পোষ মানানোর পাঁচ সরীসৃপ ।। Five Pet Reptile

পোষা প্রাণীর শখ তো আপনাদের অনেকেরই আছে। আপনাদের অনেকেই কুকুর, বিড়াল পোষেন। অনেকের বাসায় পোষা পাখিরা দিনরাত কিচির মিচির করে। অনেকের বাসার ছাদে গেলে খরগোশও দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পোষা প্রাণী হিসেবে সাপ, গেকো কিংবা অন্য কোনো সরীসৃপের কথা ভেবে দেখেছেন কখনো?

হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই কিন্তু মানুষ সরীসৃপ পোষে। আর পোষা প্রাণী হিসেবে এগুলো খারাপও নয়, যেমন সুন্দর তেমনি নিরীহ। ভাবছেন, বুঝি পাগল হয়ে গেছি; নইলে সাপ, কুমির এদের কেউ নিরীহ বলে? আরে, যে সাপ বিষাক্ত, সে সাপকে পোষ মানাতে যাবো কেন?! সেগুলোকে তো পোষ মানাবে সাপুড়েরা। আপনি পুষবেন ছোট্ট সুন্দর দেখে নির্বিষ কোনো সাপ কিংবা শান্ত কোনো গেকো অথবা এমনি কোনো সরীসৃপ। পৃথিবীতে এরকম কত্তো সরীসৃপ আছে! আচ্ছা, আজকে এমনি কতো গুলো পোষ মানানোর উপযোগী সরীসৃপের গল্পই বলা যাক।


০৫) কর্ন স্নেকঃ
কর্ন স্নেকের আরেক নাম রেড র‌্যাট স্নেক। পোষা সাপ হিসেবে এই সাপটা খুবই ভাল ভদ্র। কেন? এ সাপের বিষই নেই, আবার খায়ও না বেশি। এদিকে আকার আকৃতিতেও তেমন বড়ো হয় না। তাই, প্রথম প্রথম সাপ পুষতে চাইলে, এই সাপটি বেছে নেয়াই ভালো। আর দেখতেও ভীষণ সুন্দর হয় সাপটি, নানা রঙের তো পাওয়া যায়, গায়ে নানান প্যাটার্নও দেখা যায়।

আকার আকৃতিতে ছোট হয় তা তো বললাম, তবু বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা, আপনাকে মাপটাই বলে দিচ্ছি; কর্ন স্নেক লম্বায় হয় মোটে ১.২ থেকে ১.৮ মিটার। আর সপ্তাহে একটা ইঁদুর দিলেই ওর পুরো সপ্তাহ কেটে যায়। গড়ে প্রায় ২৩ বছর বাঁচে সাপটি। পাওয়া যায় আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।


০৪) বল পাইথনঃ
হ্যাঁ, নাম দেখে যা ভেবেছেন, ঠিক তাই। এই পাইথন আফ্রিকার বিখ্যাত আর ভয়ংকর পাইথনেরই মাসতুতো ভাই। তবে কিনা, একদমই পুঁচকে সাইজের! আর পাইথনদের এই মাসতুতো ভাইদেরও বিষ নেই। তবে বিষ না থাকলে কী হয়েছে, দেখতে শুনতে বেশ সুন্দর। কাজে কাজেই, পোষা সরীসৃপ হিসেবে বল পাইথন বেশ ভালো।

তবে বল পাইথনের নাম নিয়ে বেশ মজা আছে। ওরা কখনো ভয় পেলে, বা বিরক্ত হলে গুটিয়ে বলের মতো হয়ে যায়; তাই ওদের নাম বল পাইথন। অবশ্য, ওদের আরো একটা নাম আছে; আর সে নামের কাহিনীটাও বেশ মজার। রাণী ক্লিওপেট্রার নাম শুনেছেন না, মিশরের সেই বিখ্যাত সুন্দরী রাণী, যার রূপ দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন গ্রিক সম্রাট জুলিয়াস সিজারও। ভাবছেন, তাতে আর আশ্চর্য কী? আরে, জুলিয়াস সিজার তো আসছিলেন ক্লিওপেট্রার রাজ্য দখল করতে! আর ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়ে উল্টো সিজার মিশরেই থেকে গেলেন! বলা হয়ে থাকে, রাণী ক্লিওপেট্রার কব্জি জড়িয়ে যে সাপটা থাকতো, সেটাও একটা বল পাইথন। আর তাই এদেরকে রয়াল পাইথনও বলা হয়।

বল পাইথন আকারে কর্ন স্নেকের চেয়েও ছোট হয়; সাধারণত ৯০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার। আর একবার ইঁদুর খেতে দিলে, তাই দিয়ে ওরা দুই থেকে এক সপ্তাহ কাটিয়ে দেয়।


০৩) চিতা গেকোঃ
শুরুতেই তো দুটো পোষা সাপের গল্প বললাম। কিন্তু সরীসৃপ মানেই কি সাপ নাকি! এবার তাহলে পোষা যায় এমন একটা গেকোর গল্প বলি। এই গেকোর নামটাই শুধু ভয়ংকর "চিতা গেকো"। গায়ে চিতাবাঘের মতো ছোপ ছোপ দাগ থাকে তো, তাই সম্ভবত এমন নামকরণ করা হয়েছে। আদতে কিন্তু এটা একেবারেই খুদে; লম্বায় হয় ২০ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার, ওজন হয় ৪৫ থেকে ৬৫ গ্রাম। আর তাই ওদের জন্য বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। এই চিতা গেকো আবার নিশাচর প্রাণী; মানে দিনে ঘুমায়, রাতে খায় দায় ঘুরে বেড়ায়। কী কী খায়? ঝিঁঝি পোকা, মাকড়সা এমনি সব পোকামাকড়।

তবে চিতা গেকো পালতে গেলে একটা ব্যাপারে খুব সাবধান! না, আগেই ভয়ে আঁতকে উঠেন না। ওর লেজটা বেশ ভঙ্গুর, সহজেই ভেঙ্গে যায়। সে ব্যাপারে বেশ করে খেয়াল রাখবেন। তবে টিকটিকি গোত্রীয় প্রাণী কিনা, লেজ খসে গেলে আবার গজায়; তবে সুন্দর বলেই তো পুষছেন, লেজ খসে গেলে যে ওটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে, সে কী আর আপনি চাইতে পারেন?


০২) নীল জিভের স্কিস্কঃ
ভাবছেন, স্কিঙ্ক আবার কী প্রাণী! স্কিঙ্ক এক ধরনের সরীসৃপ; অনেকটা টিকটিকি গোত্রীয় প্রাণী আর সাপের মাঝামাঝি। এই স্কিঙ্কদেরই একটি গোত্র এই নীল জিভের স্কিঙ্ক। বুঝতেই পারছেন, মানুষ কেন এই স্কিঙ্ক পুষতে চায়; এর জিভ যে পুরোই নীল!

এই স্কিঙ্ক পোষাও খুব সহজ, তাই পোষ্য হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। দৈর্ঘ্যে হয় ১৭ থেকে ২৪ ইঞ্চি। বাঁচে প্রায় ২০ বছর। আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া। ওখানে এদেরকে বেয়ার্ডেড ড্রাগনও বলা হয়। সবই খায়, মানে সর্বভূক। তবে ওদের প্রিয় খাবার কি জানেন? ছোট ছোট পাথর! আর ওদের সম্পর্কে সবচেয়ে মজার তথ্য কী জানেন? ওরা টিকটিকি গোত্রীয় অন্যান্য প্রাণীদের মতো ডিম পারে না; স্তন্যপায়ীদের মতো সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়!


