চকোলেট ।। Chocolate

'জীবনে মাত্র তিনটি জিনিস প্রয়োজন, চকোলেট, চকোলেট এবং চকোলেট।' না কথাটা কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বলেননি। কেন বলেননি সেটা জানি না, কিন্তু না বললে কী হবে, আমরা সবাই জানি যে এটা বেশিরভাগ শিশু কিশোর এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক বড়দেরও একদম মনের কথা। এমন মজার একটি খাবার কেউ পছন্দ না করে পারে? না পারে না। কিন্তু কেন পারে না। চলেন মজার এই খাবারটা সম্পর্কে মজার মজার কিছু তথ্য জেনে নেই।


আপনাদের অনেকের মনেই প্রথমে যে প্রশ্নটা আসতে পারে তা হলো, চকোলেট কেন এতো মজা লাগে। অনেকে বলবে, এমনি এমনিই মজা লাগে। কিন্তু আসল কারণটা চকোলেট বানানোর মধ্যেই নিহিত। চকোলেট বানাতে বেশ কিছু উপাদান মেশানো হয়, যা চকোলেটকে স্বাদে, গন্ধে মজাদার করে আর একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। চকোলেটে সাধারনত চিনি, থিওব্রোমিন (কাকাউ বীজ থেকে পাওয়া যায়), ট্রিপটোফেন, ফিনেথাইলামিন ও ক্যাফেইন বিভিন্ন পরিমানে মেশানো থাকে। তাই চকোলেট এতো মজার।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

নানান স্বাদের চকোলেট
সারাবিশ্বে চকোলেট কোম্পানিগুলো নানান স্বাদের চকোলেট বানায়। তার মধ্যে মিল্ক চকোলেটই সবার বেশি প্রিয়। এছাড়া ডার্ক চকোলেট, হোয়াইট চকোলেট অনেকেই পছন্দ করে। মিল্ক চকোলেটে দুধ থাকে বুঝতেই পারছেন। বিভিন্ন দেশের সরকার মিল্ক চকোলেটে দুধ ও অন্যান্য উপাদান নিদিষ্ট করে দিয়েছে। চকোলেট কোম্পানিগুলোকে তাই উপাদানগুলো নির্দিষ্ট পরিমান ব্যবহার করতে হয়।


আমেরিকায় চকোলেটে শতকরা ১০ ভাগ চকোলেট লিকার থাকতে হয়। আর ইংল্যান্ডে মিল্ক চকোলেটে কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে। অন্যদিকে ডার্ক চকোলেটের ক্ষেত্রে আমেরিকায় ১৫ ভাগ চকোলেট লিকার এবং ইংল্যান্ডে ৩৫ ভাগ সলিড কাকাউ থাকতে হবে।

আবার চকোলেটের স্বাদ আরো আকর্ষণীয় করার জন্য চকোলেটে মিন্ট, কমলা বা স্ট্রবেরির স্বাদ যোগ করা হয়। এছাড়া মাঝে মাঝে বাদাম, ফল, ক্যারামেল এমনকি মচমচে দানাশস্যও ব্যবহার করা হয়।

চকোলেটের ইতিহাসঃ
কাকাউ (এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম "থিওব্রামা কাকাউ" Theobrama cacao) গাছের বীজ থেকে চকোলেট তৈরি করা হয়। গ্রিক শব্দ থিওব্রামার অর্থ হলো "দেবতার খাদ্য"। ৯০০ খৃস্টাব্দের দিকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন আজটেকস (Aztecs) জাতি কাকাউ গাছকে গভীরভাবে ভক্তি করতো এবং এর বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতো। তারা এ গাছকে ক্ষমতা ও সম্পদের উৎস বলে মনে করত।


এরপর আজটেক জাতি আবিষ্কার করল যে কাকাউ বীজ গুঁড়ো করে তার সঙ্গে মসলা মিশিয়ে চমৎকার সতেজকারী ও সুস্বাদু পানীয় বানানো যায়। তবে এ পানীয় বর্তমান সময়ের চকলেটের তুলনায় অনেক বেশি তিতা স্বাদের ছিল। ১৬শ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ান পর্যটকরা দেশ ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় এ পানীয় সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং এর সঙ্গে মিষ্টি সুগন্ধ মিশিয়ে পান করতে থাকেন। সমপ্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, পৃথিবীতে প্রথম চকোলেটের প্রচলন শুরু হয় আজ থেকে প্রায় তিন হাজার একশত বছর আগে। তখন থেকেই কাকাউ পানীয় ব্যয়বহুল বিলাসী খাবারের মর্যাদা পায়।

