আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলে "জেনি" (Djenné) শহরে মসজিদটির অবস্থান। নাম "গ্র্যান্ড মস্ক অব ডিজেনি" (Great Mosque of Djenné)। এটি পৃথিবীতে মাটির তৈরী সবচেয়ে বড় মসজিদ।
মসজিদটি প্রথম কবে নির্মাণ করা হয়েছিল সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ১২০০ শতাব্দী থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যবর্তী মসজিদটি নির্মাণের পক্ষে অধিকাংশ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। জানা যায় যে, সুলতান "কুনবুরু" (Kunburu) ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর তার প্রাসাদটি ভেঙ্গে ফেলে সেখানে এই মসজিদটি তৈরী করেন। মসজিদের পূর্ব দিকে নিজের বসবাসের জন্য অন্য একটি প্রাসাদ তৈরী করেন। তার পরবর্তী উত্তরাধীকারী এই মসজিদের দুটি টাওয়ার নির্মাণ করেন এবং তার উত্তরাধীকারী মসজিদটির চারপাশের দেয়াল নির্মাণ করেন।
১৯১০ সালে মসজিদের আঁকা ছবি |
১৮২৮ সালে ফরাসী পর্যটক রেনে কর্তৃক এই এলাকা সফরের আগ পর্যন্ত এই মসজিদটি সম্পর্কে লিখিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। রেনে তার সফর শেষে লিখেন, ডিজেনি শহরে মাটির তৈরী একটি মসজিদ আছে। এর দু'পাশে দুটি দর্শনীয় কম উচ্চতার টাওয়ার আছে। এরপর থেকে মাটির তৈরী এই মসজিদ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
বানি নদীর তীরে অবস্থিতইে মসজিদটি ২৪৫*২৪৫ ফুট আয়তনবিশিষ্ট ৩ ফুট উঁচু ফ্ল্যাটফরমের উপর তৈরী। বর্ষাকালে বানি নদীর প্লাবিত পানি থেকে মসজিদটিকে সুরক্ষা করে এই ফ্ল্যাটফরম। মসজিদের দেয়াল গুলো তাল গাছের কাঠ, যা স্থানীয় ভাবে "টরল" নামে পরিচিত, সেগুলো দ্বারা নকশা করা। শুধু নকশা নয়, তাল গাছের কাঠ মসজিদের দেয়ালে এমন ভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে যাতে মাটির দেয়াল সহজে ধ্বসে না যায়।
মধ্যযুগে আফ্রিকার এই অঞ্চলে গুরুত্ব পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের প্রধান কেন্দ্র ছিল এই মসজিদটি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তখন কুরআন শিক্ষার জন্য এই মসজিদে আসত।
প্রতি বছর স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কার কাজ চলে। ২০০৬ সালের ২০ জানুয়ারী মসজিদের ছাদের একটি অংশ এবং ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর এর দক্ষিণ দিকের টাওয়ার এর একটি অংশ ধ্বসে পড়লে "দি আগা খান ট্রাষ্ট কালচার" নিজস্ব খরচে এটির সংস্কার করে।
১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো এই মসজিদটি সহ এর চারপাশের ঐতিহাসিক স্থান সমূহকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকা ভূক্ত করে।
আসুন এবার গুগল ম্যাপে দেখে নেই এই মসজিদের অবস্থান,