বৃক্ষ মানব


নাম তার "ডিয়েডে কসোয়ারা" (Dede Koswara), নয় মাস আগেও যার ক্ষেতাব ছিল বৃক্ষ মানব। হঠাত একদিন তার শরীরে আচিল ধরনের কিছু উঠতে শুরু করে এর পর একে একে তার হাত, পা আর মুখ ভরে যায় এই আচিল দিয়ে। আর তা দেখতে একদম বাদামি ছাই রঙের গাছের বাকলের মত। আর এই কারনেই তার নাম হয়ে ওঠে বৃক্ষ মানব।

এর ফলে বেশ না ডাক হলেও তার জীবনে নেমে আসে দূর্বিসহ কষ্টো। সে তার হাত দিয়ে কোন কাজই করতে পারে না। কারন তার হাত যেন হারিয়ে যায় কথিত এই বাকলের মাঝে আর সে ঠিক মত বেশী সময় দাড়াতেও পারত না। তার বৌ তাকে ছেড়ে চলে যায়, চাকরি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয় আর তার সব বন্ধুরা তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করে। যেন ভীন গ্রহের এক প্রানীতে পরিনত হয় সে।


চাকরি, বৌ আর বন্ধু বান্ধব চলে গেলেও তার মা বাবা তাকে দেখে রাখত। আর এ সময়ে Dicovery চ্যানেলে তাকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে আমেরিকার ডঃ অ্যান্টনি গ্যাছপারি (Dr. Anthony Gaspari) যিনি একজন চর্ম বিশেষজ্ঞ তিনি এই বিষয়ে জানতে পারেন এবং ছুটে আসেন ইন্দোনেশিয়ায় আর তিনি দেখা করেন ডিয়েডে কসোয়ারার সাথে আর থাকে চিকিতসা করার প্রস্তাব দেন। যদিও এটি থেকে সম্পূর্ন সেরে ওঠা অনেকটাই অসম্ভব কিন্তু তা ডিয়েডে কসোয়ারার জন্য অনেক কিছু।

ডঃ অ্যান্টনি গ্যাছপারি এবং ডিয়েডে কসোয়ারা
এখন প্রশ্ন একটাই আর তা হল এরকম হল কেন। প্রথম কারন হিসেবে ধরা হয়েছে জেনেটিক কারন। জেনেটিক সমস্যার কারন ডিয়েডে কসোয়ারার দেহে শ্বেত রক্ত কনিকার পরিমান কম ছিল আর এই শ্বেত রক্তো কনিকা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ করার দ্বায়িত্য পালন করে থাকে। আর দ্বিতীয়ত এবং সব থেকে প্রধান কারন হল HPV (human papillomavirus)। এই HPV ভাইরাস অনেক ধরনের হয়ে থাকে আর ডিয়েডে কসোয়ারার এই অসুখের জন্য দায়ি HPV-2। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ভাইরাস কিভাবে আক্রমন করে বসল ডিয়েডে কসোয়ারাকে। তিনি নিজেই স্বীকার করেন যে ছোট বেলায় একবার তা হাটু কেটে গেলে কিছু হবে না ভেবে তিনি তা রেখে দেন, আর ক'দিন পরে দেখেন যে সেখানে পানি জমেছে। ধারনা করা হয় সে সময় থেকেই সংক্রামিত হয় ডিয়েডে কসোয়ারা। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তা বেশ বড় আকার ধারন করেছে।

ডঃ অ্যান্টনি গ্যাছপারি এর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তার চিকিৎসা। নয় মাস ধরে তার অপারেশন করে ধীরে ধীরে এই আচিল গুলি সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন ৩৭ বছর বয়স্ক ডিয়েডে কসোয়ারা তার আঙ্গুল গুলিকে বেশ কাজে লাগাতে পারেন এমন কি এখন তিনি লিখতেও পারেন।


তার মুখ থেকে সব আচিল সরিয়ে নিলেও এখন পর্যন্ত তার শরীর থেকে সব গুলি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় নি, তবে ডাক্তার-রা তাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এসময় তার ঔষধ এক মাত্র "ভিটামিন এ", কেননা এই HPV-2 এর কোন ঔষধ নেই। তাই এক্ষেত্রে ভিটামিন এ একমাত্র সহায় যা আমাদের দেহ কোন বিভাজন নিয়ন্ত্রনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। ডাক্তারদের আশা খুব তারাতারি তারা ডিয়েডে কসোয়ারাকে সুস্থ করে তুলবেন তবে একটা ভয় থেকেই যায় আর তা হল এই আচিল গুলি আবার ফিরে আসতে পারে। এর কোন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না যে তা চিরকালে আর ফিরে আসবে না।

এই বৃক্ষ মানবকে নিয়ে ছোট একটি ভিডিও প্রতিবেদন,



লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info