অদ্ভুত কিছু স্থাপনা (৩য় খন্ড) ।। Some Strange Structures (3rd Part)

পূর্বের পর্বঃ 'অদ্ভুদ কিছু স্থাপনা (২য় খন্ড)'


Abandoned World War II Monements and memorials in Yogoslavia:
১৯৬০ থেকে ৭০ এর দশকে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট Josip Broz Tito ২য় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিজড়িত অনেকগুলো স্থান ও স্তাপত্য নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন এই সকল স্থান ও স্তাপত্য সমুহকে ডাকা হয় Spomeniks। ১৯৯২ সালে এসে যুগোস্লাভিয়া টুকরো টুকরো হয়ে গেলে এ সকল স্থাপনার আবেদন যেন ফুরিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট Josip Broz Tito-র নির্দেশক্রমেএই সকল স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন বিখ্যাত স্থাপত্যশিল্পীরা। যাদের মধ্যে রয়েছেন Dušan Džamonja, Vojin Bakić, Miodrag Živković, Jordan and Iskra Grabul, Bogdan Bogdanović এবং Gradimir Medaković প্রমুখ। এই সকল স্থাপত্য সেই সময়ের সমাজতন্ত্রী দেশ হিসেবে যুগোস্লাভিয়ার আত্মনির্ভরশীলতা ও শৌর্যের প্রতিক। ১৯৮০-র দশকে এসকল স্থাপনা পরিণত হয়েছিলো যুগোস্লাভিয়ার অন্যতম আকর্ষণে। প্রেসিডেন্ট Tito-র মৃত্যুর পর খুব কমই এরকম স্থাপনা তৈরি হয়। প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে এরকম হাজারো স্তাপত্য। একসময় এসকল স্থাপনাগুলো মুখরিত ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রী, বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সৈন্য এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধে স্বজন হারানো ব্যাক্তি দ্বারা। কিন্তু বর্তমানে এসব স্থানে খুব কম লোকই বেড়াতে যায়। যুগোস্লাভিয়া ভাঙ্গনের পরপরই এ সকল স্থান তাদের গুরুত্ব হারায়।


এটি কোন টাওয়ার নয়, পিরামিড নয়, সামান্য ঘনক কিংবা সামান্য গোলকীয়।১০২ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন ১২ টি বাহু ও ৯টি গোলকের সমন্বয়ে গঠিত এই অনন্য স্থাপত্য নিদর্শনের নাম Atomium। এর প্রত্যেকটি গোলকের ব্যাস ১৮ মিটার। এটি ১৯৫৮ সালে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে World Fair Expo 58 উপলক্ষে তৈরী করা হয়।এটি ব্রাসেলসের King Baudouin Stadiumএর পাশে Heysel Park.এ অবস্থিত। বিজ্ঞান ও আধুনিকতার অনন্য এই নিদর্শনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর নকশায়। একটি লোহার ক্রিস্টালকে ১৬৫ বিলিয়ন গুণ বড়ো করলে তা এই নকশার মতো দেখায়। প্রকৌশলী André Waterkeyn এবং Polakএর নকশায় গড়ে উঠেছে এই Atomium। বর্তমানে এটি tourist hotel হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


Saint on a Dead Horse , Prague, Czech Republic:
প্রায় ১০০ বছর আগে কম্যুনিস্ট শাসনামলে চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের Wenceslas Square প্রাঙ্গণে Saint Wenceslas-এর ঘোড়ায় চড়া মূর্তিটি ছিল সেই দেশের জাতীয় গর্ব। কিন্তু বর্তমানে সেই Saint Wenceslas চেকদের নিকট হাস্যকর এক চরিত্র। এতটাই হাস্যকর যে তাকে Wenceslas Squar-এর উলটোদিকে Lucerna Palace-এ দরজার মুখেই এক উল্টো করে ঝুলানো মৃত ঘোড়ার উপর বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অদ্ভুত এই ভাস্কর্যটির নাম Saint on a Dead Horse। তামানির্মিত এই স্থাপনাটি বানিয়েছেন David Cerný।


Harbin International Ice and Snow Sculpture Festiva:
জায়গাটির নামই তুষার শহর। চীনের উত্তরপূর্ব Heilongjiang প্রদেশের Harbin শহর বিখ্যাতই তার তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ঠাণ্ডার জন্য। গ্রীষ্মের সময় এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং শীতকালে তাপমাত্রা নামতে নামতে ঠেকে মাইনাস ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে! ১৯৬৩ সালে শুরু হয়েছিল এই উৎসব । মাঝে কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে উঠছে আশ্চর্য সব স্থাপত্য । সাময়িক হলেও বরফের অবাক করা নির্মাণ দেখতে সব কিছু উপেক্ষা করে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। এই স্থাপত্য গড়ে তোলার জন্য Harbin-এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জমাট –বাঁধা Songhua নদী থেকেই তুলে নেওয়া হয় বরফ। এই স্থাপত্যশৈলী নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয় লেজার রশ্মি এবং গতানুগতিক ধারার যন্ত্রপাতি। প্রতিবছর শুরুতেই(৫ই জানুয়ারী) এক মাসের জন্য Harbin International Ice and Snow Sculpture Festival বা Hā'ěrbīn Guójì Bīngxuě Jié -এর চোখ ধাঁধানো মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে বিস্মিত দর্শকের সামনে। Harbin-এর এই উৎসব পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম । পৃথিবীব্যপী এই রকম অন্যান্য উৎসব গুলো হল জাপানের Sapporo Snow Festival, কানাডার Quebec City Winter Carnival এবং নরওয়ের Ski Festival।


Carhenge, Alliance, Nebraska, USA:
Alliance, যুক্তরাষ্ট্রের Nebraska অঙ্গরাজ্যের Box Butte County-র একটি শহর। যাকে county seat of Box Butte নামে ডাকা হয়। Alliance শহরের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এই Carhenge যাকে গড়ে তলা হয়েছে ইংল্যান্ডের Stonehenge-এর আদলে। তফাত শুধু Stonehenge-এ দাঁড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক কিছু পাথরের স্থাপনা আর Carhenge-এ দাঁড়িয়ে আছে কিছু কারের স্থাপনা। ১৯৮৭ সালে এই শহরের বাসিন্দা Jim Reinders তাঁর পিতার স্মরণে এই Carhenge তৈরী করেন যিনি ইংল্যান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় Stonehenge নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ৩৮ টি অটোমোবাইল কারকে প্রায় ২৯ মিটার বা ৯৫ ফুট ব্যাস বিশিষ্ট বৃত্তাকার পথে বসিয়ে এই Carhenge নির্মাণ করা হয়েছে। যাদেরকে খাড়া করে ১.৫ মিটার পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে দেয়া হয়েছে। যাদেরকে ধূসর রঙে রঞ্জিত করা হয়েছে। মূলত ১৯৮৭ সালে summer solstice-এর সময় Carhenge উদ্বোধন করা হয়েছিলো। summer solstice হল এমন একটি সময় যখন সূর্য কর্কটক্রান্তির রেখার উপর বিষুবরেখা থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থানে করে। ধীরে ধীরে Carheng-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ২০০৫ সালে একে নিয়ে তৈরি হয় ডকুমেন্টারি ফিল্ম Carhenge: Genius or Junk?২০০৭ সালে স্থান পায় বিখ্যাত ট্র্যাভেল গাইড 1,000 Places to See in the USA and Canada Before You Die-তে। ১৯৯৪ সালে এখানে চিত্রায়িত হয় Dan Mirvish অভিনীত বিখ্যাত চলচ্চিত্র Omaha-র শেষদৃশ্য। Carhenge-এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট। সেদিন এই অঞ্চল থেকে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।


Victoria’s Way Park, Wicklow, Ireland:
প্রায় ৯ হেক্টর এলাকা জুড়ে কয়েকটি ছোট হ্রদ নিয়ে জঙ্গুলে এলাকাটির নাম Victoria's Way Park. এটি আয়ারল্যান্ডের Wicklow কাউন্টির Roundwood শহরের নিকটেই অবস্থিত। ব্যাক্তি মালিকানাধীন ধ্যানচর্চার এই পার্কটি বিখ্যাত অনেকগুলো পাথরের তৈরি মূর্তির জন্য। যাদের বেশিরভাগই তৈরী করা হয়েছে কালো গ্রানাইট পাথর দ্বারা এবং উচ্চতা ১.৫ মিটার থেকে ৪.৯ মিটার। প্রতি গ্রীষ্মের সময় এটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এই মূর্তিগুলোর মধ্যে ৮টি রয়েছে হিন্দু দেবতা গনেশের। যেগুলির প্রকাশ করা হয়েছে গণেশের নৃত্য, অধ্যয়ন ও সঙ্গীত চর্চা। এইসব গণেশের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিলো ভারতের তামিলনাডুতে। প্রতিটি তৈরি করতে ৫ জন মৃৎ-শিল্পীর প্রায় বছর খানেক সময় লেগেছে। অন্যান্য মূর্তি গুলো একটি বড় অজগর সাপের কুণ্ডলী পাকানো বসার স্থান, আকাশের দিকে তাক করা একটি আঙ্গুল, বৌদ্ধ, শিব, ইভ এবং মৈথুনরত বিভিন্ন বিভঙ্গের মূর্তি। এই পার্কের প্রথম স্থাপনাটি হল তার ঢোকার মুখ, টানেল আকৃতির এই গেইটটি দেখতে খাঁজকাটা জরায়ু সদৃশ!! এই পার্কটির মালিক ১৯৪০ সালে জন্ম নেওয়া জার্মান বংশোদ্ভুত আইরিশ নাগরিক Victor Langheld। যিনি তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় এশিয়ায় বিভিন্ন ধর্মের সংস্পর্শে কাটিয়েছিলেন । তখন বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে তিনি এই গ্রানাইট পাথরের মূর্তি গুলো গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ড, জাপান এবং শ্রীলংকায় বিভিন্ন মতবাদের উপর তাঁর জীবন পরিচালিত করছেন। এখনও গড়ে চলেছেন বিভিন্ন মূর্তি । নিজেই হাসি মুখে বরণ করে নেন অতিথিদের।

লেখকঃ মামুনুর রশিদ এবং রাজিব হুমায়ুন তন্ময়।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info