ইন্টারনেটে প্রকৃতির আশ্চর্য নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি যা পেলাম তাতে আমার সন্দেহ হতে শুরু করেছে আসলেই কি কক্সবাজার কোন আশ্চর্য? তবে এগুলো কি? এগুলো কি মহান সৃষ্টিকর্তার কোন মজার খেলা? আপনারাই ভেবে বার করুন।
০১) রক্ত জোয়ারঃ
০১) রক্ত জোয়ারঃ
না, কোন নতুন বাংলা সামাজিক অ্যাকশন ছবির নাম নয় এটা। এটা একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা কিনা বিশ্বের অনেকগুলো সমুদ্রেই প্রায়ই ঘটে থাকে। সমুদ্রের পানির উপরিতলের কাছাকাছি প্রচুর পরিমাণে ঘন সন্নিবিষ্ট ফাইটোপ্লাংকটন জড়ো হয়ে জন্ম দেয় এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যের যার নাম রেড টাইড বা আমার ভাষায় রক্ত জোয়ার।
০২) সুপারসেলঃ
০২) সুপারসেলঃ
ছবিটা দেখে নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে এর কাছে সিডর সুনামি শিশু ছাড়া আর কিছু নয়। সত্যি কথা বলতে কি সুপারসেল কিন্তু দেখতে যতটা ভয়ংকর বাস্তবে তত নয়। প্রচন্ড বজ্রবৃষ্টি বা মেসোসাইক্লোনের সময় যদি তীব্র ঘূর্ণায়মান বাতাস এয়ার পকেটে পড়ে হঠাৎ সোজা বজ্র মেঘের দিকে উঠতে থাকে তখন সুপারসেলের সৃষ্টি হয়। সুপারসেল এর কারণে তীব্র বৃষ্টি, শিরাপাত এমনকি টর্নেডোর সৃষ্টিও হতে পারে। বেশি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সমতল ভূমি গুলোতে।
০৩) পাথর যেখানে হাঁটেঃ
০৩) পাথর যেখানে হাঁটেঃ
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালীর মরুভূমির এই চলন্ত পাথরের রহস্যের ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা আজো পরিষ্কার ভাবে দিতে ব্যর্থ। এখানে হঠাৎ হঠাৎ-ই একশ টনের ওপরের ওজনের পাথরকেও একশ গজ পর্য়ন্ত এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা এর কারণ হল তীব্র বাতাস এবং মরুর কাদাময় বালির প্রবাহ। কিন্তু তাঁরা ব্যাখ্যা করতে পারেন নি যে কিভাবে পাশাপাশি থাকা দুটি প্রায় একই ওজনের পাথর ভিন্ন গতি এবং ভিন্ন দিকে সরে যেতে পারে। তাছাড়া হিসেবে বলে যে ঐ ওজনের একেকটি পাথর নড়াতে একশ মাইল গতির বায়ূপ্রবাহ দরকার যা ঐ মরুভূমিতে অনুপস্থিত। কাজেই এই ঘটনাটি এখনো প্রকৃতির এক অমিমাংসিত রহস্য হয়ে আছে।
০৪) অরোরা বোরিয়ালিসঃ
০৪) অরোরা বোরিয়ালিসঃ
অরোরা বোরিয়ালিসের নামের সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। পৃথিবীর দুই মেরুতেই কেবল দেখা যায় এই অপূর্ব দৃশ্য। সূর্য থেকে প্রায় ১২০০ কি.মি./সেকেন্ড বেগে ছুটে আসা প্লাজমা মেঘ পৃথিবীর কাছাকাছি আসলে দুই মেরুর শক্তিশালী চৌম্বকীয় আকর্ষণে আটকা পড়ে বায়ূমন্ডলের আয়নোস্ফিয়ার পর্যন্ত নেমে আসে এবং আয়নোস্ফিয়ারের গ্যাসের সাথে সংঘর্ষে তৈরী করে এই অপরূপ বর্ণিল খেলা যার নাম অরোরা বোরিয়ালিস।
০৫) ফায়ার টর্নেডোঃ
০৫) ফায়ার টর্নেডোঃ
আরেক ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্য। এই দুর্লভ প্রাকৃতিক দৃশ্যটি মাঝে মাঝে দাবানলের সময় দেখা যায়। বাতাসের তাপমাত্র এবং ঘূর্ণনের নিদিষ্ট গতির জন্য আগুন মাঝে মাঝে এরকম ঘূর্ণায়মান টর্নেডোর আকার ধারণ করে যা ২০০ ফূট পর্যন্ত উচ্চতার হতে পারে। তবে এই ফায়ার টর্নেডো খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
০৬) ম্যামাটাস মেঘঃ
০৬) ম্যামাটাস মেঘঃ
মেঘের স্তরে বরফ জমা হয়ে মেঘের ঠিক নিচের সারফেসের কাছে এরকম ঝোলার সৃষ্টি হয় যাকে ম্যামাটাস মেঘ বলে। এই মেঘমালা একশ মাইল ব্যাসার্ধের জায়গা জুড়েও হতে পারে। ম্যামাটাস মেঘ ক্ষতিকর কিছু না হলেও এটা চরম প্রাকৃতিক দূর্যোগের এক অশনি সংকেত।
০৭) গ্র্যাভিটি মেঘঃ
০৭) গ্র্যাভিটি মেঘঃ
বজ্রবৃষ্টির সময় তীব্র গতির বায়ুপ্রবাহ এয়ার পকেটে পড়ে হঠাৎ উপরে উঠলে বা নিচে নেমে গেলে একটা শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়। প্রকৃতি সেখানকার ফ্লুইড ডাইনামিক্সকে ব্যালেন্স করবার জন্য বাতাসকে অসিলেট করে ঠিক জায়গায় পৌছানোর চেষ্টা করে এবং সেই বাতাসের ওয়েভ শেপ ফুটে ওঠে মেঘের গায়ে। প্রকৃতির নিজের হাতে আঁকা এক ওয়েভ শেপ।
