সর্বকালের সেরা ১০টি ট্যাংক

যুদ্ধ ক্ষেত্রে ট্যাংকের ব্যাবহার আধুনিক মানব সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকেই চলে আসছে। যুগে যুগে এই ট্যাংক হয়েছে অনেক বেশি আধুনিক এবং ভয়ংকর। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব সর্বকালের সেরা ১০টি ট্যাংকের সাথে। এদের সেরা নির্বাচন করা হয়েছে কয়েকটি জিনিষের উপর ভিত্তি করে। প্রথমত এদের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা, ট্যাংকের বর্মের ক্ষমতা এবং এদের গতীর উপর নির্ভর করে এছাড়াও একটি ট্যাংক বানাতে কত সময় লাগত এবং কি পরিমান অর্থ ব্যয় হত তার সামাঞ্জস্য করে নির্বাচিত করা হয়েছে এই ১০টি ট্যাংককে। চলুন এবার সেই ট্যাংক গুলির সাথে পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক।


০১) The T-34:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৫৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ৬৫ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ ৭৬.২ মিমি কামান।
এই ট্যাংকটি তৈরি করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন যা বর্তমানে রাশিয়া। এটি প্রথম এমন একটি ট্যাংক যাতে এত বেশি ধ্বংসাত্মক শক্তি ব্যাবহার করা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে এর থেকেও শক্তিশালী ট্যাংক আছে কিন্তু এটি যে সময় তৈরি করা হয়েছিল তখন এর সামনে কোন পদাতিক বাহিনী বা অন্য কোন ট্যাংক আসার সাহস পেত না আর আসলেও রক্ষা পেত না। আর এটি দিয়ে যে পরিমান ধ্বংসাত্মক কাজ করা হয়েছে, এত দিনেও সেই পরিমান ধ্বংসাত্মক কাজ অন্য কোন ট্যাংক করতে পারেনি। আর এই কারনেই এটি বিশ্বের সব থেকে সেরা ট্যাংক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও ৬৫ মিলিমিটার ইস্পাত ভেদ করে এই ট্যাংক ধ্বংস করার মত অন্য কোন ট্যাংক ছিল না সে সময়। একারনে এই ট্যাংক দেখলে শত্রুপক্ষ বেশ নিরবেই কেটে পরত। এই ট্যাংকটি ছিল মূর্তিমান আতংকের অপর এক নাম।


০২) M1 Abrams Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৭৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • মূল অস্ত্রঃ ১২০ মিমি কামান।
আমেরিকার তৈরি এই ট্যাংকটি বর্তমান বিশ্বের সব থেকে ভয়ংকর ট্যাংক। এই ট্যাংক দেখলে শত্রুপক্ষ পর্যন্ত নিজেদের লুকিয়ে ফেলে। ১২০ মিমি কামানের গোলা ধ্বংস করতে পারে না এমন কিছু নেই বললেই চলে। এটির কার্যপ্রনালী বেশ জটিল এবং এটির দাম অন্যান্য ট্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি। বলতে পারেন বর্তমান বিশ্বের ট্যাংকের রাজা এটি। সব থেকে মজার যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে তা হল, যতই বন্ধুর পথে এটি চলুক না কেন এর কামন সব সময় মাটির সাথে অনুভূমিক থাকে আর কোন টার্গেটে তাক করলে ট্যাংক যতই ঝাকি খাক না কেন কামান সেদিকে স্বনিয়ন্ত্রিত ভাবেই তাক করে থাকে। অর্থাৎ একবার এর নিশানায় পরলে রক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার আর সাথে ১২০ মিমি কামানের গোলা, ব্যাপারটা বেশ ভয়ংকর।


০৩) Tiger Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৩৭ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ১০০ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ ৮৮ মিমি কামান।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির তৈরি এই ট্যাংক। তখনকার সময়ে ৮৮ মিমি কামন ছিল সর্বাধিক ক্ষমতার কামান। এত বেশি ক্ষমতার কামান কোন ট্যাঙ্কেই বসানো ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই কামনকে বসাবার জন্য তৈরি করা হয় "Tiger" নামক এক নতুন ট্যাংক। তৎকালীন সময়ের সব থেকে ভারি ট্যাংক ছিল এটি আর একারনেই এর গতি অন্যান্য ট্যাংকের থেকে ছিল বেশ কম। তারপরেও যতটুকু গতিতে এটি চলতে পারত তাতেই শত্রু পক্ষের কলিজার পানি শুকিয়ে যেত। আর এই ট্যাংক ধ্বংস করাও ছিল এক কঠিন কাজ, কেননা এটি তৈরি করা হয়েছিল ১০০ মিলিমিটার পুরু পাত দিয়ে। এটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন সব থেকে ব্যাবহুল ট্যাংক ছিল। বলতে পারেন তৎকালীন সময়ে একটা যুদ্ধ বিমান তৈরির থেকেও বেশি অর্থ ব্যয় করা লাগত এরকম একটি ট্যাংক তৈরি করতে।


