প্রকৃতির আজব খেয়াল

প্রকৃতি সুন্দর। প্রকৃতি মমতাময়ী। এই প্রকৃতিতেই আমরা খেয়ে পরে বেঁচে আছি। তবে প্রকৃতির কাছে আমরা সবসময়ই অসহায়। অর্থাৎ প্রকৃতি যা করে তাই মেনে নিতে হয় মুখ বুঁজে। প্রকৃতিরই আছে অসীম শক্তি, যা কখনো সৃষ্টিশীল আবার কখনো ধ্বংসাত্বক। একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প উঁচু উঁচু দালান কোঠা এমন কি একটা আস্ত পর্বত পর্যন্ত এক নিমিষেই ধূলায় মিলিয়ে দিতে পারে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কথাই ধরেন, সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লক্ষ গ্যালন (১,৮৯২,৭০২ লিটার) পানি প্রায় আঠারো তলা দালানের সমান উচ্চতা থেকে পড়ছে। এই পরিমাণ পানি দিয়ে অলিম্পিকের প্রায় ৫০ টা সুইমিং পুল মাত্র ১ মিনিটেই ভরে দেওয়া যাবে। আজ আপনাদের সঙ্গে প্রকৃতির কিছু আজব খেয়াল নিয়েই খানিক গল্প করবো। চলেন তবে শুরু করা যাক।


শিলা বৃষ্টিঃ
আমরা যে শিলাবৃষ্টি দেখি তা দেখে ভালোই লাগে। মাঝে কুড়িয়েও খাই, সে বাবা মা যতোই বকুক না কেনো। কিন্তু এই শিলাবৃষ্টিও অনেক বড়ো প্রাকৃতিক শক্তি। প্রায় ১০০ বছর আগে হিমালয়ে অনেক মানুষ রহস্যজনকভাবে মারা পড়েছিলো। মাত্র কিছুদিন আগে জানা গেছে, সেই দলটি শিলাবৃষ্টি আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই সময় নাকি ফুটবলের সমান শিলা আকাশ থেকে পড়েছিলো। আমরা সবাই জানি ঝড়ের প্রবল বাতাসে বৃষ্টির কণা যখন অত্যন্ত ঠান্ডা এলাকায় পৌঁছায়, তখন তা জমে গিয়ে শিলায় পরিণত হয়।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info


অরোরাঃ
প্রকৃতি যে শুধু ধ্বংসই করে এমনটা ভাবলে মোটেও সঠিক বিচারটি করা হবে না। তার সৌন্দর্য্যে সবসময়ই মানুষ মুগ্ধ হয়। এমনি এক নৈসর্গিক বিরল দৃশ্য মেরু অঞ্চলের মানুষই শুধু উপভোগ করতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থেকে অনেক উপরে অরোরা নামে কতোগুলো রঙীন বৃত্তাকার রিং দেখা যায়। এই রিংগুলোর ব্যাস প্রায় ১২০০ মাইল। মেরু অঞ্চলে যারা বাস করেন তারা বিভিন্ন রঙের দৈত্যাকৃতির এই রিং এর অপূর্ব শোভাটি দেখতে পান। এই রিং উৎপত্তির কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সূর্যের আলোর কণাই এই রিং তৈরির জন্য দায়ি। তবে তা হয় কিছু নির্দিষ্ট সময়েই । এই কণাগুলো পৃথিবীর বাতাসের বিভিন্ন গ্যাসের কাছে আসলে, তবেই বিভিন্ন রঙের আলো এবং এই রিং তৈরি হয়।


ব্যাঙ বৃষ্টিঃ
আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি পড়বে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ব্যাঙ পড়ে? কি ভয়ানক কথা! আকাশ থেকে ব্যাঙ পড়বে কেনো? কেউ বিমানে করে ব্যাঙ নিয়ে যেতে গিয়ে আকাশ থেকে ফেলেছে? অবশ্য এমনটিই ভেবেছিলেন সাইবেরিয়ার এক অধিবাসী যখন সে দেশের এক শহরে ব্যাঙের বৃষ্টি হয়েছিলো। এই আজব ঘটনার কারণ হলো ঐ ঘুরে ফিরে টর্নেডো। টর্নেডোর সময় বিভিন্ন জলাশয়ের পানি বাতাসের সঙ্গে পাক খেতে খেতে উপরে উঠে যায় এবং দূরের কোনো এলাকায় গিয়ে পড়ে। পানির সঙ্গে তো ব্যাঙ থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। এজন্য ব্যাঙ বৃষ্টি হতে দেখলে চমকে যাবেন না যেনো।


আগুন ঝড়ঃ
নতুন এক ঝড়ের কথা শোনেন এবার। এই ঝড় হচ্ছে, আগুনের ঝড়। এই ঝড়ো আগুন এতোটাই শক্তিশালী যে এটি যেকোনো মুহূর্তে ব্যাপক ধ্বংস চালাতে পারে। আগুন যখন জ্বলতে থাকে তখন বাতাসের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। এতে ঐ জায়গা প্রায় বায়ুশূন্য হয়ে পড়ে। চারপাশ থেকে বিশুদ্ধ বাতাস এই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে দৌড় মেরে আসতে থাকে, ফলে ঝড়ো হাওয়া তৈরি হয়। আগুন ঝড়ের অগ্নিশিখা ৫০ ফুট প্রশস্ত এবং প্রায় ৪০ তলা দালানের সমান উঁচু হতে পারে। সত্যিই ভয়াবহ তাই না?


রহস্যজনক ঢেউঃ
মনে করেন, আপনি সমুদ্রের ধারে বসে আছেন আর হঠাৎ করে বিশাল একটি উঁচু ঢেউ আপনার দিকে ধেয়ে আসছে। কি ভয়ংকর, তাই না? এই ঢেউ কিন্তু কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। খেয়ালি সমুদ্রের হঠাৎ এক পাগলামি। সুনামি যখন আসে তখন সাগরের ভিতরে খুব ছোটো আকারে থাকে। তবে তীর পর্যন্ত আসতে আসতে তার আকার হয়ে দাঁড়ায় ধ্বংসাত্মক। সুনামির তবু পূর্বাভাস পাওয়া যায়, কিন্তু এই ঢেউ কোনোরকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই চলে আসে। যে কোনো বড়ো জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে এই ঢেউ। এমন কি পরিষ্কার আবহাওয়াতেও হানা দিতে পারে এটি। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এর উৎপত্তির কারণ নিশ্চিত করে বলতে পারেন নাই।


আগুনের গোলাঃ
বাজ পড়ার কথা তো জানেন সবাই। কিন্তু বাজ মাটিতে না পড়ে মাঝে মাঝে নেচেও বেড়ায়। হঠাৎ করে যদি দেখেন একটি আগুনের গোলা মাটির কয়েক ফুট উপরে ভাসছে! তারপরে মাটিতে পড়ে পুরো আঙিনা জুড়ে নেচে বেড়ালো কিছুক্ষণ এবং হঠাৎ তীব্র বেগে উপরে উঠে বাতাসে মিলিয়ে গেলো! নিশ্চয় ভাবছেন ভুতের কাজ, তাই না? না, এও এক প্রকৃতির খেয়াল। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে, বজ্রপাত যখন হয় তখন সিলিকন নামের এক খনিজ নির্গত হয়। এই খনিজ থেকে এক ধরনের বুদবুদ বের হয়, যা আশেপাশের বাতাসের অক্সিজনকে পোড়ায়। এর ফলেই চোখের সামনে অমন ভুতুড়ে কান্ড ঘটতে দেখা যায়।

লেখকঃ তাপসী
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।