০৮) সকোটরা দ্বীপঃ
০৮) সকোটরা দ্বীপঃ
ভারতীয় মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপটি চিরতরে "স্বাভাবিক" শব্দটির অর্থটিই পাল্টে দিয়েছে। এই দ্বীপ সহ আরো তিনটি দ্বীপ আফ্রিকার মেইনল্যান্ড থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ছিল, ঠিক ডারউইনের গালাপাগোস দ্বীপের মতোই। সোমালিয়া আর ইয়েমেনের কাছাকাছি অবস্থিত এই দ্বীপটি এই বিচ্ছিন্নতার কারণে প্রায় ৭০০ অতি দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ করতে পেরেছে। যার মাঝে ১০টি এন্ডেমিক প্রজাতিও রয়েছে।
০৯)ক্লিলুকের স্পটেড লেকঃ
০৯)ক্লিলুকের স্পটেড লেকঃ
ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় অবস্থিত ক্লিলুকের স্পটেড লেকের পানি গ্রীষ্মের প্রচন্ড লোকে শুকিয়ে যায় এবং পানিতে অবস্থিত খনিজ পদার্থগুলোকে ক্রিস্টালাইজ করে ফেলে। ঐ লেকের পানিতে বিভিন্ন খনিজের পরিমাণ ঘনত্বের হারে বিশ্বের সর্বোচ্চ, এরমাঝে আছে - ইপসম লবণ, ক্যালসিয়াম আর সোডিয়াম সালফেট, আটটা আরো খনিজ লবণ যার মাঝে রূপা এবং টাইটানিয়ামও রয়েছে। কাজেই ক্রিস্টালাইজ হওয়ার পর খনিজগুলো নিজস্ব ধাতবের রং ধারণ করে। কেউ সবুজ, কেউ নীলাভ আবার কেউ বেগুণী - আর সৃষ্টি হয় এক অন্য ভুবনের দৃশ্য।
১০) রিশাত বলয়:
১০) রিশাত বলয়:
সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ পশ্চিমে মৌরিতানিয়ায় অবস্থিত রিশাত বলয় বিজ্ঞানীদের জন্য একটা বিস্ময়। বলয়গুলোর ব্যাস প্রায় ৩০ মাইলের মতো যা কিনা মহাশূণ্য থেকেও দৃশ্যমান। অনেকে মনে করেন বলয় গুলো উল্কাপাতের ফলে সৃষ্টি, তবে এতো বড় উল্কাপাতের কথা কেউ প্রমাণ করতে পারেন নি এবং ভূতত্ত্ববিদদদের ধারণা ভূমিধ্বস এবং টেকটোনিক প্লেটের ক্রমশ ঘূর্ণনই রিশাত বলয় সৃষ্টির কারণ। তবে এটি বৃত্তাকার হলো কেন সেটা আজো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যই থেকে গেছে।
১১) শুকনো উপত্যকাঃ
১১) শুকনো উপত্যকাঃ
অ্যান্টার্কটিকার ড্রাই ভ্যালী বা শূকনো উপত্যকাকে বলা হয় পৃথিবীতে মঙ্গল গ্রহের সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ স্থান। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো আস্টার্কটিকায় অবস্থিত হওয়ার পরও এই অংশটা একেবারে শূষ্ক এমনকি এখানে বরফও পড়ে না। আর যাইহোক জায়গাটাকে কোনমতেই এ বিশ্বের বলা যায় না। অনেকসময় উপত্যকার ছোট লেকটির পানি জমে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি পুরু বরফের আস্তরণ সৃষ্টি করে এবং সেই জমাট বরফের নিচে ঘুরে বেড়ায় অদ্ভুত ধরনের কিছু জীব। এ জায়গা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
১২) রিও টিন্টোঃ
১২) রিও টিন্টোঃ
স্পেনের রিও টিন্টো খনিকে এক নজর দেখলে যে কেউ এক চাঁদ বলে ভুল করবে। রিও টিন্টো খনির বলয়টার ব্যাস দিনে দিনে বাড়ছে এবং একটা বিশাল এলাকা দখল করে নিচ্ছে। এখান থেকে যে লাভার মতো নদী বের হতে দেখা যাচ্ছে সেটার পানির পিএইচ প্রায় ১.৭, খুবই আম্লিক এবং ভারী ধাতুতে পূর্ণ।
১৩) রক্ত পুকুরঃ
১৩) রক্ত পুকুরঃ
জাপানের বেপুতে অবস্থিত রক্তপুকুরকে এলাকাবাসীরা জিগোকু (নরককুন্ড) বলে। কাছাকাছি হট স্প্রিংস বা উষ্ণ প্রস্রবণের পানি আয়রনের অতি আধিক্যের কারণে জন্ম দিয়েছে এই অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য।
১৪) সালার ডি উয়ুনিঃ
১৪) সালার ডি উয়ুনিঃ
বলিভিয়ার সালার ডি উয়ুনির ল্যান্ডস্কেপকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে হতবিহবলকর দৃশ্য। এটি হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় লবণ মরুভূমি, আর সেই সঙ্গে আছে অনেক গুলো সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং ক্যকটাস দ্বীপ - সবমিলিয়ে জায়গাটাকে ভিনগ্রহের মনে হতে বাধ্য।
লেখকঃ অপরিচিত আবির।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
লেখকঃ অপরিচিত আবির।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন