শিয়াল মানবী


"শিয়াল মানবি" (Wolf Girl) নামে পরিচিত থাকলেও ১১ বছর বয়স্ক "সুপাতরা" (Supatra) কে এই নামে বারবার উল্লেখ করাটা অমানবিক মনে হবার কারনে আমি লেখায় প্রতিবার তাকে তার আসল নাম ধরে উল্লেখ করব।

সুপাতরা যার এক বিরল জেনেটিক রোগে আক্রান্ত। যার ফলে মাত্র ১১ বছর বয়সেই তার সম্পূর্ন মুখ লোমে ঢাকা। একারনে স্কুলের সবাই থাকে শিয়াল মানবি বলে ডাকে। যা ১১ বছর বয়স্ক যে কোন ছেলে মেয়ের জন্য বেশ কষ্টের কিন্তু যখন থেকে সুপাতরা গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে নাম উঠিয়েছে বিশ্বের সব থেকে লোমশ মানবি হিসেবে তখন থেকেই তার প্রতি তার সহপাঠিদের দৃষ্টিকোন পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে সুপাতরা বলেন, "আমি অনেক খুশি যে আমি গিনেজ বিশ্ব রেকর্ডে নিজের নাম উঠাতে পেরেছি আর তার থেকেও বেশি খুশি যে বর্তমানে স্কুলে অনেকেই আমার সাথে অনেক ভাল ব্যাবহার করে যা তারা আগে করত না।"


১১ বছর বয়সি সুপাতরা খুবই বিরল জেনেটিক সমস্যা Taika Ambras hypertrichosis নামক রোগে আক্রান্ত যার সহজ ইংরেজি নাম Werewolf Syndrome। এই রোগের কারন তার কোষের ক্রোমজমের গঠনে কিছু পরিবর্তন যা সাধারন ক্রোমজম হতে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। এই জেনেটিক রোগ সুপাতরার ক্ষেত্রে যতটা প্রকোপ আকার ধারন করেছে তা সাধারনত অন্যান্যদের ক্ষেত্রে হয় না। বিজ্ঞানীদের মতে সারা বিশ্বে ৫০ জনের মধ্যে একজন অন্ত্যত এই রোগে আক্রান্ত কিন্তু তা এরকম প্রকোপ আকার ধারন করে না। এই Werewolf Syndrome এর ফলে সুপাতরার চেহারা, কান, হাত, পা এবং পিঠ ঘন লোমে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এমন কি সর্বাধুনিক এবং সব থেকে কার্যকর লেজার চিকিৎসার ফলেও কোন সুফল পাওয়া যায় না, বরং তা আরো ঘন আকার ধারন করে। একারনে সুপাতরার মা প্রায় প্রতিদিন সুপাতরার চুল কাচি দিয়ে ছেটে দেয়। কেননা এছাড়া বিকল্প কোন উপায় নাই।


সুপাতরা যে শুধু মাত্র Werewolf Syndrome নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন তা নয়, তার আরো কিছু সমস্যা আছে। সুপাতরার পিতা ৩৮ বছর বয়স্ক সামরেং (Sammrueng) বলেন, জন্মের সময় সুপাতরার নাকের ছিদ্র ছিল মাত্র ১ মিঃমিঃ। এ কারনে ঠিক মত শ্বাস নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না, তাই জন্ম নেবার প্রথম তিন মাস ইনকিউবেটরে কাটায়। পরবর্তিতে সুপাতরার অপারেশন হয় নাকের ছিদ্র বড় করবার জন্য। জন্ম নেবার পর থেকে ১০ মাস কাটে হাসপাতালে। এরপর ২ বছর বয়সে আরেকটি অপারেশনের পর তার শ্বাসনালী সঠিক পরিমাপে আসে।


সুপাতরার বাবা আরো বলেন, শুধু এই সমস্যা নয় এর পরে সামাজিক ভাবে আমি আর আমার মেয়ে অনেক ভাবেই হেয় হয়েছি। আমাদের প্রতিবেশিরা আমাকে প্রশ্ন করত আমি এমন কি পাপ করেছি যার ফিল সরূপ আমি এরকম কন্যা পেয়েছে? যা আমার জন্য বেদনাদায়ক ছিল। এছাড়াও সে এবং তার স্ত্রী সব সময় চিন্তায় থাকত যে তার মেয়েকে অন্যান্য ছেলেমেয়েরা ক্ষেপাচ্ছে কিনা এ নিয়ে। অনেকটা দূর্বিসহ জীবন ছিল তাদের। কিন্তু সুপাতরা বেশ মিশুক হওয়ায় খুব সহজেই এলাকার কিছু ছেলেমেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলে। যা তার পিতা মাতার জন্য অনেকটা আনন্দদায়ক বিষয়।


জন্ম থেকেই ভাগ্য যার বীপরিতে সেই সুপাতরা অনেকটা নিজ আত্ত্ববিশ্বাসেই নিজের জায়গা করে নিয়েছে সমাজে। যা সত্যিকার অর্থেই ১১ বছর বয়সি এক মেয়ের জন্য এক বিরাট কিছু। অন্যদের থেকে দেখতে আলাদা হলেও তার জীবন যাপন আর দশটা ছেলে মেয়ের মতই।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info