১৮০০ সালের দিকে ছাঁচ পদ্ধতিতে বানানো কঠিন চকলেট খুব খুব জনপ্রিয়তা পায়। সে সময় চুর্ণন যন্ত্রের সাহায্যে কাকাউ বীজ গুঁড়ো করে তাপে গলানো হতো। তারপর তা ঢালা হতো বিভিন্ন প্রকার ছাঁচে। তরল কাকাউ ঠান্ডা হয়ে শক্ত হলে তা পেতো ছাঁচের আকার।


এরপর ১৯২৫ সালে ডেনমার্কের কনরাড ভন হাউটেন (Coenrad Van Houten) কাকাউ বীজ থেকে কাকাউ মাখন তৈরি করেন। তিনি কাকাউ বীজকে পেস্টে পরিণত করে উচ্চ চাপে তরল কাকাউ ও কাকাউ মাখন আলাদা করেন।

এর কয়েক বছর পরেই ১৮৩১ সালে বৃটেনে ক্যাডবেরি নামে একটি চকলেট ফার্ম চকলেট উৎপাদন শুরু করে। এখন ক্যাডবেরির নাম তো আপনারা সবাই জানেন।

খেয়াল করে দেখবেন অনেক চকোলেট বেশ চকচকে। কেমন জানি একটা মসৃন ভাব। এর কারন আসলে কিছু না। ১৮৮০ সালের দিকে সুইটজারল্যান্ডের রুডলফ লিন্ড (Rudolphe Lindt) চকলেটকে নরম ও চকচকে করার জন্য একটু বেশি মাত্রায় চকলেট মাখন মেশানো শুরু করেন। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে এবং চকোলেট তাই চকচকে ও নরম।


সে সময় থেকেই চকলেট মাখনকে ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় গলানো হয়, যা আদতে আমাদের শরীরেরই তাপমাত্রা। তাইতো আমাদের মুখের মধ্যে সহজেই গলে যায় চকোলেট। রুডলফের আবিষ্কৃত চকোলেটই ছিল প্রথম মজাদার চকলেট। এ সময় থেকেই চকোলেটের আসল মজা পেতে শুরু করে মানুষ। ওয়াও, দারুণ মজার ব্যাপার, তাই না? বিশ্বাস না হলে একটা চকোলেট মুখে পুরেই দেখেন না। ইশ চকোলেটটা মুখে গলে গেল বুঝি?

কেমন করে এলো মিল্ক চকোলেটঃ
আপনাদের মধ্যে অনেককেই পাওয়া যাবে যারা মিল্ক চকোলেটের মারাত্মক ভক্ত। এই চকোলেট পছন্দ করার দুটো কারণ। এক নাম্বার হলো, এই চকোলেটটি মিল্কি এবং দুই নম্বরে এটি নরম ও মিষ্টি। চল এবার সেই মিল্ক চকোলেট সম্বন্ধে জেনে নেই।

১৮৭৫ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ড্যানিয়েল পিটার প্রথম মিল্ক চকোলেট তৈরি করেন। এর ফলে কালো শক্ত চকোলেটের চেয়ে এ চকোলেটটি মিষ্টি ও নরম হওয়ায় অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ১৮৭৯ সালে রুডলফ লিন্ড যে সবচেয়ে পছন্দের চকোলেটের রেসিপি তৈরি করে সবার মন কাড়েন তাতো আগেই শুনেছেন।

এরপর একে একে ক্যাডবেরি ও হার্শে নামের চকোলেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৫ সালে ক্যাডবেরি "ডেইরি মিল্ক" নামে যে চকোলেট বাজারে আনে তা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায়। কেবল ওই সময়েই নয়, বর্তমানেও এ চকোলেট বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মিল্ক চকোলেটই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

তবে কেবল বিক্রি বাড়াই নয়, মিল্ক চকোলেট তৈরি করার ক্ষেত্রেও চকোলেট কম্পানিগুলোর অনেক সুবিধা হয়েছে। কারণ নেসলে যে কনডেন্সড দুধ তৈরি করেছে, তা সাধারণ তরল দুধ অপেক্ষা সহজেই কাকাউ পেস্ট এর সঙ্গে মিশে যায়। তাইতো মিল্ক চকলেট দিন দিন হয়ে উঠছে দারুণ মজার।


চকোলেট ও দাঁতঃ
এতো মজার চকোলেট একটু নিয়ম মেনে না খেলে আমাদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। মানে চকোলেট বেশি বেশি খেলে বা চকোলেট খেয়ে সময় মতো দাঁত পরিস্কার না করলে নানা রকম বিশ্রি জীবানু আপনার মুখে ও দাঁতে বাসা বাধে। এই জীবানু আপনার দাঁতের ভীষন ক্ষতি করে। খেয়াল করে দেখবেন অনেকের দাঁত চকোলেট খেতে খেতে কেমন কালো হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চকোলেট কম খান আর অবশ্যই চকোলেট খেয়ে দাঁত ভালো করে পরিস্কার করবেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাদের কথা মনে হয় শোনাই উচিত আমাদের।

লেখকঃ মাহবীর মুরাদ।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।