পূর্বের পর্বঃ বিশ্বের ভয়ংকরতম নরপিশাচদের গল্প (পর্বঃ ০২)
সময়টা ১৯৭৬ সালের ৩ জুলাই, জার্মানির দক্ষিণ পশ্চিম দিকের ছোট্ট এক শহর ডুইসবার্গ। এই শহরেরই বাসিন্দা অস্কার মুলারের বিল্ডিঙের পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থাটা কিছুতেই কাজ করছে না। প্রতিবেশী ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করায়, কারন হিসেবে সে জানালো যে সেটি নাকি অন্ত্রের নাড়িভুড়িতে ভরে গেছে। অস্কার মুলার প্রতিবেশীর কথায় খুব একটা পাত্তা দিল না। এর আগের দিনই কাছের খেলার মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে ম্যারিওন কেটার নামের ৪ বছরের একটা মেয়ে। পুলিশ বাচ্চাটিকে খুজতে খুজতে হয়রান। এলাকার মানুষ হিসেবে অস্কার মুলারকেও কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। সে মেয়েটির ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারল না বটে! কিন্তু সে তার বাড়ির পানি নিষ্কাশন আর অদ্ভুত প্রতিবেশীটির কথা পুলিশকে জানালো।
সময়টা ১৯৭৬ সালের ৩ জুলাই, জার্মানির দক্ষিণ পশ্চিম দিকের ছোট্ট এক শহর ডুইসবার্গ। এই শহরেরই বাসিন্দা অস্কার মুলারের বিল্ডিঙের পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থাটা কিছুতেই কাজ করছে না। প্রতিবেশী ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করায়, কারন হিসেবে সে জানালো যে সেটি নাকি অন্ত্রের নাড়িভুড়িতে ভরে গেছে। অস্কার মুলার প্রতিবেশীর কথায় খুব একটা পাত্তা দিল না। এর আগের দিনই কাছের খেলার মাঠ থেকে হারিয়ে গেছে ম্যারিওন কেটার নামের ৪ বছরের একটা মেয়ে। পুলিশ বাচ্চাটিকে খুজতে খুজতে হয়রান। এলাকার মানুষ হিসেবে অস্কার মুলারকেও কিছুটা জিজ্ঞাসাবাদ করা হল। সে মেয়েটির ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারল না বটে! কিন্তু সে তার বাড়ির পানি নিষ্কাশন আর অদ্ভুত প্রতিবেশীটির কথা পুলিশকে জানালো।
এই রিপোর্টের দরুন পুলিশ কিছুটা কৌতূহলের বশেই সেই প্রতিবেশীর বাসায় গেল। আর সেই কৌতূহলের হাত ধরেই বেরিয়ে পড়ল ভয়াবহ এক সত্য!
পুলিশ সেই প্রতিবেশীর বাসায় খুঁজে পেল সেই মেয়েকে কেটে টুকরো টুকরো করা মাংস, চুলায় রান্নারত অবস্থায় পাওয়া গেল সেই মেয়েটির হাত, আর টয়লেটের ভিতরে খুঁজে পাওয়া গেল পেটের ভিতরের নাড়িভুড়ি। ভয়ে শিউরে উঠল গোটা এলাকা। প্রকাশ হল ভয়ংকরতম এক খুনির গল্প!
জোয়াকিম ক্রোল, ১৯৩৩ সালের ১৭ এপ্রিল জার্মানির হিন্ডেনবারগে (বর্তমানে পোল্যান্ডের অংশ) তার জন্ম। সে ছিল পরিবারের ৮ম সন্তান। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল তখন, কিন্তু হঠাত করেই ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল আর সে যুদ্ধে মারা গেলেন ক্রোলের বাবা। পরিবারটি অভাব অনটনে পরে গেল। তাদের বাড়িটা ছেড়ে দিয়ে একটা ২ রুমওয়ালা বাসায় গিয়ে উঠল। ৬ বোন আর এক ভাইয়ের সাথে একই রুমে থাকত সে। ৫ বছরের মত পড়ালেখা করলেও আর বেশিদূর চালিয়ে যেতে পারেনি ক্রোল, এরপর সে তার মায়ের সাথে খামারে কাজ করা শুরু করল। তার ২২ বছর বয়স পর্যন্ত সে খামারেই কাজ করে কাটাল। কারন জানত সে তার মাকে ছাড়া অচল।
এরপর সে চলে আসে ডুইসবার্গে। পাবলিক গোসলখানায় সহকারীর কাজ নেয় সে। এসময় স্থানীয় বাচ্চাদের কাছে "আঙ্কেল জোয়াকিম" নামে পরিচিত হয়ে উঠে এই মানুষটি। এর মুল কারন ছিল তার ছোট্ট ফ্ল্যাটটি সব সময় পুতুল, খেলনা বা চকলেট দিয়ে ভরা থাকত। আর সব বাচ্চাদের জন্য তার দরজা সব সময় খোলাই থাকত। স্থানীয় লোকজনও তাকে অনেক আমুদে লোক হিসেবে ধরত।
এদিকে হঠাত করে ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে জোয়াকিমের মা মারা গেল। এতে প্রচণ্ড ভাবে ভেঙ্গে পরে সে। মানসিক ভাবে রিতিমত বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে জোয়াকিম। এর ঠিক ৩ সপ্তাহ পরেই তার জীবনের প্রথম ভয়াবহ অপরাধটা করে সে। ইর্মগার্ড স্ট্রেহেল নামের সুন্দরী এক মেয়েকে দামি উপহার দেয়ার কথা বলে অয়ালস্টেডে নিয়ে যায়। প্রথমে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় জোয়াকিম। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারে যতক্ষণ স্ট্রেহেল বেঁচে আছে ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষণের কোন আশা নেই। তখন জোয়াকিম তার গলায় ছুরি চালায়, এরপর তার সাথে মিলিত হয়। এর ঠিক ৫ দিন পর স্ট্রেহেল এর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর ওই এলাকায় আরও কয়েকটা খুন হয়। প্রত্যেকটা খুনের ভিতরে অদ্ভুত একটা জিনিস লক্ষ্য করা যেত, তা হল তাদের শরীরের কোন অংশ খুব যত্ন করে কেটে নেয়া। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল প্রত্যেকটা খুনের জন্য এক জন করে আসামীও ধরা পড়ত।
যেমন ১৯৫৯ সালের ১৬ জুলাই খুন হওয়া ক্লারা ফ্রেডা খুনের দায়ে স্থানীয় এক মেকানিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬২ সালের ২৩ এপ্রিল পেত্রা গিয়েসের ধর্ষণ এবং খুনের জন্য ভিঞ্জেজ কুহেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬২ সালের ৪ জুন খুন হওয়া মনিকার খুনের দায় গিয়ে পরে স্থানীয় ওয়াল্টার কুইকারের উপর।
এভাবেই চলছিল একের পর এক। তারপর হঠাত করেই ধরা পরে গেল জোয়াকিম। মুলত ম্যারিওন কেটার হত্যার জন্য গ্রেপ্তার করা হলেও পরে সে নিজের জবানবন্দীতে আরও প্রায় ১৪ টা মৃত্যুর দায় স্বীকার করে নেয়, যার মধ্যে ক্লারা ফ্রেডা, পেত্রা গিয়েস, মনিকা দের খুন গুলোও ছিল। যদিও তার খুনের সংখ্যা আরও বেশি ধরা হয়। সে নিজেও এ ব্যাপারে জানায়, "খুনের সংখ্যা এর চেয়ে বেশিও হতে পারে, কারন আমার অনেক কিছুই মনে থাকে না। "
সবগুলো খুনই সে করত একটা ছকবাধা নিয়মে। প্রথমে মেয়েদেরকে প্রলুব্ধ করত কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য, সেখানে নিয়ে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাদেরকে খুন করত সে। তারপর তাদের সাথে মিলিত হত, কখনবা তাদের মৃত দেহ দেখে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হত। এরপরে তাদের মাংসল অংশ গুলো ধারালো ছুরি দিয়ে যত্ন সহকারে কেটে নিয়ে আসত তার ঘরে। সেই মাংস টুকরো গুলোকে রান্না করে খেয়ে নিজের পেটের খিদা মিটাত সে। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য হল, "আমার বসবাসের জায়গাটিতে খাওয়ার জিনিসের দাম অনেক বেশি।" এ সময় পুলিশকে সে আরও জানায়, "বিশ্বাস করুন! কচি শিশুদের মাংসই সব থেকে সেরা।"
১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তার বিচার প্রক্রিয়া চলে। এরপর তাকে যদিও মৃত্যুদণ্ড এর আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায় নি। ১৯৯১ সালের ১লা জুলাই একটি মানসিক হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সে মারা যায়!
লেখকঃ বিবর্ণ ক্যানভাস।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।