ছড়ার রহস্য

ছোট বেলা থেকে আমরা না না ধরনের ছড়া পড়ি। খুব মজার এই ছড়া গুলি। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখিছি এই ছড়া গুলির পিছে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন ঘটনা। আজ আপনাদের জানতে এই লেখা লিখছি। এখানে আমি আলোচনা করব বিখ্যাত কিছু ছড়ার রচনা হওয়ার মূল ঘটনা নিয়ে।


হামটি ডামটি স্যাট অন এ ওয়ালঃ
হামটি ডামটি ছড়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইংরেজদের এক গৃহযুদ্ধের কাহিনী। ওই যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি কামানের নাম ছিল হামটি ডামটি। সেই হামটি ডামটি ছিল বিশাল আকারের। যুদ্ধ চলাকালে কোলচেস্টার দখলের সময় এই কামানটি কাজে লাগানো হয়। ইংরেজদের ওই গৃহযুদ্ধটা শুরু হয় ১৬৪২ সালে, পার্লামেন্টারিয়ান ও রয়ালিস্টদের, মানে যারা সংসদীয় পদ্ধতি চায় আর যারা রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে চায় তাদের মধ্যে। যুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই প্রথম চার্লস ছিলেন রাজতন্ত্রীদের পক্ষে। যুদ্ধের সময় একেক এলাকায় একেক দল প্রভাব বিস্তার করে রাখে। কোলচেস্টারে পার্লামেন্টারিয়ানেদের প্রভাব বেশি থাকলেও রাজতন্ত্রীরা এটি দখল করে ফেলে ১৬৪৮ সালে। দখল করার পরপরই দেয়ালঘেরা এক সুরক্ষিত দূর্গে পরিণত করে ফেলে একে। ওই দেয়ালের লাগোয়া ছিল সেন্ট মেরির চার্চ। রাজতন্ত্রীরা বুদ্ধি করে ওই চার্চ সংলগ্ন দেয়ালের উপর হামটি ডামটি কামানটাকে বসায়। অনেক বড়সর ছিল কামানটি। ফলে বসাতে অনেক কসরৎ করতে হয়েছে। কিন্তু একদিন পার্লামেন্টারিয়ানেদের এক গোলার আঘাতে দেয়ালটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। হামটি ডামটিও সেখান থেকে গড়িয়ে পরে যায় মাটিতে। রাজার পদাতিক আর ঘোড়সওয়ার বাহিনীর লোকজন (অল দি কিংস হর্সেস অ্যান্ড অল দি কিংস মেন) কামানটি আবার জোড়া লাগিয়ে দেয়ালের অন্যদিকে তোলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কামানটি এতো ভারি ছিল যে তাদের মিলিত চেষ্টাতেও তা সম্ভব হয় নি। রাজতন্ত্রীরা এই যুদ্ধে হেরে যায়। অস্ত্র নামিয়ে রেখে দূর্গের দরোজা খুলে বেরিয়ে আসে তারা, আত্মসমর্পণ করে পার্লামেন্টারিয়ানেদের কাছে। কোলচেস্টার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা শহর। এটি হাতছাড়া হওয়ায় রয়ালিস্টদের পতন তরান্বিত হয়। যুদ্ধ শেষ হয় ১৬৪৯ সালে।


মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্বঃ
দেড় শতকেরও বেশী সময় আগে ১৮৩০ সালের ২৪ মে‘মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব’ নার্সারি রাইম বা ছড়াটি প্রকাশ করেন সারাহ জোসেফা হাল। তিনি একটি সত্য ঘটনার জের ধরে এই ছড়াটি রচনা করতে উৎসাহী হন বলে ধারণা করা হয়। সে সময় মেরি সয়্যার নামে এক বালিকার একটি পোষা মেষ বা ভেড়া ছিলো। সে তার ভাইয়ের কথাতে একদিন সেটাকে স্কুলে নিয়ে যায়। মেষ দেখে স্কুলে ছোট খাট হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। অবস্থা দেখে স্কুল অফিসে মেরিকে ডেকে পাঠানো হয়। সে সময় একটা নিয়ম ছিল যে কলেজের ছাত্ররা ধর্মযাজকের সঙ্গে থেকে পড়ালেখা করত। মেরি যেদিন ভেড়াটিকে স্কুলে নিয়ে যায় সেদিনই জন রোলস্টোন নামে ওরকম এক কলেজ ছাত্র স্কুল পরিদর্শনে এসেছিল। স্কুলে মেরির ভেড়া আনার বিষয়টি তাকে মুগ্ধ করে। পরদিন ঘোড়ার পিঠে চড়ে স্কুলে এসে মেরির হাতে এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দেয় যেখানে এই রাইমের প্রথম তিন লাইন লেখা ছিল। অনেকে মনে করেন, পুরো কবিতাটিই কাল্পনিক। এটি যীশুকে কল্পনা করে লেখা হয়েছে। এখানে মেরির ভেড়া হচ্ছে যীশু। এর সাদা পশম দ্বারা যিশুর পবিত্রতাকে বোঝানো হয়েছে। কবিতাটির উৎস সম্পর্কে দুধরনের মত প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেন সারাহই প্রথম এ কবিতাটি রচনা করেন। আবার অনেকের ধারণা, রোলস্টোন কবিতাটির প্রথম চার লাইন ও শেষ বার লাইন রচনা করেন। টমাস আলভা এডিসন তার আবিস্কৃত ফনোগ্রাফে যে কথাগুলো প্রথম রেকর্ড করেন সেটা হলো এই ছড়ার কয়েকটি লাইন। পুরো ঘটনাটি যে স্কুলে ঘটেছে সে স্কুলটির নাম রেডষ্টোন স্কুল। এটি ১৭৯৮ সালে নির্মিত হয়। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ষ্টার্লিং এ স্কুলটি প্রথম স্থাপিত হয়। তবে তা স্থানান্তর করে সানবারিতে নেওয়া হয়।


দেয়ার ওয়াজ এন ওল্ড ওম্যানঃ
শিশুদের জন্য মজার এ রাইম বা ছড়াটির উৎস ইংল্যান্ডে। সেখানে জুতার ভিতরে বসবাসকারী একজন মহিলার কথা ছড়াটিতে বলা হয়েছে। জুতার আকৃতির একটা বাড়িতে বসবাস এবং সেখানে তার অনেক সন্তানদের নিয়ে এক মহিলার জীবনকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই রাইমটির উৎস সম্পর্কে দুধরনের কথা প্রচলিত আছে। সেগুলো অনেকটা এরকম। প্রথমটি রাজা ২য় জর্জ এর স্ত্রী রানী ক্যারোলিনকে নিয়ে, যার আট সন্তান ছিলো। তার অনেক সন্তান ছিল বলেই এ ছড়াটি তাকে নিয়ে লেখা বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া দ্বিতীয় মত হচ্ছে, রাজা দ্বিতীয় জর্জ নাকি পুরুষদের মধ্যে প্রথম সাদা রঙের আলগা চুল ব্যবহার করতে শুরু করেন। সাদা নকল চুল ব্যবহারের কারণে তাকে আড়ালে অনেকে বৃদ্ধ মহিলা বা ওল্ড ওম্যান বলে সম্বোধন করতেন। ছড়ায় যে বাচ্চাকাচ্চাদের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো তাঁর রাজসভার সভ্য। আর বিছানা হলো রাজসভা। ছড়ার মধ্যে হুইপ শব্দটা লক্ষ্য করার মতো। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সংসদে এই নামে একটি পদ আছে। হুইপের কাজ হলো সাংসদদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা।


থ্রি ব্লাইন্ড মাইসঃ
তিনটা ইদুঁরের কাহিনী শুনে মনে হচ্ছে মজার কোন ব্যাপার বুঝি। ভাবছেন তিনটা ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি দেখে এ ধরনের একটা রাইম মনে পড়েছে লেখকের। আসলে কিন্তু মোটেও তা নয়। এর পিছনে অন্যরকম একটা ঘটনা আছে। ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরীর মেয়ের নাম ছিল মেরি। তিনি পরে ইংল্যান্ডের রাণী হন। মেরি ছিলেন একজন ধর্মান্ধ ক্যাথলিক। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, খ্রিষ্টান ধর্মের অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্ট উল্লেখযোগ্য। এই দুই সম্প্রদায় পরষ্পরকে খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। রাণী প্রথম মেরি ক্যাথলিক হওয়ায় তিনিও প্রটেস্ট্যান্টদের মোটেও ভালো চোখে দেখতেন না। চরম অত্যাচার করতেন তিনি এই সম্প্রদায়ের উপর। এ কারণে তার বিরোধীরা তাকে আড়ালে ডাকতেন ‘ব্লাডি মেরি’ বলে। রাইমটিতে রানী প্রথম মেরীকে কৃষকের স্ত্রী বলা হয়েছে। আর তিনটি অন্ধ ইঁদুর বলতে বোঝানো হয়েছে সে সময়ের তিন যাজককে। এই তিন বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট যাজক। বিদ্বান এই তিন ব্যক্তি রাণীর অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই রাণী তাদের কঠোর শাস্তি দেন। ছড়ায় যেমনটি অন্ধ ইঁদুরের কথা বলা হয়েছে তাতে মনে হতে পারে তাদেরও হয়তো অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে ঠিক অন্ধ করে দেওয়া হয়নি। বরং তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। পুরো ছড়াটি রাণীর দৃষ্টি থেকে দেখা হয়েছে। আর তাতে সেই তিন বিদ্বান ব্যক্তিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
Three blind mice. Three blind mice.
See how they run. See how they run.
They all ran after the farmer's wife
She cut off their tails with a carving knife.
Did you ever see such a sight in your life
As three blind mice.

তবে মুল ছড়াটি টমাস রাভেনসক্রোফট লিখেছিলেন ১৬০৯ সালে। পরে সে ছড়া পরবর্তন করা হয়। প্রথম ছড়াটিও আপনাদের জন্য নিচে দেওয়া হলঃ
Three Blinde Mice,
three Blinde Mice,
Dame Iulian,
Dame Iulian,
The Miller and his merry olde Wife,
shee scrapte her tripe licke thou the knife.


পুসিক্যাট পুসিক্যাটঃ
নার্সারীর ছড়াগুলো সাধারণত খুব মজার মজার হয়। ছড়াটি ১৬ শতকের একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত। এই ছড়াটি রচিত হয় ইংল্যান্ডের রাণী প্রথম এলিজাবেথের কাহিনী নিয়ে। এলিজাবেথ ১৫৫৩-১৬০৩ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাণী ছিলেন। রাণী প্রথম এলিজাবেথের একজন কর্মচারীর একটি বিড়াল ছিল। এটি সবসময় উইন্ডসর ক্যাসেলের সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। উইন্ডসর ক্যাসেল হচ্ছে ইংল্যান্ডের একটি রাজপ্রসাদ। ধারণা করা হয়, এটি বসবাসযোগ্য রাজপ্রাসাদের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজপ্রাসাদ। একবার এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে বিড়ালটি রাজসিংহাসনের নিচ দিয়ে লুকিয়ে যাবার সময় তার লেজ রাণীর পা স্পর্শ করে যায়। এতে রাণী ভয় পেয়ে চমকে উঠে। তবে মজার কথা হল রাণী ভয় পেলেও কিন' রাগ করেননি। রাণী খুব রসিক ছিলেন। তিনি তার অধীনস্ত রাজ কর্মচারীদের মজা করে বললেন, বিড়ালটি হয়তোবা সিংহাসনকে ইঁদুরের হাত রক্ষা করার জন্য পাহারা দিচ্ছে। ওদিকে বিড়ালের মালকিন ভয়ে তটস হয়ে পড়েছিলেন এই ঘটনায়। কিনা রসিক রাণী তাকে অভয় দিয়ে আদেশ জারি করেন যে, এই বিড়াল রাজসভায় ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াতে পারবে। তবে শর্ত একটাই রাজসভাকে ইদুরমুক্ত রাখতে হবে।

ছড়াটির মাধ্যমে কিন্তু আপনাদের একটি শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনারা কি সেটা বুঝতে পেরেছেন? শিক্ষাটা হল, আপনাদের যাদের পোষা প্রাণী রয়েছে তারা কিন্তু কখনও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। তারা তো মানুষের মত সবকিছু বোঝে না। তাই তাদের সঙ্গে সবসময় ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।

নিচে আপনাদের জন্য ছড়াটি দেয়া হলঃ
"Pussycat, pussycat, where have you been?"
"I've been up to London to visit the Queen."
"Pussycat, pussycat, what did you dare?"
"I frightened a little mouse under her chair"
"MEOWW!"


লন্ডন ব্রিজ ইজ ফলিং ডাউনঃ
এই নার্সারি রাইমটি বিখ্যাত লন্ডন ব্রিজকে নিয়ে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ইংল্যান্ডে রোমান শাসন আমলে এটি লেখা হয়। এখন লন্ডন ব্রিজ পাথর নির্মিত হলেও, প্রথম দিকে এটি ছিল কাদামাটি ও কাঠ নির্মিত। লন্ডন ব্রিজের উপর দিয়ে অনেক দুর্যোগ গেছে। বিভিন্ন কারণে এই ব্রিজটি ধ্বংসের উপক্রমও হয়েছে একাধিকবার। দশ শতকে ভাইকিং জলদস্যুরা একবার এই ব্রিজ ধ্বংস করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডেও এই ব্রিজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এভাবে একের পর এক দুর্যোগের কারনে ব্রিজটি পাথর দিয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাথর দিয়ে প্রথম ব্রিজের পরিকল্পনা করেন পিটার ডি কোলচার্চ। তার ডিজাইনে দীর্ঘ ৩৩ বছরের পরিশ্রমে ১১৭৬ সালে নির্মিত হয়ে লন্ডন ব্রিজ। এই সময়ই এটি ৬০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল। এতে একটি টাওয়ার ও দরজা ছিল। ১৩ শতকে এই ব্রিজের উপর ১৪০টি বিভিন্ন রকমের দোকান ছিল। এখানে সোনা-রূপা বিক্রির কথা ছড়াটিতে উল্লেখ আছে। ১৬৬৬ সালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল লন্ডন ব্রিজ। কিন্তু এর খিলান ও ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ১৮২০ সালে লন্ডন ব্রিজটি নতুন করে নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৮৩১ সালে এটি সবার জন্য খুলে দেয়া হয়। এই সময় পুরাতন ব্রিজটি সরিয়ে ফেলা হয়। এই ব্রিজটি টুকরো টুকরো পাথরে ভাগ করে আমেরিকার অ্যারিজোনায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লেক হাবাসুতে এই ব্রিজটি স্থাপন করা হয়। এই রাইমটি ছাড়াও লন্ডন ব্রিজকে নিয়ে আরেকটি রাইম আছে। সেটা হচ্ছে, ‘লন্ড ব্রিজ ইজ ব্রোকেন ডাউন’। এই ছড়াটি রাণী অ্যান বোলেনের খুব প্রিয় ছিল।


টুইংকল টুইংকল লিটল স্টারঃ
সারা বিশ্ব জুড়েই ‘টুইংকল টুইংকল লিটল স্টার’ একটি জনপ্রিয় ছড়া। সবে কথা বলতে শুরু করেছে এমন বাচ্চাদের মুখেও শোনা যায় এই ছড়াটি। ছোটদের কল্পনার জগতকে আরও রঙিন করে দিতে ছড়াটির জুড়ি নেই। আপনাদের সবার ছড়াটি আদ্যোপ্রান্ত মুখস্থ থাকলেও অনেকেই হয়ত জানেন না ছড়াটি কে লিখেছে। ইংরেজি ছড়াটির জন্মভুমি হচ্ছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের অ্যান টেইলর এবং তার বোন জেন টেইলর দুজন মিলে এই ছড়াটি লেখেন। ১৮০৬ সালে ছড়াটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তবে ইংরেজি ছড়াটি প্রকাশিত হবার পর পরই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তাই পরবর্তীতে এই ছড়াটির অনুকরণে আরও অনেক ছড়া লেখেন অন্য ছড়াকাররা। মুল ছড়াটিতে ২০ লাইনের মোট পাঁচটি পংক্তি থাকলেও প্রথম চার লাইনই সবার কাছে বেশি পরিচিত এবং পঠিত। মুল ইংরেজি ছড়াটির শিরোনাম ছিল ‘দি স্টার’।


ডক্টর ফস্টার রাইমঃ
১৩শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রাজা ছিলেন প্রথম এডওয়ার্ড। তাকে নিয়েই রচিত হয়েছিল ডক্টর ফস্টার ছড়াটি। রাজা প্রথম এডওয়ার্ড একবার গ্লস্টারে ঘোড়ায় চড়ে ভ্রমন করতে যান। গ্লস্টার হল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ পশ্চিমের একটা শহর। সে শহরে যেতে যেতে ঘটল এক মজার ঘটনা। বৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা ছিল বিশ্রি কাদায় ভরা। রাজার ঘোড়ার পা রাস্তার সেই কাদায় গেল আটকে। অনেক চেষ্টা করেও রাজার ঘোড়া নিজেকে সামলাতে পারল না। অমনি যা হবার তাই হল। কাদার উপর পড়ল ঘোড়া আর সঙ্গে পড়ল রাজাও। এমন প্রতাপশালী রাজা, এতগুলো যার রাজপ্রাসাদ সে কিনা পড়ে গেল মাটিতে। সে মাটিও আবার কাদায় ভরা। ব্যাপারটা রাজার মোটেই সহ্য হল না। প্রচন্ড ক্ষোভে রাজা যেন ফোঁস ফোঁস করতে লাগলেন। তারপর আর কখনও সেই পথের ছায়াও মারাননি তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রচিত হয় রাইমটি। একজন রাজা কাদায় পড়ে গেছে শুনে আপনাদের খুব হাসি পাচ্ছে তাই না। মজা পেয়ে হাসাটা ভালো। তবে শুধু হাসলেই চলবে না। সে সময়ের শিশুদের জন্য একটা তথ্যও ছিল রাইমটিতে সেটা কি ধরতে পেরেছেন? রাস্তার মাঝে মাঝে ছোট গর্ত থাকতে পারে। এই গর্তগুলো হতে পারে বেশ গভীর। আর সেগুলোর প্রতি যদি লক্ষ না রাখেন তবে আপনাদের অবস্থাও হতে পারে রাজার মত। তখন আপনাদের বন্ধুরাও এমনি করে হাসাহাসি করবে। তাই মজা নেওয়ার পাশাপাশি আপনাদের উপদেশটাও মনে রাখতে হবে।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info