"মা" এর ভালবাসা

"মা" শব্দটি কত ছোট কিন্তু কত মধুর একটি ডাক। এই "মা" শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে নিবির ও নিঃস্বার্থ ভালবাসার এক উপক্ষান। পৃথিবীতে যত প্রানী আছে সব প্রানী কূলেই এই মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। প্রানী জগতের "মা" এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছিলা পৃথিবীর প্রানী কূলের বিভিন্ন প্রজাতি প্রানীর মায়ের ভালবাসার কথা। কিন্তু আজ আপনাদের শুনাবো এক বিচিত্র মাতৃ ভালবাসার গল্পো। সেখানে মায়ের ভালবাসার কাছে হার মেনেছে লক্ষ্য বছরের পশুত্ব। আসলে "মা" সে যেই হোক না কেন তার স্থান কেউ কোন দিন নিতে পারবে না। আসুন এবার তাহলে মূল গল্পে চলে যাই।


আচ্ছা আপনাদের কি "টারজান" বা "মগলির" কথা মনে আছে? ঐ যে যারা মানুষ হয়ে জন্মগ্রহন করেও ঘটনা চক্রে একজন বড় হয়েছে শক্তিশালী গরিলার কাছে, আরেক জন বড় হয়েছে হিংস্র নেকড়ের কাছে। আজকের ঘটনাটাও কিছুটা সেরকম।

ঘটনার স্থান থাইল্যান্ডের ব্যাংকক শহরের কাছে অবস্থিত "Sriracha Tiger Zoo" তে। চিড়িয়াখানার নাম শুনেই বুঝে গেছেন এখানে অন্যান্য প্রানীর তুলনায় বাঘের সংখ্যাটাই বেশি। আর আমাদের ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছে যে, সে আর কেউ নয় জগত বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আচ্ছা আপনারা কি জানেন জগত জুড়ে আমাদের এই বাঘের এত নাম ডাক কেন? কারন, আকার আকৃতিতে এরা অন্যান্য বাঘের তুলনায় ছোট হলেও হিংস্রতার দিক থেকে কিন্তু সর্ব সেরা। রয়্যাল বেঙ্গল বলে কথা, রাজকিয় ভাব না থাকলে কি আর চলে।


ঘটনার শুরুটা হয় এই চিড়িয়াখানার এক বাঘিনীকে নিয়ে। যে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার গর্ভে ছিল অনাগত সন্তান। কিন্তু সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব করায় প্রতিটি বাচ্চার ওজন অনেক কম হয় এবং একই সাথে মা বাঘিনীর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। বাচ্চায় ওজন কম হবার কারনে তাদের আর বাঁচানো সম্ভব হয় নাই। জন্মের পরপরই বাচ্চা গুলি মারা যায়।


বাচ্চা মারা যাবার শোকেই হোক আর অন্য কোন কারনেই হোক মা বাঘিনীটির স্বাস্থ্য ভাল থাকা স্বত্ত্বেও কোন ভাবেই তার কোন উন্নতি হচ্ছিল না। চিড়িয়াখানার চিকিৎসকেরা কোন ভাবেই বাঘিনীর সমস্যা ধরতে পারছিল না। এক সময় তারা হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু শেষ একবার বাঘিনীর জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার জন্য তারা সকলে মিলে ছোট খাট একটা উদ্দ্যোগ নেয়।


প্রথমে তারা চেয়েছিল মৃত বাচ্চার জায়গায় অন্য কোন বাঘের বাচ্ছা রাখবে, যাতে মা নিজের বাচ্চা মনে করে। কিন্তু সমস্যা একটাই আর তা হল এটা যেনতেন বাঘিনী না এটা হচ্ছে সুন্দরবনের রাণি "দ্যা রয়্যাল বেংগল টাইগার"। এমনিতেই হিংস্রতার কারনে জগত সেরা, তারপর যদি রেগে ছোট বাচ্চা শাবক গুলিকেই মেরে ফেলে তখন কি হবে? এই ভেবে তারা একটু নিরাপদ পথে হাটলেন। তারা ৭টা শুকরের ছানা দিয়ে দিলেন মৃত বাঘের বাচ্চাদের জায়গায়। কেননা শুকর ছানা খেয়ে ফেললেও তেমন কিছু যাবে আসবে না।


এবার সব থেকে অবাক করার বিষয় হল, এই শুকর ছানা গুলি বাঘিনীর কাছে যাবার পর থেকেই বাঘিনীর স্বাস্থ্যের দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে, খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে বাগিনী। আর শুকর ছানা গুলিকে নিজের বাচ্চার মত লালন পালন করতে থাকে। আর বাচ্চা গুলিও যে বাঘকে নিজের মায়ের জায়গায় গ্রহন করেছে তা ছবি দেখেই বলা যায়।


প্রকৃতির খাদ্য চক্রে বাঘ শিকার করে, আর এই শিকারের উপরে বেঁচে থাকে। লক্ষ্য কোটি বছর ধরে এই নিয়ম চলে এসেছে। আর শিকারি হিসেবে এই শুকর ছানা খুবই প্রিয় যে কোন শিকারির। কিন্তু মায়ের ভালবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে প্রকৃতির এই নিয়ম। "মা" যে আসলেই "মা" আর এর তুলনা যে কোন কিছুর সাথেই হয় না তার জলজ্যান্ত প্রমান এই ঘটনা।


লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info