রহস্যে ঘেরা 'মহেনজো দারো'


আচ্ছা এরকম কি হতে পারে আজ থেকে অনেক বছর আগে সেই প্রাচীনকালে এ পৃথিবীর বুকে আজকের সময় থেকেও অনেক বেশি উন্নত সভ্যতা ছিল? কেন এরকম প্রশ্ন এলো? অজন্তা গুহা, পিরামিড কিংবা আটলান্টিসকে এখনো প্রাচীন প্রযুক্তির চরমতম উৎকর্ষতার নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। পেরুর নাজকা লাইনকে ধরা হয় প্রাচীন আকাশযানের রানওয়ে হিসেবে। কিন্তু কেউ কি বিশ্বাস করতে পারে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে ভয়াবহ এক পারমাণবিক যুদ্ধ হয়েছিল, ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল একটি পুরো সভ্যতা। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের 'মহেনজো দারো'র কথা আমরা সবাই জানি। এ নামের অর্থ ‘যে টিলা বা ঢিবি মৃতদেহে পরিপূর্ণ’। খ্রিস্টপূর্ব ১৯ শতকের দিকে শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায় কোন এক অজ্ঞাত কারণে ও ১৯২২ সালের আগ পর্যন্ত শহরটি ছিল আধুনিক মানুষের চোখের আড়ালে। কিন্তু কেন মহেনজো দারো ও এর পাশের শহর হরপ্পা হঠাৎ করেই জনমানব শূন্য হয়ে গেল? বহু সংখ্যক বিশেষজ্ঞের বিশ্বাস, কোন এক পারমাণবিক বিস্ফোরণে শহর দু'টি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যদি সেটাই হয়, তবে ধরে নিতে হবে প্রাচীন সভ্যতা ছিল উচ্চতম দক্ষতার প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info


গল্পের শুরু ভারতের রাজস্থান থেকে, যখন যোধপুর থেকে প্রায় ১০ মাইল দূরে ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তেজস্ক্রিয় ছাই পাওয়া যায়। ঐ স্থানে বহু আগে থেকেই বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মহার ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিক ভাবে বেশি। সে স্থানে মাটিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা এতোটাই বেশি ছিল যে কর্তৃপক্ষ পরে জনগণকে ঐ এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়। বিজ্ঞানীরা সে এলাকার খণন কাজ শুরু করেন যা থেকে বেরিয়ে আসে পিলে চমকানো এক তথ্য। ৮ থেকে ১২ হাজার বছর পূর্বে এই সভ্যতা পারমাণবিক বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল! ধারণা করা হয়, সে বিস্ফোরণে সে শহরের প্রায় সব ভবন ও অর্ধ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়।উত্তেজিত গবেষকরা আরো ভয়াবহ তথ্য নিজেদের চোখের সামনে উন্মোচিত হতে দেখলেন যখন তাদের তদন্তকাজ ও অভিযান প্রাচীন পরিত্যাক্ত মহেনজো দারো এবং হরপ্পা শহরের মুখোমুখি হয়।


ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া প্রাচীন এ শহরের সব জায়গায় ছড়ানো ছিটানো ছিল মানুষের কঙ্কাল। যেন এক আকস্মিক ধ্বংসযজ্ঞে তারা সবাই মারা গিয়েছে। কেউ তাদেরকে কবর দেয় নাই, চিতায় পোড়ায় নাই। হাজার বছরের পুরনো এ দেহ গুলো মাটির সাথে মিশে যায় নাই কিংবা কোন প্রাণী এসে তাদেরকে খেয়ে যায় নাই। কিন্তু কেন? এ গর্বোভস্কি তার 'Riddles of Ancient History' তে বলেন, এই এলাকায় প্রাপ্ত অন্তত একটি কঙ্কালে স্বাভাবিকে চেয়ে ৫০ গুণ বেশি মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া মহেনজো দারো'তে এরকম অনেক মাটির পাত্র কিংবা পাথর পাওয়া গিয়েছে যেগুলো পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে কিংবা গলে গিয়েছে কোন এক প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে! সেই উত্তাপের উৎস কোথায়? কোন প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী বিস্ফোরণ?


তবে মহেনজো দারোতে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটেছিল এ দাবির বিরোধিতাকারীও কম নয়। তাদের বক্তব্য এ সভ্যতাতে যদি সত্যিই পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটে থাকে তবে এখনো কিছু স্থাপনা কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে গুলো প্রায় ১৫ ফুট উঁচু ও কাদামাটিতে তৈরি? এদের তো এত শক্তিশালী বিস্ফোরণ সহ্য করতে পারার কথা নয়। শুধু তাই নয়, কঙ্কাল গুলো একই সাথে মারা যায় নাই, একটির সাথে আরেকটি মারা যাওয়ার সময়কালের পার্থক্য এক হাজার বছর ও তাদেরকে বেশ ভালভাবেই সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু এ প্রশ্নটা থেকেই যায়, কেন একটি সমৃদ্ধ শহর হঠাৎ করেই পরিত্যক্ত হয়ে যাবে? মহেনজো দারো যে জায়গাতে অবস্থিত সেখানে দিনের তাপমাত্রা ১২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে, এটাই কি কঙ্কাল গুলোর অবিকৃত থাকার কারণ? শুধু তাই নয়, সনাতন (হিন্দু) ধর্মের প্রাচীন অনেক চিত্রকর্মে বিশাল বিস্ফোরণ কিংবা অদ্ভুত সব অস্ত্রের ছবি রয়েছে, সেগুলো কি ছিল শুধুই প্রাচীন মানুষের কল্পনা? নাকি সেগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব ছিল? কারণ এটা তো ঠিক, সব উদ্ভাবনের শুরুটা হয় কল্পনা থেকেই।


এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো ভবিষ্যতই বলে দিবে।

লেখকঃ জুলকারনাইন মেহেদী।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।