একটা তালিকা করা যাক, তার মোটমাট কয়টা বই বের হয়েছিল। তিনি তো লিখেছিলেন মোটে ২৩ বছর। তারপর তো অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এই ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তার প্রকাশিত কবিতার বই ২২টি, নানা বিদেশি কবির কবিতার অনুবাদের বই ৩টি আর ছোটদের কবিতার বই ২টি। উপন্যাস ৩টি, গল্পের বই ৩টি। নাটক ৩টি, ছোটদের নাটক ২টি। প্রবন্ধের বই ৫টি আর গানের বই ১৪টি।
নজরুল সুস্থ থাকতে থাকতেই প্রায় ৫০টির মতো বই প্রকাশিত হয়। তার মৃত্যুর আগেই প্রকাশিত হয় আরো ৩০টির মতো বই। আর তার মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত রচনা নিয়ে আরো ১১টি বই প্রকাশিত হয়।
নজরুল সুস্থ থাকতে থাকতেই প্রায় ৫০টির মতো বই প্রকাশিত হয়। তার মৃত্যুর আগেই প্রকাশিত হয় আরো ৩০টির মতো বই। আর তার মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত রচনা নিয়ে আরো ১১টি বই প্রকাশিত হয়।
এসব গল্প তো আপনারা আগেই পড়েছেন বা শুনেছেন। আজকে অন্য এক গল্প শোনা যাক, ব্যক্তিগতভাবে কবি নজরুল কেমন ছিলেন? কী করতে তার ভালো লাগতো? কিংবা তিনি দেখতেই বা কেমন ছিলেন?
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার কবি নজরুলের বর্ণনা লিখলেন। লিখলেন, (নজরুলের) ‘সবল শরীর, মাথায় ঝাঁকড়া চুল। চোখ দুটো যেন পেয়ালা, আর সে পেয়ালা দুটো যেন কখনো খালি নেই, প্রাণের অরুণ রসে সদা ভরপুর। তার গলা সারসের মতো পাতলা নয় বরং পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত, তেমনি সরল বীর্য ব্যঞ্জক। গলার স্বর ছিল ভারী, তার সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু ঢেউয়ের আঘাতের মতো তার গান আছড়ে পড়তো ঝড়ের ঝাপটা হয়ে শ্রোতার বুকে। প্রবল হতে সে ভয় পেতো না, নিজেকে মিঠে দেখানোর জন্য সে চেষ্টা করতো না।
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার কবি নজরুলের বর্ণনা লিখলেন। লিখলেন, (নজরুলের) ‘সবল শরীর, মাথায় ঝাঁকড়া চুল। চোখ দুটো যেন পেয়ালা, আর সে পেয়ালা দুটো যেন কখনো খালি নেই, প্রাণের অরুণ রসে সদা ভরপুর। তার গলা সারসের মতো পাতলা নয় বরং পুরুষের গলা যেমন হওয়া উচিত, তেমনি সরল বীর্য ব্যঞ্জক। গলার স্বর ছিল ভারী, তার সেই মোটা গলার সুরে ছিল জাদু ঢেউয়ের আঘাতের মতো তার গান আছড়ে পড়তো ঝড়ের ঝাপটা হয়ে শ্রোতার বুকে। প্রবল হতে সে ভয় পেতো না, নিজেকে মিঠে দেখানোর জন্য সে চেষ্টা করতো না।
আবার বুদ্ধদেব বসুকে চেনেন? রবীন্দ্রনাথের পরের কবিদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন একদিকে নজরুল, অন্যদিকে ছিলেন পঞ্চপাণ্ডব নামে বিখ্যাত পাঁচজন কবি। এই পঞ্চপাণ্ডবেরই একজন বুদ্ধদেব বসু। নজরুল সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘নজরুল ছিলেন একাই একশো। চওড়া মজবুত জোরালো তার শরীর, লাল ছিটে লাগা বড় বড় মদির তার চোখ, মনোহর মুখশ্রী, লম্বা ঝাঁকড়া চুল তার প্রাণের ফূর্তির মতোই অবাধ্য, গায়ে হলদে কিংবা কমলা রঙের পাঞ্জাবী এবং তার উপর কমলা কিংবা হলদে রঙের চাদর, দু’টোই খদ্দরের। কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি রঙীন জামা পরেন কেন? ‘সভায় অনেক লোকের মধ্যে যাতে চট করে চোখে পড়ে তাই’, বলে ভাঙা ভাঙা গলায় হো হো করে হেসে উঠেছেন তিনি। কথার চেয়ে বেশি তার হাসি, হাসির চেয়ে বেশি তার গান। একটি হারমোনিয়াম এবং যথেষ্ট পরিমাণ চা এবং অনেকগুলো পান দিয়ে বসিয়ে দিতে পারলে সব ভুলে পাঁচ-ছয়-সাত ঘণ্টা একনাগাড়ে গান করতে থাকতেন। নজরুল যে ঘরে আড্ডা জমাতেন, সে ঘরে আর কেউ ঘড়ির দিকে তাকাতো না।’