০৪) WWI Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৬.৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ৬ থেকে ১২ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ এক জোড়া ৬ ফুট লম্বা বন্দুক।
২০ শতকের শুরুর দিকে এই ট্যাংক তৈরি করে ইংল্যান্ড। যদিও ট্যাংকটির তথ্য গুলি বর্তমান সময়ে খুব বেশি কিছু মনে না হলেও এর সময় কালে ৬ থেকে ১২ মিলিমিটার পুরু ইস্পাতের তৈরি ট্যাংক ধ্বংস করা ছিল এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই এই ট্যাংকের সামনা সামনি কেউ আসলে সে ট্যাংকের কিছুই করতে না পারলেও ট্যাংক থেকে গুলি করে হত্যা করা ছিল একদম সাদামাতা বিষয়। তৎকালীন সময়ে এই ট্যাংক আসাত পূর্বের ২০ বছরে মানুষ এরকম শক্তিশালী ট্যাংক আর দেখেনি।


০৫) Centurion Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৩৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ১৭ থেকে ১৫২ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ ১০৫ মিমি কামান। 
ইংল্যান্ডের তৈরি এই ট্যাংকের কামানের ক্ষমতা আসলেই প্রশংসার যোগ্য, এছাড়া সর্বোচ্চ ১৫২ মিলিমিটার পুরু ইস্পাতের তৈরি ট্যাংক যে আসলেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ সামরিক বাহিনীর জন্য অশুভ লক্ষন তা আর বলে বুঝানো লাগবে না। এটি তৈরি করতে যেমন কম খরচ যেত, তেমনি অনেক কম সময়ের মধ্যেই তৈরি করে ফেলা যেত। এই ট্যাংক ব্রিটিশ পদাতিক সামরিক বাহিনীর জন্য ছিল এক নতুন যুগের সূচনা।
 

০৬) The tank Pz IV:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৪০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ৫০ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ ৭৫ মিমি কামান।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বানানো হয় এই ট্যাংক। আর এটি বানায় জার্মানিরা। উচ্চ ক্ষমতার কামান এবং পুরু বর্মের কারনে ট্যাংকটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এটি বানাতে জার্মানিদের বেশ অর্থ ব্যয় হচ্ছিল তা তৎকালীন সময়ে তাদের পক্ষে বহন করা অসম্ভব হয়ে যায়। আর একারনে এই ট্যাংক খুব বেশি সংখ্যক বানানো হয়নি।


০৭) Challenger Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৬০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ প্রকাশ করা হয়নি।
  • মূল অস্ত্রঃ ১২০ মিমি কামান। 
১২০ মিমি কামান কিন্তু কোন ছেলে খেলার কথা না। ইংল্যান্ডের তৈরি এই ট্যাংকটি ইংল্যান্ডের সব থেকে শক্তিশালী ট্যাংক গুলির মধ্যে অন্যতম একটি।


০৮) Tank T-54/55:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৫০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ২০৩ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ ১০০ মিমি কামান।
সোভিয়ের ইউনিয়নের বানানো এই ট্যাংকটি বলতে পারেন তাদের বানানো সব থেকে শক্তিশালী ট্যাংক। মাঝারি আকৃতির এই ট্যাংক তৈরি করা হয় ২০৩ মিমিমিটার পুরু ইস্পাত দিয়ে। যার কারনে এর আরোহীদের যে নির্ভয়ে যে কোন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরতে যে সাহস জোগাতো তা আর বলে বোঝানো লাগবে না। আর এর কামান ছিল তৎকালীন সময়ে সব থেকে ভয়ংকর। যদিও একটু ধীর গতীর তারপরেও এটি যে শত্রুদের মনে শুধু ভয় ধরিয়ে দিত তা নয় বরং বলতে পারেন প্যান্ট নষ্টো করতেও বাধ্য করত।


০৯) Tank Merkava:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৫৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • মূল অস্ত্রঃ ১২০ মিমি কামান।
ইস্রাইলের তৈরি এই ট্যাংকের কামানের ক্ষমতা যে পরিমান আছে তার তুলনায় এই ট্যাংক অনেকটাই ধীর গতির। এর দৃঢ় পুরুত্ব এর মধ্যে থাকা চালকদের যে বেশ সুরক্ষিত রাখে তা প্রমান করেছে বিগত কয়েক বছরে কয়েকটি যুদ্ধ ক্ষেত্রে। বালুময় মরুভূমিতে এই ট্যাংক বেশ কার্যকর থাকে, আর সে কারনেই এটি মরুর দেশের সামরিক বাহিনীর অন্য সব থেকে উৎকৃষ্ট ট্যাঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। যদিও এটি বানাবার খরচ বেশ চরা এবং বানাতে সময়ও বেশ লাগে।


১০) Sherman Tank:
  • সর্বোচ্চ গতিঃ ৩৯ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়।
  • বর্মের পুরুত্বঃ ৬২ মিলিমিটার।
  • মূল অস্ত্রঃ অতিদ্রুত ৭৫ মিমি কামান।
আমেরিকার তৈরি এই ট্যাংকটি বেশ সফল একটি ট্যাংক ছিল। এটি যেমন খুব দ্রুত চলতে পারত তেমনি এটি বানাতেও বেশি সময় লাগত না আর বানাবার খরচ কম যাবার কারনে এটি বানাতে কোন প্রকার আর্থিক চাপ সহ্য করা লাগত আ বললেই চলে। এটির ইঞ্জিন বিশ্ব বিক্ষ্যাত ফোর্ড কম্পানির বানানো। যদিও এর কামানের ক্ষমতা এবং বর্মের পূরুত্ব তেমন শক্তিশালী না তার পরেও আকারে ছোট এবং দ্রুত গতীর কারনে এটি বেশ কার্যকর হয়ে ওঠে যুদ্ধের ময়দানে।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info