বিশাল, জনমানবহীন কিন্তু সুন্দর উত্তর সৌদি আরবের মরুভূমির এই অংশে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র একটি পাথর খোঁদাই করে বানানো মানবশূন্য এক রহস্যময় দূর্গ। দূর্গটির সম্মুখ ভাগ থেকে না দেখলে মনে হবে এ যেন শুধু মাত্র বিশাল আকৃতির গোলাকার আকৃতির একটি পাথর মাত্র যা তৈরি হয়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই, কিন্তু ঘুরে এই পাথর খন্ডের বিপরীত দিকেই দেখলে অবাক হয়ে যাবেন এই কেল্লার দৃশ্য দেখে।
এই দূর্গটি তৈরি করা হয় ১ম শতকের দিকে, ইসলামি যুগের সূচনার পূর্বে 'নাবাতিয়ান সম্রাজ্যের' সময় কালে। দুর্গটি তৈরি করা হয় সম্পূর্ন একটি মাত্র পাথরকে খোঁদাই করে। যা সত্যিকার অর্থেই যেমন অসাধারন সুন্দর ঠিক একই ভাবে অসম্ভব একটা কাজ।
এত বড় দূর্গ দেখে স্বাভাবিক ভাবেই ক'টি প্রশ্ন মনে এসেই যায়; এটা কেন তৈরি করা হয়? কে এই দূর্গ তৈরি করে? কোন উদ্দেশ্যে এই দূর্গ তৈরি করা হয়? আর কেন এটি এইখানেই তৈরি করা হয়? কেনই বা এই মরুভূমির মধ্যে এতটা যত্ন সহকারে আর এতটা নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হয় এই দূর্গ?
এই দূর্গের নাম 'Qasr al-Farid' অর্থাৎ 'একাকী দূর্গ', এটি অবস্থিত 'Mada'in Saleh' অঞ্চলে। এই এলাকায় এরকম প্রায় আরো ১০০টি বড় বড় পাথরের খন্ড রয়েছে।
মূলত 'Qasr al-Farid' নামের এই দূর্গ পেত্রা নামের প্রাচীন আরব শহর এর অংশ যা বর্তমানে 'জর্ডান' নামে পরিচিত। এই দূর্গটি এখানে তৈরি করার কারন হিসেবে অনেকেই মনে করেন, যেহেতু পেত্রা শহরটি নাবাতিয়ান সম্রাজ্যের আমলে রাজধানী ছিল সেহেতু এখানেই তৈরি করা হয়েছিল এত বিশাল স্থাপনা। আরেকটু বলে রাখি সে সময় এই পেত্রা শহর ছিল ব্যাবসায়িক কেন্দ্র বিন্দু।
বিশাল বড় এই স্থাপনা এবং অসম্ভব সুন্দর এর সদর দরজা সম্বলিত এই দূর্গ, ধরে নেওয়াই যায় যে সে সময় এই এলাকা জনবহুল ছিল বলে এখানেই তৈরি করা হয়েছিল সহস্র বছর আগে, কিন্তু এই দূর্গের কাজ কি ছিল? আসলে এটি কোন দূর্গই ছিল না; মূলত এটি কবরস্থান এবং এটি অসম্পূর্ন। তাহলে দুটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল, কেন তৈরি করা হয়েছে? আর এক কাজ কি? মূলত গোরস্থান বলেই একে এরকম জনমানব শূন্য এলাকায় তৈরি করা হয়েছিল তৎকালীন সময়েই। আপনার যদি 'পেত্রা প্রাচীন আরব শহর' লেখাটি পড়েন তাহলে বুঝে যাবেন যে তৎকালীন সময়ে বিশাল বড় বড় বেলে পাথরের পাহার বা পাথর কেটে বাড়ি ঘর বা প্রাসাদ তৈরির প্রচলন ছিল। আর এই বাড়ি গুলির মধ্যে মিশরের, অ্যাসিরিয়ান এবং হেলেনীয় শৈলির খোঁজ পাওয়া যায়।
এতদিন পরেও এই বিশাল বড় স্থাপনা এখনও টিকে আছে তার মূল কারন এখানে জলীয় বাস্পের স্বল্পতা। আর প্রচন্ড তাপের কারনে। বর্তমানে এটি সৌদি আরবের সর্ব প্রথম 'স্বীকৃত বিশ্ব ঐহিহ্য স্থান'।
যারা সৌদি আরবে যাবেন বা থাকেন তারা চাইলে অনেক ঐতিহ্যময় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। কেননা ২০০০ বছর আগে এই সৌদি আরব ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধর্মালম্বি এবং বিভিন্ন ধর্মিয় এবং সামাজিক প্রথার মিলন মেলা। আর একারনেই অতীত সভ্যতার অনেক নিদের্শন এখনও টিকে আছে সেখানে।
লেখকঃ জানা অজানা পথিক।
যারা সৌদি আরবে যাবেন বা থাকেন তারা চাইলে অনেক ঐতিহ্যময় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। কেননা ২০০০ বছর আগে এই সৌদি আরব ছিল ভিন্ন ভিন্ন ধর্মালম্বি এবং বিভিন্ন ধর্মিয় এবং সামাজিক প্রথার মিলন মেলা। আর একারনেই অতীত সভ্যতার অনেক নিদের্শন এখনও টিকে আছে সেখানে।
লেখকঃ জানা অজানা পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন