আচ্ছা আগ্নেয়গিরি নামটা শোনার সাথে সাথেই আমাদের মনের মধ্যে ভেসে ওঠে উত্তাল এক ভয়ংকর চিত্র, যেখানে আমাদের ধরনীর গর্ভ চিরে বের হয়ে আসে গলন্ত লাভা। আর এর স্পর্শে যাই আসে তা পুরে ছাই হয়ে যায় মূহুর্তেই। কিন্তু আজ আপনাদের এমন আগ্নেয়গিরির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যা থেকে বের হয়না উত্তপ্ত কোন লাভা বরং বের হয় মাটি। আর সে কারনেই এই আগ্নেয়গিরির নাম কাঁদার আগ্নেয়গিরি।
আসলে এর নাম আগ্নেয়গিরি না বলে বলা উচিৎ কাঁদাগিরি তাহলেই হয়ত এর বৈশিষ্ট্য এর সাথে মিলে যাবে। কিন্তু এমন কোন শব্দ বাংলা অভিধানে না থাকার কারনে এর নাম আপাতত কাঁদার আগ্নেয়গিরি বা মাটির আগ্নেয়গিরি (Mud Volcano)। যা হোক, এই কাঁদার আগ্নেয়গিরি সব থেকে বেশি পাওয়া যায় আজারবাইজান দেশটিতে। এখানে প্রায় ৩০০টি কাঁদার আগ্নেয়গিরি আছে, যা কিনা সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া সকলের কাঁদা আগ্নেয়গিরির সংখ্যার অর্ধেকের থেকেও কিঞ্চিৎ সংখ্যায় বেশি।
আজারবাইজানের এই কাঁদার আগ্নেয়গিরি গুলির মূলত অবস্থিত গোবাস্থান অঞ্চলের "গোবাস্থান জাতীয় পার্কে" (Gobustan National Park)। পার্কের মূল বৈশিষ্ট এই কাঁদার আগ্নেয়গিরি গুলি হলেও আরেকটি কারনে এখানে দর্শনার্থীদের বেশ ভীড় দেখা থাকে। আর তা হল, এখানে অদি কালের পাথরে আঁকা কিছু ছবিও পাওয়া গেছে, যেগুলির বয়স আনুমানিক ১০,০০০ খ্রীষ্টপূর্ব। প্রকৃত এরকম আজব খেয়াল আর মানব ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এই ছবি গুলির কারনে এই পার্ককে UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর কাঁদার আগ্নেয়গিরি পূর্ন এই জায়গাটি প্রথম আবিস্কৃত হয় ১৯৩০ সালে। প্রকৃতির এই বিস্ময় কাঁদা আগ্নেয়গিরির লাভা অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে নিক্ষিপ্ত কাঁদা প্রায় ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে থাকে। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস অনুসারে এই কাঁদা গায়ে মাখলে অনেক রোগ ভাল হয়ে যায়। এই কারনে এখানে ঘুরতে আসা অনেক দর্শনার্থী মাঝে মাঝে এখানকার কাঁদা দিয়ে নিজেদের মুখকে আবৃত করে ফেলে। অনেকটা ফ্রি ফেস প্যাক। তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় এটা শুধুমাত্র মাটি যার তেমন কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই।
যাই হোক না কেন চলুন এবার দেখে নেই এই কাঁদা আগ্নেয়গিরির কিছু ছবি,
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।