আবুল মনসুর আহমদের নাম শুনেছেন? তার সবচেয়ে বিখ্যাত বইদু’টোর নাম, ‘আয়না’ ও ‘ফুড কনফারেন্স’। তিনি একইসঙ্গে ছিলেন রাজনীতিবিদ এবং লেখক। নিজে রাজনীতি করতেন। তার রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছেন স্যাটায়ারধর্মী ওই বইদু’টো। এই আবুল মনসুর আহমদ প্রথমবার কবি নজরুলকে দেখেছিলেন ১৯২২ সালে। সেই সাক্ষাতের বর্ণনা পরে তিনি লিখেছিলেন তার এক লেখায়, ‘সভায় গিয়ে অন্যান্য সবার সাথে নজরুল ইসলামের সাথেও পরিচয় হলো। মিলিটারি ইউনিফর্ম পরা কাঠখোট্টা লোক, কবি বলে পছন্দ হলো না। কিন্তু চোখ দুটো তার ভাসা ভাসা হরিণের মতো, দেখে আকৃষ্ট হলাম। আমার এক কথায় সভার সমবেত সবার হাসির আওয়াজ ছাপিয়ে যে ছাদ ফাটানো গলা শুনতে পেলাম, সেটি নজরুলের আওয়াজ। সভা শেষে তিনি আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলেন যে, আমি তার গায়ের অসাধারণ শক্তিতে বিস্মিত হলাম।’
আবার প্রথম নজরুল দর্শনের কথা লিখতে গিয়ে আবুল কালাম শামসুদ্দীন লিখেছেন, ‘অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হল, নজরুল এলেন। সৈনিক বেশ, কাঠখোট্টা চেহারা, দাঁড়ি গোঁফ নেই, খনখনে অট্টহাসিতে ঘর মুখরিত করে আমাদের কাছে এগিয়ে এলেন।’
আবার প্রথম নজরুল দর্শনের কথা লিখতে গিয়ে আবুল কালাম শামসুদ্দীন লিখেছেন, ‘অবশেষে প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হল, নজরুল এলেন। সৈনিক বেশ, কাঠখোট্টা চেহারা, দাঁড়ি গোঁফ নেই, খনখনে অট্টহাসিতে ঘর মুখরিত করে আমাদের কাছে এগিয়ে এলেন।’
একটা জিনিস খেয়াল করেছেন, প্রায় সবাই-ই তার দুটি জিনিসের প্রশংসা করেছেন, তার গানের আর তার হাসির। তিনি গান খুব ভালোবাসতেন। প্রচুর গান গাইতেন। জীবনে তিনি যে কতো গান রচনা করেছেন, তার তো কোনো লেখাজোকাই নেই। হয়তো কেউ কোনো বিশেষ ধরনের বা কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে গান লিখতে বললো, তারও পছন্দ হলো, অমনি বিশ মিনিটের মধ্যে তিনি গান লিখে হাজির হয়ে গেলেন, এমনি ছিল তার গান রচনার প্রতিভা।
আর তার হাসির কথা তো শুনলেই। তিনি খুব হাসতেন, প্রাণ খুলে হাসতেন। তার ধুমকেতু পত্রিকা অফিসে নাকি মাটির ভাঁড়ে চা দেয়া হতো। কেন জানেন? অফিসে সবাই মিলে যখন আনন্দ করতো, তখন প্রায়ই কবি ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ বলে চা সমেত মাটির ভাঁড় ছুঁড়ে মারতেন, আর মাটির ভাঁড় ভেঙে চা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেত।
এমনি মজার মানুষ ছিলেন কবি নজরুল। আচ্ছা, তার আরো কয়েকটি মজার ঘটনার কথা বলি। একবার নজরুল গেছেন সিরাজগঞ্জে, আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর বাসায়। খাওয়া দাওয়ার পর সবাইকে দই দেয়া হলো। কিন্তু সে দই আবার টকে গিয়েছিল। হয়তো দই একটু আগেভাগেই নিয়ে চলে এসেছিল, নষ্ট হয়ে টক হয়ে গেছে। আর তা খেয়ে নজরুল কী বললেন জানেন? আসাদউদ্দৌলার দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে অদ্ভূত ভঙ্গি করে বললেন, ‘তুমি কি এই দই তেতুঁল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?’ আর তা শুনে সবাই তো হেসেই খুন!
