হারিয়ে যাওয়া ধনদৌলত (১ম পর্ব)

প্রত্যেকটি দেশেরই থাকে তাদের নিজস্ব কিছু সম্পদ। যেগুলোর মূল্যমান হয়তো কখনো টাকার অঙ্কে খুব বেশি, আবার কখনো টাকার মূল্যের চাইতেও অনেক উপরে। শুধু কোন একটি দেশেরই নয়, এমন মূল্যবান সম্পদ রয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাসেও। যার দাম মানব সভ্যতার প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই অসীম। কালের গর্ভে বা নানান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হারিয়ে গেছে মানব সভ্যতার অসংখ্য অমূল্য নিদর্শন, অসংখ্য অমূল্য সম্পদ। কখনো হদিশ মিলেছে, কখনো মেলেনি। আর ঠিক এমনই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের দশ মূল্যবান সম্পদ নিয়ে লেখা হল আজ। মানব সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া এই সম্পদগুলো আক্ষরিক অর্থেই আজও খুঁজে পায়নি কেউ। আজ রইলো প্রথম পর্ব।


১. রাইট ভাইদের পেটেন্টঃ
উইলভার আর অরভিল রাইট- কতই না শুনেছি আমরা এদের নাম। তাদের তৈরি করা উড়োজাহাজের নকশাই তো এগিয়ে নিয়েছে আমাদেরকে বর্তমান সব উড়োজাহাজের কাছে। এই দুই ভাইয়ের উড়োজাহাজ তৈরির একটা খুঁটিনাটি নকশা রাখা হয়েছিল জাদুঘরে। কিন্তু ২০০৩ সালে কোন ফাঁকে কোন এক চোর এসে সেটাকে নিয়ে হাওয়া হয়ে যায় একেবারের মতন। আর তারপর? এখনো অব্দি পাওয়া যায়নি নকশাটি।


২. ট্যান্টো মে কুনিমিত্সুঃ
এখন অব্দি জাপান সরকারের তথ্যানুসারে জাপানের অনেকগুলো সম্পদ হারিয়ে গিয়েছে। আর সেগুলো হারিয়েছে ব্যাক্তিগত সংগ্রহ থেকে। হয় সেগুলো চুরি হয়েছে, মালিক এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়েছেন কিংবা মারা গিয়েছেন। এরকম ৫২ টি তলোয়ার, ১৭ টি স্থাপত্য ও ১০ টি চিত্রসহ মোট ১০৯ টি হারিয়ে যাওয়া জিনিসের তালিকা রয়েছে সরকারের কাছে। তবে এগুলোর ভেতরে একটি ছিল ১৩ শতাব্দীর বিখ্যাত ট্যান্টো তলোয়ার। যেটাতে কিনা কুনিমিত্সু সাক্ষর করা ছিল। এর মালিক মারা যাওয়ার পর একেবারের মতন হারিয়ে ফেলেন তলোয়ারটি জাপান সরকার।


৩. পাইতিতিঃ
ইনকারা ইউরোপীয়ানদের ভয়ে কখনো নিজেদের ধন-সম্পদ নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারেনি। আর তাই সেগুলোকে লুকোতে তারা আশ্রয় নিয়েছিল পাইতিতি নামের একটি শহরে। সেখানে সোনার গুদাম বানিয়ে ফেলেছিল তারা। কিন্তু সময়ের স্রোতে ইনকা সভ্যতা হরিয়ে যায়, মুছে যায় তাদের সেই সোনায় ভর্তি শহরের চিহ্ন। এখনো অব্দি পেরুতে বেশ খোঁজাখুজি করেন আবিষ্কারকেরা শহরটিকে পেতে। তবে এখন পর্যন্ত সেটার খোঁজ মেলেনি।


৪. পাটিয়ালা নেকলেসঃ
দ্যা হাউস অব পার্টিয়ারের দ্বারা ১৯২৮ সালে নির্মিত হয় এই অসাধারন সুন্দর পাটিয়ালা হার। মহারাজা স্যার ভুপিন্দর সিংকে দেওয়া এই উপহারটিতে মোট ২,৯৩০ টি হীরে ছিল। পৃথিবীর অন্যতম বড় হীরে দ্বারা তৈরি এই হারে রুবির পাশাপাশি অনেকটা গলফ বলের মতন দেখতে একটি হীরেও ছিল। হারটি সর্বশেষ দেখা যায় যাদাবিন্দ্র সিং-এর গলায়। সেটাও ১৯৪৮ সালে। এরপর ৫০ বছর পর লন্ডনে আবার দেখা যায় হারটিকে। তবে এর সবচাইতে দামী আর বড় হীরেটিকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।


৫. মেহগনি জাহাজঃ
সাধারণত গভীর সাগরে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটলে একটা জাহাজের আর কোন উপায় থাকেনা পানির তলায় ডুবে যাওয়া ছাড়া। তবে মেহগনি জাহাজের গল্পটা একটু আলাদা। গভীর সাগরে নয়, বরং অষ্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম ভিক্টোরিয়ার সৈকতে বালির ওপর দাঁড়িয়েই হঠাৎ করেই নেই হয়ে যায় এটি। কী থেকে কী হয়েছিল সেটা বোঝা না গেলেও ৩৫০ বছর পর আবার খুঁজে পাওয়া যায় এই জাহাজের কিছু অংশ।কিন্তু পুরো জাহাজটির হদিশ মেলেনি আজও।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info