ
মুসলমানি' এর ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Circumcision'। এই মুসলমানির কাজটি যে করত তাকে আমরা 'হাজাম' নামে চিনি। হাজাম শুধু পুরুষদের খৎনা করত তা নয় তারা ছাগলদের খাসী করার কাজটিও করত। যাদের হাজাম দিয়ে মুসলমানি করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের কাছে প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি তাদের ব্যথাতুর সেই কথা মনে করে দেবার জন্য।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কতৃক ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় তিনি মুসলমানদের খৎনা করার প্রতি উৎসাহিত করেন। খৎনা করানোকে ইসলাম ধর্মে 'সুন্নাহ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা হয়ত অনেকেই জানি হযরত মুহামদ (সাঃ) এর খৎনা ফেরেশতা কতৃক হয়। যারা এই খৎনার কাজটি করে থাকেন তাদের এই বঙ্গদেশে ''হাজাম' বলা হয়।

আমাদের এই বঙ্গদেশে হাজামদের আগমন ঘটে সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা ফখরুদ্দীন মুবারাক শাহ এর আমলে। তিনি চট্টগ্রাম বিজয়ের পর সেখানের গৌড়ের মুসলমান বসতি থেকে তিনি হাজামদের এই দেশে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামে হাজামদের ওস্তাদ হিসেবে সম্মান করা হয়।

মুসলমান সমাজে হাজামরা আতরাফ গোত্রভুক্ত। হাজামদের এলাকা ভাগ করা থাকে এবং কালেক্টরী থেকে ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হত। বাংলাদেশে খৎনা করার সময় বিভিন্ন জাঁকজমক অনুষ্ঠান ও উৎসব করা হত। খৎনা করার সময় হাজামগন বাঁশের চাচ, ক্ষুর, ব্লেড, মাটির হাড়ি, পুরাতন কাপড়, পোড়ান সলতে ব্যবহার করত। খৎনা করা শেষ হলে তাদেরকে নতুন পোশাক ও সম্মানী দেয়া হত।

হাজামদের পেশা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। বর্তমানে আধুনিক ডাক্তার এর মাধ্যমে খৎনা করার কাজটি করা হয়। ফলে হাজামরা অন্য পেশায় ঝুকে যাচ্ছে।


গাছি (Gachi):
যারা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তাদের গাছি বলে। গাছির পেশা মৌসুমি। শীতকালে তারা ব্যস্ত থাকে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে। তারা খেজুর গাছের মাথার একপাশের ডাল কেটে ফেলে। তারপর ধারাল ছেনি দিয়ে কয়েকবার সেখানে 'চাচ' দেয়। দুই তিন দিন অন্তর চাচ দিতে দিতে একসময় রস বের হতে থাকে। চাচ দেয়া দুই অংশে গজাল পুতে দেয়া হয়। তারপর চাচ দেয়া অংশের মাঝখানে বাঁশের চিকন নল গেঁড়ে দেয়। এরপর মাটির পাতিল দড়ি দিয়ে বেধে সন্ধ্যায় গজালের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর সকালে রস সংগ্রহ করা হয়।

প্রাচীন কাল থেকে বাংলায় খেজুর গাছে চাষ হত। যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যায়। বিশেষ করে যশোরের নলেন গুড়, ঝোল গুড়, দানা গুড় ও নলেন পাটালীর স্বাদই আলাদা। প্রবাদ আছে,

''যশোরের যশ
খেজুরের রস''

হিন্দুদের একটি সম্প্রদায় শিউলী। গাছিরা 'শিউলী' নামে অনেকজায়গায় পরিচিত। বর্তমানে খেজুর গাছ ও গাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। খেজুর রসের চিনির উৎপাদন খরচ আখের চিনির চেয়ে একদমই কম। সরকারের উচিত খেজুর রসের শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা করা।


ভিস্তি (Visti):
যিনি পানি সরবরাহ করেন তাকে ভিস্তি বলে। বিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত এই ব্যবসার প্রচলন ছিল। বর্তমান বাংলাদেশে এই পেশা বিলুপ্তপ্রায়। তবে কলকাতায় আজো এই পেশার লোকেদের চোখে পড়ে। ভিস্তিওয়ালারা এখন কলকাতায় এক মশক পানি বিক্রি করছেন ১০ থেকে ২০ টাকায়। অনেকে এই পানি রান্না ও গোসলে ব্যবহার করেন। বর্তমানে যারা বোতলে করে মিনারেল পানি সরবরাহ করে তাদের ভিস্তি বলা যাবে কিনা জানি না।

একটি মজার তথ্য মোঘল সিংহাসনে একদিনের জন্য বসেছিল এক ভিস্তি (তথ্যসুত্রঃ বাদশা নামদার, হুমায়ুন আহমেদ)। মোঘল সম্রাট হুমায়ুন তাঁর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এক ভিস্তিকে একদিনের জন্য রাজ সিংহাসনে বসান। এক কালে যুদ্ধের সময় সৈন্যরা ভিস্তিতে পানি রাখত। ব্রিটিশদেরও যুদ্ধ ক্ষেত্রেও দুর্গের মধ্যে খাবার পানির একমাত্র ভরসা ছিল ভিস্তি। ঢাকায় যে টমটম গাড়ি চলত, তাতেও থাকত পানিভর্তি মশক। এই মশক সাধারণত ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয়। এই মশক তৈরি করার জন্য চাই দক্ষতা। সবাই এই মশক তৈরি করতে পারে না। কলকাতায় দুইজনলোক এখনো জীবিত আছেন যারা এই মশক তৈরি করতে পারেন।

ভিস্তি সম্পর্কে মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন কবি শামসুর রহমান "রোজ মশক ভরে দুবেলা পানি দিয়ে যেত আমাদের বাড়িতে। কালো মোষের পেটের মতো ফোলা ফোলা মশক পিঠে বয়ে আনত ভিস্তি। তারপর মশকের মুখ খুলে পানি ঢেলে দিত মাটি কিংবা পেতলের কলসের ভেতর। মনে আছে ওর থ্যাবড়া নাক, মাথায় কিস্তি টুপি, মিশমিশে কালো চাপদাড়ি, আর কোমরে জড়ানো পানিভেজা গামছার কথা। একদিন পানির কল এলো আমাদের মাহুতটুলীর বাড়িতে। আর সেই সঙ্গে বিদায় নিল ভিস্তি।''

ভিস্তি্র কথা উল্লেখ আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জুতা আবিষ্কার কবিতায়ঃ

"তখন বেগে ছুটিল ঝাঁকে ঝাঁক
মশক কাঁখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাঁক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।
জলের জীব মরিল জল বিনা,
ডাঙার প্রাণী সাঁতার করে চেষ্টা।
পাঁকের তলে মজিল বেচা-কিনা,
সর্দিজ্বরে উজাড় হল দেশটা।"


কাঁসারু (Kasaru):
যারা কাসা-পিতল দিয়ে গৃহস্থালির ব্যবহার্য তৈজসপত্র তৈরি করে তারা কাঁসারু নামে পরিচিত। অনেকে তাদের কংসকার নামে ডাকেন। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় কাঁসা-পিতলের প্রচলন ছিল। পাল ও সেন রাজাদের শাসনামলে এদেশে ধাতু মিশ্রিত শিল্পের সূচনা হয় বলে কথিত আছে। সেন আমলে কাসারুরা অভিজাত ছিল।

জেমস টেলরের 'কোম্পানি আমলের ঢাকা' গ্রন্থে ঢাকা ও বিক্রমপুর কাসারুদের বর্ণনা পাওয়া যায়। একসময় বিয়ে, খৎনা, জন্ম ইত্যাদি অনুষ্ঠানে কাঁসার তৈরি জিনিসপত্র উপহার হিসেবে প্রদান করতো। কিন্তু বর্তমানে এর কদর কমে গেছে। মানুষ এখন এগুলো ব্যবহারে কুণ্ঠাবোধ করে। সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা কাঁসারু শিল্পীরা পায় না। অথচ এ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের কাঁসারুদের তৈরি দ্রব্যাদি বিদেশে রপ্তানি হয়।

প্রাচীনকালে কাসা-পিতলের তৈজসপত্রে লোকবিশ্বাস ও লোকধরমসম্পৃক্ত বিভিন্ন কারুকাজ খোদাই করা হত। বৃটিশ শাসনামলে কাসা পিতল দিয়ে কোষাকোষী, প্রঞ্চপ্রদীপ, নন্দীপ্রদীপ প্রভৃতি পুজাপারবনে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি বানানো হত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ করে ধাম্রাই, জামালপুর, নবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ এই সমস্ত দ্রব্য তৈরিতে প্রসিদ্ধ ছিল।
উনিশ শতকের চতুর্থ দশক পর্যন্ত অভিজাত মুস্লিম মহিলাগন কাঁসার তৈরি ড্রেসিং টেবিল, বাক্সপেট্টা, ফুলদানী ব্যবহার করতেন।


কাপালী (Kapali):
কাপালীদের কাজ শনা বা পাটজাত দ্রব্য দিয়ে দড়ি পাকানো এবং ছিকা প্রস্তুত করা। কাপালী এক শ্রেনীর হিন্দু সম্প্রদায়। পাট শিল্প কাজে নিয়োজিত সম্প্রদায়ের লোকেরা কাপালী নামে পরিচিত। এগুলো বাজারে বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে।

ভারতচন্দ্রের কাব্যে কাপালী শ্রেনীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় এদের অস্তিত্ব ছিল। কাপালীরা পাট দিয়ে রশি বা দড়ি বানানোর জন্য কাঠের তৈরি যে উপকরনটি ব্যবহার করে তাঁর নাম পাটকুরা। আবুল ফজল রচিত 'আইনী আকবর' গ্রন্থে ঘোড়া ঘাটে পাটজাত দ্রব্য তৈরির উল্লেখ পাওয়া যায়।


বর্তমান সমাজে কাপালীদের আদি পেশা বিলুপ্ত প্রায়। মেশিনে তৈরি চট, থলে, দড়ি প্রভৃতি মানুষ ব্যবহার করছে।

লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে 'লোরক সোসাইটি' হতে।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।

লোরক সোসাইটির একটি খোলা চিঠিঃ
শুভেচ্ছা নিবেন। অনেকেই বলে থাকেন সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশের পোশাক। যদি আমরা সেই সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকি তাহলে এর প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা কখনো কী ভেবে দেখেছেন? লোকসংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলার লোকগান, লোকছড়া, লোকগল্প, লোকখেলা কতই না আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ। আমাদের শৈশব ছিল ছড়াময়। দাদি-নানির মুখে গল্প শুনে আমরা ঘুমিয়ে পড়তাম। লোকসংস্কৃতির এই উপাদান একসময় রাজা থেকে প্রজা, আমির থেকে গরিব, বুড়ো থেকে শিশু সবার আনন্দ বিনোদনের মাধ্যম ছিল। কিন্তু বিশ্বায়ন এর প্রভাবে ও দিন দিন যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আজ লোকসংস্কৃতি হুমকির সম্মুখীন। এখনকার সময়ের কোন বালককে যদি গোল্লাছুট খেলার কথা বলা হয় তাহলে সে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে আরও কিছু দিন পর আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কঙ্কাল বিশেষও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা হয়ে যাব বস্ত্রহীন জাতির মত।

দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ও নিজের সংস্কৃতিকে ভালবেসে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ তরুণী “লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হল হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ ও প্রচার করা এবং লোকসংস্কৃতির হারানো অতীত ফিরিয়ে আনা। আমরা চাই বিশ্বের দরবারে আমাদের সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখতে। আমাদের এই শুভ উদ্যোগে আপনার সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন। আপনার একটু চেষ্টা রক্ষা করতে পারে আমাদের লোক সংস্কৃতিকে। তাই দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আসুন আমাদের লোরকের পতাকা তলে। আমরা তরুণেরাই পারি আমাদের লোকসংস্কৃতিকে রক্ষা করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে। ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ আলামিন (সভাপতি)
লোরক সোসাইটি।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info