আবার কবির এক বন্ধু ছিল, শৈলেন নাম। কবি তার কাছ থেকে কেবল চা খেতেন। আর প্রতিদিন শৈলেনের কাছ থেকে চা খাওয়ার জন্য নিত্য নতুন ফন্দি আঁটতেন। একদিন আর কোনো ফন্দি ফিকির না পেয়ে কী করলেন; শৈলেনের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও। শৈলেন তো অবাক! এ আবার কেমন কথা! অনেক টাকা পাওয়ার সাথে দু পেয়ালা, মানে দুই কাপ চায়ের কী সম্পর্ক? সে চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলো, দু’ পেয়ালা কেন?
কবি বললেন, আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে টাকা হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনও দু পেয়ালা বাকি আছে। এমন কথার পর কোনো বন্ধু চা না খাইয়ে থাকতে পারে, বলেন?
এমনি মজার মানুষ ছিলেন আমাদের কবি নজরুল। নিজে যেমন প্রচুর হাসতেন, মানুষকেও খুব হাসাতেন। আর তার চেয়েও বেশি গান গাইতেন। তাকে কোনোভাবে একবার গানের রাজ্যে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই হলো, আর কিচ্ছু করার দরকার নেই। ঝাঁকড়া চুলের শক্ত সমর্থ লোকটি এভাবেই হাসিতে গানে ভরিয়ে রাখতো তার চারপাশ।
লেখকঃ নাবীল অনুসূর্য।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
আর তার হাসির কথা তো শুনলেই। তিনি খুব হাসতেন, প্রাণ খুলে হাসতেন। তার ধুমকেতু পত্রিকা অফিসে নাকি মাটির ভাঁড়ে চা দেয়া হতো। কেন জানেন? অফিসে সবাই মিলে যখন আনন্দ করতো, তখন প্রায়ই কবি ‘দে গরুর গা ধুইয়ে’ বলে চা সমেত মাটির ভাঁড় ছুঁড়ে মারতেন, আর মাটির ভাঁড় ভেঙে চা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেত।
এমনি মজার মানুষ ছিলেন কবি নজরুল। আচ্ছা, তার আরো কয়েকটি মজার ঘটনার কথা বলি। একবার নজরুল গেছেন সিরাজগঞ্জে, আসাদউদ্দৌলা সিরাজীর বাসায়। খাওয়া দাওয়ার পর সবাইকে দই দেয়া হলো। কিন্তু সে দই আবার টকে গিয়েছিল। হয়তো দই একটু আগেভাগেই নিয়ে চলে এসেছিল, নষ্ট হয়ে টক হয়ে গেছে। আর তা খেয়ে নজরুল কী বললেন জানেন? আসাদউদ্দৌলার দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে অদ্ভূত ভঙ্গি করে বললেন, ‘তুমি কি এই দই তেতুঁল গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এলে নাকি?’ আর তা শুনে সবাই তো হেসেই খুন!
আবার কবির এক বন্ধু ছিল, শৈলেন নাম। কবি তার কাছ থেকে কেবল চা খেতেন। আর প্রতিদিন শৈলেনের কাছ থেকে চা খাওয়ার জন্য নিত্য নতুন ফন্দি আঁটতেন। একদিন আর কোনো ফন্দি ফিকির না পেয়ে কী করলেন; শৈলেনের কাছে গিয়ে বললেন, তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসেব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও। শৈলেন তো অবাক! এ আবার কেমন কথা! অনেক টাকা পাওয়ার সাথে দু পেয়ালা, মানে দুই কাপ চায়ের কী সম্পর্ক? সে চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলো, দু’ পেয়ালা কেন?
কবি বললেন, আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে টাকা হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনও দু পেয়ালা বাকি আছে। এমন কথার পর কোনো বন্ধু চা না খাইয়ে থাকতে পারে, বলেন?
এমনি মজার মানুষ ছিলেন আমাদের কবি নজরুল। নিজে যেমন প্রচুর হাসতেন, মানুষকেও খুব হাসাতেন। আর তার চেয়েও বেশি গান গাইতেন। তাকে কোনোভাবে একবার গানের রাজ্যে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই হলো, আর কিচ্ছু করার দরকার নেই। ঝাঁকড়া চুলের শক্ত সমর্থ লোকটি এভাবেই হাসিতে গানে ভরিয়ে রাখতো তার চারপাশ।
লেখকঃ নাবীল অনুসূর্য।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন