সময়ের প্ররিক্রমায় কত কিছুই না বানিয়েছে মানুষ নিজের প্রয়োজনে। কিন্তু সব প্রযুক্তি বা উদ্ভাবন কি সকলের গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছে? না পায়নি, আর গ্রহন যোগ্যতা পাইনি বলেই তা সময়ের অতল গভীরে হারিয়ে গেছে। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এমন ৮টি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির পরে যা কোন দিনই জনসাধরনের ব্যাবহারের জন্য বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হয়নি কিন্তু এগুলির ছিল অপার সম্ভাবনা। তারপরেও কেন জানি এগুলিতে অর্থ নিয়গের জন্য কোন ব্যাবসায়ি প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে ওঠে নাই। ফলে আমরা কোন দিন এই প্রযুক্তি ব্যাবহারের সুযোগ পাই নাই।
ব্রিফকেস এলার্মঃ
৮০ দশকে বিশেষ করে যারা ব্যাবসা বানিজ্যের কাজে নিয়জিত থাকত তাদের জন্য বেশ চিন্তার বিষয় ছিল তাদের ব্যাবহৃত ব্রিফকেসের নিরাপত্তা নিয়ে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তথ্য সমৃদ্ধ ফাইল সংরক্ষন এবং বহনের কাজে যেহেতু ব্রিফকেস ব্যাবহৃত হত তাই এই ব্রিফকেস কেউ খুলে কাগজ সরিয়ে ফেললেই সর্বনাস। আর এ থেকে পরিত্রান পেতে আবিস্কার করা হয় ব্রিফকেস এলার্মের। মালিক বাদে অন্য কেউ সঠিক নিরাপত্তা সংখ্যা না দিয়ে খুললেই হল, বিকট শব্দে বেজে উঠবে এলার্ম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই পরিকল্পনা বা উদ্ভাবন কোন দিন বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হয়নি।
মাল্টিকাজ করার যন্ত্রঃ
বর্তমান সময়ে মোবাইলে একই সাথে রেডিও, ক্যালকুলেটর আর গান শোনার ব্যাবস্থা প্রায় সকলের হাতের মুঠায়। কিন্তু এই তিনটি কাজ করার জন্য প্রথম যে যন্ত্রটি আবিস্কার হয় তার নাম দেওয়া হয় "Do All System"। এই যন্ত্রের মাধমে ক্যাসেট, রেডিও, ক্যালকুলেটর, এলার্ম ঘড়ি এবং FM এবং AM ব্যান্ডের রেডিও শোনা যেত। কিন্তু এই Do All System কোন দিন বাণিজ্যিক ভাবে বাজারজাত করা হয়নি।
ডোম আকৃতির বাড়িঃ
বরফ পরা দেশে আপনি চাইলেও কম খরচে সমতল ছাদের ঘড় বানাতে পারবেন না। কেননা ছাদে বরফ জমে এমন অবস্থা হতে পারে যে বাড়ির ছাদই আপনার উপর ভেংগে পরতে পারে। তাই সবাই ত্রিকোন আকৃতির ছাদ বানাতো। কিন্তু এর ফলে একদম উপরে ফ্লোরে বেশ জায়গা নষ্টো হত। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে ডোম আকৃতির ঘর বানাবার প্রকল্পনা করা হয়। এই ঘড় বানাতে যেমন অর্থের প্রয়োজন কম হয়, তেমনি বসবাসের জন্য বেশি জায়গা পাওয়া যায়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে একটু উদ্ভট আকৃতির বাড়ি হওয়ায় এই ডিজাইনের বাড়ি কেউ কোন দিন বানায়নি।
ইলেকট্রিক পাপোষঃ
"ইলেকট্রিক পাপোষ" নামটা উচ্চারনে যেমন সোজা তেমনি কঠিন এর প্রযুক্তি। এটি বানানো এতটাই কঠিন আর জটিল প্রক্রিয়া ছিল যে তা বানাবার বা ব্যাবহারের সাহস খুব বেশি কেউ দেখায় নাই। যার ফলে বাণিজ্যিক ভাবে এটি সফল না হবার কারনে এই প্রযুক্তিও বন্ধো হয়ে যায়। ইলেকট্রিক পাপোষ মূলত বানানো হয়েছিল বিরোধী দ্রুতগামী তত্ত্বের উপর নির্ভর করে। এখানে একটা রাবারের ব্রাশ সব সময় মানুষ যে দিক যাবে তার দিক নির্ধারন করে তার উল্টা দিকে যেতে থাকবে ফলে কেউ না চাইলেও তার জুতার নিচ থেকে বালু সরে যাবে আবার কোনার দিকে গোল আকৃতিত ড্রাম ঘুরতে থাকবে যা বালি জমতে দিবে না পাপোষের উপর। আরো কিছু প্রযুক্তি ছিল যা প্রকাশ করা হয় নাই। এক পাপোষ চালাতেই মনে করে ৮০ দশকে একটা কম্পিউটারের প্রযুক্তি বা সেন্সর ব্যাবহার করা হয়েছিল। যখন কম্পিউটার চিনতো গুটি কয়েক লোক মাত্র, তাহলে কিভাবে মানুষ এটির কার্যক্ষমতা বুঝবে?
Gull Wing দরজাঃ
Gull Wing দরজার মূল ডিজাইন করা হয় সিগাল পাখির পাখা ভাজ করার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে। এর ফলে দরজা দু'টি ভাগ হয়ে উপরে উঠে যেত ফলে চাপা জায়গায় দরজা খুলতে কারো কোন সমস্যা হত না। এই দরজা প্রথম বানায় মার্সিডিজ কম্পানি ১৯৫০ সালে। কিন্তু তারা এটি বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যায়নি। পরবর্তিতে ৮০ দশকের দিকে অনেক গাড়ি কম্পানি এরকম দরজার গাড়ি বানাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাধারন জনগন তা গ্রহন করেনি। কেননা ভারি কোন কিছু গাড়ির ছাদে রেখে তা বাধা যেত না এই দরজার কারনে আর দূর্ঘটনায় গাড়ি কোন ভাবে উল্টে গেলেই হল, এই দরজা খোলার কোন উপায় থাকবে না। আর এই কারনে এই প্রযুক্তিও কোন দিন আলোর মুখ দেখেনি।
হিটার জ্যাকেটঃ
শীতের মধ্যে মটর সাইকেল চালানো কেমন কষ্টের তা যে না চালায় সে বুঝে না। আর তাদের কথা মাথায় রেখেই বানানো হয় এই জ্যাকেট। এর মধ্যে রয়েছে একটি হিটার যা জ্যাকেটকে গরম করে তোলে। আর এই হিটার চলে মটর সাইকেলের ব্যাটারিতে। কিন্তু এই জ্যাকেট কোন দিন কোন মটর সাইকেল চালকের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারে নাই। কেননা এটি মটর চাইকেলের ব্যাটারি এতটাই নিত যে শেষে মটর সাইকেল চালু করার শক্তিটুকু থাকত না ব্যাটারিত আর ব্যাটারির জীবনকালও কমে যেত।
কম্পিত বাষ্পস্নানঃ
বর্তমান সময়ে Sauna এর কথা কেউ শুনেন নাই এমন নিশ্চই কেউ নাই। তো এই বাষ্পস্নানকে সকলে বাড়িতে বাড়িতে পৌছে দিতে"Vibrosaun International" কম্পানি এমন এক বাস্পস্নান যন্ত্র বানালো যাতে আছে শরীর মালিশ করার জন্য ভাইব্রেটর, বাস্প তৈরি করার যন্ত্র আবার ঠান্ডা হবার জন্য শীতল বাতাস পাবার ব্যাবস্থা। বলতে পারেন আয়েসি লোকদের জন্য বেশ বড় এক জিনিষ। কিন্তু এটিও ব্যাবসায়িক ভাবে লাভবান না হবার কারনে বন্ধো হয়ে যায়। আর তার কারন কিন্তু খুব জটিল কিছু না, আসলে এই মেশিনের দাম ছিল মাত্র ৬০০০ মার্কিন ডলার। বোঝের এবার ৮০ দশকের দিকে ৬০০০ ডলার খরচ করে এমন মেশিন কেনার লোক হাতে গোনা কয়েক জন ছিল মাত্র।
The Everything Card:
এটি কিন্তু বানানো হয়নি কিন্তু ৮০ দশকে এটি বানাবার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এটি বানাবার উদ্দেশ্য ছিল, কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, ডজন খানেক মেম্বারশিপ কার্ড, পে ফোন কার্ড এমন কি পার্কিং কার্ড হিসেবে মাত্র একটি কার্ড থাকবে। যাতে থাকবে পাতলা LCD স্ক্রিন আর গুটি কয়েক বাটন। এক কার্ড দিয়ে দৈনন্দিন কাজ সব করা যাবে। কিন্তু এটিও কোন দিন আলোর মুখ দেখেনি। তবে বর্তমানে মোবাইল কিন্তু এর সব গুলি কাজ করতেই সক্ষম।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।