১৪টি আফ্রিকান হাতির সমান ওজনের এই তৃণভোজী টাইটানোসরগোত্রীয় ডাইনোসরটা এতদিন বেশ আরামেই ঘুমিয়েছিল মাটির ভেতরে। কিন্তু আর্জেন্টিনার পাতাগোনিয়ার ২৫০ কিঃমিঃ পশ্চিমে ত্রিউলের লা ফ্লেঞ্চার কাছাকাছি এক মরুভূমিতে হাঁটবার সময় ঠিক ওর গায়েই পা বাধিঁয়ে মাটিতে পড়ে গেল ওখানকার খামারের এক কৃষক। আর তারপরই শুরু হল হৈচৈ।
চলে এল জীবাশ্ম বিজ্ঞানীরা। যেসব বিজ্ঞানীরা সব সময় অনেক অনেক আগে বসবাস করা প্রাণীদের খুঁজে বেড়ায়, তাদের নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে, তাদেরই বলে "জীবাশ্ম বিজ্ঞানী"। এর আগে ওরা খুঁজে পেয়েছিল আর্জেন্টিনোসরাস নামের আরেকটা ডাইনোসর। ওটাকেই তারা ভেবেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী। কিন্তু এবার আর্জেন্টিনোসরাসের চাইতে ৭ গুণ বেশি ভারী ৪০ মিটার দীর্ঘ এবং ২০ মিটার লম্বা ডাইনোসরের খোঁজ পেতেই তাদের সে ভুল ভাঙল।
মাটি খুঁড়ে ডাইনোসরটিকে বেরোতে সাহায্য করল ইগিদিও ফেরিগ্লিয়ো জাদুঘরের দুজন জীবাশ্ম বিজ্ঞানী ডঃ হোসে লুইস কার্বালিদো এবং ডঃ দিয়েগো পল। আর সেটা ক্যামেরায় ধারণ করল বিবিসি ন্যাচারাল হিস্ট্রির একটি দল। সব মিলে ডাইনোসরের মোটমাট ১৫০টি হাড় তারা খুঁজে পেল সেখানে।
ডাইনোসরটির পায়ের হাড় বা ফিমারের ওজনের উপর ভিত্তি করে এর ওজনের গণনা করা শুরু হল। আর তাতেই প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনোসরাসকে হারিয়ে ৭৭ টন ওজন নিয়ে প্রথম হল এটি। যদিও আর্জেন্টিনোসরাসের মতোই খুঁজে পাওয়া কিছু হাড়ের ভিত্তিতেই এই অনুমান করেছেন গবেষকরা।
মাথা থেকে পা অব্দি এর দৈর্ঘ্য ৪০ মিটার। মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে এর উচ্চতা হবে ২০ মিটার। যা কিনা একটা সাত তলাবিশিষ্ট বাড়ির সমান।
আর্জেন্টিনোসরাসের কাছাকাছি গোত্রের এই ডাইনোসরটির যদিও এখন অব্দি কোনো নাম নেই, গবেষকরা বলেন, “খামারের গৌরব ও সম্মানের কথা মাথায় রেখেই এর নাম নির্ধারণ করা হবে। কারণ এটা সম্পর্কে তারাই প্রথম আমাদের জানিয়েছে।”
যদিও হাড়ের উপর নির্ভর করে কোনো প্রাণীর ওজন অনুমান করার অনেক গুলো পদ্ধতি আছে এবং সেগুলোর ফলাফল আলাদা হতেই পারে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলাও উচিৎ নয় এই অনুসন্ধান সম্পর্কে। তারপরও এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে আর্জেন্টিনোসরাসের পর খুঁজে পাওয়া এই কঙ্কালটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডাইনোসরেরই।
লেখকঃ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।