০১) ক্যামেলিওনঃ
ক্যামেলিওন পুরোই আলাদা জাতের সরীসৃপ। ওদের এই নামকরণটাও খুব মজার। ইংরেজি ক্যামেলিওন শব্দটা এসেছে ল্যাটিন নাম ‘ক্যামেলিও’ থেকে। সেই ল্যাটিন নামটা আবার এসেছে এর গ্রিক নাম থেকে। গ্রিক নামটা ভাঙলে দু’টো শব্দ পাওয়া যায়, যাদের অর্থ দাঁড়ায়, মাটির বুকের সিংহ (Lion on the ground)। উহু, এই গ্রিক নামটাও মূল নাম না; গ্রিক নামটা এসেছে অ্যাক্কাদিয়ান ভাষা থেকে; অ্যাক্কাদিয়ান নামটি ইংরেজি করলে দাঁড়ায়, ground Lion। কি, ভাবছেন, নামের ইতিহাস না হয় জানা গেল, কিন্তু এই ক্যামেলিওনকেই তো চিনলাম না? আরে, ট্যাঙ্গেলড সিনেমাতেই তো রাপুনজেলের একটা পোষা ক্যামেলিওন ছিল! এবার মনে পড়েছে?

এখন এই ক্যামেলিওন পোষা সরীসৃপ হিসেবে কেন এতো জনপ্রিয় জানেন? বললে তো আপনিও ক্যামেলিওন পালতে চাইবেন! তাও বলি। প্রথমত, ওরা গিরগিটির মতো গায়ের রং পাল্টাতে পারে। ওরা মূলত গায়ের রং লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা আর গোলাপি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, ওরা ওদের দুটো চোখ আলাদা আলাদা করে নাড়াতে পারে। আর তৃতীয়ত, বিশেষ আকৃতির লম্বা জিহ্বা। সব মিলিয়ে, ওরা দেখতে ভীষণ সুন্দর।

তবে ওদের পোষা বেশ কষ্টকর। পশু পালনের জগতে আপনি যদি শিক্ষানবীশ হন, মানে নতুন নতুন পশুদের পোষ মানাতে শুরু করে থাকেন, তবে ক্যামেলিওন না পোষাই ভালো। ওদের যেমন ভীষণ যত্ন নিতে হয়, তেমনি ওদেরকে বেশ বড়োসড়ো জায়গাতেও রাখতে হয়। খাবার নিয়ে অবশ্য তেমন চিন্তা নেই। মাছি, ঝিঁঝিপোকা, এইসব খায় ওরা। পাওয়া যায় আফ্রিকার মাদাগাস্কার থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাতেও।

এতোক্ষণ তো পোষ মানানোর উপযোগী পাঁচটি সরীসৃপের গল্প শুনলেন। কোনোটা পছন্দ হয়ে গেছে নাকি? উহু, এতো তাড়াতাড়ি পছন্দ করাটা বোধহয় ঠিক হবে না। আরো কত্তো পোষ মানানোর উপযোগী সরীসৃপ আছে। সেগুলো হয়তো আরো বেশি সুন্দর, আপনার আরো বেশি পছন্দ হবে। তবে অবশ্যই দু’টো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন; প্রথমত, যে প্রাণীকে পোষ মানাবেন, সেটা যেন কোন ভাবে আপনারই ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। আর দ্বিতীয়ত, আপনি যে প্রাণীকে পোষ মানাচ্ছেন, সত্যি সত্যিই আপনি সে প্রাণীটার সব চাহিদা পূরণ করতে পারবেন কিনা। ধরেন, আপনি বল পাইথনই নিয়ে এলেন। কিন্তু সেটাকে তো আর ভাত খাইয়ে রাখতে পারবেন না, ওকে চাহিদামতো ইঁদুর বা তেমনি কোনো প্রাণী খেতে দিতেই হবে। নইলে ও যে না খেয়ে মারা পড়বে। আর যদি কোন ভাবে বেঁচেও যায়, দেখতে আর তেমন সুন্দর নাদুসনুদুস থাকবে না। বল পাইথনটিরও ভীষণ কষ্ট হবে, আর সেই শুকনো হাড় জিরজিরে বল পাইথন দেখতেও সুন্দর লাগবে না। সে কী আর ভালো হবে?

লেখকঃ নাবীল অনুসূর্য।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info