অদ্ভুদ প্রানী অ্যাক্সোলটল


পানির ড্রাগন বা মেক্সিকান চলন্ত মাছ নামে পরিচিত গিরগিটিসদৃশ উভচর প্রাণী অ্যাক্সোলটল। পানির তলাতেও সাচ্ছন্দ্য এই অদ্ভুত প্রাণীটি মাথার পাশে থাকা পাখনার মতো দেখতে কিছু ফুলকার সাহায্যে শ্বাস নেয়। এদের অসাধারণ একটি ক্ষমতা হচ্ছে, দেহের কেটে যাওয়া অংশ নিজ থেকেই আবার গজাতে সক্ষম। কি ভাবছেন টিকটিকিরও তো একই রকম ক্ষমতা আছে। হ্যাঁ তা আছে কিন্তু তা শুধু লেজে আর এই  অ্যাক্সোলটলের দেহের যে কোন অংশ পুনঃরায় গজাতে সক্ষম। এমন কি স্পাইনাল কর্ড পর্যন্ত যা অন্য কোন প্রানীর ক্ষেত্রে অসম্ভব একটা বিষয়।

সাদা, কালো, সোনালি, হরেক প্রজাতির অ্যাক্সোলটল আছে। অধিকাংশ অ্যাক্সোলটলের রয়েছে গ্রিন ফ্লুরোসেন্ট প্রোটিন। যার জন্য অন্ধকারেও এদের শরীর থেকে সবুজ আভা বের হয়। এ সময় প্রাণীটিকে দেখতে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগলেও, অতিরিক্ত সময় ধরে অন্ধকারে থাকাটা অ্যাক্সোলটলের জন্য ক্ষতিকর। সর্বোচ্চ ১৮ ইঞ্চি উচ্চতার মাছটি পনের বছরেরও বেশি সময় বাঁচে। সাধারণত এর লম্বায় ১০ থেকে ১১ ইঞ্চি হলেও পোষার ক্ষেত্রে সামনের দুটো পা সহ ৩ ইঞ্চির অ্যাক্সোলটল কেনাই ভালো।


পোষাপ্রাণী হিসেবেও অ্যাক্সোলটলের তুলনা নেই। দারুণ জনপ্রিয়ও। দুটো বয়স্ক অ্যাক্সোলটলের জন্য নকল লতাপাতা, ঝোপ, বালু আর লুকানোর জায়গাসহ ২০ থেকে ২৯ গ্যালন অ্যাকুয়ারিয়ামই যথেষ্ট। বাচ্চা একটা অ্যাক্সোলটলের জন্য ১০ গ্যালনের একটি অ্যাকুয়ারিয়াম যথেষ্ট হলেও বয়স্ক অ্যাক্সোলটলের জন্য সেটা একটু অস্বস্তিকর হয়ে পড়ে। ঠান্ডা ও কালো পানিতে অভ্যস্ত এই মাছকে খুব ঠান্ডা বা গরম কোনো পানিতেই রাখা উচিত না। সেক্ষেত্রে অ্যাকুয়ারিয়ামের উষ্ণতা হতে হবে ৫০ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফানেহাইটের মাঝামাঝি। ৭২ ডিগ্রির উপরের তাপমাত্রা অ্যাক্সোলটলকে মেরেও ফেলতে পারে। অ্যাক্সোলটলের লাফ দেওয়ার খ্যাতি আছে। তাই এটি পোষার ক্ষেত্রে অ্যাকুয়ারিয়ামের উপরে একটি প্লাস্টিকের শিট লাগিয়ে দেওয়া ভালো। অ্যাক্সোলটলের অ্যাকুয়ারিয়ামের পানি সবসময়েই অর্ধেক রাখতে হবে।


একটি সুস্থ অ্যাক্সোলটলের থাকার জায়গায় থাকতে হবে অ্যাকুরিয়াম বালু। কখনও সেখানে পাথর বা নুড়ি রাখা যাবে না। নাহলে সেসব নুড়ি মাছের পেটে আটকে গিয়ে ব্যথার সৃষ্টি করবে। অ্যাকুয়ারিয়ামে লুকানোর যথেষ্ট জায়গা, যেমন, কমলা রংয়ের ছোট ফুলের পট, পিভিসি পাইপ, সবুজ গাছ, নকল গুহা ইত্যাদি থাকতে হবে।

অ্যাক্সোলটলের পক্ষে উজ্জ্বল আলো ক্ষতিকর। এ জন্য কম আলোর বাল্বের পাশাপাশি নকল ঝোপ দিতে হবে অ্যাকুয়ারিয়ামে। মাঝে মধ্যে অন্ধকারে রাখলেও কখনও ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি রাখা যাবে না।


অ্যাক্সোলটলের সঙ্গে অন্য প্রজাতির কোনো মাছ রাখা ঠিক নয়। অ্যাকুয়ারিয়ামে সবসময় একই বয়সের দুটি অ্যাক্সোলটল রাখতে হবে। নইলে বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলবে।

অ্যাক্সোলটল পরিষ্কার আর শান্ত পানি পছন্দ করে। বাবল বা ঢেউ, কোনোটাই এদের জন্য ভালো নয়। তাই ঢাকনাযুক্ত পাত্রই এদের জন্য বেশি সুবিধাজনক। পরিষ্কার পানির জন্য ওদের থাকার জায়গাও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। কেবল অ্যাকুয়ারিয়ামে পানি ভর্তি করে রেখে দিলেই এই প্রজাতির উভচর পোষা সম্ভব নয়।


এদের খাবার ব্যাপারে সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে। ব্লাডওয়ার্ম আর ছোট চিংড়ি মাছই অ্যাক্সোলটলের জন্য উপযুক্ত খাবার। বয়স্ক মাছকে ২ থেকে ৩ দিন পরপর খাবার দিলেও ছোট অ্যাক্সোলটলকে প্রতি দিনই খাওয়াতে হবে।

৬ থেকে ৯ ইঞ্চি হওয়ার আগ পর্যন্ত অ্যাক্সোলটল বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না। বাচ্চা জন্মদানে সক্ষম মাছের পায়ের পাতা ময়লা হয়ে যায়। ঠোঁট লাল রং ধারণ করে। একবারে একটি মেয়ে অ্যাক্সোলটল এক হাজার ডিম দেয়।

পোষাপ্রাণী হিসেবে অ্যাক্সোলটল খুবই বন্ধুপ্রবণ। তারা কাছের মানুষগুলোকে চিনতে ও তাদের খুব সহজেই ভালোবাসতে পারে।


লেখকঃ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info